বিবিধফাতওয়া  নং  ৪১৪

জনকল্যাণমূলক কাজে হারাম অর্থ ব্যয়: একটি সংশয় নিরসন

জনকল্যাণমূলক কাজে হারাম অর্থ ব্যয়: একটি সংশয় নিরসন

জনকল্যাণমূলক কাজে হারাম অর্থ ব্যয়: একটি সংশয় নিরসন

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন:

এ সাইটের ১৭৫ নাম্বার ফতোয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, সুদের টাকা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু আমাদের এলাকার এক মুফতী সাহেব বললেন, তা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করা যাবে না। উক্ত ফতোয়াটি নাকি ভুল। দয়া করে বিষয়টি নজরে আনবেন।

-তাসনিম

 

উত্তর:

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه ومن والاه، أما بعد

সুদ, ঘুষ, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি অথবা এ ধরনের কোনো অন্যায় পন্থায় কারও হক নষ্ট করে অর্জিত হারাম সম্পদের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম করণীয় হলো, খালেস দিলে তাওবা করা এবং তা মূল মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া। মূল মালিককে না পাওয়া গেলে তা তার ওয়ারিসদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। যতক্ষণ মূল মালিক কিংবা তার ওয়ারিসদের পাওয়া যাবে, ততক্ষণ ভিন্ন কোনো সুযোগ নেই।

যদি হকদার অথবা তাদের ওয়ারিসদের পরিচয় জানা না থাকে বা খুঁজে বের করা সম্ভব না হয়, তাহলে ব্যক্তি নিজে এ সম্পদ ব্যবহার করবে না। তবে এই সম্পদ কোথায় ব্যয় করা হবে, এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের দুটি মত রয়েছে।

ক. তা যাকাতের উপযুক্ত গরীব-মিসকীনদের মাঝে সাদাকা করে দিতে হবে। অর্থাৎ হারাম সম্পদ দান করার নিয়ত না করে, হারামের বোঝা থেকে নিষ্কৃতির লক্ষ্যে মালিকের পক্ষ থেকে তা গরীব-মিসকীনদের দিয়ে দিতে হবে। যাতে মূল মালিক তার সম্পদ ফিরে না পেলেও এ সাদাকার সাওয়াবটুকু পেয়ে যান। তাঁদের মতে এ সম্পদ জনকল্যাণমূলক কাজ (المصالح العامة), যেগুলো থেকে ধনী-গরীব সকল মুসলিমই উপকৃত হয়; যেমন মাদরাসা, মসজিদ, রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, হাসপাতাল, জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ ইত্যাদিতে খরচ করা যাবে না; বরং তা গরীব-মিসকীনদের মাঝেই খরচ করতে হবে।

খ. এর বিপরীতে আরেকটি অভিমত হলো, তা গরীব-মিসকীনদের মাঝেও খরচ করা যাবে, জনকল্যাণমূলক কাজেও খরচ করা যাবে।

তাঁদের বক্তব্য হলো, হারাম সম্পদ ব্যক্তি তার নিজের পক্ষ থেকে সাদাকা করবে না, বরং মূল মালিকের পক্ষ থেকে সাদাকা করবে, যাতে মূল মালিক এই সাদাকার সাওয়াব পেয়ে যান। স্পষ্ট যে, গরীব-মিসকীনদের পেছনে খরচ করলে যেমন সাওয়াব হয়, মুসলিমদের জনকল্যাণমূলক কাজে খরচ করলেও সাওয়াব হয়। কাজেই হারাম সম্পদের সাদাকা; যাকাতের মতো নয়; বরং তা নফল সাদাকার মতো। যাকাত আদায়ের জন্য যেমন তামলীক তথা মালিক বানিয়ে দেওয়া শর্ত, হারাম মালের ক্ষেত্রে তামলীক শর্ত নয়; বরং সাওয়াব হয় এমন যে কোনো খাতে খরচ করলেই হবে।

অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে বললে, যার দখলে আছে, তিনি এ হারাম সম্পদের মালিক নন। কিন্তু যখন মূল মালিককে পাওয়া যাচ্ছে না কিংবা মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, তখন তা লুকতা তথা কুড়িয়ে পাওয়া সম্পদের হুকুমে। লুকতার ক্ষেত্রেও হানাফী আইম্মায়ে কেরামের দুটি মত রয়েছে। এক মতে তা গরীব -মিসকীনদের পেছনে খরচ করতে হবে, আর কারও কারও মতে তা জনকল্যাণমূলক কাজেও খরচ করা যাবে। দেখুন, রদ্দুল মুহতার ২/৩৩৮, কিতাবুয যাকাত, বাবুল উশর[1]

