কীভাবে মাহে রমযানের প্রস্তুতি নেব? || তিলাওয়াত, সিয়াম, দোয়া ও ইহতিসাব || ৪র্থ মজলিস
কীভাবে মাহে রমযানের প্রস্তুতি নেব?
তিলাওয়াত, সিয়াম, দোয়া ও ইহতিসাব
৪র্থ মজলিস
মাওলানা আবু মিকদাদ হাফিযাহুল্লাহ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
الحمد لله رب العالمين ، والصلاة والسلام على سيد الأنبياء والمرسلين، وعلى آله وصحبه أجمعين،
أما بعد فقد قال الله تعالى: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ.
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়ামকে ফরয করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল; যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।” [সূরা বাকারা ০২: ১৮৩]
سبحانك لا علم لنا إلا ما علمتنا إنك أنت العليم الحكيم.
রমযানের পূর্বেই আমরা যেসব প্রস্তুতি নেব, তন্মধ্যে তৃতীয় প্রস্তুতি হলো-
০৩. অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা
আমরা পৃথিবীতে যা কিছু দেখছি, আসমান, জমিন, সাগর, নদী, পাহাড়, সবই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সৃষ্টি-মাখলুক। শুধু একটি জিনিস আমাদের কাছে আছে, যা মাখলুক নয়। তা হলো, কুরআন, এটি আল্লাহর সিফাত। এর মধ্যে আল্লাহকে পাওয়া যাবে। তাঁর ঘ্রাণ পাওয়া যাবে। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম এই কুরআন।
রমযানে কুরআনুল কারীমের বেশি থেকে বেশি কদর করার জন্য এখন থেকেই উদ্যোগ নিলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দিয়ে দিবেন। একই কথা বারবার বলা হচ্ছে। আমরা এখন যদি কুরআনের কদর বাড়িয়ে দেই, আল্লাহ তাআলা সামনে এই নেয়ামত আরও বাড়িয়ে দিবেন। এটাই তাঁর নীতি।
কুরআনকে আপন করতে আমরা তিনটি কাজ করতে পারি-
এক. কুরআনের জন্য অবসর হওয়া।
দুই. অবসর পেলেই কুরআন পড়া।
তিন. আসবাব (মূল মাকসাদ নয় এমন কাজগুলো) আদায়ের সময়গুলোতে তিলাওয়াত ও যিকির বাড়িয়ে দেয়া।
আমরা কুরআনকে আপন করতে চাই এটি কীভাবে প্রকাশ পাবে?
প্রকাশ পাওয়ার সুরত হলো, আমাদের নিয়মিত তিলাওয়াত আগের চেয়ে বাড়ার দ্বারা এটি সুস্পষ্ট হবে। আমরা কুরআনের জন্য আগের চেয়ে বেশি সময় বরাদ্দ করছি কিনা? কোথাও আসা-যাওয়ার পথে নিজেদের মুখস্থ সূরাগুলো তিলাওয়াত করব।
আমরা অনেকেই কুরআনের ছোট সূরাগুলোকে শুধু নামাযের সূরা মনে করি। যাদের শুধু এই সূরাগুলোই মুখস্থ, তারা কোথাও আসা-যাওয়ার পথে এগুলোই মুখস্থ তিলাওয়াত করব। পর্যায়ক্রমে নিজের মুখস্থের পরিমাণ বাড়াব। রাতে তাহাজ্জুদে বেশি বেশি তিলাওয়াতের চেষ্টা করব। রাতের তিলাওয়াতের বিশেষ গুরুত্ব আছে, বিশেষত শেষ রাতে তাহাজ্জুদের সময়ে।
এক হাদীসে এসেছে-
عن عبد الله بن عمرو بن العاص – رضي الله عنه – عن النبي – صلى الله عليه وسلم – قال: ((الصيام والقرآن يشفعان للعبد يوم القيامة، يقول الصيام: أي رب منعته الطعام والشهوات بالنهار فشفعني فيه، ويقول القرآن: منعته النوم بالليل فشفعني فيه فيشفعان)) –مسند أحمد: 6626
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “সিয়াম এবং কুরআন কিয়ামত দিবসে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে, “হে রব! আমি তাকে দিনের বেলা পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ করা থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং আপনি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন।” আর কুরআন বলবে, “আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং আপনি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন।” ফলে উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।” [মুসনাদে আহমদ: ৬৬২৬]
