জিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার হুকুম কী?
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
প্রশ্ন:
জিহাদের জন্য ইদাদের ব্যাপারে শরীয়তের নির্দেশনা কী? এবং কী কী ধরনের ই’দাদ গ্রহণ করতে হবে? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।
ওমর ফারুক
উত্তর:
জিহাদের জন্য ই’দাদ তথা প্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি; ই’দাদ ছাড়া জিহাদ করা সম্ভব নয়। সুতরাং যখন উম্মতে মুসলিমার ওপর জিহাদ ফরয তখন ই’দাদও ফরয। ইদাদের আরেকটি উদ্দেশ্য হলো, শত্রুকে ভীত সন্ত্রস্ত রাখা। তাই মুসলমানদের জন্য সামর্থ্য সাপেক্ষে এই পরিমাণ ই’দাদ ফরয, যাতে জিহাদ অব্যাহত থাকে, শত্রুরা ভীত সন্ত্রস্ত থাকে এবং মুসলমানদের দ্বীন ঈমান ও ইজ্জত আব্রুর প্রতি চোখ তুলে তাকাবার সাহস তাদের না থাকে।
মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন,
وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِنْ دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ- الانفال:60
“তোমরা কাফেরদের (মোকাবেলা করার) জন্য তোমাদের সাধ্যানুযায়ী শক্তি ও পালিত ঘোড়ার দল প্রস্তুত রাখ, যার দ্বারা তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর দুশমন ও তোমাদের দুশমনদের এবং ওরা ছাড়াও অন্যদের, যাদের তোমরা জান না। আল্লাহ ওদের জানেন।” –সূরা আনফাল (৮) : ৬০
স্বাভাবিক অবস্থায় জিহাদ যখন ফরযে কেফায়া থাকে, তখন ই’দাদও ফরযে কিফায়া থাকে। কিন্তু জিহাদ যখন ফরযে আইন হয়ে যায়, তখন ই’দাদও ফরযে আইন হয়ে যায়। আর জানা কথা, বর্তমানে সমগ্র বিশ্বের সামর্থ্যবান সকল মুসলিমের ওপর জিহাদ ফরযে আইন। যুগ যুগ ধরে যেসব কাফের মুশরিকরা মুসলিমদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা যেমন ফরযে আইন, তেমনি যেসব নামধারী মুসলিম তাগুত শাসক; মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফেরদের সহযোগিতা করে আসছে, আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করে মুসলিমদের ওপর মানবরচিত বিধান চাপিয়ে দিচ্ছে এবং শরীয়াহ পরিপালনের অপরাধে হত্যা নির্যাতন চালাচ্ছে, তাদের বিরদ্ধেও জিহাদ করা ফরযে আইন। সুতরাং সমগ্র বিশ্বের প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের ওপর ই’দাদও ফরযে আইন।
ইমাম কুরতুবী রহ. (৬৭১ হি.) বলেন:
وتعلم الفروسية واستعمال الأسلحة فرض كفاية وقد يتعين.اهـ -تفسير القرطبي: 8/36
“অশ্বচালনা শিক্ষা করা এবং অস্ত্রপাতির ব্যবহার রপ্ত করা ফরযে কিফায়া। তবে কখনো কখনো ফরযে আইন হয়ে যায়।” -তাফসীরে কুরতুবী: ৮/৩৬
একবার শায়খ আবু কাতাদা ফিলিস্তিনি হাফিজাহুল্লাহর কাছে সামরিক ই’দাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি উত্তর দেন, বর্তমানে ই’দাদ ফরযে আইন। প্রশ্ন ও অনুবাদসহ ফতোয়াটি লক্ষ করুন-
حكم الإعداد العسكري للجهاد
السلام عليكم ورحمة الله وبركاته:
سؤال لفضيلة الشيخ ابو قتادة الفلسطيني:
ما حكم الإعداد العسكري للجهاد في سبيل الله وهل هو فرض عين على المقتدر؟
* * *
الجواب: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته.
أخي الطيب :
اعلم أن الجهاد اليوم فرض عين على كل مسلم قادر.