খোদ ইমাম আবু ইউসুফ রহিমাহুল্লাহর বক্তব্য থেকেও বুঝা যায়, তা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা যাবে। যেমন হারানো গোলাম বাঁদিদের কী করা হবে, এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে খলীফা হারুনুর রশীদকে তিনি লিখেন,

وإن لم يأت لذلك طالب وطالت به المدة صير ذلك فِي بيت المال يصنع به الإمام ما أحب ويصرفه فيما يرى أنه أنفع للمسلمين . -الخراج لأبي يوسف (ص: 184)، الناشر: المطبعة السلفية ومكتبتها القاهرة

“দীর্ঘদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও যদি কোনো দাবিদার না আসে, তাহলে তা বাইতুল মালে রাখা হবে। ইমামুল মুসলিমীন পছন্দ মতো কাজে লাগাবেন। যেখানে ব্যয় করলে মুসলিমদের অধিক উপকার হবে মনে করেন, ব্যয় করবেন।” -কিতাবুল খারাজ ১৮৪

আবু ইউসুফ রহিমাহুল্লাহর এ বক্তব্য অনুযায়ী; মালিক না পাওয়া গেলে বা ফিরিয়ে দেয়ার সম্ভাব্য কোনো সূরত না থাকলে, হারাম মাল জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা জায়েয সাব্যস্ত হয়।

এ হচ্ছে আমাদের মাযহাবের কথা। এ ছাড়া অন্যান্য মাযহাবের অনেক ইমামের মতেও হারাম মাল তাওবার পর মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না হলে, জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা জায়েয। এখানে কয়েকটি বক্তব্য তুলে ধরছি:

এক. ইমাম নববী শাফিয়ী রহিমাহুল্লাহ (৬৭৬ হি.) বলেন,

قال الغزالي إذا كان معه مال حرام وأراد التوبة والبراءة منه فإن كان له مالك معين وجب صرفه إليه أو إلى وكيله فإن كان ميتا وجب دفعه إلى وارثه وإن كان لمالك لا يعرفه ويئس من معرفته فينبغي أن يصرفه في مصالح المسلمين العامة كالقناطر والربط والمساجد ومصالح طريق مكة ونحو ذلك مما يشترك المسلمون فيه وإلا فيتصدق به على فقير أو فقراء. … وهذا الذي قاله الغزالي في هذا الفرع ذكره آخرون من الأصحاب وهو كما قالوه ونقله الغزالي أيضا عن معاوية بن أبي سفيان وغيره من السلف عن أحمد بن حنبل والحارث المحاسبي وغيرهما من أهل الورع. -المجموع شرح المهذب (9/ 351)، الناشر: دار الفكر

“গাযালী রহিমাহুল্লাহ বলেন, কোনো ব্যক্তির কাছে যদি হারাম সম্পদ থাকে, আর তা থেকে সে তাওবা করতে ও দায়মুক্ত হতে ইচ্ছা করে (এক্ষেত্রে তার করণীয় হলো), এ সম্পদের নির্ধারিত মালিক থাকলে মালিক কিংবা মালিকের উকিলের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। মালিক মৃত হলে তার ওয়ারিসদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। পক্ষান্তরে যদি এমন মালিকের হয়ে থাকে, যার পরিচয় জানা নেই এবং পরিচয় উদ্ধার করতে পারবে বলেও আশা নেই, তাহলে সেতু, সরাইখানা, মসজিদ এবং মক্কার পথে (হাজীদের জন্য কল্যাণকর) বিভিন্ন খাতে এবং মুসলমানদের জনকল্যাণমূলক এমন বিভিন্ন খাত, যেখানে মুসলমানদের (ব্যাপক) অংশগ্রহণ আছে, সেগুলোতে খরচ করতে হবে। অন্যথায় এক বা একাধিক দরিদ্র ব্যক্তিকে দান করবে। …গাযালী রহিমাহুল্লাহ এখানে যে সিদ্ধান্তটি দিলেন, তা (শুধু তিনি একা নন) আমাদের অন্যান্য ফকীহও দিয়েছেন। আর তারা যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেটাই সঠিক। (শুধু তাই নয়) গাযালী রহিমাহুল্লাহ এই মাসয়ালা মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান রাযিয়াল্লাহু আনহুমা ও অন্যান্য সালাফ থেকে এবং আহমাদ বিন হাম্বল, হারিস আল-মুহাসিবী এবং অন্যান্য বুযুর্গদের থেকেও নকল করেছেন।” -আল-মাজমু’ শরহুল মুহাযযাব: ৯/৩৫১