আমরা হাশরের দিনের করুণ পরিস্থিতি চিন্তা করে তারপর এদের সুপারিশের বিষয়টি চিন্তা করে দেখব। তখন এদের কদর বাড়বে ইনশাআল্লাহ।
পূর্ণ কুরআনের সুপারিশ
কিয়ামত দিবসে কুরআন সুপারিশকারী হবে:
عن أبي أُمامةَ رَضِيَ الله عنه قال: سَمِعتُ رَسولَ الله صلَّى اللهُ عليه وسلَّم يَقولُ: اقرَءوا القُرآنَ؛ فإنَّه يَأتي يَومَ القيامةِ شَفيعًا لأصحابِه. –صحيح مسلم: 804
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা কুরআন পড়। কেননা কুরআন তার ধারক-বাহকদের জন্য কিয়ামত দিবসে সুপারিশকারী হবে।” -সহীহ মুসলিম: ৮০৪
অপর এক হাদীসে এসেছে-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْقُرْآنُ شَافِعٌ مُشَفَّعٌ، وَمَاحِلٌ مُصَدَّقٌ، مَنْ جَعَلَهُ أَمَامَهُ قادَهُ إِلَى الْجَنَّةِ، وَمَنْ جَعَلَهُ خَلْفَهُ سَاقَهُ إِلَى النَّارِ»)) –المعجم الكبير: 10450
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কুরআন এমন সুপারিশকারী, যার সুপারিশ গৃহীত হবে, এবং এমন সাক্ষ্যপ্রদানকারী, যার সাক্ষ্য সত্যায়িত হবে। (সুতরাং) যে এই কুরআনকে নিজের সামনে রাখবে, কুরআন তাকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। আর যে কুরআনকে পিছনে ফেলে রাখবে, কুরআন তাকে জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে।” [মুজামে কাবীর: ১০৪৫০]
কুরআনের সূরাগুলোও সুপারিশ করবে
পূর্ণ কুরআন তো সুপারিশ করবেই, অন্য হাদীসে এসেছে, কুরআনের কিছু কিছু সূরাও তার তিলাওয়াতকারীর জন্য আলাদা ভাবে সুপারিশ করবে। কিয়ামতের কঠিন দিনে কুরআনের শক্তি হবে বর্ণনাতীত।
عن أبي هريرة – رضي الله عنه – عن النبي – صلى الله عليه وسلم – أنه قال: إن سورة من القرآن -ثلاثون اية- شفعت لرجل حتى غفر له، وهي سورة تبارك الذي بيده الملك. –رواه الترمذي: 2891 وقال: هذا حديث حسن.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কুরআনে ৩০ আয়াতের একটি সূরা রয়েছে; যা (তিলাওয়াতকারী) ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করবে, যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন। আর তা হলো, তাবারাকা…(অর্থাৎ সূরা মুলক)।” [জামে তিরমিযী: ২৮৯১]
অপর এক হাদীসে এসেছে, শুধু কিয়ামতের দিন নয়, বরং কবরেও এই সূরা তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।
عن عبد الله بن مسعود- موقوفاً قال: ((من قرأ تبارك الذي بيده الملك كل ليلة مَنَعه الله من عذاب القبر وكنا في عهد رسول الله – صلى الله عليه وسلم – نسميها المانعة. –السنن الكبرى للنسائي: 10479
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা মুলক তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন। আর আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানায় এ সূরাকে ‘আল-মানিআহ’ (বারণকারী) নামে ডাকতাম।” [সুনানে কুবরা, নাসায়ী: ১০৪৭৯]
সূরা মুলকের আমল আমরা রাতের যেকোনো সময়ে করতে পারি। ঘুমের পূর্বে হতে হবে তা জরুরি না। উপরের হাদীসেও এটা স্পষ্টভাবে এসেছে।
যুদ্ধের আমীর নির্বাচনে সূরা বাকারার প্রভাব
অপর এক হাদীসে এসেছে-
عن أبي هريرة – رضي الله عنه – قال: ((بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم بعثا وهم ذو عدد فاستقرأهم، فاستقرأ كل رجل منهم ما معه من القرآن، فأتى على رجل من أحدثهم سنا، فقال: “ما معك يا فلان؟” قال: معي كذا وكذا وسورة البقرة، قال: “أمعك سورة البقرة؟” فقال: نعم، قال: “فاذهب فأنت أميرهم”… .)) . –رواه الترمذي: 2876 وقال: هذا حديث حسن.