فالجهاد ضد اليهود فرض عين والجهاد ضد طواغيت العرب والعجم الذين بدلوا الشريعة واستحلوا الحرمات وناصروا أعداء الله تعالى وقتلوا المسلمين بسبب دينهم كل هؤلاء يجب أن يعلم أن الجهاد ضدهم فرض عين.
وحين يكون الأمر فرض عين تصبح مقدماته ووسائله كذلك، إذ الوسائل لها حكم المقاصد، والإعداد هو وسيلة الجهاد الذي لا يتحقق إلا بها، وبالتالي فالإعداد فرض عين اليوم على كل مسلم قادر ومن هذا الإعداد هو الإعداد العسكري
ولكن توزيع الناس إلى ما يلزمهم من أنواع الإعداد يوجب عليهم التنظيم والترتيب حتى يتم وضع المرء فيما يناسبه وما يحتاجه أهل الجهاد، فيكون حينئذ في موقع إعداد مناسب له يلبي حاجة أهل الإسلام في بلده. اهـ
“জিহাদের জন্য সামরিক প্রস্তুতি নেয়ার বিধান
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ
শ্রদ্ধেয় শায়খ আবু কাতাদা ফিলিস্তিনির নিকট প্রশ্ন:
‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’র জন্য সামরিক ই’দাদের হুকুম কী? সক্ষম ব্যক্তিদের ওপর কি তা ফরযে আইন?’
উত্তর:
ওয়াআলাইকুমুস সালামু ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ্!
শোনো, হে আমার প্রিয় ভাই! প্রত্যেক সক্ষম মুসলমানের ওপর আজ জিহাদ ফরযে আইন। ইহুদিদের বিরুদ্ধে জিহাদ ফরযে আইন। আরব ও অনারব তাগুতদের বিরুদ্ধে জিহাদ ফরযে আইন; যারা শরীয়ত পরিবর্তন করেছে, হারামগুলোর বৈধতা দিয়েছে, আল্লাহর দুশমনদেরকে সহায়তা করছে, ধর্মের কারণে মুসলমানদের হত্যা করছে। জেনে রাখা উচিৎ, এদের সকলের বিরুদ্ধেই জিহাদ ফরযে আইন।
কোনো কাজ ফরযে আইন হয়ে গেলে তার পূর্বপ্রস্তুতিমূলক কাজগুলো এবং তা পর্যন্ত পৌঁছার মাধ্যম ও উপকরণগুলোও ফরযে আইন হয়ে যায়। উপায় উপকরণের হুকুম মূল কাজের হুকুমের অনুরূপ। আর ই’দাদ হল জিহাদের উপকরণ, যা ছাড়া জিহাদ সম্ভব নয়। সুতরাং সকল সক্ষম মুসলমানের ওপর আজ ই’দাদ ফরযে আইন। আর সে ইদাদের একটি অংশ সামরিক প্রস্তুতি।
তবে যে যে শ্রেণির ই’দাদ আবশ্যক, লোকজনকে সেগুলোতে ভাগ করে দেয়ার জন্য যথাযথ ইনতিজাম ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। যাতে প্রতিটি ব্যক্তিকে উপযুক্ত ও মুজাহিদদের প্রয়োজনীয় পয়েন্টে সেট করা যায়। তখন ব্যক্তি তার জন্য উপযুক্ত এমন ই’দাদি পয়েন্টে নিয়োগ হবে, যা তার ভূখণ্ডের মুসলমানদের প্রয়োজন পূরণে অবদান রাখতে পারবে।” (সমাপ্ত)
উপরোক্ত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে যুগের চাহিদা অনুযায়ী যত ধরনের ই’দাদের প্রয়োজন, সামর্থ্য অনুযায়ী তার সবই ফরযের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমান যুগে জিহাদের গণ্ডি অনেক বিস্তৃত এবং শাখা প্রশাখাও অনেক। দাওয়াতি কার্যক্রম থেকে শুরু করে সামরিক, মিডিয়া, আইটি ইত্যাদি যত ধরনের বিভাগ জিহাদের জন্য আবশ্যক, সবগুলোই ই’দাদের অন্তর্ভুক্ত। তদ্রূপ ঈমান আকিদা দুরস্ত করা, আমল পরিশুদ্ধ করা, সবর ও তাওয়াক্কুলের প্রশিক্ষণ নেয়া, পরস্পর ভ্রাতৃত্ববোধ নিয়ে জামাতবদ্ধ হওয়া, প্রয়োজনীয় মাসায়েল ও ইলম শিক্ষা করাও ই’দাদের অন্তর্ভুক্ত।
