আগ্রাসনউস্তায আবু আনওয়ার আল-হিন্দিপ্রবন্ধ-নিবন্ধভারতীয়সকল-উলামাহিন্দুত্ববাদ

হিন্দুস্থান ক্রমাগত ধ্বংসের পথে…

হিন্দুস্থান, ক্রমাগত ধ্বংসের পথে

 

ফাতওয়া, হিন্দুস্থান ধ্বংসের পথে...

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

হিন্দুস্থান, ক্রমাগত ধ্বংসের পথে

 

উস্তাদ আবু আনওয়ার আল হিন্দি হাফিযাহুল্লাহ

 

ভূমিকা

সম্মানিত তাওহীদবাদী ভাই ও বোনেরা! মুহতারাম উস্তাদ আবু আনোয়ার আল-হিন্দি হাফিযাহুল্লাহ’র ‘হিন্দুস্থান, ক্রমাগত ধ্বংসের পথে…’ গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা আপনাদের সম্মুখে বিদ্যমান। গুরুত্বপূর্ণ এই লেখায় তিনি হিন্দুস্থান কিভাবে ক্রমাগত ধ্বংসের পথে আগাচ্ছে, তা সংক্ষেপে এবং সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। নিঃসন্দেহে এই প্রবন্ধে আমরা আমাদের করণীয় সম্পর্কেও দিক-নির্দেশনা পাব ইনশা-আল্লাহ।

এই লেখাটির উর্দু সংস্করণ ইতোপূর্বে ‘জামা‌আত কায়িদাতুল জিহাদ উপমহাদেশ শাখা’র অফিসিয়াল উর্দু ম্যাগাজিন ‘নাওয়ায়ে গাযওয়ায়ে হিন্দ’ এর গত মে-জুলাই ২০২২ ইংরেজি সংখ্যায় “হিন্দুস্থান…. তাবাহী কে রাস্তে পর বাগটট্ গামুজন” (ہندوستان…. تباہي كے راستے پر بگٹٹ گامزن) শিরোনামে প্রকাশিত হয়। অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই লেখাটির মূল বাংলা অনুবাদ আপনাদের সামনে পেশ করছি। আলহামদুলিল্লাহ ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।

আম-খাস সকল মুসলিম ভাই ও বোনের জন্য এই রিসালাহটি ইনশাআল্লাহ উপকারী হবে। সম্মানিত পাঠকদের কাছে নিবেদন হল- লেখাটি গভীরভাবে বারবার পড়বেন, এবং নিজের করণীয় সম্পর্কে সচেতন হবেন ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহ এই রচনাটি কবুল ও মাকবুল করুন! এর ফায়দা ব্যাপক করুন! আমীন।

 

সম্পাদক

৬ই সফর, ১৪৪৪ হিজরি

৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ ইংরেজি

 

 

হিন্দুস্থান, ক্রমাগত ধ্বংসের পথে…

উস্তাদ আবু আনওয়ার আল হিন্দি হাফিযাহুল্লাহ

ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মানে যে নিকৃষ্ট ও জঘন্য হামলা চালিয়েছে – তা পৃথিবীর কারো অজানা নয়। ভারতীয় মুসলিমরা যখন এই অন্যায় দৃষ্টতার প্রতিবাদ জানাতে চেয়েছে, তখন ভারত সরকার মুসলিমদের বিরুদ্ধে জুলুম ও নিপীড়নের পথ উম্মুক্ত করে দেয়। ভারতীয় পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তাবাহিনী প্রতিবাদরত নিরস্ত্র মুসলিমদের উপর গুলি চালায় এবং তাদেরকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানায়। এই ঘটনায় রাষ্ট্রযন্ত্রও তৎপর হয়েছিল; তবে তা সংখ্যালঘু মুসলিমদের পক্ষে নয়, বরং বিপক্ষে। সুপরিকল্পিতভাবে মুসলিমদের ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও তথাকথিত নিরপেক্ষ ও ধর্মনিরপেক্ষ বিচার বিভাগ সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ এই সংবিধানকে তারা ‘পবিত্র ও নিরপেক্ষ’ বলে দাবি করে। এই পুরো সময়টাতেই লিবারেল (কথিত উদারপন্থী) হিন্দুরা উভয় দলের দোষগুলো চিহ্নিত করে উভয়কেই দোষারোপ করতে থাকে এবং শান্তি ও পুনর্মিলনের আহবান জানায়।

সাম্প্রতিক সময়ের এই ঘটনাবলী এবং তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং নিশ্চিত বাস্তবতাকে তুলে ধরে।

এক: রাসুলে মাহবুব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মানে জঘন্য এই হামলার মাধ্যমে ভারত সরকার সাধারণভাবে এবং হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন বিশেষভাবে ইসলাম ও সমগ্র ইসলামী বিশ্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা সামগ্রিকভাবে মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন এবং ভারতীয় রাষ্ট্রকে টার্গেট করে মুজাহিদদের হামলার হুমকি প্রদান তাদের অপরাধের উপযুক্ত জবাব ছিল। ইনশাআল্লাহ এই ধারাবাহিকতায় আরও হুমকি আসবে এবং বাস্তবায়ন করা হবে। আর নিঃসন্দেহে (ফাসাদ) সূচনাকারী-ই বড় জালিম।

দুই: সময়ের সাথে সাথে এই বাস্তবতা সুস্পষ্ট হচ্ছে যে, ভারত সরকার হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের সমর্থক এবং তাদের অপরাধের একান্ত সহযোগী। কয়েক দশক ধরে ভারতীয় বিচারব্যবস্থার প্রধান কাজ হয়ে উঠেছে হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের বৈরী ও দাঙ্গাভিত্তিক কর্মকাণ্ডগুলোকে আইনি ন্যায্যতা প্রদান করা। পরিস্থিতি এখন এমন হয়েছে যে, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধকে বৈধতা দেওয়া।