হযরত আবু হুরায়রাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজনের একটি বাহিনী পাঠাতে গিয়ে কে কতটুকু কুরআন শিখেছে, জানতে চাইলেন। প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করলেন, তার কাছে কুরআনের কতটুকু (ইলম) আছে? এভাবে এক এক করে অল্প বয়সের এক যুবকের কাছে এসে বললেন, “ওহে অমুক! তোমার কাছে কতটুকু (ইলম) আছে?” সে বলল, “আমার কাছে এই এই সূরা ও সূরা বাকারা (-এর ইলম) আছে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কাছে সূরা বাকারা (-এর ইলম) আছে?” সে বলল, “হ্যাঁ।” তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যাও তুমিই তাদের আমীর।” …. [সুনানে তিরমিযী: ২৮৭৬]
লক্ষ করুন, সূরা বাকারা যদি দুনিয়াতে লোকদের নেতৃত্বের আসনে সমাসীন করতে পারে, তাহলে কিয়ামতে তার অবস্থা কী হবে?
সাহাবায়ে কেরামের ‘ইলমে কুরআন’ এত গভীর কেন?
বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, সাহাবায়ে কেরাম ১০টি করে আয়াত হিফজ করতেন, তার উপর আমল করতেন, এরপর পরবর্তী আয়াতে যেতেন। [দেখুন, মুসনাদে আহমদ: ২৩৪৮২; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবাহ: ২৯৯২৯]
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ কাজটা আমরা করি না। যদি আমরাও করতাম, আমাদের হালাত এবং কুরআনের বুঝ অনেক বেশি গভীর হতো। আমাদের এখন পড়া ও না পড়া সমান হয়ে গেছে। তাই পড়িই না।
আমরাও সংক্ষিপ্ত তাফসীর সামনে রেখে ১০টি করে আয়াত পড়তে পারি। আয়াতগুলোর উপর আমাদের আমল আছে কিনা যাচাই করতে পারি। এভাবে অগ্রসর হলে খুব দ্রুত কুরআন আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
তাকওয়ার স্তরভেদে কুরআনের ইলম উদ্ভাসিত হয়
একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা মনে রাখব….
প্রত্যেকের তাকওয়ার হালাত অনুযায়ী কুরআন তার ভেতরে থাকা ভাণ্ডার উন্মুক্ত করে দেয়। আমরা ১০টি করে আয়াত পাঠ করব, মুখস্থ করব, আমলে আনব। এর দ্বারা আমাদের তাকওয়ার পর্যায় উন্নীত হবে। আমরা এভাবে অগ্রসর হতে থাকলে এক বছর পর যদি আমরা এই পড়া আয়াতগুলো আবার দেখি, দেখব আগের চেয়ে কুরআন তার আরও গভীর ভাণ্ডার আমাদের সামনে উন্মোচিত করছে।
এভাবে তাকওয়ার স্তরে যে যত উপরে উঠবে তার কাছে কুরআন আরও গভীরভাবে ধরা দিবে। এর কোনো শেষ নেই। আল্লাহর জাতকে আমরা যেমন মাথায় ধারণ করতে অক্ষম, তদ্রূপ তাঁর সিফাত (কালামুল্লাহ) এর গভীরতাও ধারণ করতে অক্ষম। এর গভীরতা আমরা কেউই খুঁজে পাব না। যে যত উপরে উঠবে তার কাছে একই আয়াতে অনেক অনেক কিছু ধরা দিবে।
সাহাবায়ে কেরাম কুরআনকে খুব গভীর থেকে উপলব্ধি করতেন। কারণ কুরআন তাঁদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। (هدًى للمتقين) এ কুরআন মুত্তাকীদের জন্য হেদায়াত। সুতরাং যার তাকওয়ার স্তর যত বাড়তে থাকবে, সে কুরআন থেকে ততবেশি দিকনির্দেশনা পেতে থাকবে।
