মেসেজের সালামের উত্তর ও গায়রে মাহরামের সালামের উত্তরের বিধান
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্নঃ
কেউ ম্যাসেজের মাধ্যমে সালাম দিলে সেই সালামের উত্তর দেওয়া কি ওয়াজিব? গাইরে মাহরামকে সালাম দেওয়ার হুকুম কী? গায়রে মাহরাম সালাম দিলে করণীয় কী?
প্রশ্নকারী-মুহাম্মাদ হুসাইন
উত্তরঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى، أمابعد
এক. পত্র মারফত সালামের উত্তরের বিধান
এক মুসলিম অপর মুসলিমকে সালাম দিলে সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَإِذَا حُيِّيْتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّواْ بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا. –[النساء:86ٍ]
“যখন কেউ তোমাদেরকে সালাম করে, তোমরাও তাকে তদপেক্ষা উত্তমরূপে জবাব দাও অথবা (অন্ততপক্ষে) সেই শব্দেই তার জবাব দাও!” –সূরা নিসা: ৮৬
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
” خَمْسٌ تَجِبُ لِلْمُسْلِمِ عَلَى أَخِيهِ…رَدُّ السَّلَامِ…” -صحيح مسلم (2162) واللفظ له، صحيح البخاري (1240)
“পাঁচটি বিষয় এক মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অপর মুসলিম ভাইয়ের উপর ওয়াজিব … (তার মধ্যে একটি হল,) সালামের উত্তর দেওয়া…।” –সহীহ বুখারী: ১২৪০, সহীহ মুসলিম: ২১৬২
সালাম সামনা-সামনি মৌখিকভাবে যেমন হতে পারে, চিঠিপত্র ও মেসেজের মাধ্যমেও হতে পারে। সবগুলোরই উত্তর দেওয়া আবশ্যক এবং তাতে সাওয়াবও পাওয়া যাবে।
ইমাম কুরতুবী (৬৭১ হি.) রহ. বলেন,
وإذا ورد على إنسان كتاب بالتحية أو نحوها ينبغي أن يرد الجواب، لأن الكتاب من الغائب كالسلام من الحاضر. وروي عن ابن عباس أنه كان يرى رد الكتاب واجبا كما يرى رد السلام. والله أعلم. – تفسير القرطبي (13/193)، الناشر: دار الكتب المصرية – القاهرة
“যদি কোনও লোকের নিকট সালাম ইত্যাদি সম্বলিত পত্র আসে, তখন তার কর্তব্য, জবাব দেওয়া। কেননা অনুপস্থিত ব্যক্তির পত্র মারফত সালাম, উপস্থিত ব্যক্তির সালামের মতোই। হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি পত্র মারফত সালামের জবাব, সরাসরি সালামের জবাবের মতোই ওয়াজিব মনে করতেন।” -তাফসীরে কুরতুবী: ১৩/১৯৩, (দারুল কুতুবিল মিসরিইয়াহ)।
আল্লামা ইবনে হাজার (৮৫২ হি.) রহ. বলেন,
ويجب رد جواب السلام في الكتاب.أهـ -فتح الباري لابن حجر (11/14)، الناشر: دار المعرفة – بيروت، 1379
“লিখিত সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব।” -ফাতহুল বারী: ১১/১৪, (দারুল মারিফা-বাইরুত)।
আরও দেখুন, আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৪১৫, (দারুল ফিকর)।
সুতরাং কেউ মেসেজের মাধ্যমে কারও নিকট সালাম পৌঁছালে ফিরতি মেসেজে বা মৌখিকভাবে তার সালামের উত্তর দেওয়া আবশ্যক।
(বিস্তারিত দেখুন –রদ্দুল মুহতার: ৬/৪১৫, (দারুল ফিকর) তাকমিলা-ফাতহুল মুলহিম: ৪/২১২, (দারু ইহয়াইত্-তুরাসিল আরাবি-বাইরুত), আহসানুল ফাতাওয়া: ৯/১৯, জাকারিয়া বুক-ডিপো।)
