দান করার উদ্দেশ্য ব্যবসা করা এবং আনসার হওয়ার নিয়তে দালান নির্মাণ করার হুকুম কী?
দান করার উদ্দেশ্য ব্যবসা করা এবং আনসার হওয়ার নিয়তে দালান নির্মাণ করার হুকুম কী?
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
প্রশ্ন:
আমার কিছু প্রশ্ন, ১) জিহাদ ফরজে আইন হয় কখন?
২) জিহাদে সাদাকাহ করার উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ে সময় দিলে সে সময়ও কি ইবাদতের মধ্যে শামিল হবে?
৩) আনসার হওয়ার নিয়তে মজবুত ইমারত (বিল্ডিং) তৈরি করা হলে তাতে কি সাদাকাহ হিসেবে সওয়াব পাওয়া যাবে?
প্রশ্নকারী- ওমর
ঠিকানা- অজ্ঞাত
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
ধারাবাহিকভাবে আপনার প্রশ্নের উত্তর নিম্নরূপ:
প্রশ্ন ১: জিহাদ ফরজে আইন হয় কখন?
উত্তর: তিন অবস্থায় জিহাদ ফরজে আইন হয়। ক. মুজাহিদ যখন রণাঙ্গনে শত্রুর মুখোমুখি হয়। খ. যখন মুসলিমের দ্বীন, ভূমি, ইজ্জত আব্রু বা জান মাল ইত্যাদি শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হয়। গ. যখন খলিফাতুল মুসলিমিন কাউকে জিহাদের নির্দেশ দেন। বিস্তারিত জানার জন্য ‘জিহাদ কখন ফরযে আইন হয়’ শিরোনামে প্রকাশিত ১১৩ নং ফতোয়াটি দেখুন। লিংক: জিহাদ কখন ফরজে আইন হয়?
প্রশ্ন ২. জিহাদে সাদাকাহ করার উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ে সময় দিলে সে সময়ও কি ইবাদতের মধ্যে শামিল হবে?
উত্তর: জিহাদসহ অন্য যেকোনো দ্বীনি ও শরীয়াহ সম্মত জনকল্যাণমূলক কাজে সাদাকাহ করার উদ্দেশ্যে, এমনকি নিজের এবং পরিবার পরিজন ও আত্মীয়স্বজনের প্রয়োজনগুলো পূরণের উদ্দেশ্যে ব্যবসায় সময় দিলে, তাও সওয়াবের কাজ বলে গণ্য হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
الأعمال بالنية ولكل امرىء ما نوى. -صحيح البخاري: 54، صحيح مسلم: 5036
প্রত্যেক আমল তার নিয়ত অনুযায়ী বিবেচিত হয়ে থাকে। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তা-ই পাবে, যার সে নিয়ত করেছে। -সহীহ বুখারি: ৫৪, সহীহ মুসলিম: ৫০৩৬
অন্য হাদিসে ইরশাদ করেন,
إنك لن تنفق نفقة تبتغي بها وجه الله إلا أجرت عليها حتى ما تجعل في في امرأتك. –صحيح البخاري: 56، صحيح مسلم: 4296
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তুমি যা-ই খরচ করবে, তাতেই সওয়াব পাবে। এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লোকমা তুলে দাও তাতেও। -সহীহ বুখারি: ৫৬, সহীহ মুসলিম: ৪২৯৬
অন্য হাদিসে ইরশাদ করেন,
إذا أنفق الرجل على أهله يحتسبها فهو له صدقة. –صحيح البخاري: 55
কোনো ব্যক্তি যদি সওয়াবের উদ্দেশ্যে পরিবার পরিজনের পেছনে খরচ করে, তাহলে তাও তার জন্য সাদাকা বলে গণ্য হবে। -সহীহ বুখারি: ৫৫
আর জিহাদে সম্পদ ব্যয় করা সামর্থ্যবানদের ওপর ফরয দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
انْفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (41)
“হালকা ভারী যে অবস্থায়ই থাক (জিহাদে) বেরিয়ে পড় এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ কর। এটিই তোমাদের জন্যে অতি উত্তম, যদি তোমরা জান।” -সূরা তাওবা (০৯): ৪১
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
جَاهِدُوا الْمُشْرِكِينَ بِأَمْوَالِكُمْ، وَأَنْفُسِكُمْ، وَأَلْسِنَتِكُمْ. -مسند أحمد ط الرسالة: 12246، سنن أبي داود ت الأرنؤوط: 2504؛ قال الشيخ الأرنؤوط وغيره من المحققين في تحقيق المسند و تحقيق سنن أبي داود: إسناده صحيح. اهـ
“তোমরা নিজেদের সম্পদ, জীবন ও যবান দিয়ে মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর।” -মুসনাদে আহমাদ: ১২২৪৬, সুনানে আবু দাউদ: ২৫০৬ (হাদিসটি সহীহ)।
জিহাদের পথে সম্পদ ব্যয় করা স্বয়ং জিহাদ বলে গণ্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
من جهز غازيا في سبيل الله فقد غزا ومن خلف غازيا في سبيل الله بخير فقد غزا.