প্রিয় নবীর সম্মানে এই হামলার আগেও আমরা দেখেছি, কীভাবে হিন্দু সন্ত্রাসীরা পবিত্র রমজান মাসে মুসলিমদের বাড়িতে হামলা করেছে। আমরা দেখেছি কীভাবে এই বর্বর মুশরিকরা মসজিদের উপর তাদের পতাকা উত্তোলন করেছে। আমরা দেখেছি কীভাবে এই গরু-বানরের পূজারিরা মুসলিম নারীদের নিয়ে অশ্লীল শ্লোগান দিয়েছে। আমরা দেখেছি কীভাবে পুলিশ প্রতিটি স্থানে এই সন্ত্রাসীদের সহায়তা ও সহযোগিতা করেছে। এবং আমরা এটাও দেখেছি – কীভাবে প্রশাসন ও বিচার বিভাগ মুসলিমদের বাড়িঘর ভেঙ্গে তাদের জুলুম ও নির্যাতনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার জন্য পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করেছিল!

ভারতীয় রাষ্ট্র কখনোই মুসলিমদের রক্ষা করবে না, উল্টো হিন্দু সন্ত্রাসীদেরকে সর্বতোভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা করবে। এমতাবস্থায় অত্যাচারীর কাছে ন্যায়বিচার ও অধিকার দাবি করা পাগলামি ছাড়া আর কি?

তিন: তথাকথিত উদারপন্থী হিন্দুরাও মুসলিমদের মিত্র বা সাহায্যকারী নয়। সম্প্রতি অভিশপ্ত নূপুর শর্মার মামলার মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। তারা প্রথমে হিন্দু এবং মুসলিম উভয় দলকে দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে সতর্ক করে। এরপর উভয়ের মাঝে সমন্বয়ের একটি মিথ্যা ছক তৈরি করেছে। জালিম আর মাজলুমকে তারা এমন এক কাতারে একত্রিত করেছে; যেখানে উভয়কে অপরাধী বলা হচ্ছে! একই সাথে অভিশপ্ত নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দালের মত ঘৃণ্য অপরাধীদের অপরাধকেও হাল্কা করে দেখেছে। তাদের উদারতার এই ‘বিশেষ রীতি’ নতুন নয়। বরং তারা বার বার এই রীতির পুনরাবৃত্তি করেছে।

মুসলিমরা যখনই হিন্দু সন্ত্রাসীদের অত্যাচার দমন বা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে, তখনই এই উদারপন্থীরা একের পর এক তাদের গুহা থেকে বেরিয়ে আসে এবং শান্তি ও সম্প্রীতির সবক দিতে থাকে। এরা হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসী ডাকাত ও লুটেরাদের হামলার সময় বাধা দেয় না। তবে বাড়ির মালিক আত্মরক্ষা করতে চাইলে তারা উভয়ের কাছে নিরাপত্তা ও শান্তির আবেদন জানাতে আসে।

কথিত এই উদারপন্থীরা অত্যন্ত সতর্কতা ও সূক্ষ্মতার সাথে একটি কৌশল অবলম্বন করেছে। নিজেরা নিরাপদ থাকার জন্য মুসলিমদের নেওয়া যেকোন পদক্ষেপকে এরা ‘বেআইনি ও অপরাধ’ বলে সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছে। এই উদারপন্থীদের প্রধান কাজ হল – হিন্দুত্ববাদী গুণ্ডারা মুসলিমদের গলা কেটে তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া পর্যন্ত মুসলিমদের ঘুম পাড়িয়ে রাখা।

চার: এইসব ঘটনার প্রতি ভারতের মুসলিম নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায় যে, তারা এখনও বর্তমান বিশ্ব ও বৈশ্বিক রাজনীতি সম্বন্ধে এমন প্রাচীন ধারণা রাখেন যা বহুকাল আগেই বাতিল হয়ে গেছে। হিন্দুস্তানের মুসলিমদের অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। এই সমস্যা থেকে মুক্তির কোন সাংবিধানিক উপায় নেই। এবং তাদের মাঝে এমন কোন জাতীয় ঐক্যও নেই, যার মাধ্যমে এই হুমকির মোকাবেলা করা যাবে। অপরিণামদর্শী হিন্দুস্তানি মুসলিমদের এই স্বপ্ন থেকে বের হয়ে বাস্তবতা উপলব্ধি করা অত্যন্ত জরুরী।

পাঁচ: পশ্চিমাদের থেকে সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়া যাবে – এই আশায় বসে থাকার মানে হয় না। (ইতিহাস সাক্ষী) ইতিপূর্বে তারা বসনিয়ার মুসলিমদের কোন উপকারে আসেনি। (তাদের ভাসা ভাসা কিছু বক্তব্যে) নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমদের দুর্ভোগ একটুও কমেনি। সিরিয়ার মুসলিমরাও তাদের থেকে কোন অনুগ্রহ পায়নি। এবং তাদের দ্বারা উইঘুরের নির্যাতিত মুসলিমদের আজও কোন উপকার হচ্ছে না। আল্লাহ বিশ্বের মুসলিমদের কষ্ট এবং পরীক্ষা সহজ করুন এবং আমাদেরকে আমাদের দুর্বলতার জন্য ক্ষমা করুন।

নব্বই এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্ব যে একটি সংক্ষিপ্ত জাগরণ দেখেছিল, তা পার হয়ে গেছে। বিশ্ব নেতৃত্ব লিবারেলদের হাতে যাবার পর মানুষ যে স্বপ্ন দেখেছিল, শীঘ্রই তা দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। মনে করা হয়েছিল ইউরোপ-আমেরিকা ভারতের মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। অথচ এখন আমেরিকা ও ইউরোপ ভারতের মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে আসছেই না, বরং খোদ ভারত ও হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন গিয়ে আমেরিকার ছায়াতলে বসে আছে। ক্রুসেডার, জায়নিস্ট এবং হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন – এরা সবাই একই নৌকার যাত্রী।