ইমাম জাসসাস রহ. (৩৭০ হি.) উক্ত আয়াতের তাফসীরে একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেন,
قَوْله تَعَالَى: {وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ} أَمَرَ اللَّهُ تَعَالَى الْمُؤْمِنِينَ فِي هَذِهِ الْآيَةِ بِإِعْدَادِ السِّلَاحِ وَالْكُرَاعِ قَبْلَ وَقْتِ الْقِتَالِ إرْهَابًا لِلْعَدُوِّ وَالتَّقَدُّمِ فِي ارْتِبَاطِ الْخَيْلِ اسْتِعْدَادًا لِقِتَالِ الْمُشْرِكِينَ. ….. وَمَعْنَى قَوْلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “أَلَا إنَّ الْقُوَّةَ الرَّمْيُ” أَنَّهُ مِنْ مُعْظَمِ مَا يَجِبُ إعْدَادُهُ مِنْ الْقُوَّةِ عَلَى قِتَالِ الْعَدُوِّ، وَلَمْ يَنْفِ بِهِ أَنْ يَكُونَ غَيْرَهُ مِنْ الْقُوَّةِ، بَلْ عُمُومُ اللَّفْظِ شَامِلٌ لِجَمِيعِ مَا يُسْتَعَانُ بِهِ عَلَى الْعَدُوِّ مِنْ سَائِرِ أَنْوَاعِ السِّلَاحِ وَآلَاتِ الْحَرْبِ. وَ…..عَنْ الْحَكَمِ بْنِ عُمَيْرٍ قَالَ: أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ لَا نُحْفِيَ الْأَظْفَارَ فِي الْجِهَادِ وَقَالَ: “إنَّ الْقُوَّةَ فِي الْأَظْفَارِ” وَهَذَا يَدُلُّ عَلَى أَنَّ جَمِيعَ مَا يُقَوِّي عَلَى الْعَدُوِّ فَهُوَ مَأْمُورٌ بِاسْتِعْدَادِهِ. -أحكام القران 3\88-89
“আল্লাহ তায়ালার বাণী, ‘তোমরা কাফেরদের (মোকাবেলা করার) জন্য তোমাদের সাধ্যানুযায়ী শক্তি ও পালিত ঘোড়ার দল প্রস্তুত রাখ’। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা দুশমনদের ভীত সন্ত্রস্ত রাখার জন্য এবং কিতালের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে কিতালের সময় আসার পূর্বেই মুমিনদেরকে যুদ্ধের অস্ত্র শস্ত্র ও অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।…. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, ‘মনে রেখ, শক্তি হল নিক্ষেপণ’-এর অর্থ হল দুশমনের বিরুদ্ধে কিতালের জন্য যে শক্তি সঞ্চয় করা ফরয, নিক্ষেপণ হল, তার শ্রেষ্ঠতম একটি। তবে এখানে অন্যান্য প্রস্তুতি শক্তির অন্তর্ভুক্ত নয়, এমন কথা বলা হয়নি; বরং শব্দের ব্যাপকতা সকল প্রকার অস্ত্রকেই শামিল করে, যা দ্বারা শত্রুর মোকাবেলায় সাহায্য পাওয়া যায়।…. হাকাম ইবনে উমায়ের রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জিহাদের সময় নখ কাটতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, ‘শক্তি হল নখে’। এই হাদীস প্রমাণ করে, যত কিছু দ্বারা শত্রুর মোকাবেলায় শক্তি অর্জন করা সম্ভব, সবকিছু প্রস্তুত করার জন্যই বান্দা আদিষ্ট।” -আহকামুল কোরআন, খ. ৩, পৃ. ৮৮-৮৯
শহীদ সায়্যিদ কুতুব রহ. (১৩৮৫ হি.) বলেন,