দুই. গাইরে মাহরামকে সালাম দেওয়ার বিধান
গাইরে মাহরাম মহিলা যুবতী হলে কোনও পর-পুরুষকে তার সালাম দেওয়া এবং কোনও পুরুষের পক্ষ থেকে তাকে সালাম দেওয়া উভয়ই মাকরূহ। পক্ষান্তরে মহিলা যদি বৃদ্ধা হয় এবং ফিতনার আশঙ্কা না থাকে তাহলে সালাম আদান-প্রদান জায়েয।
শুআবুল ঈমানে এসেছে,
كان قتادة، يقول: ” أما امرأة من القواعد فلا بأس أن يسلم عليها، وأما الثانية فلا “. – [شعب الإيمان: 8506]
“হযরত কাতাদা রহ. বলতেন, মহিলা বৃদ্ধা হলে তাকে সালাম দিতে কোনও সমস্যা নেই। পক্ষান্তরে দ্বিতীয়জন হলে (তথা বৃদ্ধা না হয়ে যুবতী হলে জায়েয) নেই”। – শুআবুল ঈমান: ৮৫০৬, (দারুরুশদ-রিয়াদ)।
মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাতে এসেছে,
عَنْ زُرْزُر ، قَالَ : سَأَلْتُ عَطَاءً عَنِ السَّلاَمِ عَلَى النِّسَاءِ فَقَالَ : إِنْ كُنَّ شَوَابَّ فَلاَ. – مصنف ابن أبي شيبة (عوامة) (26300)
“হযরত যুরযুর রহ. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আতা রহ.কে মহিলাদেরকে সালাম দেওয়ার ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যদি তারা যুবতী হয় তাহলে (জায়েয) নয়”। –মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২৬৩০০, (মুআসসাসাতু উলূমিল কুরআন)।
আরও বিস্তারিত দেখুন, ফাতহুল বারী: ১১/৩৪, (দারুল মারিফা-বাইরুত), মিরকাতুল মাফাতীহ: ৭/২৯৩৯, (দারুল ফিকর-বাইরুত), ২৯৪৫, আল-কাউকাবুদ্দুররী: ২/১৩৬, (আল-মাকতাবাতুল আশরাফিয়া-দেওবন্দ), ফাতাওয়ায়ে সিরাজিয়া: ৩১৮, (মাকতাবা থানভী-দেওবন্দ), রদ্দুল মুহতার: ১/৬১৬, (দারুল ফিকর), তাকমিলা-ফাতহুল মুলহিম: ৫/১১৪ (দারু ইহয়াইত্-তুরাসিল আরাবি-বাইরুত)।
অবশ্য যেসব প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে গায়রে মাহরাম নারী পুরুষের পরস্পর কথা বলা জায়েয, সেসব ক্ষেত্রে সালাম বিনিময় করাও জায়েয।
গাইরে মাহরামের সালামের জবাব দেওয়ার হুকুম
যুবতী মহিলা পর-পুরুষকে সালাম দিলে বা কোনও পর-পুরুষ যুবতী মহিলাকে সালাম দিলে জওয়াবদাতা (চাই পুরুষ হোক কিংবা মহিলা হোক) আওয়াজ না করে মনে মনে সালামের জবাব দিবে। –খুলাসাতুল ফাতাওয়া: ৪/৩৩৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ৫/৩২৬
পক্ষান্তরে কোনও বৃদ্ধা পর-পুরুষকে সালাম দিলে বা তাকে কোনও পর-পুরুষ সালাম দিলে জওয়াবদাতা বড়ো আওয়াজে তথা সালাম দাতা শুনতে পায় পরিমাণ আওয়াজে সালামের জবাব দিবে।
দেখুন -সিরাজিয়া: ৩১৮, (মাকতাবা থানভী-দেওবন্দ), খুলাসাতুল ফাতাওয়া: ৪/৩৩৪, (আল-মাকতাবাতুল আশরাফিয়া-দেওবন্দ), খানিয়া: ৩/৩০৭, (দারুল ফিকর), ইখতিয়ার: ৪/১৬৫, (দারুল কুতুবিল ইলমিইয়া); তাতারখানিয়া: ১৮/৭৮, (জাকারিয়া বুক-ডিপো), বাযযাযিয়া: ৩/২০০, (দারুল ফিকর), হিন্দিয়া: ৫/৩৭৮, (দারুল ফিকর), রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৬৯, (দারুল ফিকর)।
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
১৮-০৬-১৪৪৪ হি.
১২-০১-২০২৩ ঈ.
আরও পড়ুনঃ টাই পরার হুকুম কী?