বিবিধফাতওয়া  নং  ৫৬৩

গর্ভের সন্তান নষ্ট করার বিধান

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন: আমার এক কাজিন বিয়ে করেছে মাত্র ছয় মাস হলো। এখন তার স্ত্রীর গর্ভে সন্তান। গর্ভের সন্তানের বয়স প্রায় আড়াই মাস হলো। অভাব-অনটন ও স্ত্রীর শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে তারা চাচ্ছে, গর্ভে আসা বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলতে। জানার বিষয় হলো, তাদের জন্য কি এটি বৈধ হবে? শুনেছি, চার মাস পূর্ণ হওয়ার আগে নাকি গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করা যায়। বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।

– মুহাম্মাদ উজ্জ্বল হোসেন

উত্তর:

بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله، أما بعد:

স্বাভাবিকভাবে ভ্রূণ নষ্ট করা সর্বাবস্থায় নাজায়েয; চাই তাতে প্রাণ সঞ্চার হোক বা না হোক। সুতরাং বড় কোনো ওজর না থাকলে যথাসাধ্য গর্ভের ভ্রূণ নষ্ট করা থেকে বিরত থাকা জরুরি।
কারো অসুস্থতা যদি এ পর্যায়ের হয় যে, গর্ভ ধারণ করলে সে অস্বাভাবিক কষ্টে নিপতিত হবে বা তার স্বাস্থ্যের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে, তাহলে ভ্রূণে প্রাণ সঞ্চার হওয়ার আগ পর্যন্ত (সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতানুসারে ১২০ দিনের মধ্যে) গর্ভপাত করা জায়েয হবে এবং তা যত আগে করা যায় তত ভালো। ১২০ দিন পূর্ণ হয়ে গেলে উপর্যুক্ত ওজরের কারণেও গর্ভপাত করা জায়েয হবে না। হালকা অসুস্থতা, শরীর দূর্বল হয়ে যাওয়া কোনো ওজর নয়। সন্তান পেটে আসলে স্বাভাবিকভাবেই শরীর কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ে।

আরও জানার জন্য দেখুন: ‘গ্রহণযোগ্য কোনো ওযরের কারণে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করা কি বৈধ হবে?’ শিরোনামের ফতোয়াটি।

লিংক: গ্রহণযোগ্য কোনো ওযরের কারণে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করা কি বৈধ হবে?

আর দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান নষ্ট করা কোনো ক্রমেই বৈধ নয়। আল্লাহ তাআলা সবার রিযিকদাতা। যে দুনিয়াতে আসবে আল্লাহ তাকে রিযিক দিয়েই পাঠাবেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُبِينٍ. .-سورة هود: 6

“ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিযিক আল্লাহ নিজ দায়িত্বে রাখেননি। তিনি তাদের স্থায়ী ঠিকানাও জানেন এবং সাময়িক ঠিকানাও। সব কিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।” -সূরা হুদ ১১:০৬

সুতরাং রিযিকের ভয়ে সন্তান নষ্ট করা, আল্লাহ যে রিযিকদাতা—তা অস্বীকার করার নামান্তর।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلَاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيرًا. –سورة الإسراء: 31

“দারিদ্র্যের ভয়ে নিজ সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমি তাদেরকেও রিযিক দেই এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা গুরুতর অপরাধ।” -সূরা বনি ইসরাঈল ১৭:৩১

এ আয়াতের তাফসীরে ইমাম বাগাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

أن أهل الجاهلية كانوا يئدون بناتهم خشية الفاقة فنهوا عنه، وأخبروا أن رزقهم ورزق أولادهم على الله تعالى، إن قتلهم كان خطأ كبيرا. اهـــــ. -تفسير البغوي: 3/132 ط. دار إحياء التراث العربي.

“জাহেলি যুগের লোকেরা তাদের মেয়েদেরকে দারিদ্র্যের ভয়ে মাটিতে জীবন্ত পুঁতে ফেলতো। তাই (উক্ত আয়াতে) তাদেরকে এটা করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং (আয়াতে এটার) সংবাদ দেওয়া হয়েছে যে, তাদের রিযিক ও তাদের সন্তানদের রিযিক আল্লাহর যিম্মায়। সুতরাং তাদেরকে হত্যা করা অনেক বড় অন্যায়।” -তাফসীরে বাগাবী: ৩/১৩২

হাদীসে এসেছে,

قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَيُّ الذَّنْبِ أَكْبَرُ عِنْدَ اللَّهِ؟ قَالَ: «أَنْ تَدْعُوَ لِلَّهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ»، قَالَ: ثُمَّ أَيْ؟ قَالَ: «ثُمَّ أَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ مَخَافَةَ أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ». أخرجه الإمام البخاري: 7532 و مسلم: 86 رحمهما الله تعالى.

وَهُوَ خلقك أَي وَالْحَال أَنه انْفَرد بخلقك فَكيف لَك اتِّخَاذ شريك مَعَه وَجعل عبادتك مقسومة بَينهمَا.اهــــ. – حاشية السندي على سنن النسائي (مطبوع مع السنن): 7/89 ط. مكتب المطبوعات الإسلامية – حلب.

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক লোক জিজ্ঞাসা করলো, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় গুনাহ কোনটি?” তিনি বললেন, “কাউকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করা অথচ তিনি (একাই) তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” সে আবার জিজ্ঞাসা করলো, “তারপর কোনটি?” তিনি উত্তরে বললেন, “তোমার সন্তানকে এ আশঙ্কায় হত্যা করা যে, সে তোমার খাদ্যে অংশীদার হবে।” -সহীহ বুখারী: ৭৫৩২, সহীহ মুসলিম: ৮৬

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
২৬-১১-১৪৪৬ হি.
২৫-০৫-২০২৫ ঈ.

Related Articles

Back to top button