বর্তমান তাগুত সরকারকে ট্যাক্স দেওয়া কি জায়েজ হবে?
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
প্রশ্নঃ
আমরা জানি, আমেরিকার জনগণের জন্য তাদের সরকারকে কর বা ট্যাক্স প্রদান করা জায়েজ নেই। কারণ আমেরিকা সরকার সব সময় ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে। তাই তাদেরকে কর দেয়া মানে ইসলামের বিরুদ্ধে তাদেরকে সহযোগিতা করা। অনুরূপভাবে বাংলাদেশের সরকারও জনগণের অর্জিত টাকা দিয়ে ইসলামের শত্রুদেরকে সহায়তা করে। জনগণ থেকে কর নিয়ে তারা জিহাদ নির্মূলের পিছনে ব্যয় করছে। আর নিজেরা আরাম আয়েশ করে জনগণকে চুষে খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদেরকে কর দেয়া কি জায়েয হবে?
প্রশ্নকারী- সাইফুল্লাহ
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলামের দৃষ্টিতে একটি রাষ্ট্রের আয়ের উৎস, যাকাত, উশর, গনিমত, ফাই, জিযিয়া, খারাজ, খনিজ সম্পদ ইত্যাদি। সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য এসব উৎস থেকে সম্পদ গ্রহণ করে বাইতুল মাল তথা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করবে এবং নির্ধারিত খাতে ব্যয় করবে। স্বাভাবিক অবস্থায় এর বাইরে জনগণের ওপর কোনো প্রকার ট্যাক্স বা কর আরোপ করা শরীয়তে নিষেধ এবং সুস্পষ্ট জুলুম। যারা এমন ট্যাক্স আরোপ করবে, তাদের সম্পর্কে হাদিসে কঠিন ধমকি ও শাস্তির বাণী উচ্চারিত হয়েছে। এক হাদীসে এসেছে,
عن عقبة بن عامر، قال: سمعت رسول الله – صلى الله عليه وسلم – قال: “لا يدخُل الجنةَ صاحبُ مَكْسٍ”. –مسند أحمد ط الرسالة: 17294، سنن أبي داود 2937، صحيح ابن خزيمة 2333، منتفى ابن الجارود 339، شرح معاني الآثار للطحاوي 3062، صححه الإمام بدر الدين العيني رحمه الله في “نخب الأفكار” (8/112)، فقال: وأخرجه بإسناد صحيح …اهـ وقال محققو المسند: حسن لغيره. اهـ يعنون: لأجل عنعنة ابن اسحاق.
“উকবা বিন আমের রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ট্যাক্স গ্রহণকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” –মুসনাদে আহমাদ: ১৭৩৯৪, সুনানে আবু দাউদ: ২৯৩৭
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায় জনৈক নারী যিনায় লিপ্ত হওয়ার পর অনুতপ্ত হয়ে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিজের শাস্তির আবেদন করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে রজমের আদেশ দেন এবং বলেন,
“لقد تابت توبة لو تابها صاحب مكس لغفر له”. –صحيح مسلم 4528
“সে এমন তাওবা করেছে, যা ট্যাক্স উত্তোলনকারী করলে তাকেও ক্ষমা করে দেয়া হতো।” –সহীহ মুসলিম: ৪৫২৮
হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহ. (৬৭৬ হি.) বলেন,
“فيه أن المكس من أقبح المعاصي والذنوب والموبقات”. –شرح النووي على مسلم 11\203
“এই হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়, ট্যাক্স গ্রহণ নিকৃষ্টতম একটি অপরাধ ও গুনাহ এবং ধ্বংসাত্মক কাজ।” –শরহে মুসলিম: ১১/২০৩
ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রহ. (৮৫৫ হি.) বলেন,