অন্যদিকে ভারত এই অঞ্চলে আমেরিকার সবচেয়ে মূল্যবান মিত্র। চিনের লাগাম টেনে ধরতে, পাকিস্তানি মুসলিমদের জ্বলন্ত ইসলামী জজবা ঠাণ্ডা রাখতে, সীমান্তের সাহসী ও উদ্যমী জাতিদের দমিয়ে রাখতে, বাংলাদেশে হাজী শরিয়ত উল্লাহ’র অপরাজেয় সন্তানদের দমিয়ে রাখতে এবং আফগানিস্তানের ইসলামী ইমারাহকে চাপে রাখতে মোদি এবং যোগীদের আমেরিকার খুব প্রয়োজন। ভারতকে ক্ষুব্ধ করার ঝুঁকি আমেরিকা কখনই নিবে না।

আর এটাও মনে রাখা দরকার যে, মুসলিমদের শক্তিশালী, স্থিতিশীল ও স্বাধীন রাজনৈতিক মর্যাদার অস্তিত্ব – আমেরিকার সবচেয়ে বড় ভয়ের কারণ। সেজন্য আমেরিকা কখনো এই ঝুঁকি নিবে না যে, উপমহাদেশের মুসলিমরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আবদ্ধ সীমানা থেকে নিজেদের মুক্ত করে নিজস্ব চিন্তাভাবনা অনুসারে কাজ শুরু করবে। তাই, গণহত্যার দিকে হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের ক্রমবর্ধমান এজেন্ডা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিবে না।

ছয়: আরব রাষ্ট্রগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা। তবে আরব বিশ্বের মুসলিমরা ঈমানী ভালোবাসা ও আকীদা বিশ্বাসের ভিত্তিতে হিন্দুস্তানি মুসলিমদের পাশেই আছেন -এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এই মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর দখলদার শাসকেরা বৈশ্বিক ক্রুসেডার ও জায়োনিষ্টদের হাতের পুতুল ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশেষ করে বিন জায়েদ এবং বিন সালমানের মতো শাসকরা মোদির প্রকাশ্য মিত্র, সহযোগী ও সমর্থক। সুতরাং, তিক্ত বাস্তবতা হল এই – কোনও বহিরাগত শক্তি ভারতের মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না। হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে বিদ্বেষ, ফিতনা-ফ্যাসাদ ও দাঙ্গার ঢেউ তৈরি করেছে, তার প্রতিকারের জন্য ভারতীয় মুসলিমরা বহিরাগত কোন সাহায্য পাবে না।

হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন দিনকে দিন মুসলিমদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাড়াচ্ছে। ভারত ও উপমহাদেশের মুসলিমরা যদি অদূর ভবিষ্যতে নিজেদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে না চায় তবে এখনই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। এটাই হল সেই মৌলিক উপলব্ধি – যা থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যেকোনও আলোচনা তৈরি হতে হবে। এটিই সেই মৌলিক ভিত, যার ভিত্তিতে আমাদেরকে, উপমহাদেশের মুসলিমদেরকে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার কৌশলটি বের করতে হবে। আল্লাহর ইচ্ছা এবং সাহায্যে এই কর্মপন্থা পরিশেষে বিজয়ের রূপ নিবে।

 

ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে……

আমরা এই পত্রিকার পৃষ্ঠাগুলোতে এর আগেও বহুবার উল্লেখ করেছি যে, হিন্দুস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি দ্রুততার সাথে অবনতির দিকে যাচ্ছে। ভারতে হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন শীঘ্রই এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে যাবে যেখানে একটি মাত্র স্ফুলিঙ্গ – এমন অগ্নি প্রজ্বলিত করবে, যা অকল্পনীয় মাত্রায় বরবাদি ও ধ্বংসযজ্ঞ ছড়াবে এবং জুলুম ও সহিংসতার একটি অপ্রতিরোধ্য সূত্র জন্ম দিবে। এটি কেবল উপমহাদেশের মুসলিমদের জন্যই ধ্বংসাত্মক হবে – বিষয়টা এমন নয়। বরং এই অঞ্চলে বসবাসকারী সাধারণ হিন্দু এবং অন্যান্য জাতির জন্যও বিপর্যয় বয়ে আনবে। বাস্তবতা এবং ঐতিহাসিক প্রমাণের ভিত্তিতেই এই সতর্কীকরণ। একে কোনভাবেই অতিরঞ্জন বলে ভাবা ঠিক হবে না। দুঃখজনক হলেও এটি একটি বাস্তবধর্মী বিশ্লেষণ। দুর্ভাগ্যবশত এই অঞ্চলের মুসলিমরা বিশেষ করে হিন্দুস্তানের মুসলিমরা এখনও তাদের দিকে দ্রুত ধেয়ে এই ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করতে অক্ষম।

এমন একটি গাড়িকে কল্পনা করুন, যা দ্রুতগতিতে কোন অন্ধকার গর্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই গাড়ির কোন ব্রেক নেই এবং দিক পরিবর্তনের জন্য কোন স্টিয়ারিংও নেই। গাড়িটি কেবল এক দিকেই চলতে পারে। আর তা চলছে ঐ অতল গহ্বরের দিকে। এর থেকে কোন রেহাই নেই। হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন ভারতে মুসলিমদের জন্য এমনি এক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তা সত্ত্বেও, ভারতের অধিকাংশ মুসলিম নেতৃত্ব এখনও সংবিধান ও নাগরিক অধিকার নিয়ে নিরর্থক বিতর্কে বিভ্রান্ত হয়ে আছে। (হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের) গাড়িটি দ্রুততার সাথে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এসকল মুসলিম নেতৃবৃন্দ এখনো গাড়ির ভিতরকার ডিজাইন ও রঙ-রূপ নিয়ে তর্কে বিতর্কে লিপ্ত!