দুই. ইমাম কারাফী মালিকী রহিমাহুল্লাহ (৬৮৪ হি.) বলেন,

قاعدة – الأموال المحرمة من الغصوب وغيرها إذا علمت أربابها ردت إليهم وإلا فهي من أموال بيت المال تصرف في مصارفه الأولى فالأولى من الأبواب والأشخاص على ما يقتضيه نظر الصارف من الإمام أو نوابه أو من حصل ذلك عنده من المسلمين فلا تتعين الصدقة قد يكون الغزو أولى في وقت أو بناء جامع او قنطرة فتحرم الصدقة لتعيين غيرها من المصالح وإنما يذكر الأصحاب الصدقة في فتاويهم في هذه الأمور لأنها الغالب وإلا فالأمر  كما ذكرته لك. -الذخيرة للقرافي (6/ 28)، دار الغرب الإسلامي- بيروت

“কায়েদা: ডাকাতি করা সম্পদ এবং আরও যত হারাম সম্পদ আছে, এগুলোর মূল মালিক কে তা জানা থাকলে, মালিকের কাছে ফেরত দিতে হবে। অন্যথায় তা বাইতুল মালের সম্পদ। বাইতুল মালের খাতসমূহের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম এরপর সবচেয়ে উত্তম এ ধারাক্রম হিসেবে ব্যক্তি ও বিভিন্ন খাতে এমন সম্পদ ব্যয় করা হবে। খরচের সর্বাধিক উত্তম খাত (কোনটি তা) নির্ধারণ করবেন ইমামুল মুসলিমীন, তাঁর প্রতিনিধি কিংবা যে মুসলমানের হাতে এ ধরনের সম্পদ থাকবে সে। অতএব এ সম্পদ সাদাকা করা জরুরি নয়। বরং কখনও যুদ্ধ হবে সর্বাধিক উত্তম খাত, কখনও মসজিদ বা সেতু নির্মাণ হবে সর্বাধিক উত্তম খাত। এমন ক্ষেত্রে (প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় না করে) সাদাকা করা হারাম হবে। কারণ এক্ষেত্রে অন্য কল্যাণকর খাতে ব্যয় করা অবধারিত হয়ে যায়। এ মাসআলায় আমাদের ফুকাহায়ে কেরাম নিজেদের ফতোয়াসমূহে সাদাকা করার কথাই (বেশির ভাগ) বলে থাকেন। (কারণ) এখানে সাদাকাটাই সাধারণত বেশি হয়ে থাকে (যার কারণে তারাও সাদাকার কথাই বলেন)। অন্যথায় (বাস্তবে) মাসআলা তো সেটাই যা আমি বলেছি।” -আয-যাখিরা, ৬/২৮

তিন. ইমাম ওয়ানশারিসি মালিকি রহিমাহুল্লাহ (৯১৪ হি.) বলেন,

سئل بعض الفقهاء عمن تاب وبيده مال حرام لا تعرف أربابه، وليس معه غيره: هل يأخذ منه ما يقتات منه أم لا؟ فأجاب: قال الداودي: توبته تزيل ما بيده؛ إما للمساكين أو ما فيه صلاح المسلمين، حتى لا يبقى بيده إلا أقل ما تجزي به الصلاة. –المعيار المعرب للونشريسي 6\146، ط. وزارة الأوقاف والشؤون الإسلامية بالمملكة المغربية – الرباط، و دار الغرب الإسلامي -ببيروت

“একজন ফকীহকে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে তাওবা করেছে, কিন্তু তার হাতে এমন হারাম সম্পদ আছে, যার মালিককে সে চেনে না। আর তার কাছে এ সম্পদ ছাড়া অন্য কোনো সম্পদও নেই। এখন কি সে এ সম্পদ থেকে তার জীবন ধারণের প্রয়োজন পরিমাণ নিতে পারবে? তিনি উত্তর দিলেন, দাউদী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, (এমন ব্যক্তির) তাওবা পূর্ণ হবে হাতে থাকা (হারাম) সম্পদ ব্যয় করার মাধ্যমে। হয় মিসকীনদের দেবে, না হয় মুসলমানদের কল্যাণে খরচ করবে। তার হাতে শুধু ততটুকু রাখতে পারবে, যার দ্বারা নামায বৈধ হয়ে যায়, (অর্থাৎ শুধু নামায বৈধ হওয়া পরিমাণ পোশাক এবং নামাযে দাঁড়ানোর মতো শক্তি লাভের জন্য সর্বনিম্ন যতটুকু খাবারের প্রয়োজন, ততটুকু রাখতে পারবে)।” -আল-মিয়ারুল মুরাব: ৬/১৪৬

চার. শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন,

إذا كانت الأموال قد أخذت بغير حق وقد تعذر ردها إلى أصحابها ككثير من الأموال السلطانية؛ فالإعانة على صرف هذه الأموال في مصالح المسلمين كسداد الثغور ونفقة المقاتلة ونحو ذلك: من الإعانة على البر والتقوى؛ إذ الواجب على السلطان في هذه الأموال – إذا لم يمكن معرفة أصحابها وردها عليهم ولا على ورثتهم – أن يصرفها – مع التوبة إن كان هو الظالم – إلى مصالح المسلمين. هذا هو قول جمهور العلماء كمالك وأبي حنيفة وأحمد وهو منقول عن غير واحد من الصحابة وعلى ذلك دلت الأدلة الشرعية كما هو منصوص في موضع آخر وإن كان غيره قد أخذها فعليه هو أن يفعل بها ذلك. -مجموع الفتاوى (28/ 283-284)، الناشر: مجمع الملك فهد لطباعة المصحف الشريف، المدينة النبوية، المملكة العربية السعودية