“المكس في هذا الزمان: ما يأخذه الظلمة والأعوان من التجار الواردين في البلاد ومن الباعة والشراة في الأسواق بأشياء مقررة عليهم على طريق الظلم والعدوان، وكان هذا قبل الإِسلام في الجاهلية، ثم لما جاء الشرع أبطل هذا وأمرهم أن يؤدوا الزكوات والعشور والخراج على الأوضاع الشرعية، ثم لما استولت الظلمة من الملوك والخونة من الحكام أعادوا هذا الظلم، ثم لم يزل الوزراء الظلمة الفسقة يحددون ذلك ويزيدون عليه ويفرعون تفريعات حتى وضعوه في كل شيء جليل وحقير، ودخلوا تحت قوله – عليه السلام: “من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فليس منا”. -نخب الأفكار 8/ 113
“বর্তমান সময়ে ট্যাক্স হল, জালেমরা এবং তাদের সহযোগীরা নগর-বন্দরে আগমনকারী ব্যবসায়ী এবং বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা থেকে যা উত্তোলন করে থাকে। ইসলামপূর্ব যুগে এই ট্যাক্সের প্রচলন ছিল। ইসলাম তা বাতিল করে দেয় এবং শরয়ী বিধান অনুযায়ী যাকাত, উশর ও খারাজ আদায়ের নির্দেশ দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে যখন জালেম শাসকরা ক্ষমতা দখল করে, তখন থেকে পুনরায় তারা এ জুলুম শুরু করে। তারপর থেকেই জালেম ও ফাসেক মন্ত্রীরা নির্ধারিত হারে এ ট্যাক্স বসাতে থাকে, তা বাড়াতে থাকে এবং তার অনেক শাখা প্রশাখা বের করতে থাকে। এমনকি পরিশেষে ছোট-বড় সব কিছুতেই তারা ট্যাক্স আরোপ করে। আর এর মাধ্যমে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বাণীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, ‘যে আমাদের দ্বীনের মাঝে নতুন কোনো বিষয় উদ্ভাবন করবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” -নুখাবুল আফকার: ৮/১১৩
ইমাম ইবনে হাযম রহ. বলেন,
“واتفقوا أن المراصد الموضوعة للمغارم على الطرق وعند أبواب المدن وما يؤخذ في الأسواق من المكوس على السلع المجلوبة من المارة والتجار ظلم عظيم وحرام وفسق”. –مراتب الاجماع: 121
‘পথ-ঘাট ও নগরদ্বারে আগমন-প্রত্যাগমনকারীদের থেকে যে চাঁদা উত্তোলন করা হয় এবং হাটে-বাজারে জনসাধারণ ও ব্যবসায়ীদের থেকে আমদানিকৃত পণ্য বাবদ যে ট্যাক্স নেয়া হয়, তা অনেক বড় জুলুম, হারাম ও ফিসক হওয়ার ব্যাপারে সকলে ঐকমত্য হয়েছেন।’ -মারাতিবুল ইজমা, পৃষ্ঠা: ১২১
তবে যদি কখনো মুসলমানদের বিশেষ প্রয়োজন দেখা দেয়; আর বাইতুল মালেও প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকে, তাহলে ইমামুল মুসলিমিন বিত্তবানদের থেকে প্রত্যেকের সামর্থ্যের প্রতি লক্ষ রেখে ন্যূনতম প্রয়োজন পরিমাণ ট্যাক্স গ্রহণ করতে পারবেন। অবশ্য এক্ষেত্রেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নীতি ছিল, কারো উপর নির্দিষ্ট পরিমাণ কর ধার্য না করা। বরং বিশেষ প্রয়োজনের মুহূর্তে তিনি সবাইকে সাদাকার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। সাদাকার ফযিলত শুনাতেন। সাহাবায়ে কেরাম নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাদাকা করতেন। তাবুক যুদ্ধসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাষ্ট্রের আর্থিক প্রয়োজন এভাবেই পূরণ করেছেন। তাই যদি বিশেষ পরিস্থিতিতে এ পদ্ধতিতেই রাষ্ট্রের প্রয়োজন মেটানো যায়, তবে সেটাই উত্তম। অন্যথায় সর্বশেষ উপায় হিসেবে বিত্তবানদের উপর যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী প্রয়োজন পরিমাণ ট্যাক্স ধার্য করাও জায়েয। -আরো দেখুন, সহীহ বুখারী: ৪৬৬৮; সহীহ মুসলিম: ১০১৮; সুনানে নাসায়ী: ৩৬০৬; ফাতহুল বারী: ৮/৩৩২; ফতোয়া শামী: ২/৩৩৬-৩৩৭, ৪/১২৭-১২৮; মাওসূয়্যাহ ফিকহিয়্যাহ কুয়েতিয়্যাহ: ৩৫/১৩
