বিয়ে কি জিহাদের জন্য প্রতিবন্ধক?
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্নঃ
পরিবার থেকে আমার বিয়ের বিষয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু আমি একটি বিষয় নিয়ে চিন্তিত। তাই মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, বিয়ে কি জিহাদের জন্য প্রতিবন্ধক? উত্তরে সরাসরি ময়দানের কোনো নজির পেশ করলে অনেক উপকৃত হবো।
প্রশ্নকারী- আবু আব্দুল্লাহ
উত্তরঃ
বিয়ে নবী-রাসূল আলাইহিস সালামগণের সুন্নত। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً. -الرعد: 38
“তোমার আগেও আমি বহু রাসূল পাঠিয়েছি এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তানাদি দিয়েছি।” -সূরা রাদ (১৩) : ৩৮
যারা বিয়েকে ইবাদত-বন্দেগীর প্রতিবন্ধক মনে করে এ থেকে বিরত থাকতে চায় নবীজি তাদের ব্যাপারে বড়ো শক্ত কথা বলেছেন। আনাস (রাযি) বলেন,
جاء ثلاثة رهط إلى بيوت أزواج النبي صلى الله عليه وسلم، يسألون عن عبادة النبي صلى الله عليه وسلم، فلما أخبروا كأنهم تقالوها، فقالوا: وأين نحن من النبي صلى الله عليه وسلم؟ قد غفر له ما تقدم من ذنبه وما تأخر، قال أحدهم: أما أنا فإني أصلي الليل أبدا، وقال آخر: أنا أصوم الدهر ولا أفطر، وقال آخر: أنا أعتزل النساء فلا أتزوج أبدا، فجاء رسول الله صلى الله عليه وسلم إليهم، فقال: أنتم الذين قلتم كذا وكذا، أما والله إني لأخشاكم لله وأتقاكم له، لكني أصوم وأفطر، وأصلي وأرقد، وأتزوج النساء، فمن رغب عن سنتي فليس مني. -صحيح البخاري (5063) صحيح مسلم (1401(
“তিন জনের একটি দল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের ঘরে আগমন করলেন। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে অবহিত করা হলো, তখন তাদের কাছে যেনো তা কম মনে হলো। তাঁরা বললেন, নবীজির সঙ্গে আমাদের কী তুলনা! তাঁর তো আগের-পরের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। একজন বললেন, আমি সারা জীবন রাতভর নামায পড়বো। আরেকজন বললেন, আমি সারা বছর রোযা রাখবো, কখনও বিরতি দিবো না।
অপরজন বললেন, আমি নারীদের থেকে দূরে থাকবো, কখনও বিয়ে করবো না। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, ‘তোমরা কি ওই সকল ব্যক্তি, যারা এরূপ কথাবার্তা বলেছো? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি আমি বেশি অনুগত; অথচ আমি (কিছু দিন নফল) রোযা রাখি, আবার (কিছু দিন) রোযা থেকে বিরত থাকি। (রাতের কিছু অংশ) নামায পড়ি আবার (কিছু অংশ) ঘুমাই এবং বিয়ে-শাদী করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়।” -সহীহ বুখারী: ৫০৬৩; সহীহ মুসলিম: ১৪০১
তো রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম ও নবী-রাসূল আলাইহিস সালামগণ যদি বিয়ে করা সত্ত্বেও রিসালাতের গুরু দায়িত্ব পালন করতে পারেন, জিহাদের ময়দানেও সকলের আগে আগে থাকতে পারেন, তাহলে আমাদের ক্ষেত্রে কেনো বিয়ে জিহাদের প্রতিবন্ধক হবে? তাছাড়া বর্তমান ফিতনা-ফাসাদের যমানায় বিয়ে ব্যতীত গুনাহ থেকে বাঁচা তো অনেকটাই কঠিন। আর যখন বিয়ে করার সামর্থ্য থাকে এবং বিয়ে না করলে গুনাহ থেকে বাঁচা সম্ভবপর না হয়, তখন তো বিয়ে করা ফরযও হয়ে যায়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
يا معشر الشباب، من استطاع منكم الباءة فليتزوج، فإنه أغض للبصر، وأحصن للفرج، ومن لم يستطع فعليه بالصوم، فإنه له وجاء. -صحيح البخاري (1905) صحيح مسلم (1400(
“হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে, সে যেনো বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেনো রোযা রাখতে থাকে। রোযা তার প্রবৃত্তিকে দমন করবে।” -সহীহ বুখারী: ১৯০৫; সহীহ মুসলিম: ১৪০০
বর্তমানে যেসব মুজাহিদ জিহাদের ময়দানে আছেন, তারাও বিবাহ শাদী করছেন এবং একে জিহাদের প্রতিবন্ধক মনে করছেন না; বরং শায়খ উসামা বিন লাদেন (রহ)সহ নেতৃস্থানীয় অনেক মুজাহিদ তো একাধিক বিয়েও করেছেন।
তো বিবাহ যদি তাদের ক্ষেত্রে জিহাদের পথে প্রতিবন্ধক না হয়, আমাদের জন্য তা প্রতিবন্ধক হবে কেনো? বরং বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিয়ে করা অনেক ক্ষেত্রে জিহাদের জন্য সহায়ক হয়। অবিবাহিতদের জন্য তাগুতের দৃষ্টি এড়িয়ে জিহাদের কাজ করা কারো কারো ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া বিশ্বের যে পরিস্থিতি, তাতে জিহাদে কবে যেতে পারেন বা আদৌ যেতে পারেন কি না, না শুধু প্রস্তুতির কাজগুলোতেই আরও দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করতে হয়, সবই অস্পষ্ট। এমন একটি অস্পষ্ট বিষয়ের উপর বিয়ে ঝুলন্ত রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
সুতরাং বিয়ের সামর্থ্য থাকলে আপনার জন্য উত্তম হবে দ্বীনদারী দেখে কাউকে বিয়ে করার চেষ্টা করা।
তবে হাঁ, কারো যদি নগদ বা কিছু দিনের মধ্যেই কোনো জিহাদের ভূমিতে হিজরত করার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে তিনি অবশ্যই তার আমীরের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনমাফিক বিবাহ পিছিয়ে দিতে পারেন; বরং ক্ষেত্র বিশেষে তা জরুরীও।
উল্লেখ্য, বর্তমানে জিহাদের ভূমিতে হিজরতের বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে কোনো দুষ্টচক্রের হাতে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে যথেষ্ট। তাছাড়া বর্তমান বৈশ্বিক জিহাদের আমীরগণ এদেশের মুসলিমদেরকে আমভাবে এখানেই কাজ করার নির্দেশ দিচ্ছেন।
সুতরাং এই পরিস্থিতিতে নির্ভরযোগ্য কোনো জামাআত কিংবা নির্ভরযোগ্য অন্য কোনো সূত্র না পেলে ব্যক্তিগতভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের খুবই সতর্ক থাকা জরুরী। বাস্তবে কোনো রণাঙ্গনে আপনার আমার প্রয়োজন হলে, সেটাও আমীরদের নির্দেশে হওয়া জরুরী।
এ বিষয়ে আরও জানতে নিম্মোক্ত ফতোয়াগুলো দেখুন:
১. বর্তমান পরিস্থিতিতে পিতা-মাতার খেদমত করব, না জিহাদ করব?
২. বৃদ্ধ মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তান রেখে অন্যত্র হিজরত করার কী হুকুম?
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
২৭-০২-১৪৪৪ হি.
২৪-০৯-২০২২ ঈ.