“সম্পদ যদি অন্যায়ভাবে নেয়া হয়, আর সেগুলো এখন মালিকের কাছে ফেরত দেয়াও অসম্ভব হয় -সুলতানদের অধিকাংশ সম্পদের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়ে থাকে- এক্ষেত্রে এসব সম্পদ সীমান্ত প্রহরা, যোদ্ধাদের খরচ এবং এ জাতীয় অন্যান্য খাতে খরচ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করা নেক ও তাকওয়ার কাজে সহযোগিতারই অন্তর্ভুক্ত। কারণ, এমন সম্পদের ক্ষেত্রে সুলতানের উপর আবশ্যক হলো, সম্পদের মালিক (কে তা) জানা, (জেনে) তাদের কাছে ফেরত দেয়া বা তাদের ওয়ারিসদের কাছে ফেরত দেয়া। অসম্ভব হলে, এগুলোকে মুসলমানদের কল্যাণে ব্যয় করা। সাথে সাথে নিজেই জুলুম করে এগুলো নিয়ে থাকলে তাওবা করা। ইমাম মালিক, আবু হানীফা, আহমাদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহ এবং অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের এটাই অভিমত। একাধিক সাহাবী রাযিয়াল্লাহু আনহুম থেকেও এ মাসআলাটি বর্ণিত হয়েছে। শরীয়তের দলীলসমূহও এমনটাই বলে। যেমনটা আমরা অন্যত্র আরও স্পষ্ট করে আলোচনা করে এসেছি। ইমাম ছাড়া অন্য কেউ যদি এমন সম্পদ গ্রহণ করে, তবে তারও করণীয় এটাই।” -মাজমুউল ফাতাওয়া ২৮/২৭৩-২৭৪

অন্যত্র বলেন,

فهذه الأموال التي تعذر ردها إلى أهلها لعدم العلم بهم مثلا هي مما يصرف في مصالح المسلمين عند أكثر العلماء. وكذلك من كان عنده مال لا يعرف صاحبه كالغاصب التائب والخائن التائب والمرابي التائب ونحوهم ممن صار بيده مال لا يملكه ولا يعرف صاحبه؛ فإنه يصرفه إلى ذوي الحاجات ومصالح المسلمين. -مجموع الفتاوى (28/ 568)، الناشر: مجمع الملك فهد لطباعة المصحف الشريف، المدينة النبوية، المملكة العربية السعودية

“এসব সম্পদ যেগুলো মালিক জানা না থাকার কারণে মালিকের কাছে ফেরত দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে, এগুলোকে মুসলমানদের কল্যাণকর খাতসমূহে ব্যয় করা হবে। এটাই অধিকাংশ আলেমের মত। এমনিভাবে যার কাছে এমন সম্পদ থাকবে, যার মালিক জানা নেই; যেমন তাওবা করতে ইচ্ছুক আত্মসাৎকারী, খেয়ানতকারী এবং তাওবা করতে ইচ্ছুক সুদখোর এবং এ জাতীয় আরও যারা আছে, যাদের হাতে এমন সম্পদ জমা হয়ে গেছে, যার সে মালিক না আর সে সম্পদের মালিককেও সে চেনে না, তাহলে সে সম্পদ অভাবী মুসলমান অথবা মুসলমানদের কল্যাণে খরচ করবে।” -মাজমুউল ফাতাওয়া ২৮/৫৬৮

বরং এ ধরনের সম্পদকে তিনি জিহাদে খরচ করা উত্তম বলেছেন। তিনি বলেন,

ومن أراد التخلص من الحرام والتوبة ولا يمكن رده إلى أصحابه فلينفقه في سبيل الله عن أصحابه فإن ذلك طريق حسنة إلى خلاصه مع ما يحصل له من أجر الجهاد. -مجموع الفتاوى 28/421-422، الناشر: مجمع الملك فهد لطباعة المصحف الشريف، المدينة النبوية، المملكة العربية السعودية

“যে ব্যক্তি হারাম থেকে দায়মুক্ত হতে চায় এবং তওবা করতে চায়; অথচ তা মালিকের নিকট পৌঁছানো সম্ভব নয়, তাহলে সে যেন তা মালিকের পক্ষ থেকে জিহাদের পথে খরচ করে। এটি দায়মুক্তির উত্তম পথ এবং এতে সে জিহাদে অংশ গ্রহণেরও সাওয়াব পাবে।” -মাজমুউল ফাতাওয়া ২৮/৪২১-৪২২