কিন্তু বর্তমান মুসলিম ভূখণ্ডলোর চিত্র একেবারেই ভিন্ন। সর্বত্রই এখন ইসলামী অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে মানবরচিত অর্থব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যাতে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের মূল উৎসই হচ্ছে ট্যাক্স-ভ্যাট, যা ধনী-গরীব নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের কাছ থেকেই জোরপূর্বক আদায় করা হয়; রবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধনী অপেক্ষা গরিবদেরকেই তার দায় বেশি বহন করতে হয়। আবার অন্যায়ভাবে উত্তোলিত এই করের সিংহভাগই ক্ষমতাসীন দল অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করে এবং নিজেদের ভোগবিলাসে অপব্যয় করে। বড় একটি অংশ ব্যয় করে আল্লাহর দ্বীনের বিরুদ্ধে, ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থের বিরুদ্ধে, কাফেরদের অনুকূলে এবং জিহাদ ও কিতালের বিরুদ্ধে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন।
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ. -الأنفال: 36
“যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তারা নিজেদের অর্থ সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর পথ থেকে লোকদের বাধা দেয়ার জন্য।” -আনফাল: ৩৬
তাছাড়া বাংলাদেশ সরকার যে তাগুত তা আমরা সকলেই জানি। কাজেই এই সরকারকে ট্যাক্স দেয়ার অর্থ তার এসব হারাম ও কুফরি কাজে সহায়তা করা এবং তাগুতকে শক্তিশালী করা। তাই যার জন্য ট্যাক্স না দিয়ে পার পাওয়ার সুযোগ আছে, তার জন্য ট্যাক্স দেয়া জায়েয হবে না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ. (سورة المائدة: 2)
“তোমরা নেককাজ ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে পরস্পরকে সহায়তা কর। গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠিন।” –সূরা মায়িদা: ২
ইবনে আবিদিন শামি রহ. (১২৫২ হি.) বলেন,
فإن ما حرم أخذه حرم إعطاؤه كما في الأشباه … فإنه بإعطائه ما يحرم أخذه يكون معينا على الظلم باختياره. – الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (2/ 336)
(না দিয়ে পারার সুযোগ থাকলেও ট্যাক্স দেয়া যাবে, কথাটি আপত্তিকর। কারণ) যা নেয়া হারাম তা দেয়াও হারাম; যেমনটা ‘আলআশবাহ’তে বলা হয়েছে… (কাজেই যে ব্যক্তি না দিয়ে পারবে, তার জন্য ট্যাক্স দেয়া জায়েয হবে না)। কেননা, যা নেয়া হারাম তা দেয়ার অর্থ স্বেচ্ছায় জুলুমে সহযোগিতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া।” –রদ্দুল মুহতার: ২/২৩৬
শায়খ আবুল মুনযির শানকিতি বলেন,