يجب على المعسكر الإسلامي إعداد العدة دائماً واستكمال القوة بأقصى الحدود الممكنة؛ لتكون القوة المهتدية هي القوة العليا في الأرض؛ التي ترهبها جميع القوى المبطلة؛ والتي تتسامع بها هذه القوى في أرجاء الأرض ، فتهاب أولاً أن تهاجم دار الإسلام؛ وتستسلم كذلك لسلطان الله فلا تمنع داعية إلى الإسلام في أرضها من الدعوة ، ولا تصد أحداً من أهلها عن الاستجابة ، ولا تدعي حق الحاكمية وتعبيد الناس ، حتى يكون الدين كله لله .اهـ. -في طلل القرآن: 3/425
“ইসলামি সামরিক বিভাগকে সর্বদা যুদ্ধ সামগ্রী প্রস্তুত করতে থাকতে হবে। সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি অর্জন করতে হবে। যাতে দুনিয়ার সর্বোচ্চ শক্তিটি হয় হক ও হিদায়াত প্রাপ্তদের শক্তি। যে শক্তির ভয়ে দুনিয়ার তামাম বাতিল শক্তি ভীত সন্ত্রস্ত্র থাকবে। যে শক্তির সুখ্যাতি সকল বাতিল শক্তি দুনিয়ার আনাচে কানাচে আলোচনা করবে। যার ফলশ্রুতিতে প্রথমত তারা দারুল ইসলামে আগ্রাসন চালানোর হিম্মত পাবে না। তদ্রূপ আল্লাহ তাআলার কর্তৃত্বকে মেনে নিতে বাধ্য হবে। তাদের ভূমিতে দ্বীনে ইসলামের কোন দাঈ’কে বাধা দেবে না। সেখানকার কোন অধিবাসীকে সেই দাওয়াত কবুল করা থেকে রুখবে না। হাকিমিয়্যাহ’র বিধান প্রণয়ন এবং মানুষকে গোলাম বানানোর অধিকার দাবি করবে না। যার ফলে দ্বীন ও আনুগত্য সম্পূর্ণ আল্লাহ তাআলার হয়ে যাবে।” -তাফসীর ফী যিলালিল কুরআন : ৩/৪২৫
‘আলহুরূবুন নুআবিয়্যাহ ওয়াল-কিমিয়াবিয়্যাহ ওয়াল-বায়োলোজিয়্যাহ ফিল-মিযানিল ফিকহি’র প্রবন্ধকার বলেন (পৃষ্ঠা: ৫),
والآية السابقة في سورة الأنفال، وهي قوله تعالى: {وأعدوا لهم ما ستطعتم من قوة} تدل على وجوب الأخذ بجميع أسباب القوة، سواء كانت مادية أو معنوية؛ فالمادية كالإنفاق على السلاح، والتدريب في فنون الحرب، والمعنوية كالتآخي، والتصافي، والتواد. -الحروب النووية والكيمياوية والبيولوجية في الميزان الفقهي، ص:6، (عن مجلة الجندي المسلم، العدد:106)، -شاملة المنبر
“সূরা আনফালের পূর্বোক্ত আয়াত ‘তোমরা কাফেরদের (মোকাবেলা করার) জন্য তোমাদের সাধ্যানুযায়ী শক্তি প্রস্তুত রাখ’, প্রমাণ করে, শক্তির সকল উপকরণ গ্রহণ করা ফরয। চাই তা বস্তুগত হোক বা বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা মনস্তাত্ত্বিক। বস্তুগত প্রস্তুতি হল, অস্ত্র সংগ্রহ ও বিভিন্ন সামরিক প্রশিক্ষণ। বুদ্ধিবৃত্তিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি হল, পরস্পর ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব ও ঐক্য তৈরি করা।”
আল্লামা আব্দুর রহমান বিন নাসের সা’দি রহ. (১৩৭৬ হি.) বলেন,
وَأَعِدُّوا} … كل ما تقدرون عليه … التي بها يتقدم المسلمون ويندفع عنهم به شر أعدائهم … ومن ذلك: الاستعداد بالمراكب المحتاج إليها عند القتال، ولهذا قال تعالى: {وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ} وهذه العلة موجودة فيها في ذلك الزمان، وهي إرهاب الأعداء، والحكم يدور مع علته.