এই বিশেষ উদাহরণটি আমার নিজের উদ্ভাবিত নয়। এটি আরএস.এস প্রধান ও নেতা মোহন ভাগবতের কথা। পূর্ববর্তী নিবন্ধগুলিতে আমরা আরএস.এস এর ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ২০২২ সালের এপ্রিলে মোহন ভাগবত তার একটি বক্তৃতায় বলেছিল:

“আমাদের গাড়ি যাত্রা শুরু করেছে। এটি একটি ব্রেকহীন গাড়ি। এই গাড়িতে শুধু একটি এক্সিলারেটর আছে। যারা থামানোর চেষ্টা করবে, তারাই ধ্বংস হয়ে যাবে। যারা আমাদের সাথে আসতে চায়, তারা যেন চলে আসে। গাড়ি কারো জন্য থামবে না। যদি আমরা এই গতিতে চলতে থাকি, তাহলে আগামী 20-25 বছরে অখন্ড ভারত বাস্তবে পরিণত হবে। আর যদি আমরা আরেকটু পরিশ্রম করি—যেটা আমরা অবশ্যই করব—তাহলে এ সময়কাল অর্ধেক হয়ে যাবে এবং ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে অখণ্ড ভারত দেখতে পাব।”

মোহন ভগবতের এই বক্তব্যের উপর কোন মন্তব্য করার আগে অখণ্ড ভারতের ধারণাটি বোঝা জরুরি। হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন দাবি করে যে, অখন্ড ভারত বা ইউনাইটেড হিন্দুস্তান একটি ঐতিহাসিক সত্য, যার উল্লেখ পুরাণে (হিন্দু ধর্মগ্রন্থ) এসেছে। পুরাণ হল – পৌত্তলিক গল্প-কাহিনী এবং দাস্তান সম্বলিত একটি প্রাচীন গ্রন্থ, যা হিন্দুরা পবিত্র বলে মনে করে।

হিন্দুত্ববাদী তাত্ত্বিকদের মতে, অখন্ড ভারতে বর্তমান আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের এলাকা গুলোও অন্তর্ভুক্ত। অখণ্ড ভারতের যে মানচিত্র আরএস.এস এর সদস্যরা তাদের ঘর এবং অফিসে রাখে, সে অনুযায়ী পশ্চিমে আফগানিস্তান থেকে পূর্বে মায়ানমার পর্যন্ত সমগ্র অঞ্চল হিন্দুদের এই পৌরাণিক রাজ্যের অংশ।

হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের জন্য অখন্ড ভারত শুধু একটি ঐতিহাসিক বা রাজনৈতিক লক্ষ্য নয়, বরং একটি ধর্মীয় লক্ষ্য ও কর্তব্যও বটে। কিছু ক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদীদের এই অখণ্ড ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ইহুদিদের ‘দ্যা গ্রেটার ইসরাইল’ (বৃহত্তর ইসরাইল) দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সাদৃশ্য রাখে। ইহুদিদের মতে – ইসরাইলের সীমানা নীল নদের তীর থেকে ফুরাত নদী পর্যন্ত বিস্তৃত।

ফিলিস্তিন এবং কাশ্মীরের পরিস্থিতির মতো ইহুদিবাদ এবং হিন্দুত্ববাদের মধ্যে আরও অনেক বিষয়ে আকর্ষণীয় মিল রয়েছে। যাইহোক, এটি একটি ভিন্ন আলোচনা যা এই মুহূর্তে আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। তবে এটা তাৎপর্যহীন নয় যে, ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও বন্ধুদের মধ্যে, বিশেষ করে হিন্দুত্ববাদীদের সমর্থন ও সহযোগীতার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক ইহুদিবাদীরা অগ্রভাগে রয়েছে।

যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন,

لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ ٱلنَّاسِ عَدَ ٰ⁠وَةࣰ لِّلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ ٱلۡیَهُودَ وَٱلَّذِینَ أَشۡرَكُوا۟ۖ

“অর্থঃ আপনি অবশ্যই মুসলিমদের প্রতি শত্রুতায় মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা কঠোর পাবেন ইহুদিদেরকে এবং সে সমস্ত লোককে যারা (প্রকাশ্য) শিরক করে। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫: ৮২)

বিজেপি, আরএস.এস সহ এজাতীয় অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর চূড়ান্ত লক্ষ্য হল অখণ্ড ভারত গঠন করা। কিন্তু এ ধরণের প্রতিটি পরিকল্পনার দাবি অনুযায়ী ভারতকে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং শ্রীলঙ্কা দখল করতে হবে। স্পষ্টতই, এক-আধটি নয় বরং বেশ কয়েকটি প্রতিবেশী দেশ আক্রমণ এবং দখল করার ইচ্ছা প্রকাশ করাতো দুরের কথা – এ ধরণের সামান্যতম অঙ্গভঙ্গিও ভারতের জন্য বিশাল শত্রুতা এবং অসুবিধা সৃষ্টি করবে। আর এ বিষয়ে ভারত সম্যক অবগত। তাই বিজেপি ও আরএস.এস তাদের অবস্থানের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং অখণ্ড ভারতের দাবি টিকিয়ে রাখতে এতটুকুই বলছে যে, তারা ভারতের নেতৃত্বে এমন একটি কনফেডারেশন গঠন করতে চায়, যাতে এই সমস্ত দেশ অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসী ও বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাসই প্রমাণ করে যে, এটা বিরোধীদের শান্ত রাখার একটা অজুহাত মাত্র।

 