فلا يجوز للمسلمين أبدا دفع الضريبة لأي حاكم يحكم بغير ما أنزل الله لأن في ذالك تقوية وإعانة على استمرار الحكم بغير ما أنزل الله. ولا يجب على الناس دفع أموالهم للحاكم الجائر المستأثر الذي يأخذ المال من غير حله ويضعه في غير محله فهذا النوع من الحكام في وجوب دفع الزكاة إليه نظر .. فكيف يجب على الناس دفع أموالهم إليه؟! … أجابه، عضو اللجنة الشرعية: الشيخ أبو المنذر الشنقيطي. -اسئلة منبر التوحيد والجهاد، رقم السؤال: 2691
আল্লাহ তায়ালার বিধান ব্যতীত অন্য কোনো বিধান দিয়ে শাসনকার্য পরিচালনাকারী কোনো শাসককে ট্যাক্স প্রদান করা কোনো মুসলমানের জন্য কখনোই বৈধ নয়। কারণ, এর মাধ্যমে মানবরচিত বিধান দিয়ে পরিচালিত শাসনব্যবস্থা চলমান থাকার ক্ষেত্রে শক্তি যোগানো হয় এবং সাহায্য করা হয়। নিজ স্বার্থ প্রাধান্যদানকারী জালিম শাসক, যে কিনা শরয়ী বৈধতা ছাড়া সম্পদ আহরণ করে এবং অনুপযুক্ত স্থানে তা ব্যয় করে, তাকেও নিজেদের সম্পদ প্রদান করা লোকদের জন্য আবশ্যক নয়। এ ধরনের শাসকদের কাছে যাকাত দেওয়া আবশ্যক কি না, তাতেই যেখানে আপত্তির সুযোগ আছে, সেখানে এ শাসকদের হাতে নিজেদের সম্পদ তুলে দেওয়া কীভাবে আবশ্যক হতে পারে! –আসইলাতু মিম্বারিত তাওহিদ ওয়াল জিহাদ: ২৬৯১
অবশ্য কেউ যদি ট্যাক্স আদায় থেকে বিরত থাকতে অক্ষম হন এবং তাতে তাগুত শাসকগোষ্ঠীর জুলুম-অত্যাচার ও সম্মানহানির ভয় করেন, তাহলে তাদের জুলুম থেকে বাঁচার জন্য ট্যাক্স প্রদান করলে তিনি গুনাহগার হবেন না ইনশাআল্লাহ। এটা অনেকটা জান-মাল, ইজ্জত-আব্রু রক্ষার জন্য ঘুষ দেয়ার মতো। এক্ষেত্রে সম্পর্ণ দায় বর্তাবে যারা অন্যায়ভাবে তা গ্রহণ করবে এবং যারা তাদেরকে সহযোগিতা করবে তাদের ওপর।
ইবনে আবি শাইবা রহ. (২৩৫ হি.) বর্ণনা করেন,
عن القاسم بن عبد الرحمن عن ابن مسعود رضي الله عنه: «أنه لما أتى أرض الحبشة أُخِذ في شيء، فأَعطى دينارين، حتى خُلِّي سبيله» … عن مجاهد ، قال : اجعل مالك جنة دون دينك ، ولا تجعل دينك جنة دون مالك … عن عطاء . و… عن جابر بن زيد والشعبي ، أنهم قالوا : لا بأس أن يصانع الرجل على نفسه وماله إذا خاف الظلم. … عن الحسن ، مثله. … عن الحسن : أنه كان لا يرى بأسا أن يعطي الرجل من ماله ما يصون به عرضه. -المصنف لابن أبي شيبة: 22423-22428، )قال الشيخ عوامة فى تحقيقه: قوله: «يصانع عن نفسه» : أي يرشو عن نفسه).
ইবনে মাসউদ রাযি. হাবশায় হিজরত করলে কাফেররা তাকে কোন কারণে পাকড়াও করে। তখন তিনি দু’দিনারের বিনিময়ে তাদের থেকে মুক্তি লাভ করেন।
মুজাহিদ রহ. বলেন, দ্বীন হেফাজতের জন্য তোমার সম্পদকে ঢালরূপে ব্যবহার কর। দ্বীন খুইয়ে মাল রক্ষা করতে যেয়ো না।
আতা (বিন আবী রাবাহ), জাবের বিন যায়েদ ও শা’বি রাহিমাহুমুল্লাহ সকলেই বলেছেন, জুলুম-অত্যাচারের ভয় হলে ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে জান-মাল রক্ষা করলে সমস্যার কিছু নেই। হাসান বসরি রহ. থেকেও এমন কথা বর্ণিত আছে।
হাসান বসরি রহ. থেকে আরও বর্ণিত আছে যে, সম্ভ্রম রক্ষার্থে ঘুষ দেয়াকে তিনি অসুবিধার কিছু মনে করতেন না। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা: ২২৪২৪-২২৪২৮
উপরোক্ত আসারগুলোসহ আরও বিভিন্ন আসার ও হাদিসের আলোকে ইমাম আবু বকর জাসসাস রহ. (৩৭০ হি.) বলেন,
