অর্ডার ব্রাশিংয়ের বিধান
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্ন:
অনেকে অনলাইনে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে অর্ডার ব্রাশিংয়ের চাকরি করে। ব্রাশিং করে পণ্যকে প্রচুর বিক্রিত দেখানো হয়৷ ফলে ক্রেতা আশ্বস্ত হয়। সেই পণ্যটি গুগল সার্চে সবার আগে শো করে৷ এছাড়াও এর আরও অনেক দিক আছে৷ এমন করার ব্যাপারে ইসলামের বিধান কী? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো৷
-সালমান
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
একটি পণ্যের অধিক বিক্রি, পণ্যের প্রশংসামূলক পর্যালোচনা তথা রিভিউ, অনলাইন অনুসারীর আধিক্য ইত্যাদি সূচক সাধারণত সেই পণ্য ও পণ্যের উৎপাদক কোম্পানির প্রতি একজন ক্রেতার আস্থা অর্জনে ভূমিকা রাখে। একজন ক্রেতা যখন দেখেন পণ্যটি প্রচুর বিক্রি হচ্ছে, অনেক মানুষ পণ্যটি ব্যবহার করে তার ইতিবাচক পর্যালোচনা করছেন, স্বভাবতই মানুষ উক্ত পণ্য ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রতি আস্থাশীল হয় এবং তা ক্রয় করতে আগ্রহী হয়। সামান্য ঘাঁটাঘাঁটি করে অর্ডার ব্রাশিং সম্পর্কে যে ধারণা পাওয়া যায়, তা হলো, অবাস্তব ও কৃত্রিমভাবে কোনো পণ্যের এই সূচকগুলো বাড়িয়ে দেখানো। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, প্রতারণার এই যুগে বিভিন্ন কোম্পানি অর্থের বিনিময়ে রীতিমতো লোক নিয়োগ দিয়ে এসব প্রতারণার আশ্রয় নেয়।
অর্ডার ব্রাশিংয়ের পরিচয় থেকেই পরিষ্কার, এটা সম্পূর্ণ ধোঁকা ও প্রতারণা। মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভোক্তাদের প্রভাবিত করা এবং প্রতারিত করাই এর মূল উদ্দেশ্য, যা একজন বিবেকবান সভ্য মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। সুতরাং ইসলামী শরীয়তে তা বৈধ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। উৎপাদক কোম্পানির জন্য যেমন তা নাজায়েয, তেমনি অর্থের বিনিময়ে এমন প্রতিষ্ঠান কিংবা কোম্পানি অথবা এই পেশার চাকরি করাও নাজায়েয। হাদীসে এবিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে।
عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم مر على صبرة طعام فأدخل يده فيها، فنالت أصابعه بللا فقال: «ما هذا يا صاحب الطعام؟» قال أصابته السماء يا رسول الله، قال: «أفلا جعلته فوق الطعام كي يراه الناس، من غش فليس مني». –صحيح مسلم (1/99 رقم 102 ط. دار إحياء التراث(
“আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্য শস্যের একটি স্তুপের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় ভেতরে হাত প্রবেশ করালে তাঁর আঙ্গুলগুলো ভিজে গেলো। তিনি বললেন, হে স্তুপের মালিক! এ কি ব্যাপার? লোকটি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এতে বৃষ্টির পানি পড়েছিলো। নবীজি বললেন, সেগুলো তুমি স্তুপের ওপরে রাখলে না কেন? তাহলে লোকেরা দেখে নিতে পারতো। জেনে রাখো, যে ব্যক্তি ধোঁকাবাজি করে, আমার সাথে তার কোনও সম্পর্ক নেই।” -সহীহ মুসলিম: ১/৯৯ হাদীস নং: ১০২ (দারু ইহইয়ায়িত তুরাস)
বরং সুযোগ সামর্থ্য অনুযায়ী এমন অন্যায় কাজ প্রতিরোধের চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব এবং ঈমানের অংশ। হাদীসে এসেছে,
من رأى منكم منكرا فليغيره بيده، فإن لم يستطع فبلسانه، فإن لم يستطع فبقلبه، وذلك أضعف الإيمان». -صحيح مسلم (1/ 69 رقم: 49 ط. دار إحياء التراث)
“তোমাদের যে কেউ কোনও মন্দ কাজ দেখবে, সে যেন স্বহস্তে (শক্তি বলে) তা প্রতিহত করে। যদি তাতে সক্ষম না হয়, তাহলে যেন তার জবান দিয়ে প্রতিহত করে। যদি তাতেও সক্ষম না হয়, তাহলে অন্তর দিয়ে। আর এটি হচ্ছে দুর্বলতম ঈমান।” -সহীহ মুসলিম: ১/৬৯ হাদীস নং: ৪৯ (দারু ইহইয়ায়িত তুরাস)
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
৩০-০৪-১৪৪৫ হি.
১৫-১১-২০২৩ ঈ.