এছাড়া সমকালীন অনেক আলেমও এ মতের প্রবক্তা। নিম্নে তাদের কিছু বক্তব্য তুলে ধরছি।

পাঁচ. ‘আহকামুল মালিল হারাম’ গ্রন্থকার ‘ড. আব্বাস আহমাদ মুহাম্মাদ আলবায’ এ ব্যাপারে বিস্তারিত দলীল ভিত্তিক আলোচনার পর উপর্যুক্ত মতকে অগ্রাধিকার দিয়ে বলেন,

والخلاصة أن المال الحرام لا يملك. وما دام أنه لا يملك فالواجب التحلل منه والخروج عن إثمه بدفعه إلى الفقراء والمساكين، أو التبرع به إلى مشروع خيري أو غير ذلك مما يرى آخذ المال الحرام أنه يحقق منفعة للإسلام والمسلمين. فهذا هو الشأن في كل مال حرام. –أحكام المال الحرام، ص 405، ط. دار النفائس – الأردن

“সারকথা হচ্ছে, হারাম সম্পদের সে (যার হাতে সম্পদ আছে) মালিক হবে না। সে যেহেতু এ সম্পদের মালিক হবে না সেহেতু (তার জন্য) এগুলো ফকির-মিসকীন বা এমন কোনো কল্যাণকর প্রকল্পে দিয়ে তা থেকে মুক্ত হওয়া এবং তার গুনাহ থেকে বের হওয়া ওয়াজিব, যার মাধ্যমে হারাম সম্পদ গ্রহণকারী বুঝতে পারে যে, সে তা দিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের উপকার করেছে। সকল হারাম সম্পদের ক্ষেত্রে এটাই করণীয়।” -আহকামুল-মালিল-হারাম, ৪০৫

তিনি আরও বলেন,

وبناء على هذا الترجيح فإن مصرف المال الحرام يكون إما إلى الفقراء والمساكين، وإما إلى مصالح المسلمين العامة. -أحكام المال الحرام، ص 403، ط. دار النفائس – الأردن

“এই অগ্রগণ্য নির্ণয়ের ভিত্তিতে; ফকির-মিসকীনদের দেওয়া বা মুসলমানদের জনকল্যাণে ব্যয় করাই হারাম মাল ব্যয়ের খাত সাব্যস্ত হয়।” –আহকামুল মালিল হারাম ৪০৩

আরও বলেন,

والأولى في زماننا أن يتحلل الفرد المسلم مما في يده من المال الحرام إذا يئس من معرفة صاحبه بأن يقوم بتوزيعه على الفقراء والمساكين والمشاريع الإسلامية وفق ما يراه مناسبا. -أحكام المال الحرام، ص 403، ط. دار النفائس – الأردن

“আমাদের বর্তমান সময়ে যদি কোনো ‍মুসলিম, তার হাতে থাকা হারাম সম্পদের মালিক কে, তা জানার ব্যাপারে নিরাশ হয়, তাহলে তার জন্য উত্তম হলো, ফকির মিসকীন বা কোনো ইসলামী প্রকল্পে ব্যয় করার মাধ্যমে তা থেকে দায়মুক্ত হওয়া। ফকির-মিসকীন ও ইসলামী প্রকল্পের মধ্য থেকে যেটাকে সে উপযোগী মনে করে, সেখানেই তা ব্যয় করতে পারে।” – আহকামুল মালিল হারাম: ৪০৩

ছয়. সৌদি আরবের ইফতা বোর্ড ‘আললাজনাতুদ দায়িমা’র ফতোয়ায় এসেছে,

س1: لدي إخوة تحصل أحدهما على مال حرام، فاختلط هذا المال مع مالهم الحلال، علما بأن هذا المال الحرام قليل، فقد توفرت في هؤلاء الإخوة جميعا شروط التوبة النصوح الثلاثة التي بين العبد وربه. هل يخرجون هذا المال الحرام من مالهم كي يكون حالهم لا شك فيه، أم ماذا يفعلون؟ وإذا أخرجوه أين ينفقونه؟

ج1: نعم يتخلصون منه إذا علموا قدره أو قريبا منه من مالهم، وذلك بإنفاقه في وجوه البر، ولا يعتبر صدقة، بل هو من باب التخلص من المال الحرام، تطهيرا لأنفسهم وأموالهم منه. -فتاوى اللجنة الدائمة (14/ 57)، السؤال الأول من الفتوى رقم (14782)

“প্রশ্ন: আমার কয়েকজন ভাই আছেন। তাদের মধ্যে একজনের কিছু হারাম সম্পদ হস্তগত হয়েছে। পরে সে এই হারাম সম্পদকে তাদের অন্যান্য হালাল সম্পদের সাথে মিশিয়ে ফেলেছে। হারাম সম্পদের পরিমাণ অবশ্য কম ছিল। পরবর্তীতে এই ভাইয়েরা তাওবায়ে নাসূহার জন্য আল্লাহ ও বান্দার মাঝে যে তিনটি শর্ত আছে, সেগুলো পূরণ করেছেন। এখন পূর্ণ সন্দেহমুক্ত হওয়ার জন্য তারা কি নিজেদের হালাল সম্পদ থেকে ঐ হারাম সম্পদ বের করে ফেলবে? তারা কী করতে পারে? বের যদি করতেই হয়, তাহলে কোথায় খরচ করবে?