হিন্দুত্ববাদের হিদায়াতনামা

আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদীদের প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের প্রথমেই তাদের স্বভাব প্রকৃতি বুঝতে হবে। জানতে হবে – কীভাবে তারা তাদের এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন সবসময়ই ইতালীয় ফ্যাসিবাদ এবং জার্মান নাৎসি আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত ছিল। বিষয়টি ঐতিহাসিক ও জ্ঞানীদের অজানা নয়। এমনকি সাংবাদিক মারজিয়া ক্যাসোলারি সহ অন্যরাও এ বিষয়ে লিখেছেন। হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের প্রথম দিকের নেতারা বেনিতো মুসোলিনি ও এডল্ফ হিটলারের মত নেতাদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিল। একজন প্রাথমিক হিন্দুত্ববাদী চিন্তাবিদ ডি.ভি. তাহমানকার ১৯৪৭ সালে মুসোলিনি এবং ফ্যাসিবাদের উপর একটি বই লিখে প্রকাশ করেছিল। এই বইটিতে ইতালীয় এই স্বৈরশাসকের জীবনী এবং তার ফ্যাসিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

কিন্তু ফ্যাসিবাদের যে বিষয়টি দ্বারা হিন্দুত্ববাদী নেতারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছিল সেটা হল – সশস্ত্র সমাজ গঠন এবং অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ফ্যাসিবাদী যুবভিত্তিক সংগঠন গঠন।

হিন্দুত্বেবাদের আরেকজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, আদর্শিক ব্যক্তিত্ব এবং অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা ছিলেন – বি. এস. মুঞ্জে। মুঞ্জে শুধুমাত্র হিন্দু মহাসংঘের প্রধানই ছিলেন না, বরং আরএস.এস প্রতিষ্ঠাতা কে. বি. হেডগোয়ার (কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার) এর প্রশিক্ষক ও দিকনির্দেশকও ছিলেন। ১৯৩১ সালে বি. এস. মুঞ্জে ইতালিতে সফর করেন এবং মুসোলিনির সাথে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাতের পর তিনি বেনিতো মুসোলিনি দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন। ভারত প্রত্যাবর্তনের পর বি. এস. মুঞ্জে ইতালিতে দেখে আসা বাহিনীর আদলে সশস্ত্র যুব সংগঠন তৈরি করতে নিরলশভাবে কাজ করেন। সাংবাদিক মারজিয়া ক্যাসোলারি এমনও লিখেছেন যে, প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে আরএস.এস এর নিয়োগ পদ্ধতি ইতালিতে মুসোলিনির ফ্যাসিবাদী যুব সংগঠনগুলির মতই ছিল।

হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনগুলো একইভাবে জার্মানির নাৎসিদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। ১৯৩৮ সাল থেকে জার্মানির নাৎসি বাহিনী হিন্দু মহাসভাগুলোর প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছিল। হিন্দুত্ববাদীরা ‘ইহুদিদের ব্যাপারে জার্মান নাৎসিদের কর্মপন্থা’ আমদানি করে এবং হিন্দুস্তানের পরিস্থিতিতে তা প্রয়োগ করে। ফলে জার্মানদের অবস্থার বিবেচনায় – আর্য জার্মানদের জায়গায় হিন্দুস্তানে অবস্থান নেয় আর্য হিন্দুরা, আর ইহুদিদের অবস্থানে হিন্দুস্তানে আসে মুসলিমরা।

হিন্দুত্ববাদের বর্তমান মানসিকতা এবং কর্মপদ্ধতি বোঝার জন্য এবং ভারতে তাদের ভবিষ্যৎ উদ্যোগগুলিকে অনুমান করার জন্য ‘হিন্দুত্ববাদী চিন্তার’ গঠনে মৌলিক ভূমিকা পালনকারী কারণগুলি বুঝা প্রয়োজন।

ইতালির ফ্যাসিস্ট এবং জার্মানির নাৎসি – উভয়ই এই সশস্ত্র সংগঠনগুলিকে (ব্ল্যাকশার্ট বাহিনী ও ব্রাউনশার্ট বাহিনী) খুব কার্যকরভাবে ব্যবহার করেছিল। প্রকৃতপক্ষে, এই সশস্ত্র সংগঠনগুলির আক্রমণাত্মক এবং রক্তাক্ত কর্মকাণ্ডই মুসোলিনি ও হিটলারকে ক্ষমতায় আনতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল।

ইতালিতে বেনিতো মুসোলিনি ‘ব্ল্যাক শার্টস’ নামে একটি সশস্ত্র সংগঠন তৈরি করেছিলেন। এই সংগঠনের কর্মীরা কালো পোশাক পরত। পোশাকের কারণে এদেরকে ‘ব্ল্যাক শার্ট’ নামে নামকরণ করা হয়।

ব্ল্যাক শার্ট বাহিনী মুসোলিনির সব ধরণের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। মুসোলিনির রাজনৈতিক অবস্থান তৈরিতে এরা একান্ত সহযোগী ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ব্ল্যাক শার্ট বাহিনীর আগ্রাসনের মাধ্যমেই মুসোলিনি ইতালি দখল করতে সক্ষম হয়।

১৯২২ সালের অক্টোবরে, মুসোলিনি তার ফ্যাসিস্ট পার্টি সাথে নিয়ে ইতালির রাজধানী রোমের দিকে যাত্রা করে। এ যাত্রার উদ্দেশ্য ছিল ইতালীয় রাজাকে মুসোলিনির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য করা। অন্যদিকে মুসোলিনির ব্ল্যাক শার্ট বাহিনী ইতিমধ্যেই দেশের কৌশলগত অবস্থানগুলি দখল করে নিয়েছিল। ফ্যাসিস্ট পার্টির সশস্ত্র ব্ল্যাক শার্ট বাহিনী এবং হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রোমের বাইরে জড়ো হয়েছিল। তারা সবাই মুসোলিনিকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করার দাবি জানায়। ‘ব্যাপক সহিংসতার ভয়’ ইতালীয় রাজাকে তাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য করে।