ইনশাআল্লাহ আগামীতে আমরা দেখব, নেতৃত্বের জন্য আমাদের সেসব ভাইরাই সামনের সারিরে চলে আসবেন, যারা সবচেয়ে বেশি কুরআন ওয়ালা হবেন। কুরআন যাদের জীবনে যতবেশি ছাপ ফেলতে পারবে তাঁদের মধ্য থেকেই আগামীর নেতৃত্ব তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের নেতৃত্বকে হেফাযতে রাখুন, তাঁদের জীবনে বরকত দান করুন।
মূলত কেউ কুরআন ওয়ালা না হয়ে আল্লাহর বাহিনীকে নিয়ে সামনে অগ্রসর হতে পারবে না। কুরআন ওয়ালা না হয়ে কেউ আল্লাহর পক্ষে দরকষাকষি করতে পারবে না।
কুরআন অমূল্য কষ্টিপাথর
কুরআন এমন এক জিনিস যার সাথেই যুক্ত হয়েছে সেই জিনিস দামি হয়ে গেছে। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শ্রেষ্ঠ নবী হয়েছেন কুরআনের কারণে। তাঁর এতবড় শ্রেষ্ঠত্ব এই কুরআনের কারণেই।
রমযান মাস শ্রেষ্ঠ হয়েছে, এই কুরআনের কারণে।
শবে কদরের এত মর্যাদা, এই কুরআনের কারণে।
মক্কা মদীনা দামি হয়েছে, এই কুরআনের কারণে।
অতএব এমন কষ্টিপাথর থেকে দূরে থাকাটা আমাদের জন্য কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আল্লাহ আমাদের তাওফীক বাড়িয়ে দিন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে প্রচুর পরিমাণ কুরআন তিলাওয়াত করতেন। প্রতিদিন জিবরাঈল আলাইহিস সালামের সঙ্গে কুরআনুল কারীমের দাওর করতেন অর্থাৎ তিনি তিলাওয়াত করতেন, জিবরাঈল আমীন তাঁর তিলাওয়াত শুনতেন এবং জিবরাঈল আমীন তিলাওয়াত করতেন, তিনি তাঁর তিলাওয়াত শুনতেন। [দেখুন, সহীহ বুখারী: ৬]
সুতরাং কুরআনের সঙ্গে আমাদের যার যে স্তরের সম্পর্ক আছে, তা আরও সমৃদ্ধ, গভীর ও বোধসম্পন্ন করা জরুরি। যাদের তিলাওয়াতে দুর্বলতা আছে, তাদের করণীয় হলো, তিলাওয়াত বিশুদ্ধ করা। যাদের অনুবাদ রপ্ত নেই, তাদের অনুবাদ রপ্ত করা উচিত। যাদের ব্যাখ্যা জানা নেই, তাদের গ্রহণযোগ্য কোনো সংক্ষিপ্ত তাফসীর গ্রন্থ পড়া আবশ্যক। যাদের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পড়া হয়েছে, তাদের আরেকটু বিস্তারিত তাফসীর গ্রন্থ পড়া প্রয়োজন। প্রতিটি আয়াত তাদাব্বুর তথা অর্থ-মর্ম চিন্তা করে পড়া প্রয়োজন। কুরআনের সঙ্গে নিজের জীবনের মিল-অমিলের জায়গাগুলো চিহ্নিত করে করে তিলাওয়াত করতে হবে। মোটকথা রমযান উপলক্ষে কুরআনের সঙ্গে এমন গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে, যেন আমাদের জীবন-যাপন ও চলন-বলন সবকিছু হয়ে ওঠে কুরআনময়!
রমযানের প্রস্তুতির ৩টি পয়েন্ট গেল।
এক. তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা।
দুই. নামাযকে সুন্দর ও উন্নত করা।
তিন. কুরআনের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা।
রমযানের পূর্বেই আমরা যেসব প্রস্তুতি নেব, তন্মধ্যে চতুর্থ প্রস্তুতি হলো-
০৪. এ মাসে (শাবানে) বেশি বেশি সিয়াম পালন করা
হযরত উসামা বিন যায়েদ রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রমযান ছাড়া) শাবান মাসে যত রোযা রাখতেন অন্য কোনো মাসে এত রোযা রাখতেন না।”
উসামা বিন যায়েদ রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আমি (একবার) বললাম…
وَلَمْ أَرَكَ تَصُومُ مِنْ شَهْرٍ مِنَ الشُّهُورِ مَا تَصُومُ مِنْ شَعْبَانَ.
