মুআমালা-লেনদেনফাতওয়া  নং  ১১২

জমি বন্ধকের প্রচলিত পদ্ধতির হুকুম কী?

জমি বন্ধকের প্রচলিত পদ্ধতির হুকুম কী?

জমি বন্ধকের প্রচলিত পদ্ধতির হুকুম কী?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ

বর্তমানে কেউই নিজের জমি স্বাভাবিক নিয়মে লিজ দিতে চায় না। সবাই বন্ধক দিতে চায়। এখন আমার জানার বিষয় হল, জমি বন্ধক নেয়া কি সুদের মধ্যে পড়বে? যদি বছরে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা যেমন ধরুন, দুই হাজার টাকা করে টাকা কেটে দেওয়া হয় তবুও কি তা সুদের মধ্যে গণ্য হবে?

প্রশ্নকারী-সজীব

ঠিকানা-অজ্ঞাত

 

উত্তর:

আমাদের দেশে জমি বন্ধকের প্রচলিত পদ্ধতি হল, কারো অর্থের প্রয়োজন হলে তিনি জমি বন্ধক রেখে কারো থেকে ঋণ নেন। যতদিন পর্যন্ত ঋণ পরিশোধ করতে না পারেন, ততদিন ঋণদাতা তার জমি ভোগ করেন। এটা পরিষ্কার সুদ। ঋণের মোকাবেলায় ঋণ গ্রহীতা থেকে কোনো ধরনের উপকার গ্রহণ করাই সুদ।

উক্ত কারবারটিকে সুদমুক্ত করার জন্য কেউ কেউ একটি বাহানা আবিষ্কার করেছেন। তারা নামমাত্র জমির ভাড়া পরিশোধ করে মনে করেন, কারবারটি সুদমুক্ত হয়ে গেছে। যেমন ধরুন, কেউ এক বিঘা জমি বন্ধক দিয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করলেন। পাঁচ বছর পর ঋণ গ্রহীতা যখন ঋণ পরিশোধ করে জমি ফেরত নিবেন, তখন ঋণদাতা জমির ভাড়া বাবদ প্রতি বছরের জন্য পাঁচশ/এক হাজার টাকা করে কেটে অবশিষ্ট টাকা ফেরত নিলেন।

বস্তুত এতেও কারবারটি সুদমুক্ত হয় না। কারণ এখানে বাস্তবে আলাদা কোনো ইজারা চুক্তি হয় না; বরং জমি ভোগ করার শর্তেই ঋণ দেয়া হয় এবং ঋণের সুবিধা পাওয়ার কারণেই জমির মালিক ভাড়ার নামে নামমাত্র সামান্য অর্থ গ্রহণে সম্মত থাকে। সুতরাং এভাবে বছরে ২০০০ (দুই হাজার) টাকা করে কেটে নিলেও চুক্তিটি জায়েয হবে না। প্রকৃত অর্থে এটা সুদ খাওয়ারই একটা বাহানা মাত্র।

হ্যাঁ, কারো যদি টাকার প্রয়োজন হয় এবং তার কাছে জমি থাকে, তাহলে উক্ত জমির মাধ্যমে টাকার প্রয়োজন পূরণের বৈধ ব্যবস্থা শরীয়তে আছে। তার জন্য ঋণ বা বন্ধকি চুক্তি করা যাবে না। বরং শুরু থেকে জমি ভাড়া দেয়ার চুক্তি করতে হবে। মনে করুন, একজনের নিকট এক বিঘা জমি আছে। তার পঞ্চাশ হাজার টাকা প্রয়োজন। উক্ত জমিটির বার্ষিক ন্যায্য ভাড়া হচ্ছে দশ হাজার টাকা। তাহলে সে পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া দিয়ে ভাড়া বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকা গ্রহণ করতে পারে। এক্ষেত্রে জমির চুক্তিকৃত ভাড়া যদি ন্যায্য ভাড়া থেকে সামান্য কম-বেশি হয়, তাতেও অসুবিধা নেই। তবে অস্বাভাবিক কম-বেশি করা যাবে না। তারপর মেয়াদ শেষে জমির মালিককে জমি ফেরত দিতে হবে, অর্থদাতা কোনো অর্থ ফেরত পাবেন না। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যদি তারা উভয়ে ইজারা চুক্তি ভঙ্গ করতে সম্মত হন কিংবা অন্য কোনো শরঈ কারণে ইজারা চুক্তি শেষ করতে হয়, সে ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়াকে; চুক্তির অবশিষ্ট মেয়াদের ভাড়া ফেরত দিতে হবে। যেমন উপরোক্ত উদাহরণে তিন বছর পর চুক্তি ভঙ্গ হলে বাকি দুই বছরের বিশ হাজার টাকা ফেরত দিতে হবে। -মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ১৫০৬৮, ১৫০৬৯; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২১০৭৭; বাদায়েউস সানায়ে: ৬/১৪৬; রদ্দুল মুহতার: ৬/৪৮২;  আলফুলকুল মাশহুন ফি মা ইয়াতাআল্লাকু বিনতিফায়িল মুরতাহিনি বিলমারহুন-আব্দুল হাই লখনবি: ৩৬-৩৭; ইলাউস সুনান: ১৮/৬4; ইমদাদুল আহকাম: ৬/৯৫

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

১৭-০২-১৪৪২ হি.

০৭-১০-২০২০ ইং

আরো পড়ূন
প্রচলিত জমি বন্ধকের পদ্ধতি বৈধ হওয়ার কি কোন উপায় আছে?

Back to top button