লুডু খেলার হুকুম কী?
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
প্রশ্ন:
আমাদের সমাজে অনেককে লুডু খেলতে দেখা যায়। নিষেধ করলে বলে, আমরা তো টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলছি না। শুধু বিনোদনের জন্য খেলছি। এ ব্যাপারে শরয়ী নির্দেশনা কী? স্রেফ বিনোদনের জন্য এভাবে লুডু খেলা কি জায়েয আছে? বিষয়টি জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
প্রশ্নকারী- মুহাম্মাদ রাজু
উত্তর:
খেলাধুলার ক্ষেত্রে একটি মূলনীতি উল্লেখ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
كل ما يلهو به الرجل المسلم باطل، إلا رميه بقوسه، وتأديبه فرسه، وملاعبته أهله، فإنهن من الحق. -سنن الترمذي: 1637
“মুসলিম ব্যক্তি যে খেলাধুলা করে, সবই বাতিল। তবে ধনুক দিয়ে তীরন্দাজি করা, ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং স্ত্রীর সাথে ক্রীড়া-কৌতুক করা, এগুলো ন্যায়সঙ্গত।” -সুনানে তিরমিযি : ১৬৩৭
উল্লেখিত হাদিসে তিন প্রকার খেলাধুলার কথা এসেছে। ক. তীরন্দাজি (আর্চারি ও শ্যুটিং)। খ. ঘোড়ার প্রশিক্ষণ। গ. স্ত্রীর সঙ্গে ক্রীড়া-কৌতুক। এছাড়া আরো কিছু খেলাধুলার কথাও বিভিন্ন হাদিসে এসেছে। যেমন দৌড় প্রতিযোগিতা, কুস্তি, ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা, সাঁতার ইত্যাদি। সবগুলোই শরীরচর্চা ও জিহাদের কাজে সহায়ক। তাছাড়া বর্তমানে অনেক খেলাধুলা রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে শরীরচর্চা হয়, শরীর মজবুত হয় এবং নিয়ত সাপেক্ষে এগুলোকে জিহাদের শারীরিক প্রস্তুতি গণ্য করা যায়। যেমন ফুটবল, হাডুডু ইত্যাদি। তাই কেউ যদি বাজি ধরা, সতর খোলা এবং সময়ের অপচয় ইত্যাদির মতো কোনো প্রকার নাজায়েযে না জড়িয়ে, শরীরচর্চা বা জিহাদের শারীরিক প্রস্তুতির নিয়তে এ জাতীয় কোনো খেলা খেলে, তাহলে এগুলোও নাজায়েয হবে না; বরং নিয়তের কারণে সওয়াবের কাজ গণ্য হবে। লুডু খেলায় এধরনের কোনো ফায়দা নেই। এটা একটা অনর্থক কাজ, সময়ের অপচয়। অহেতুক কাজ পরিহার করা প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা সফলকাম মুমিনদের বৈশিষ্ট্যের আলোচনায় বলেন,
وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ.
‘(সফল মুমিন তারাই) যারা অহেতুক বিষয় থেকে বিরত থাকে।’ -সূরা মুমিনূন (২৩): ৩
হাদিস শরিফে এসেছে,
إن من حسن إسلام المرء تركه ما لا يعنيه -سنن الترمذي: 2318
“একজন মানুষের ইসলামী সৌন্দর্য হল, অনর্থক বিষয় পরিত্যাগ করা।” -সুনানে তিরমিযি : ২৩১৮
অতএব লুডু খেলার মতো অনর্থক কাজ পরিহার করা আমাদের কর্তব্য। তাছাড়া হাদিসে পাশা খেলার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
من لعب بالنردشير، فكأنما صبغ يده في لحم خنزير ودمه -صحيح مسلم: 2260
“যে ব্যক্তি পাশা বা দাবা খেলল, সে যেন তার হাত শুকরের রক্ত-মাংসে একাকার করল।” –সহীহ মুসলিম : ২২৬০
আবু মূসা আশআরী রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
من لعب بالنرد فقد عصى الله ورسوله. -سنن ابي داود: 4938
“যে ব্যক্তি পাশা খেলল, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করল।” -সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৩৮, মুআত্তা মুহাম্মাদ: ৯০৫
উল্লেখিত হাদিসগুলো সামনে রেখে চারো মাযহাবের উলামায়ে কেরাম পাশা খেলা হারাম বলেছেন। চাই তাতে বাজী থাকুক বা না থাকুক। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,
والنرد حرام عند الأئمة الأربعة سواء كان بعوض أو غير عوض -مجموع الفتاوى: 32/ 244
“চারো মাযহাবের ইমামদের দৃষ্টিতে পাশা খেলা হারাম, চাই তাতে বাজী ধরা হোক বা না হোক।” -মাজমুউল ফাতাওয়া : ৩২/২৪৪
লুডু পাশারই একটি প্রকার। সুতরাং লুডু খেলাও নাজায়েয। যদিও তা বাজী ধরা ব্যতীত শুধু বিনোদনের জন্য হয়। বিনোদন করতে হলে বৈধ খেলাধুলার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। শরীয়তের গণ্ডির বাইরে গিয়ে বিনোদনের সুযোগ নেই। আরও দেখুন, বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৩০৫-৩০৬, যাকারিয়া বুক ডিপো, আতত’লীকুল মুমাজ্জাদ, আব্দুল হাই লাখনৌভি: ৩/৪২২-৪২৩; মাজমুইল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া: ৩২/২২১, ২২৬; আলুফরূসিয়্যাহ, ইবনুল কাইয়্যিম: ৩০৭, শায়খ সালিহ আল মুনাজ্জিদ পরিচালিত সাইট, ‘ইসলাম সুয়াল ও জওয়াব’, ফতোয়া নং ১৮১৬৪২, সূত্র: দেখুন
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
২০-১১-৪১ হি.
১২-০৭-২০ ইং
আরো পড়ূন
জুয়া না ধরে তাস খেলা