যে ব্যক্তি (জিহাদের সরঞ্জাম ও খরচাদি সরবরাহ করে) আল্লাহর রাস্তার কোন মুজাহিদকে (জিহাদের জন্য) প্রস্তুত করে দিল, সেও জিহাদ করল। যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তার কোন মুজাহিদের অনুপস্থিতিতে উত্তমভাবে তার পরিবারের দেখাশুনা করল, সেও জিহাদ করল। -সহী বুখারি: ২৬৮৮
সমরবিশেষজ্ঞদের মতে, মাল জিহাদের স্নায়ু। অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রের চেয়েও মালের গুরুত্ব বেশি। মাল ছাড়া অস্ত্র খরিদ করা সম্ভব নয়। মুজাহিদ ও তাঁদের পরিবার পরিজনের দিনগুজারি সম্ভব নয়। এজন্য আল্লাহ তাআলা দু’একটি ব্যতিক্রম বাদে কুরআনে কারীমের যেখানেই জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করার কথা বলেছেন, সেখানেই মালের কথা আগে উল্লেখ করেছেন। যেমন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنْجِيكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ (10) تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (11)} [الصف: 10، 11]
“হে মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের সম্পদ ও জীবন দিয়ে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম; যদি তোমরা জান।” –সূরা সাফ (৬১) : ১০-১১
{إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ} الحجرات 15
“প্রকৃত মুমিন তো তারা, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, এরপর কোনও সন্দেহে পড়েনি এবং নিজের সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে। প্রকৃতপক্ষে (ঈমানের দাবিতে) তারাই সত্যবাদী।”- সূরা হুজুরাত (৪৯): ১৫
এমন আরো বহু আয়াত রয়েছে।
সুফিয়ান সাওরি রহ. (১৬১হি.) বলেন,
الْمَالُ فِي هَذَا الزَّمَانِ سِلَاحٌ. –الحث على التجارة والصناعة لأبي بكر بن الخلال ص: 50
‘এ যামানায় অর্থই অস্ত্র।’ -আলহাসসু আলাততিজারাহ: ৫০
এজন্যই আল্লাহ তাআলা আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ খরচ করাকে সীমাহীন ফজিলতের কাজ বলে ঘোষণা করেছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
{مَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ} (البقرة: 261).
“যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে তাদের উপমা একটি শস্য দানার ন্যায়, যা থেকে সাতটি শীষ উদগত হয়, যার প্রতিটি শীষে থাকে একশত করে দানা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা আরো বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।”- সূরা বাকারা (০২): ২৬১
আরও ইরশাদ করেন,
{وَلَا يُنْفِقُونَ نَفَقَةً صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً وَلَا يَقْطَعُونَ وَادِيًا إِلَّا كُتِبَ لَهُمْ لِيَجْزِيَهُمُ اللَّهُ أَحْسَنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (121)} [التوبة: 121]
তারা আল্লাহর পথে যা কিছুই ব্যয় করে, সে ব্যয় অল্প হোক বা বেশি এবং তারা যেকোনো উপত্যকাই অতিক্রম করে, তা সবই (পূণ্য হিসেবে আমলনামায়) লিখে রাখা হয়, যাতে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে (এরূপ প্রতিটি আমলের বদৌলতে) এমন প্রতিদান দিতে পারেন, যা তাদের উৎকৃষ্ট আমলের জন্য নির্ধারিত আছে। -সূরা তাওবা (০৯): ১২১
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
«من أنفق نفقة في سبيل الله كتبت له بسبع مائة ضعف»: … وهذا حديث حسن. -سنن الترمذي: 1625، مسند أحمد: 19036، قال المحققون: إسناجه حسن. اهـ
যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোনো খরচ করবে, তা তার আমলনামায় সাতশ গুণ লিখা হবে। -মুসনাদে আহমাদ: ১৯০৩৬, জামে তিরমিযি: ১৬২৫
পক্ষান্তরে জিহাদের পথে সম্পদ ব্যয় করা থেকে বিরত থাকাকে নিজ হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করার নামান্তর আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে,
وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর এবং নিজ হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না। আর সুকর্ম কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন। -বাকারা: ১৯৫
ইমাম বাগাবি রহ. (৫১৬ হি.) বলেন,
يقول: ولا تلقوا بأيديكم إلى التهلكة بترك الإنفاق في سبيل الله، وهو قول حذيفة والحسن وقتادة وعكرمة وعطاء، وقال ابن عباس في هذه الآية، أنفق في سبيل الله وإن لم يكن لك إلا سهم أو مشقص [4] ولا يقولن أحدكم: إني لا أجد شيئا، وقال السدي فيها: أنفق في سبيل الله، ولو عقالا ولا تلقوا بأيديكم إلى التهلكة، ولا تقل: ليس عندي شيء، وقال سعيد بن المسيب ومقاتل بن حيان: لما أمر الله تعالى بالإنفاق قال رجال: أمرنا بالنفقة في سبيل الله [تعالى] ، ولو أنفقنا أموالنا بقينا فقراء، فأنزل الله هذه الآية، وقال مجاهد فيها: لا يمنعكم من نفقة في حق خيفة العيلة. -تفسير البغوي – إحياء التراث: 1/ 239
“আল্লাহ তায়ালা বলেন, এবং তোমরা আল্লাহর রাস্তায় খরচ পরিহার করার মাধ্য নিজ হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না। এটি হুজাইফা রা. হাসান রহ. কাতাদা রহ. ইকরিমা রহ. এবং আতা রহ.-র ব্যাখ্যা। ইবনে আব্বাস রা. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর, যদিও তোমার নিকট একটি তীর বা ফলা ব্যতীত আর কিছু না থাকে। তোমাদের কেউ যেন না বলে, আমি খরচ করার মতো কিছু পাচ্ছি না’। সুদ্দী রহ. আয়াতটির তাফসীরে বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর, যদি একটি রশি হয় তবুও। নিজ হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না। বলো না, আমার কাছে কিছুই নেই’। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব রহ. ও মুকাতিল ইবনে হাইয়্যান রহ. বলেন, আল্লাহ যখন খরচ করার নির্দেশ দিলেন, কিছু লোক বলল, আমাদেরকে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা যদি খরচ করি, তবে তো আমরা ফকির হয়ে যাব। তখন আল্লাহ উক্ত আয়াতটি নাযিল করলেন। মুজাহিদ রহ. আয়াতটির ব্যাখ্যায় বলেন, দারিদ্রের ভয় যেন তোমাদেরকে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা থেকে বিরত না রাখে।” তাফসীরে বাগাবি: ১/২৩৯
কাজেই জিহাদের পথে অর্থ ব্যয় শুধু একটি সওয়াবের কাজই নয়, ফরযও বটে এবং তাতে ফরয আদায়ের সওয়াবই পাওয়া যাবে। এ উদ্দেশ্যে কেউ ব্যবসায় সময় দিলে অবশ্যই তা সওয়াবের কাজ বলে গণ্য হবে।
আবু মূসা আশআরি রাদি. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে,
قال النبي صلى الله عليه و سلم ( على كل مسلم صدقة ) . قالوا فإن لم يجد ؟ قال ( فيعمل بيديه فينفع نفسه ويتصدق ) -صحيح البخاري: 5676، صحيح مسلم: 2380
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, প্রত্যেক মুসলিমের উপর সাদাকাহ করা আবশ্যক। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, যদি তার সামর্থ্য না থাকে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তার দু’টি হাতের মাধ্যমে উপার্জন করবে, তারপর নিজেরও উপকার করবে এবং সাদাকাও করবে।” -সহীহ বুখারী: ৫৬৭৬, সহীহ মুসলিম: ২৩৮০