উত্তর: হ্যাঁ, এ সম্পদ থেকে তাদের মুক্ত হতে হবে; যদি তারা সম্পদের পরিমাণ বা কাছাকাছি পরিমাণ জানে। আর এটা করবে হারাম সম্পদটি কল্যাণকর খাতে ব্যয় করার মাধ্যমে। এটাকে নিজের সাদাকা মনে করবে না; বরং এটা হচ্ছে নিজেদেরকে এবং নিজেদের সম্পদকে হারাম সম্পদ থেকে পবিত্র করার উপায়।” –ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দায়িমাহ: ১৪/৫৭

সাত. শায়খ সালিহ আলমুনাজ্জিদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অনলাইনভিত্তিক প্রসিদ্ধ ফতোয়া সাইট ‘আল-ইসলাম সুওয়াল ওয়া জওয়াব’-এ বলা হয়েছে,

من اكتسب “مالاً محرماً ” مع علمه بالتحريم ، وقبضه بإذن مالكه ورضاه ، كالمقبوض بالعقود الفاسدة ، وأجرة الوظائف المحرمة ، أو ربح المتاجرة بالمحرمات ، أو أجرة الخدمات المحرمة كشهادة الزور وكتابة الربا ، أو المال المأخوذ رشوة لينال دافعها شيئا ليس من حقه ، أو اكتسبه عن طريق القمار والميسر واليانصيب والكهانة ، ونحو ذلك … يلزمه عند أكثر العلماء التخلص من هذا المال الحرام بالتصدق به على الفقراء والمساكين والمصالح العامة ونحوها. –موقع الإسلام سؤال وجواب، رقم السؤال: [2]219679

“যে ব্যক্তি হারাম জেনেও হারাম সম্পদ উপার্জন করবে এবং মালিকের অনুমতি ও সন্তুষ্টির ভিত্তিতে হস্তগত করবে, যেমন ফাসেদ চুক্তির ভিত্তিতে হস্তগত করা পণ্য, হারাম চাকরির বেতন, হারাম পন্থায় কৃত ব্যবসার লভ্যাংশ, মিথ্যা সাক্ষ্য ও সুদের চুক্তি লেখার মতো হারাম সেবাদানের বিনিময়, ঘুষের মাধ্যমে গ্রহণকৃত সম্পদ যেখানে ঘুষদাতা তাকে এমন সম্পদ দিয়েছে যেটা তার প্রাপ্য ছিল না, অথবা যে সম্পদ সে জুয়া, লটারি কিংবা গণনা ইত্যাদি করে উপার্জন করেছে, অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে তার জন্য আবশ্যক হলো, ফকির মিসকীনদের সাদাকা করা বা জনকল্যাণমূলক কাজে খরচ করার মাধ্যমে এই হারাম সম্পদ থেকে দায়মুক্ত হওয়া। -ইসলামকা, ফতোয়া নং ২১৯৬৭৯

আট. কাতার ভিত্তিক অনলাইন ফতোয়া সাইট ‘ইসলাম ওয়েব’-এ বলা হয়েছে,

فإن المال المتحصل عليه بكسب محرم يشرع التخلص منه بصرفه في المصالح العامة للمسلمين، ويدخل في ذلك المساجد والإنفاق على اليتامى ومساعدة فقراء الشباب في الزواج. وأما استثمارك المال بنفسك فلا نراه كافيا، بل يتعين إخراج المال وصرفه في مصالح المسلمين كالمساجد والمشافي والمدارس التي يحفظ فيها القرآن وتدرس بها العلوم الشرعية أو غير ذلك من مصالح المسلمين. وأما استثمارها وتوزيع عائدها على الفقراء فلا يكفي. موقع إسلام ويب، رقم الفتوى: [3]138863