“আপনি শাবান মাসে যত রোযা রাখেন (রমযান ছাড়া অন্য) কোনো মাসে আপনাকে এত রোযা রাখতে দেখিনি”
উত্তরে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ذَاكَ شَهْرٌ يَغْفُلُ النَّاسُ عَنْهُ بَيْنَ رَجَبٍ وَرَمَضَانَ، وَهُوَ شَهْرٌ تُرْفَعُ فِيهِ الْأَعْمَالُ إِلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ فَأُحِبُّ أَنْ يُرْفَعَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ. –سنن النسائي: 2357
“শাবান হলো রজব ও রমযানের মধ্যবর্তী মাস। এ মাস সম্পর্কে মানুষ গাফেল থাকে। শাবান হলো এমন মাস, যে মাসে রব্বুল আলামীনের কাছে (বান্দার) আমল পেশ করা হয়। আমি চাই, রোযাদার অবস্থায় আমার আমল (আল্লাহর দরবারে) পেশ হোক।” ―সুনানে নাসায়ী: ২৩৫৭
সহীহ হাদীসে আছে, আল্লাহ তাআলার দরবারে প্রতিদিন বান্দার আমলনামা পেশ করা হয়। দিনের আমলনামা রাতে, আর রাতের আমলনামা দিনে পেশ করা হয়। এটি হলো প্রতিদিনের আমলনামা। [দেখুন, সহীহ বুখারী: ৫৫৫; সহীহ মুসলিম: ১৭৯]
অপর এক সহীহ হাদীসে এসেছে, সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমলনামা পেশ করা হয়। এটি হলো সাপ্তাহিক আমলনামা। [দেখুন, সহীহ মুসলিম: ২৫৬৫]
আর একবার পেশ করা হয় বাৎসরিকভাবে। সেটা হলো শাবান মাসে। উপর্যুক্ত হাদীসে সেই কথাই বলা হয়েছে। [লাতায়েফুল মাআরেফ, ইবনে রজব হাম্বলী রহিমাহুল্লাহ, পৃ: ১২৭ দারু ইবনি হাযম]
রমযানের আগে-পরের রোযাগুলোর গুরুত্ব
قال ابن رجب رحمه الله : وأفضل التطوع ما كان قريبا من رمضان قبله وبعده ، وتكون منزلته من الصيام بمنزلة السنن الرواتب مع الفرائض قبلها وبعدها وهي تكملة لنقص الفرائض ، وكذلك صيام ما قبل رمضان وبعده ، فكما أن السنن الرواتب أفضل من التطوع المطلق بالصلاة فكذلك يكون صيام ما قبل رمضان وبعده أفضل من صيام ما بَعُد عنه .-لطائف المعارف، ص: 129 ط. دار ابن حزم
ইবনে রজব হাম্বলী রহিমাহুল্লাহ বলেন, “নফল রোযার মধ্যে রমযানের আগে-পরের রোযাগুলো সর্বোত্তম। ফরয নামাযের আগে বা পরে যেমন সুন্নতে মোয়াক্কাদা থাকে; যা ফরযের ঘাটতি পূরণ করে, তদ্রূপ রমযানের আগের ও পরের রোযাগুলোও। সুতরাং নামাযের আগের ও পরের সুন্নাতে মুয়াক্কাদাগুলো যেমন অন্য যেকোনো নফল থেকে উত্তম, তদ্রূপ রমযানের আগের ও পরের রোযাগুলোও অন্য সব নফল রোযার চেয়ে উত্তম।” [লাতায়েফুল মাআরেফ, পৃ: ১২৯]
রমযানের রোযা যেমন হওয়া কাম্য তেমন অনুশীলন শাবানের রোযাগুলোতেই করা উচিত। অনর্থক কথা ও ঝগড়া-বিবাদ পরিহার করা উচিত। কাউকে কষ্ট না দেওয়া, পরনিন্দা থেকে বেঁচে থাকা, সর্বোপরি রোযা অবস্থায় গোস্বা সংবরণ করা ইত্যাদি উচিত।
মসজিদে যেমন রহমতের সব দরজা খোলা থাকে, তদ্রূপ রমযান মাসেও রহমতের সব দরজা খোলা থাকে। সুতরাং রহমতের সব দরজা খোলা থাকা অবস্থায় মসজিদে যেমন হৈচৈ, গালিগালাজ, অনর্থক আলাপচারিতা, দুনিয়াবি বিষয়াদিতে লিপ্ত হওয়া নিন্দনীয়, তদ্রূপ রমযানে রহমতের সব দরজা খোলা থাকা অবস্থায় এসব বিষয়ে লিপ্ত হওয়া অপছন্দনীয়। বিশেষ করে যখন বান্দা সিয়ামের মতো এত পছন্দনীয় ইবাদতে মশগুল থাকে, তখন এসব কাজে জড়িত হওয়া অনেক বেশি অপছন্দনীয়।