অন্য হাদীসে এসেছে,
عن أبي مسعود، قال: لما أمرنا بالصدقة كنا نتحامل، فجاء أبو عقيل بنصف صاع، وجاء إنسان بأكثر منه، فقال المنافقون: إن الله لغني عن صدقة هذا، وما فعل هذا الآخر إلا رئاء، فنزلت: {الذين يلمزون المطوعين من المؤمنين في الصدقات، والذين لا يجدون إلا جهدهم}. -صحيح البخاري: 4391، صحيح مسلم: 2402
আবু মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা যখন আমাদেরকে সাদাকার আদেশ দিলেন, তখন আমরা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বোঝা বহন করতাম (এবং সাদাকা করতাম)। একদিন আবু আকীল আধা সা পরিমাণ খেজুর নিয়ে আসেন, অপর এক ব্যক্তি অনেক সাদাকা নিয়ে আসে। তখন মুনাফিকরা বলল, আল্লাহ তায়ালার আবু আকীলের (সামান্য) সাদাকার প্রয়োজন নেই, আর এতো লোক দেখানোর জন্য (অনেক) সাদাকা করেছে। তখন এই আয়াত নাযিল হয়, ‘ (অনুবাদ) মুমিনদের মধ্য হতে যারা নফল সাদাকা করে এবং যারা নিজেদের সাধ্যানুযায়ী সামান্য দান করে, (মুনাফিকরা) তাদের সমালোচনা করে, (তাদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে, আল্লাহ তায়ালা তাদের ঠাট্টা বিদ্রুপের বদলা নেবেন এবং তাদের জন্য রয়েছে, কঠোর শাস্তি)। -সহিহ বুখারী: ৪৩৯১ সহিহ মুসলিম: ২৪০
ইমাম আবু বকর খাল্লাল রহ. (৩১১ হি.) বলেন,
حدثنا أبو بكر المروذي، قال: سمعت رجلا، يقول لأبي عبد الله رحمه الله: إني في كفاية، فقال: «الزم السوق تصل به الرحم وتعود به» -(الحث على التجارة والصناعة، ص: 25)
আবু বকর মারওয়াযী আমাদের নিকট বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি আবু আব্দুল্লাহ (ইমাম আহমদ রহ.)কে বলেন, আমার তো যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। ইমাম আহমদ বললেন, (এরপরও) তুমি বাজারে যাও, ব্যবসা-বাণিজ্য কর। এর মাধ্যমে তুমি আত্মীয়দের সহায়তা ও অসুস্থদের সেবা করতে পারবে। -আলহাসসু আলাত তিজারাতি ওয়াস সানায়াহ, পৃ: ২৫
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮ হি.) উপার্জনের বিভিন্ন পর্যায়ের বিধান বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন,
ومنه ما يكون مستحبا: مثل هذا إذا اكتسب ما يتصدق به؛ فقد ثبت في الصحيحين عن أبي موسى عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: على كل مسلم صدقة قالوا: يا رسول الله فمن لم يجد. قال: يعمل بيده ينفع نفسه ويتصدق … اهـ
“উপার্জনের একটা পর্যায় হলো মুস্তাহাব। যেমন সাদাকাহ করার জন্য উপার্জন করল। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, প্রত্যেক মুসলিমের উপর সাদাকাহ করা আবশ্যক রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, যদি তার সামর্থ্য না থাকে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তার দু’টি হাতের মাধ্যমে উপার্জন করবে, তারপর নিজের উপকার করবে এবং সাদাকাহ করবে …।” -মাজমুউল ফাতাওয়া: ৮/৫৩৭
ইমাম সারাখসী রহ. (৪৯০ হি.) বলেন,
لأن اكتساب ما يتقوى به على الطاعة يكون طاعة، وهو مندوب إلى الإتيان بما هو طاعة. -المبسوط للسرخسي:30/ 265
“কারণ, যে জিনিসের দ্বারা নেক কাজে শক্তি লাভ হবে তা উপার্জন করাও নেক কাজ। আর মুমিনকে তো নেক কাজ করার প্রতিই উৎসাহিত করা হয়েছে।” –মাবসুত: ৩০/২৯৬
প্রশ্ন ৩. আনসার হওয়ার নিয়তে মজবুত ইমারত (বিল্ডিং) তৈরি করা হলে তাতে কি সাদাকাহ হিসেবে সওয়াব পাওয়া যাবে?
