সাধারণ অবস্থায় মাথা মুণ্ডানো কি বিদআত?
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্নঃ
আমি মনে করতাম, মাথা মুণ্ডানো সুন্নত। ইসলামিক কিছু বইয়েও এমন পেয়েছি। কিন্তু একবার মাথা মুণ্ডানোর পর একজন হুজুর একটি কিতাব দেখিয়ে বললেন, মাথা মুণ্ডানো বিদআত। বিষয়টি দলীলসহ জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নকারী- আহমদুল্লাহ
উত্তরঃ
মাথা মুণ্ডানো সুন্নতও নয়, বিদআতও নয়; বরং তা মুবাহ বা জায়েয। -আস-সিয়ায়াহ, পৃ: ৩০১-৩০৩; বাযলুল মাজহুদ: ২/২৭৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া: ৯/৩২৮-৩২৯; আত-তামহীদ: ৬/৭৮; আল-মাজমু’: ১/২৯৫; আল-মুগনী: ১/৬৭
মাথা মুণ্ডানো জায়েয হওয়ার ব্যাপারে অনেক হাদীস রয়েছে, যথা:
এক.
عن ابن عمر: أن النبي -صلى الله عليه وسلم- رأى صبيا قد حلق بعض شعره، وترك بعضه، فنهاهم عن ذلك، وقال: احلقوا كله أو اتركوا كله. – سنن أبي داود (4195) وقال النووي في المجموع (1/296) : إسناده صحيح على شرط البخاري ومسلم.
“আবদুল্লাহ বিন উমর (রাযি) হতে বর্ণিত, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাচ্চা দেখলেন, যার মাথার কিছু অংশ মুণ্ডিয়ে কিছু অংশ রেখে দেয়া হয়েছে। তখন তিনি তাদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, হয় পুরো মাথা মুণ্ডিয়ে ফেলো, না হয় পুরো মাথায় চুল রেখে দাও।” -সুনানে নাসায়ী: ৫০৪৮; সুনানে আবু দাউদ: ৪১৯৫
ইমাম নাসায়ী (রহ) এ হাদীসের শিরোনাম দিয়েছেন এভাবে: الرخصة في حلق الرأس অর্থাৎ ‘মাথার চুল মুণ্ডানোর অনুমোদন’। -সুনানে নাসায়ী: ৮/১৩০
ইমাম নববী (রহ) বলেন,
وهذا صريح في إباحة حلق الرأس. – شرح النووي على مسلم (7/167)
“এ হাদীস মাথা মুণ্ডানো বৈধ হওয়ার সুস্পষ্ট দলীল।” -শরহে মুসলিম: ৭/১৬৭
দুই.
عن عبد الله بن جعفر: أن النبي -صلى الله عليه وسلم- أمهل آل جعفر ثلاثا أن يأتيهم، ثم أتاهم، فقال: “لا تبكوا على أخي بعد اليوم” ثم قال: “ادعوا لي بني أخي” فجيء بنا كأنا أفرخ، فقال: “ادعوا لي الحلاق” فأمره، فحلق رؤوسنا. – سنن أبي داود، باب في حلق الرأس: (4192) وقال النووي في المجموع (1/296) : إسناده صحيح على شرط البخاري ومسلم.
“আবদুল্লাহ বিন জাফর (রাযি) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাফর (রা)-এর পরিবারকে (তাঁর শাহাদাতের পর) তিন দিন শোক প্রকাশের সুযোগ দেন। অতঃপর তিনি বলেন, আজকের পর তোমরা আমার ভাইয়ের জন্য আর কাঁদবে না। এরপর তিনি বললেন, আমার ভাইয়ের সন্তানদের আমার সামনে আনো। তখন আমাদেরকে তাঁর সামনে হাজির করা হলো পাখির বাচ্চার মতো। তখন তিনি বললেন, আমার কাছে একজন নাপিত ডেকে আনো। তিনি তাকে হুকুম দিলে, সে আমাদের মাথার চুল মুণ্ডিয়ে দিল।” -সুনানে আবু দাউদ: ৪১৯২
তিন.
عن علي عن النبي صلى الله عليه وسلم، قال: من ترك موضع شعرة من جسده من جنابة لم يغسلها ، فعل به كذا وكذا من النار ، قال علي : فمن ثم عاديت شعري، قال : وكان يجز شعره. – سنن أبي داود: (249) مصنف ابن أبي شيبة (1073) وقال الشيخ عوامة: وقد صحح إسناده الحافظ في التلخيص الحبير 1/142، وقال: “فإنه من رواية عطاء بن السائب، وقد سمع منه حماد قبل الاختلاط، …” قلت: الجمهور على سماع حماد من عطاء قبل الاختلاط، وترى جزم الحافظ هنا.