فإذا كان شيء موجود أكثر إرهابا منها، كالسيارات البرية والهوائية، المعدة للقتال التي تكون النكاية فيها أشد، كانت مأمورا بالاستعداد بها، والسعي لتحصيلها، حتى إنها إذا لم توجد إلا بتعلُّم الصناعة، وجب ذلك، لأن ما لا يتم الواجب إلا به، فهو واجب.اهـ -تفسير السعدي: 324
“তোমাদের সামর্থ্যের সবকিছুই তোমরা প্রস্তুত কর … যার দ্বারা মুসলমানরা এগিয়ে যাবে, তাদের শত্রুদের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে। … কিতালের প্রয়োজনীয় যুদ্ধযানও এর অন্তর্ভুক্ত। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
{وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ}
‘পালিত ঘোড়ার দল প্রস্তুত রাখ, যার দ্বারা তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর দুশমন ও তোমাদের দুশমনদের’।
এই ‘ইরহাব’ তথা ভীত সন্ত্রস্ত্র করার ইল্লত ও বৈশিষ্ট ওই যুগে ঘোড়া প্রস্তুত করার মাঝে ছিল। হুকুম ইল্লত অনুযায়ী হয়ে থাকে। কাজেই বর্তমান যুগে যদি অন্য কোন কিছুর মাঝে ‘ইরহাব’-‘ভীত সন্ত্রস্ত্র করা’র বৈশিষ্টটি ঘোড়া প্রস্তুত করার তুলনায় বেশি পাওয়া যায়, তাহলে সেটিও প্রস্তুতের জন্য আদিষ্ট হবে। যেমন, স্থলযান ও আকাশযান, যা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হয়, যা দ্বারা শক্তিশালী আক্রমণ করা যায়। এমনকি কারিগরি ও টেকনোলোজি শিক্ষা ব্যতীত যদি ‘ইরহাব’-‘ভীত সন্ত্রস্ত্রকরণ’ সম্ভব না হয়, তাহলে তাও শিক্ষা করা ওয়াজিব হবে। কেননা,
ما لا يتم الواجب إلا به، فهو واجب
‘যে জিনিস ব্যতীত ফরয আদায় সম্ভব নয়, সেটিও ফরয়’।” -তাফসীরে সা’দি: ৩২৪
উল্লেখ, জিহাদ মৌলিকভাবে একটি জামাতবদ্ধ আমল। সুতরাং সমষ্টিগতভাবে মুসলিমদের ওপর জিহাদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার প্রস্তুতি ফরয হলেও; আলাদা আলাদা প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর সব ধরনের প্রস্তুতি ফরয নয়। বরং এখানে কিছু বিষয় আছে, যেগুলোতে ভাগ হতে পারে এবং হওয়া জরুরিও। সুতরাং যিনি জিহাদের যে অংশের দায়িত্ব আঞ্জাম দিবেন, তার জন্য সেই অংশের প্রস্তুতি নেয়া জরুরি। তবে এই ভাগটি হবে ব্যক্তির যোগ্যতা ও কাজের প্রয়োজনের সঙ্গে সমন্বয় করে। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিবেন জামাতের আমির। সুতরাং যাদের পক্ষে জিহাদের জন্য জামাতবদ্ধ হওয়া সম্ভব, তাদের মধ্যে কে কোন প্রকারের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে, সে বিষয়ে আমিরের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বিবেচিত হবে এবং সে অনুযায়ী তাকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আর যারা জামাতবদ্ধ হতে পারছেন না, তারা এবিষয়ে বিজ্ঞ কারো শরণাপন্ন হয়ে তার পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। যেমনটি আমরা উপরে লক্ষ করেছি, শায়খ আবু কাতাদাহ তাঁর ফতোয়ার শেষাংশে বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।
فقط. والله تعالى اعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
২২ শে শাওয়াল, ১৪৪১ হি.
১৭ ই জুন, ২০২০ ইং
আরো পড়ূন
‘জিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার হুকুম কী?’ এই ফতোয়াটি সম্পর্কে একজন পাঠকের মতামত ও তার উত্তর