উত্তর: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
كل معروف صدقة. –صحيح البخاري: 5675، صحيح مسلم: 2375
প্রতিটি নেক কাজই একেকটি সাদাকাহ। -সহীহ বুখারি: ৫৬৭৫, সহীহ মুসলিম: ২৩৭৫
গেরিলা জিহাদে মুজাহিদদের আশ্রয়সহ নানান কাজে উপযোগী একটি বাড়ি জিহাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক উপাদান। যা ব্যতীত গেরিলা যুদ্ধ সম্ভবই নয়। সুতরাং জিহাদের আনসার ও সহযোগী হওয়ার উদ্দেশ্যে আপন ঘর বাড়ি ত্যাগ করে আসা মুজাহিদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ইমারত তৈরি করাও সাওয়াবের কাজ এবং জিহাদের অংশ হবে ইনশাআল্লাহ।
এক হাদীসে এসেছে-
“عن عقبة بن عامر، قال: سمعت رسول الله -صلى الله عليه وسلم- يقول: “إن الله عز وجل يدخل بالسهم الواحد ثلاثة نفر الجنة: صانعه يحتسب في صنعته الخير، والرامي به، ومنبله”. –جامع الترمذي 1637، قال الإمام الترمذي رحمه الله: وهذا حديث حسن. سنن أبي داود 2513، قال المحقق شعيب الأرنؤوط رحمه الله: حديث حسن بمجموع طرقه وشواهده.
“উকবা ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তায়ালা একটি তীরের মাধ্যমে তিনজন লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন: ১. তৈরিকারী, যিনি সাওয়াব প্রাপ্তির জন্য তৈরি করেছেন, ২. নিক্ষেপকারী এবং ৩. নিক্ষেপকারীর হাতে যে উঠিয়ে দেয়।” –জামে’ তিরমিযি: ১৬৩৭, সুনানে আবু দাউদ: ২৫১৩
তবে বাস্তবেই বাড়িটি জিহাদের কাজে ব্যবহার উপযোগী হবে কি না বা কিভাবে কোথায় নির্মাণ করলে উপযোগী হবে, তার জন্য অবশ্যই আপনাকে সময়ের মুজাহিদদের পরামর্শ নিতে হবে। অন্যথায় দেখা যাবে হয়তো অনেক অর্থ ব্যায় করেও তা থেকে কাঙ্খিত উপকার পাওয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, জিহাদ একটি ইজতেমায়ী ও যৌথ আমল। ব্যক্তি কেন্দ্রিক প্রচেষ্টায় কিছু ফায়েদা হলেও জামাতবদ্ধ হওয়া ব্যতীত জিহাদের ফরিজা যথাযথ আদায় করা সম্ভব নয়। তাই আপনার উচিৎ হকপন্থী কোনো জিহাদি সংগঠনে যুক্ত হয়ে তাদের প্রাজ্ঞ নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করা। জিহাদে সামর্থ্য অনুযায়ী জান মাল উভয়টি ব্যয় করাই ফরয। শুধু সাদাকা বা আর্থিক সহযোগিতার দ্বারা জিহাদের ফরয দায়িত্ব পরিপূর্ণ আদায় হবে না। জান মাল উভয়টি দেয়ার জন্যই প্রস্তুত থাকতে হবে। এরপর বিজ্ঞ দায়িত্বশীলগণ যখন যেভাবে নির্দেশনা দিবেন, সে অনুযায়ী কাজ করে যেতে হবে। তবেই আপনার চেষ্টাগুলো যথার্থ ফলদায়ক হবে এবং সফলতাও আসবে ইনশাআল্লাহ।
তাছাড়া বিজ্ঞ কোনো আল্লাহ ওয়ালার দিক নির্দেশনা ব্যতীত এককভাবে সম্পদ উপার্জন ও বাড়ি গাড়ির ফিকিরে থাকলে, অনেক সময় দুনিয়ার চাকচিক্যের মোহে আসল উদ্দেশ্যই হারিয়ে যায় এবং শুরুটা ইখলাসের সঙ্গে দ্বীনের সহযোগিতার উদ্দেশ্যে হলেও শেষ পরিণতিতে সে পাকা একজন সম্পদলোভী দুনিয়াদার ও দ্বীনের দুশমনে পরিণত হয়। সুতরাং এককভাবে এজাতীয় কাজ করা নিতান্তই ঝুঁকিপূর্ণ।
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি উফিয়া আনহু
১৭-০৪-১৪৪২ হি.
০৩-১২-২০২০ ইং