“যে সম্পদ হারাম পন্থায় হস্তগত হয়েছে, মুসলমানদের জনকল্যাণে খরচ করার মাধ্যমে তা থেকে দায়মুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। জনকল্যাণমূলক কাজ বলতে মসজিদ, এতিমদের জন্য খরচ করা এবং গরীব যুবকদের বিবাহে সহযোগিতা করা। আপনি শুধু এ সম্পদ বিনিয়োগ করে দিয়েই দায়মুক্ত হয়ে যাবেন, এটাকে যথেষ্ট মনে করি না। বরং হারাম সম্পদকে (অন্যান্য সম্পদ থেকে) বের করা, মসজিদ, হাসপাতাল, তাহফীযুল কুরআন মাদরাসা, উলূমে শরইয়্যাহ শিক্ষা দেওয়া হয় এমন মাদরাসা বা মুসলমানদের জনকল্যাণে খরচ করা ওয়াজিব। এমন সম্পদ বিনিয়োগ করে তার লভ্যাংশ ফকিরদের মাঝে ভাগ করলে (দায়মুক্তির জন্য) যথেষ্ট হবে না।” -ইসলাম ওয়েব-১৩৮৮৬৩

নয়. জর্ডানের অনলাইনভিত্তিক ফতোয়া সাইট ‘আলইফতা’য় সুদের মালের ব্যাপারে বলা হয়েছে,

لا يجوز الانتفاع بالفوائد الربوية، وإنما سبيل المال الحرام الصدقة على الفقراء والمساكين ومصالح المسلمين. -aliftaa.jo ، رقم الفتوى: 535

“সুদি মুনাফা দিয়ে উপকৃত হওয়া জায়েয নেই। হারাম মাল থেকে পরিত্রাণের উপায় হলো, ফকির-মিসকীন এবং মুসলমানদের কল্যাণে খরচ করা।” -আল-ইফতা. জু, ফতোয়া নং ৫৩৫

বীমার লভ্যাংশ সম্পর্কে বলা হয়েছে,

وأما إن كان التأمين تجارياً وجب التصدق بهذه الأرباح في مصالح المسلمين؛ لأن المال الحرام سبيله الصدقة. -aliftaa.jo ، رقم الفتوى: [4]3101

“বীমা যদি বিজনেস বীমা হয়, তাহলে এর লভ্যাংশ মুসলমানদের কল্যাণে সাদাকা করা ওয়াজিব। কারণ হারাম মাল থেকে বাঁচার উপায় হলো (জনকল্যাণ ও অন্যান্য অনুমোদিত খাতে) সাদাকা করা।” -আল-ইফতা.জু, ফতোয়া নং ৩১০১

আল্লামা তাকী উসমানী হাফিযাহুল্লাহ

হারাম মালে তামলীক শর্ত কি না, এ বিষয়ে আল্লামা তাকী উসমানী হাফিযাহুল্লাহ একটি দীর্ঘ পর্যালোচনা করেছেন (ফাতাওয়া উসমানী ৩/১২৮-১৪০, কিতাবুল বুয়ু)। ফিকহী দৃষ্টিকোণ এবং আকাবিরে দেওবন্দ (থানবী রহিমাহুল্লাহ, যাফার আহমাদ উসমানী রহিমাহুল্লাহ, কাশ্মিরী রহিমাহুল্লাহ ও খলীল আহমাদ সাহারানপুরী রহিমাহুল্লাহ) -এর দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে তামলীক শর্ত না হওয়ার মতটিকেই তিনি অগ্রগণ্য বলেছেন। মুফতী রফি উসমানী রহিমাহুল্লাহও সার্বিক দৃষ্টিতে এটি সমর্থন করেছেন।

দারুল হারবে ব্যাংকের সুদের ব্যাপারে মুফতী কেফায়াতুল্লাহ দেহলভী রহিমাহুল্লাহ এবং মুফতী আব্দুর রহীম লাজপুরী রহিমাহুল্লাহসহ আরও বেশ কয়েকজনের মতও এমনই যে, তা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা যাবে।

বিস্তারিত দেখুন:

–          ফাতাওয়া উসমানী ৩/১২৮-১৪০, কিতাবুল বুয়ু

–          ফাতাওয়া রহিমিয়া ৯/১৪৫-১৪৬, কিতাবুল ওয়াকফ, আহকামুল মাসাজিদ ওয়াল মাদারিস; ৯/২৫৬-২৬০, ২৭৮-২৮২, বাবুর রিবা

–          আহকামুল মালিল হারাম, আব্বাস আহমাদ মুহাম্মাদ আলবায: ৩৮৭-৪১২, মাসরাফুল মালিল হারাম বা’দাততাহাল্লুল মিনহু

সারকথা হলো, হানাফী মাযহাব ছাড়া অন্য তিন মাযহাবেই হারাম সম্পদ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার বক্তব্য আছে। হানাফী মাযহাবে বিষয়টি মতভেদপূর্ণ। ইমাম আবু ইউসুফ রহিমাহুল্লাহর বক্তব্য থেকে বুঝা যায়, তিনি তা জায়েয মনে করেন। এছাড়া পরবর্তী ও সমকালীন অনেক হানাফী ফকিহও বিষয়টি জায়েয হিসেবে ফতোয়া প্রদান করেছেন। আমাদের কাছে তাঁদের মতটি অগ্রগণ্য মনে হয়েছে। তাই আমরা তাঁদের ফতোয়ার ভিত্তিতে হারাম মাল জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার ফতোয়া প্রদান করেছি।