তাই আমাদের উচিত রমযানের আগেই নফল সিয়ামের মাধ্যমে এগুলোর অনুশীলন করা। আল্লাহ তাআলা যখন দেখবেন যে, বান্দা রমযান আসার আগেই রোযা রাখে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে, চেষ্টা করছে অনর্থক বিষয়াদি থেকে বেঁচে থাকার জন্য, তখন তিনি অবশ্যই বান্দার এ চেষ্টার মূল্যায়ন করবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে তাওফীক বাড়িয়ে দিন। আমীন।
রমযানের পূর্বেই আমরা যেসব প্রস্তুতি নেব, তন্মধ্যে পঞ্চম প্রস্তুতি হলো-
০৫. বেশি বেশি দোয়া করা ও তাওফীক কামনা করা
কোনো বিরাট কাজের জন্য আল্লাহ তাআলার বিরাট তাওফীকের বিষয় থাকে। আর তাওফীক দোয়ার মাধ্যমে চেয়ে নিতে হয়।
দোয়ার মাধ্যমে দুটি জিনিস অর্জিত হয়।
এক. বান্দার গাফেল অন্তর সজাগ হয়। আমরা লাগাতার কিছু চাচ্ছি কিন্তু তার জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করব না; এমনটি সাধারণত হয় না।
দুই. আল্লাহ তাআলার তাওফীক বেড়ে যায়; আর মূলত এ কারণেই বান্দার গাফলত দূর হতে থাকে। হাদীস শরীফে এসেছে, “দোয়াই হলো ইবাদত।” -জামে তিরমিযী: ২৯৬৯
সুতরাং আমরা যদি ইবাদতের জন্য প্রস্তুত হই তাহলে দোয়ার মাধ্যমেই শুরু করা উচিত। তাহলে এই ইবাদতই অন্যান্য ইবাদতের জন্য ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করা যাক…
কেউ যখন ভালো কাজ করে তখন এই ভালো কাজটি অপর ভালো কাজকে টেনে নিয়ে আসে। তদ্রুপ খারাপ কাজও অপর খারাপ কাজকে টেনে নিয়ে আসে। এ কারণে হাদীসে এসেছে, “কোনো গুনাহ হয়ে গেলে দ্রুত কোনো ভালো কাজ কর। তাহলে ভালো কাজটি ঐ খারাপ কাজকে মিটিয়ে দিবে।”-জামে তিরমিযী: ১৯৮৭
নতুবা খারাপ কাজ অপর খারাপ কাজকে ডেকে নিয়ে আসবে। এগুলো চেইনের মতো।
মূলত ভালো কাজ করার অর্থ হলো, আমরা আল্লাহ তাআলার দেয়া নেয়ামতকে ভালো কাজে সম্পৃক্ত করব। ফলে তিনি নেয়ামত বাড়িয়ে দিবেন বিধায় আরেকটি ভালো কাজের তাওফীক তৈরি হবে। অপর দিকে খারাপ কাজ করলে যেহেতু আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের না শোকরি হয়, তাঁর দেয়া নেয়ামতগুলো দিয়েই তাঁর অবাধ্যতা করা হয়; তাই তাওফীক কমে যায় কিংবা থেমে যায়। তখন আরও খারাপ কাজ করতে মন আগ্রহী হয়ে ওঠে।
হযরত হাসান বসরী রহিমাহুল্লাহ বলেন, প্রতিটি ভালো বা মন্দ আমল করার পর সেই আমলটি বলতে থাকে..أختي أختي অর্থাৎ বোন আমার! এসো, বোন আমার! এসো। অর্থাৎ ওই আমলটি তার মতো অন্য আমলকে ডাকতে থাকে।
অনেক সময় আমরা খাস কোনো একটি নেক কাজ করতে চাই। মনে করি, তাহাজ্জুদ পড়তে চাই। তাহলে আমাদেরকে প্রথমে হিম্মত করে একদিন শুরু করতে হবে। তখন প্রথম তাহাজ্জুদ আমাদের পরবর্তী তাহাজ্জুদের জন্য ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু প্রথম তাহাজ্জুদটা শুরু করতে হলে আমাদেরকে হয়তো অন্য কোনো ভালো আমল করতে হবে.. যার ফলে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাহাজ্জুদের তাওফীক দান করবেন। কিন্তু আমরা তো জানি না, কোনটার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই তাওফীক দিবেন। কিন্তু একটা উপায় আছে আমরা একটা ভালো কাজও করব এবং এর ফলে আমাদের তাহাজ্জুদের তাওফীক হয়ে যাবে যা আমরা বুঝতে পারব। আর তা হলো, দোয়া। আমরা দোয়ার মাধ্যমে সহজে কোনো নেক আমলের ভিত্তি প্রস্তুত করতে পারি।
হাদীসে এসেছে, “দোয়া ইবাদতের সার।” অপর হাদীসে এসেছে, “দোয়াই ইবাদত।” -জামে তিরমিযী: ২৯৬৯; ৩৩৭১