ووجه آخر من الرشوة، وهو الذي يرشو السلطان لدفع ظلمه عنه، فهذه الرشوة محرمة على آخذها غير محظورة على معطيها … فهذا الذي رخص فيه السلف إنما هو في دفع الظلم عن نفسه بما يدفعه إلى من يريد ظلمه أو انتهاك عرضه. –أحكام القرآن 2\541-542، دار الكتب العلمية
ঘুষ প্রদানের আরেকটা বৈধ ক্ষেত্র হল, জুলুম থেকে বাঁচার জন্য শাসককে ঘুষ দেয়া। এ ধরনের ঘুষ; গ্রহণকারীর জন্য নেয়া হারাম, প্রদানকারীর জন্য নিষিদ্ধ নয়। … সালাফে সালিহিন জুলুম থেকে বাঁচার জন্য ঘুষ দেয়ার এ ক্ষেত্রটি জায়েয বলেছেন, যখন কেউ তার ওপর জুলুম করতে চাচ্ছে বা সম্ভ্রমহানি করতে চাচ্ছে। –আহকামুল কুরআন: ২/৫৪১-৫৪২
ইবনে আবিদিন রহ. (১২৫২ হি.) বলেন,
فإذا كان الظالم لا بد من أخذه المال على كل حال لا يكون العاجز عن الدفع عن نفسه آثما بالإعطاء -الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (2/ 336)
“(অন্যায়ভাবে ট্যাক্স আরোপকারী) জালিম যদি এমন হয় যে, সে যে করেই হোক ট্যাক্স নিয়েই ছাড়বে, তখন নিরুপায় ব্যক্তি তাকে অর্থ প্রদানের কারণে গুনাহগার হবে না।” –রদ্দুল মুহতার: ২/২৩৬
শায়খ আবু মুহাম্মাদ শামি বলেন,
وأما التهرب من الضرائب … فلا بأس به، … لأن الضرائب لا تحل لآخذها فهي من أكل أموال الناس بالباطل وعليه فلا حرج من التهرب منها وعدم دفعها .. … فالأصل أن تتهرب من دفع الضرائب لهذه الدول حماية لمالك وحفظا له، إن كنت قادرا على التهرب، إلا أن يؤدي ذلك إلى مفسدة أكبر و أعظم من دفع المال لهم، فيجوز لك الدفع. … و الله تعالى أعلم. أجابه، عضو اللجنة الشرعية: … الشيخ أبو محمد الشامي -اسئلة منبر التوحيد والجهاد، رقم السؤال: 2655
ট্যাক্স প্রদান থেকে বিরত থাকলে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ ট্যাক্স গ্রহণকারীদের জন্য তা হালাল নয়। এটা অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণের অন্তর্ভুক্ত। এ কারণে ট্যাক্স প্রদান থেকে বিরত থাকা এবং ট্যাক্স না দেয়ার মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে মূল বিধান হল, ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার সামর্থ্য থাকলে আপনি নিজ সম্পদ হেফাযত ও সংরক্ষণপূর্বক এসব রাষ্ট্রকে ট্যাক্স দেয়া থেকে বিরত থাকবেন। অবশ্য ট্যাক্স ফাঁকি দিলে যদি তাদের হাতে সম্পদ তুলে দেয়ার চেয়েও বড় কোনো সমস্যার সম্মুখীন হওয়া লাগে, তাহলে আপনার জন্য ট্যাক্স প্রদান করা জায়েয। -আসইলাতু মিম্বারিত তাওহিদ ওয়াল জিহাদ: ২৬৫৫
আরো দেখুন ইমদাদুল ফাতাওয়া: ৪/১৫২, আহসানুল ফাতাওয়া: ৮/৯৬, ফাতাওয়া উসমানি: ২/৬৭
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
১৫-০৫-১৪৪২ হি.
৩১-১২-২০২০ ইং
আরও পড়ুনঃ
ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে পণ্য আমদানি করার হুকুম কী?
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ট্যাক্স বিভাগে চাকরি করার হুকুম কী?
ঘুষ দিয়ে সরকারি ট্যাক্সের পরিমাণ কমানো কি বৈধ হবে?
কাস্টমস ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে অন্য দেশ থেকে স্বর্ণ নিয়ে আসার হুকুম কী?