“আলী (রাযি) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ফরয গোসলে একটি পশম পরিমাণ স্থান ধৌত করা পরিত্যাগ করে, তার উক্ত স্থান জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে। আলী (রাযি) বলেন, এ কারণেই আমি আমার চুলের সাথে শত্রুতামূলক আচরণ করি। বর্ণনাকারী বলেন, আলী (রাযি) মাথার চুল মুণ্ডিয়ে ফেলতেন।” -সুনানে আবু দাউদ: ২৪৯; মুসান্নাফ ইবনে শাইবা: ১০৭৩
চার.
عن أبي البختري، قال: خرج حذيفة، وقد طم شعره، فقال: إن تحت كل شعرة لا يصيبها الماء جنابة، فعافوها ، فلذلك عاديت رأسي كما ترون. مصنف ابن أبي شيبة (1072) قال الشيخ عوامة: “طم شعرَه” أي: جزه واستأصله.
“আবুল বাখতারী (রহ) বলেন, হুযাইফা (রাযি) চুল মুণ্ডিয়ে ঘর থেকে বের হলেন এবং বললেন, যে চুলের নিচে পানি পৌঁছে না তা অপবিত্র, সুতরাং তোমরা একে ঘৃণা করে (এ থেকে বেঁচে থাকো।) এ কারণেই আমি আমার মাথার চুলের সাথে শত্রুতা করছি, যেমনটা তোমরা দেখছ।” -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা: ১০৭২
তবে যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু ও আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম সাধারণত বাবরি চুল রাখতেন, হজ ও উমরাহ ব্যতীত অন্য সময় মাথা মুণ্ডাতেন না এবং আলী ও হুযাইফা (রাযি)ও মুণ্ডাতেন গোসলের সময় পানি পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সতর্কতাস্বরূপ, মাথা মুণ্ডানো উত্তম মনে করে নয়, তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও অধিকাংশ সাহাবীর অনুসরণে হলকের পরিবর্তে বাবরি চুল রাখা উত্তম।
ইবনে উমর (রাযি) থেকে বর্ণিত হাদীসের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী কারী (রহ) বলেন,
فيه إشارة إلى أن الحلق في غير الحج والعمرة جائز، وأن الرجل مخير بين الحلق وتركه. الأفضل أن لا يحلق إلا في أحد النسكين كما كان عليه – صلى الله عليه وسلم – مع أصحابه – رضي الله عنهم – وانفرد منهم علي – كرم الله وجهه -. مرقاة المفاتيح (7/2818)
“হাদীসটিতে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, হজ ও উমরা ব্যতীত এমনিতেও মাথা মুণ্ডানো জায়েয এবং মাথা মুণ্ডানো ও না মুণ্ডানোর ক্ষেত্রে ব্যক্তির স্বাধীনতা রয়েছে। তবে উত্তম হলো হজ বা উমরা ব্যতীত মাথা না মুণ্ডানো। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম এমনই করতেন। শুধু আলী (রাযি) এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন।” -মেরকাত: ৭/২৮১৮
হাফেয ইবনে হাজার (রহ) বলেন,
وكان السلف يوفرون شعورهم لا يحلقونها. -فتح الباري (8/68)
“সালাফরা পূর্ণ বাবরি রাখতেন, মুণ্ডাতেন না।” -ফাতহুল বারী: ৮/৬৮
থানভী (রহ) বলেন,
سنت مطلقہ وہ ہے جس کو حضور صلی اﷲ علیہ وسلم نے بطور عبادت کیا ہے، ورنہ سنن زوائد سے ہوگا، تو بال رکھنا حضور صلی اﷲ علیہ وسلم کا بطور عادت کے ہے، نہ بطور عبادت کے؛ اس لئے اولیٰ ہونے میں تو شبہ نہیں ، مگراس کے خلاف کو خلافِ سنت نہ کہیں گے. -امداد الفتاوى، جديد: 9/313
“সুন্নত তো তাই, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবাদত হিসেবে করেছেন, নতুবা তা সুন্নতে যায়েদা হবে। নবীজি চুল রাখতেন অভ্যাস হিসেবে, ইবাদত হিসেবে নয়। তাই চুল রাখা উত্তম হওয়ার ব্যাপারে তো সন্দেহ নেই, কিন্তু চুল না রাখাকে সুন্নতের খেলাফও বলা যাবে না।” -ইমদাদুল ফাতাওয়া: ৯/৩১৩
তবে মাথা মুণ্ডানোকে সুন্নত ও সওয়াবের কাজ মনে করলে, তা বিদআত হবে। কেননা মুবাহ কাজকে সুন্নত বা সওয়াবের কাজ মনে করা বিদআত। -মাজমুউল ফাতাওয়া: ২১/১১৫
فقط والله تعالى أعلم بالصواب.
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
০৭-০৫-১৪৪৪ হি.
০২-১১-২০২২ ঈ.
আরও পড়ুনঃ সেলুনে কাজ করার বিধান কী?