সুতরাং দোয়ার মাধ্যমে আমাদের উচিত ছোট-বড় বিভিন্ন ইবাদতের ভিত তৈরি করা এবং আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে খাসভাবে তাওফীক চেয়ে নেওয়া।
মোটকথা, দোয়া হলো, ইবাদতের চেইন তৈরি করার জন্য সবচেয়ে সহজ মাধ্যম।
প্রতি ওয়াক্তে ফরয নামাযের পর দোয়া কবুল হয়। তখন দোয়া করব। আল্লাহ তাআলা যেন রমযানকে আমাদের সকলের জন্য অনেক বেশি এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যম বানিয়ে দেন। রমযানকে কেন্দ্র করে আমাদের প্রতিটি মুজাহিদ ভাইকে তাকওয়ার দৌলত দান করেন। নিজেদেরকে একজন যোগ্য সদস্য হিসেবে প্রস্তুত করার তাওফীক দান করেন। সুতরাং আমরা রমযানের জন্য তাওফীকের ভিত এখনই দোয়ার মাধ্যমে তৈরি করব। প্রতিদিন হাত তুলে দোয়া করব। রমযানে নেকআমলের তাওফীক বৃদ্ধির জন্য দোয়া করব।
রমযানের পূর্বেই আমরা যেসব প্রস্তুতি নেব, তন্মধ্যে ষষ্ঠ প্রস্তুতি হলো-
০৬. ইহতিসাব। আল্লাহর কাছে আজর পাওয়ার আশা অন্তরে তৈরি করা
এর জন্য আমাদেরকে আমলের ফযীলত জানতে হবে। আল্লাহ তাআলার ওয়াদাগুলো জানতে হবে। আর তাঁর প্রতি সুধারণা তৈরি করব।
রমযানে বিশেষ বিশেষ আমলের কথা ইহতিসাবের কথা হাদীসে এসেছে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ “-صحيح البخاري: 38 صحيح مسلم: 760
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ইহতিসাবের সাথে (অর্থাৎ সাওয়াবের আশা নিয়ে) রমযানের রোযা রাখবে, তার পূর্বের সকল (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” [সহীহ বুখারী: ৩৮; সহীহ মুসলিম: ৭৬০]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، فَإِنَّهُ يُغْفَرُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ “-صحيح البخاري: 37 صحيح مسلم: 759
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ইহতিসাবের সাথে (সাওয়াবের আশা নিয়ে) রমযানের কিয়াম করবে, তার পূর্বের সকল (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” [সহীহ বুখারী: ৩৭; সহীহ মুসলিম: ৭৫৯]
عن أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ ” مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، فَإِنَّهُ يُغْفَرُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ “- صحيح البخاري: 1901
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ইহতিসাবের সাথে (সাওয়াবের আশা নিয়ে) লাইলাতুল কদরে কিয়াম করবে, তার পূর্বের সকল (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” [সহীহ বুখারী: ১৯০১]
এখানে লক্ষ করি…
আমরা যদি ইহতিসাব আগে থেকে না শিখি, তাহলে রমযানে ইহতিসাব কীভাবে করবো? সাধারণত দেখা যায় আমরা রমযান আসার পর ইহতিসাবের হাদীস শুনি ও পড়ি এবং ইহতিসাবের বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করি। অথচ যদি রমযান আসার আগেই বুঝা হতো, তাহলে রমযানে ইহতিসাব সহজ হতো। তখন দেখা যেত, আমাদের প্রতিটি ইবাদত ইহতিসাবের সাথেই হচ্ছে। নয়তো দেখা যায় ইহতিসাব বুঝতে বুঝতে রমযানের কিছু অংশ অতিবাহিত হয়ে যায়।
ইহতিসাব হলো, সাওয়াবের আশা নিয়ে আমল করা। অর্থাৎ মনে অনুভূতি জাগ্রত থাকা। এমন নয় যে, সবাই করছে, তাই আমরাও করছি।
আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “যেখানেই ইবাদত অত্যন্ত উঁচু মানের হয়, আর মানুষের মধ্যে সবাই করছে তাই আমরাও করছি… এমন প্রবণতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেখানেই ইসলাম ইহতিসাবের দিকে বান্দার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।” [দেখুন, ফয়যুল বারী: ১/২০০, ২০১, ২১৮ দারুল কুতুব]
রমযানের আমলগুলোতে এই জিনিসটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক থাকে। সবাই রোযা রাখছে, তাই দেখাদেখি আমরাও রাখছি, আমাদের মনে সাওয়াব প্রাপ্তির আশা জাগ্রত থাকলো না। তেমনিভাবে সবাই তারাবীহ পড়ছে, তাই আমরাও পড়ছি। সবাই শবে কদর পালন করছে, তাই আমরাও করছি।
আল্লাহ তাআলা বান্দার অনুভূতি জাগ্রত থাকাকে পছন্দ করেন। তাই হাদীসে রমযানের বিশেষ তিনটি আমলের ক্ষেত্রে ইহতিসাব থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ বান্দাকে শিখানো হচ্ছে যে, এই ইবাদতগুলো আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন তাই আমরা করছি। এমন নয় যে, সবাই করছে তাই আমরাও করছি।
আল্লাহ তাআলার হুকুম পালন আমাদের মাকসাদ। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইবাদত করব আল্লাহ তাআলার হুকুম জেনে।
ইবাদত কোনো আবেগে পড়ে করা হবে না…
ইবাদত সবাই করে তাই আমরাও করি এমনভাবে হবে না…
ইবাদত করা হবে… আল্লাহ তাআলার হুকুম জেনে। এ কারণেই তাঁর হুকুমটার প্রতি খেয়াল রাখা খুবই জরুরি।
দেখব, অনেকে জিহাদের আমলে যুক্ত হয় আবেগের কারণে। তাদের আবেগে একটু ভাটা তৈরি হলে, আমল ছুটে যায়। কিন্তু যদি তারা আল্লাহ তাআলার হুকুম জেনে আমলে সম্পৃক্ত হত এবং সাওয়াব প্রাপ্তির আশা নিয়ে যুক্ত হত, তাহলে সবাই ছেড়ে দিলেও এরা ছাড়তো না।
যখন জয়জয়কার অবস্থা থাকে তখন মুনাফিকরাও জিহাদে শামিল হয়। যেহেতু মুনাফিকরা আল্লাহ তাআলার হুকুম জেনে জিহাদে আসে না, তাই কঠিন সময়ে তাদের জিহাদ ছুটে যায়। তিনি আমাদের হেফাযত করুন।
আল্লাহ তাআলার হুকুমটা যেহেতু মূল তাই সেহরী একদম শেষ সময়ে আর ইফতার একদম শুরুর সময়ে করে ফেলা সুন্নত। কারণ এর দ্বারা আল্লাহ তাআলার হুকুম তথা নির্দেশ পালনের বিষয়টি বেশি স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। মূলত সওমের নির্দেশ যখন থেকে শুরু এবং যখন শেষ এটা মাথায় জাগ্রত রেখে ইবাদত করাটা তিনি চান। ধরি আমরা সেহরী খেয়ে ফেললাম, রাত একটায়। এক্ষেত্রে আমাদের সিয়াম তো হয়ে যাবে। কিন্তু সিয়াম যখন থেকে শুরু এর আগে থেকেই শুরু করে ফেলার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের পরিমাণটা কম প্রকাশিত হয়। অনুরূপ ইফতারের ক্ষেত্রেও।
মোটকথা, আমরা আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করছি… এটি ইবাদতের মাধ্যমে ফুটে উঠা কাম্য।
এর সহজ একটা উদাহরণ দিচ্ছি। অনেক সময় কোনো দারসে দোয়া করা হলে বেশিরভাগ ভাই দোয়াটি পড়ে তারপর আমীন লিখেন। আর কিছু ভাই থাকেন যারা অন্য ভাইদের আমীন লিখতে দেখে আমীন লিখে দেন। এরূপ ভাইদের লেখা এই ‘আমীন’টি হলো ইহতিসাব ছাড়া।
আল্লাহ তাআলা আমাদের মধ্যে ইহতিসাব দান করুন। প্রতিটি ইবাদতকে তাঁর হুকুম জেনে আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وعلى آله وصحبه أجمعين،
والحمد لله رب العالمين.
আরো পড়ুন-