শরীয়তের একটি সাধারণ নীতি হলো, ইজতিহাদি মাসআলায় কেউ একটি মত গ্রহণ করলে অন্যদের জন্য তাকে ভুল আখ্যায়িত করা ঠিক নয়। সুফিয়ান সাওরী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

إِذَا رَأَيْتَ الرَّجُلَ يَعْمَلُ الْعَمَلَ الَّذِي قَدِ اخْتُلِفَ فِيهِ وَأَنْتَ تَرَى غَيْرَهُ فَلَا تَنْهَهُ. -الفقيه والمتفقه للخطيب البغدادي (2/ 136)، الناشر: دار ابن الجوزي – السعودية

“যখন তুমি মতভেদপূর্ণ মাসআলায় কাউকে কোনো একটি মতের অনুসরণ করতে দেখো, তাহলে তুমি ভিন্নমতের পক্ষাবলম্বী বলে তাকে নিষেধ করো না।” -আলফাকীহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ, খতীব বাগদাদী: ২/১৩৬

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে দীনের সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন।

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

১৪-০২-১৪৪৫ হি.

৩১-০৮-২০২৩ ঈ.

আরও পড়ুনঃ গুগল এ্যাডসেন্সসহ ওয়েবসাইট বিক্রি করার বিধান

[1]   ورابعها الضوائع مثل ما لا … يكون له أناس وارثونا … ورابعها فمصرفه جهات … تساوى النفع فيها المسلمونا

… (قوله: الضوائع) جمع ضائعة أي اللقطات، وقوله: مثل ما لا إلخ مثل تركة لا وارث لها أصلا أو لها وارث لا يرد عليه كأحد الزوجين والأظهر جعله معطوفا على الضوائع بإسقاط العطف؛ لأن من هذا النوع ما نقله الشرنبلالي دية مقتول لا ولي له لكن الدية من جملة تركة المقتول ولذا تقضى منها ديونه كما صرحوا به تأمل … (قوله: ورابعها فمصرفه جهات إلخ) موافق لما نقله ابن الضياء في شرح الغزنوية عن البزدوي من أنه يصرف إلى المرضى والزمنى واللقيط وعمارة القناطر والرباطات والثغور والمساجد وما أشبه ذلك. اهـ. ولكنه مخالف لما في الهداية والزيلعي أفاده الشرنبلالي أي فإن الذي في الهداية وعامة الكتب أن الذي يصرف في مصالح المسلمين هو الثالث كما مر. وأما الرابع فمصرفه المشهور هو اللقيط الفقير والفقراء الذين لا أولياء لهم فيعطى منه نفقتهم وأدويتهم وكفنهم وعقل جنايتهم كما في الزيلعي وغيره. وحاصله أن مصرفه العاجزون الفقراء فلو ذكر الناظم الرابع مكان الثالث ثم قال وثالثها حواه عاجزونا ورابعها فمصرفه إلخ لوافق ما في عامة الكتب. -الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (2/ 338)

[2]  والرابط كما يلي:

https://islamqa.info/ar/answers/219679/%D8%A7%D8%AD%D9%83%D8%A7%D9%85-%D8%A7%D9%84%D8%AA%D8%AE%D9%84%D8%B5-%D9%85%D9%86-%D8%A7%D9%84%D9%85%D8%A7%D9%84-%D8%A7%D9%84%D8%AD%D8%B1%D8%A7%D9%85-%D8%A8%D8%B9%D8%AF-%D8%A7%D9%84%D8%AA%D9%88%D8%A8%D8%A9

 

[3]    والرابط كما يلي:

https://www.islamweb.net/ar/fatwa/138863/?searchKey=1wFOlyuSRt6bItBYvztv&wheretosearch=0&order=&RecID=0&srchwords=%DD%C5%E4%20%C7%E1%E3%C7%E1%20%C7%E1%E3%CA%CD%D5%E1%20%DA%E1%ED%E5%20%C8%DF%D3%C8%20%E3%CD%D1%E3%20%ED%D4%D1%DA%20%C7%E1%CA%CE%E1%D5%20%E3%E4%E5%20%C8%D5%D1%DD%E5%20%DD%ED%20%C7%E1%E3%D5%C7%E1%CD%20%C7%E1%DA%C7%E3%C9%20%E1%E1%E3%D3%E1%E3%ED%E4&R1=0&R2=0&hIndex=

[4] والرابط كما يلي:

https://aliftaa.jo/Question.aspx?QuestionId=3101

Related Articles

Back to top button