একইভাবে জার্মানিতে, এসএ বাহিনী (Sturmabteilungen/SA, শাব্দিক অর্থ – আক্রমণাত্নক সৈন্যদল) হিটলারকে ক্ষমতায় আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯২১ সালে গঠিত এই সংগঠনটি (যা ব্রাউন শার্ট নামেও পরিচিত) প্রতিষ্ঠার মুল লক্ষ্য ছিল – এই বাহিনীর শক্তি, ক্ষমতা ও আগ্রাসনকে নাৎসি পার্টির এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহার করা। হিটলার কর্তৃক গঠিত এই এস.এ (SA) বাহিনী তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের শক্তি ভাঙতে এবং তাদের শত্রুদের কোণঠাসা করতে অবিরাম জুলুম-নিপীড়ন, সহিংসতা, আগ্রাসন এবং ভয়কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল। এস.এ বাহিনী অলিতে গলিতে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মারামারি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দেয়, যা নাৎসি পার্টিকে রাজপথ ও অলি গলির নিয়ন্ত্রণ নিতে সহায়তা করেছিল। প্রকৃত অর্থে এস.এ বাহিনী এক রাজত্বের মধ্যে আরেক রাজত্ব হয়ে উঠেছিল।

১৯৩৩ সালে নাৎসিরা ক্ষমতায় আসার পরেও, এস.এ বাহিনী বিরোধীদের আক্রমণ করার ধারা অব্যাহত রাখে। অনেক ক্ষেত্রে এটি সাধারণ জার্মান জনগণের সমর্থন ও অনুমোদন পেয়েছিল। অনেকেই প্রকাশ্যে এস.এ বাহিনীর এসকল আক্রমণাত্নক প্রচেষ্টা ও কাজকে সমর্থন করত। সেই সময়ে বার্লিনে বসবাসকারী ব্রিটিশ লেখক ক্রিস্টোফার ইশারউড (১৯০৪-১৯৮৬) লিখেছেন-

‘সাধারণ জার্মান নাগরিকরা এস.এ বাহিনীর গুন্ডাদের দিকে তাকাতো উৎসাহের হাসির সাথে’।

১৯৩৩ সালের গোড়ার দিকে নাৎসি পার্টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতরসহ পুরো জার্মানির নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়। এরপর এস.এ বাহিনী ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও আগ্রাসনের’ নিয়মিত অভিযান শুরু করে। হাজার হাজার নাৎসি বিরোধীদের গ্রেফতার করা হয় এবং অস্থায়ী কারাগারে বন্দী করা হয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতা, নিপীড়ন, মারধর, হত্যা, বাড়িঘর ও অফিস লুটপাট ও ধ্বংস করা ছিল তাদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে এস.এ বাহিনী ও তার মতো অন্যান্য সংগঠনগুলিকে পুলিশ এবং রাষ্ট্রযন্ত্র (আইন আদালত, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের যাবতীয় চালিকা শক্তি) দ্বারা সাহায্য করা হত।

আজ আমরা ভারতে ঠিক একই কৌশল এবং পদ্ধতির প্রয়োগ দেখতে পাচ্ছি। বিজেপি, আরএস.এস এবং অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি সততার সাথে এই কৌশলগুলি অনুসরণ করছে।

হিন্দুত্ববাদের এক একটি ঘটনা দেখুন এবং এরপর ভারত সরকার কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল সেটাও দেখুন।

বাবরি মসজিদ শহীদ ও ধ্বংস করার জন্য কীভাবে সংগঠিত আগ্রাসন চালানো হয়েছিল এবং সশস্ত্র সংগঠনগুলো সেক্ষেত্রে কী ভূমিকা রেখেছিল সেটা আরেকবার চিন্তা করুন।

কয়েক বছর আগে গুজরাটে মুসলিমদের উপর যে পরিকল্পিত গণহত্যা চালানো হয়েছিল তাতে বজরং দল এবং আর.এস.এস-এর মতো সশস্ত্র সংগঠনগুলো জড়িত ছিল। তারা মুসলিমদেরকে গণহত্যা, নির্যাতন এবং মহিলাদের ধর্ষণে সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। এমনকি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টির মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি, যাদের মাঝে মুসলিমদের জন্য বিশেষ কোন দয়া মায়া নেই, তারাও বলতে বাধ্য হয়েছিল যে, গুজরাটের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সরকার এবং পুলিশের পরিপূর্ণ সমর্থন ছিল। সেসময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিল নরেন্দ্র মোদি। সে হামলার পরিকল্পনায় সংঘ পরিবারের পাশাপাশি কাজ করেছিল।

গো-রক্ষার নামে চালানো হত্যার অসংখ্য ঘটনাগুলো দেখুন। হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা শুধুমাত্র গরুর গোশত বহন করার অভিযোগে মুসলিমদেরকে ঘিরে ফেলছে এবং নির্যাতন করে হত্যা করছে! ২০১৯ সালে দিল্লিতে যা ঘটেছিল তা স্মরণ করুন। এখানেও হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা উপস্থিত ছিল। পুলিশ এবং সরকারের প্রত্যক্ষ সমর্থনে এই সন্ত্রাসীরা মুসলিমদের উপর ভয়াবহ হামলা চালিয়েছিল।

কয়েক বছর ধরে আসামে যা চলছে তার উপর এবার দৃষ্টি দেয়া যাক। রাস্তা-ঘাটে যখন তখন এই সন্ত্রাসীরা মুসলিমদের উপর হামলা করে আসছে। আর যদি কোন মুসলিম নিজেকে রক্ষা করতে চায়, তখন এই সন্ত্রাসীদের সাহায্য করার জন্য পুলিশ এসে পড়ে।

এই বছরের রমযানের দাঙ্গার কথায় ধরুন; সশস্ত্র হিন্দু সংগঠনগুলো মসজিদের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। অনেক জায়গায় মসজিদে হামলা করতেও দ্বিধা করেনি। আর এখন অভিশপ্ত নূপুর শর্মার ঘটনায়ই ধরুন; মুসলিমরা যখন এই বাড়াবাড়ির প্রতিবাদ করতে বের হল, তখন তাদেরকে সন্ত্রাসী সশস্ত্র হিন্দু সংগঠনের পাশাপাশি পুলিশের আগ্রাসনেরও শিকার হতে হয়েছে।

আমরা বারবারই দেখছি যে, হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন ইতালির “ব্ল্যাক শার্টস” এবং জার্মানির “ব্রাউন শার্ট” এর দেখানো পথে চলছে। এই সাদৃশ্যগুলো এখানেই শেষ নয়।

হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের চালানো প্রোপাগান্ডা পদ্ধতিতেও নাৎসিদের সাথে অনেক সাদৃশ্যতা দেখা যায়। হিন্দুদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার ধারণা বাড়াতে মোদি একটি ধারাবাহিক প্রচারণা শুরু করেছিল। একটি গুজব তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল। সেখানে ‘সংখ্যালঘু মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের জন্য হুমকি’ – এ কথা বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। হিন্দুদেরকে দেশীয় আর মুসলিমদেরকে ‘বিদেশি’ বা ‘বহিরাগত আগ্রাসী শক্তি’ হিসেবে দেখিয়ে মোদি সরকার মুসলিমদেরকে সকলের একক টার্গেটে পরিণত করেছে। এখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে পুরো ভারত ঐক্যবদ্ধ।

ঠিক যেভাবে হিটলার ইয়াহুদিদের একক টার্গেটে পরিণত করেছিল, সেভাবেই মোদীরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভারতের সকলকে ঐক্যবদ্ধ করেছে।

বিজেপি এবং আরএস.এস কীভাবে পুরো ভারতের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে – সেটাও দেখার একটি বিষয়। তারা মূলত হিটলারের নাৎসি পার্টির প্রতিষ্ঠিত দৃষ্টান্তের অনুসরণ করছে। বিজেপির অনুরূপ নাৎসি পার্টিও গনতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল। ক্ষমতায় এসেই পরিকল্পিতভাবে নাৎসি চিন্তা-আদর্শকে সরকারী যন্ত্রে প্রবর্তন ও সংহত করেছে। আর এই কাজটাই বিজেপি এখন করছে।

বিজেপি হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডাকে সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে বাস্তবায়িত করেছে। (যেমন, শিক্ষা সিলেবাসে)। আর বিজেপি ও মোদি ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে অনেক বেশি ভোটে নির্বাচিত হওয়ার দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা হিন্দুত্ববাদকে সমর্থন করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ জার্মানরাও নাৎসিদের সমর্থক ছিল।

ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীরের একটি বিশেষ মর্যাদা ছিল। এই ৩৭০ ধারা বাতিল করা, সি.আই.আই. পাশ করা, পরিকল্পিতভাবে মসজিদে হামলা করা এবং এই দাবি করা যে – সেটা মূলত মন্দির ছিল, রাজপথে বৃদ্ধি পাওয়া সহিংসতা – এসবই হিন্দুত্ববাদের স্বপ্ন ‘অখণ্ড ভারত’ প্রতিষ্ঠার দিকে দ্রুতগামী পদক্ষেপ। এর ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতে বাড়তেই থাকবে।

সবশেষে এটাও দেখার বিষয় যে, ইতালির ফ্যাসিবাদ এবং জার্মানির নাৎসি দুটোই সম্প্রসারণবাদী ধারণার সমর্থক ছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালে ইতালির সর্বাধিনায়ক মুসোলিনি ঐসব এলাকা দখল করতে চেয়েছে – যেসব এলাকায় তার দাবিতে ‘ঐতিহাসিকভাবে ইতালিয়ানদের বাসস্থান ছিল’।

হিটলার অন্য জাতিদের এলাগুলো দখল করতে চাইতো। সে মনে করতো জার্মান অধিবাসিদের বসবাসের জন্য আরও অনেক জমি লাগবে। হিন্দুত্ববাদীদের অখণ্ড ভারতের স্বপ্নের মধ্যে এই চিন্তার ছাপ স্পষ্ট দেখা যায়।

মুসোলিনি আলবেনিয়া, গ্রীস, লিবিয়া, ইরিত্রিয়া এবং সোমালিয়ায় সামরিক অভিযান শুরু করেছিল এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও শরিক হয়েছে। হিটলারের সম্প্রসারণবাদ যদি তাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়াতে বাধ্য করে তাহলে অখণ্ড ভারতের এই স্বপ্ন না জানি কোন যুদ্ধের দিকে গড়ায় এবং কি পরিমাণ বিপদাপদ নিয়ে আসে?!

আমি পাঠকদেরকে আবারো এই কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, আমাদের এই বিশ্লেষণ কোন কল্পনাপসুত, অতিরঞ্জন বা অবাস্তব ধারণার উপর ভিত্তি করে করা হয়নি। বরং এটি ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। এরপর একে স্পষ্ট দলিলাদিল্লার আলোকে সাজানো হয়েছে, যা হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের বিভিন্ন কার্যকলাপ থেকে আমরা দেখিয়েছি।

 

সম্মান ও বেঁচে থাকার প্রশ্ন

ভারতে মুসলিমদের ভবিষ্যৎ কী হবে?

উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি – ভারতের মুসলিমদেরকে সামনে অনেক আগ্রাসনের সম্মুখীন হতে হবে। তাদের দ্বীন, ইজ্জত ও জীবনের উপর আক্রমণ চলতেই থাকবে।

হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনগুলোর মধ্যে উগ্রতা ও চরমপন্থা দিন দিন বাড়বে। সামনের দিনগুলোকে মিডিয়া মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা বৃদ্ধিকারী উপাদান আরও বেশি করে প্রচার করবে। অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনকে সমর্থন জানাবে আরও ব্যাপক মাত্রায়।

বিচার বিভাগ ও প্রশাসন হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবে। পুলিশ আর.এস.এস, বজরং দল এবং জাগো হিন্দু পরিষদের সন্ত্রাসীদের প্রতি তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। অর্থাৎ সামষ্টিকভাবে মুসলিমদের উপর সহিংসতা, নিপীড়নের ধারাবাহিকতা এবং হয়রানি বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে যে হারে বৈশ্বিক অর্থনীতির অধঃপতনের প্রভাব ভারতে প্রকাশ পাবে; সমানুপাতিক হারে মুসলিম নির্যাতনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।

অতএব নিজের ইজ্জতের হেফাজত এবং নিজের জীবন রক্ষার্থে ভারতের মুসলিমদেরকেই এই আগ্রাসনের মোকাবেলা করতে হবে। তাদের উচিৎ হবে – স্থানীয় পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং জাতীয় পর্যায়ে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করা।

সামনে হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন তাদের সশস্ত্র সংগঠনগুলো দ্বারা মুসলিমদের উপর হামলা করবে। পুলিশ এক্ষেত্রে তাদেরকে কোন বাধা দিবে না। তাই ভারতের মুসলিমদের জন্য আবশ্যক হল – তারা যেন এইসব আক্রমণকে থামানোর জন্য কোন এক পর্যায়ের প্রতিরোধ সক্ষমতা অর্জন করে।

এটা খুবই সহজ ব্যাপার। আইন, সংবিধান বা জাতীর বিবেকের কাছে যতদিন ধরে বিচার চাওয়া হয়েছে সে দিনগুলো শুধু নষ্টই হয়েছে। যেই সময়গুলো নাগরিক অধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার দাবিতে ব্যয় হয়েছে সেগুলোর আরও ভালো ব্যবহার করা যেত।

ভারতের মুসলিমদের উপর আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে – তারা নিজেদের ও নিজেদের মা-বোনদের ইজ্জত ও সম্মান রক্ষা করার জন্য শারীরিকভাবে যোগ্য হয়ে উঠবে। যেসব নেতা বা আন্দোলন এই বাস্তবতাকে বুঝতে সক্ষম নয় বা একে অস্বীকার করে – তারা নেতৃত্বের যোগ্যই নয়।

স্পষ্টত এটিই একমাত্র পথ যার উপর মুসলিমদের মেহনত করতে হবে, মনোনিবেশ করতে হবে। বৈশ্বিক ভাবেও ভারতের মুসলিমদের বর্তমান অবস্থার উপর সচেতনতা সৃষ্টি ও তা ছড়িয়ে দেয়া তাদের উপর আবশ্যক। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে তা ছড়িয়ে দিতে হবে। একটি মজবুত সামাজিক সংগঠন তৈরি করা এবং তাকে স্থিতিশীল করা মুসলিমদের উপর এখন আবশ্যক হয়ে পড়েছে, যে সংগঠন মুসলিমদের মাঝে ঐক্য সৃষ্টি করবে এবং তাদেরকে পথ দেখাবে।

মুসলিমদের জন্য ইসলামের সঠিক শিক্ষার উপর আমল করা এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, উদারতাবাদ ও মানব রচিত আইন-কানুনের মূর্তিকে ছুড়ে ফেলা আবশ্যক। এছাড়াও আরও অনেক পথ-পদ্ধতি রয়েছে, যেগুলো গ্রহণ করতে অনেক চিন্তা-ফিকিরের প্রয়োজন। আর এই রচনায় আমরা অবিলম্বে করা যায় এবং স্বল্প মেয়াদি পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনা করছি। দীর্ঘ মেয়াদি পদক্ষেপের ধারণা দেয়ার জন্য একটি স্বতন্ত্র রচনার প্রয়োজন। কিন্তু শারীরিকভাবে নিজের প্রতিরক্ষার যোগ্যতা অর্জন করা – এটা এমন একটি বিষয় যা সর্বশেষ অস্তিত্বের লড়াইয়ে ফায়সালাকারীর ভূমিকা রাখবে ইনশা আল্লাহ। আল্লাহই সঠিক বিষয় সম্পর্কে ভালো জানেন।

 

সারকথা:

হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের নেতারাই ভারতকে একটি ব্রেকহীন চলমান গাড়ির সাথে তুলনা করছে। সেই সাথে অখণ্ড ভারত-এর কাল্পনিক ও পৌরাণিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করছ। হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন এমন একটি কৌশল অনুসরণ করছে যা ইতালির ফ্যাসিবাদী আন্দোলন এবং জার্মানির নাৎসিদের প্রতিষ্ঠিত উদাহরণগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে প্রতিফলিত করে। ইতিহাস সাক্ষী – এই পথ অনিবার্যভাবে যুদ্ধের শিখা প্রজ্বলিত করে।

হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন আজ যে আগুন জ্বালাচ্ছে, আগামীকাল নিজেরাই তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। হিন্দুত্ববাদীরা আগ্রাসনের ঝড় তুলতে চায়। মুসলিমদেরকে অবর্ণনীয় ব্যথা ও যন্ত্রণা ভোগ করাতে চায়। কিন্তু ধ্বংসের যে গর্ত তারা তৈরি করছে, তারা নিজেরাও তাতে পতিত হওয়া থেকে রেহাই পাবে না।

পরিশেষে আমি পাঠকদেরকে আল্লাহ তায়ালার দুটি আয়াত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে বলেন:

أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ ﴿٣٩﴾

“অর্থ: যুদ্ধে অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে যাদের সাথে কাফেররা যুদ্ধ করে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম”। (সুরা হাজ্জ ২২:৩৯)

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন:

لَّا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ ۚ أُولَٰئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ ۖ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ۚ أُولَٰئِكَ حِزْبُ اللَّهِ ۚ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ﴿٢٢﴾

“অর্থ: যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে”। (সুরা মুযাদিলা ৫৮:২২)

 

***

 

আরো পড়ুন- ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের মুসলিম নিধন প্রস্তুতির বিভিন্ন পর্যায়

Related Articles

Back to top button