পবিত্রতা-ওযু-গোসলফাতওয়া  নং  ৩৩৬

স্বপ্নদোষের পর লজ্জায় গোসল না করে নামায আদায় করে ফেললে করণীয় কী?

স্বপ্নদোষের পর লজ্জায় গোসল না করে নামায আদায় করে ফেললে করণীয় কী?

স্বপ্নদোষের পর লজ্জায় গোসল না করে নামায আদায় করে ফেললে করণীয় কী?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ

আমার পরিবারের লোকজন দীন-ধর্ম সম্পর্ক তেমন কিছুই জানেন না, পালনও করেন না। আলহামদুলিল্লাহ আমি আমার সাধ্য মতো দীন পালন করার চেষ্টা করি। আমার প্রশ্ন হলো, বাড়িতে থাকাকালে কখনও স্বপ্নদোষ হলে লজ্জার কারণে আমি গোসল করি না। যথাসাধ্য পরিষ্কার করে ওযু করে নামায আদায় করে নিই এবং এর জন্য পরে তাওবা করি। আমার এই সব নামায কি হবে? না হলে আমি কী করতে পারি অনুগ্রহপূর্বক জানাবেন।

প্রশ্নকারী- আদনান কবীর

 

উত্তরঃ

بسم الله الرحمن الرحيم

স্বপ্নদোষ হলে গোসল ফরয হয়ে যায়। গোসল ছাড়া শরীর পবিত্র হয় না। এই অবস্থায় নামায আদায় করলে নামায সহীহ হয় না। সুতরাং আপনাকে গোসল করেই নামায আদায় করতে হবে। ইতিপূর্বে যে নামাযগুলো গোসল ছাড়া আদায় করেছেন, সেগুলো পুনরায় কাযা করে নিতে হবে। -আল-হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ, ইমাম মুহাম্মদ: ১/২৬৬ আলামুল কুতুব, বৈরুত; মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ২/৩৫০ হাদিস নং: ৩৬৬১ আল-মাজলিসুল ইলমী, ভারত; আদ্দুররুল মুখতার: ১/২৩০ দারুল ফিকর, বৈরুত; তাওয়ালিউল আনওয়ার, হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি: ১/১৩৯

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا. –المائدة: 6

“হে মুমিনগণ! তোমরা যখন নামাযের জন্য উঠবে তখন নিজেদের চেহারা ও কনুই পর্যন্ত নিজেদের হাত ধুয়ে নিবে, নিজেদের মাথাসমূহ মাসেহ করবে এবং টাখনু পর্যন্ত নিজেদের পা(-ও ধুয়ে নেবে)। তোমরা যদি জানাবত (অপবিত্র) অবস্থায় থাক তবে নিজেদের দেহ (গোসলের মাধ্যমে) ভালোভাবে পবিত্র করে নেবে।” -সূরা মায়েদা ৫ : ৬

হাদীসে এসেছে,

لا تقبل صلاة بغير طهور”. –صحيح مسلم:1/204 رقم الحديث: 224 دار إحياء التراث العربي – بيروت

“পবিত্রতা ব্যতীত নামায কবুল হয় না।” –সহীহ মুসলিম: ২২৪

দেখুন, সামান্য লজ্জার কারণে এক ওয়াক্ত নামায নষ্ট করা অনেক বড় বোকামি ও অপরিণামদর্শিতা। আজ যাদের লজ্জায় আপনি আপনার আখিরাত নষ্ট করছেন, হাশরের মহাবিপদে তারা কেউ আপনার বিন্দু পরিমাণ উপকার করবে না, করতে পারবেও না। এমনকি আপনিও যদি সেদিন বড় বিপদে পড়ে যান, তখন আপনার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী-সন্তানদের বিনিময়ে হলেও মুক্তির জন্য পাগল হয়ে যাবেন। নিচের দুটি আয়াত একটু চিন্তা করে দেখুন বিপদটা কত কঠিন হবে!

يَوْمَ تَكُونُ السَّمَاءُ كَالْمُهْلِ (8) وَتَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ (9) وَلَا يَسْأَلُ حَمِيمٌ حَمِيمًا (10) يُبَصَّرُونَهُمْ يَوَدُّ الْمُجْرِمُ لَوْ يَفْتَدِي مِنْ عَذَابِ يَوْمِئِذٍ بِبَنِيهِ (11) وَصَاحِبَتِهِ وَأَخِيهِ (12) وَفَصِيلَتِهِ الَّتِي تُؤْوِيهِ (13) وَمَنْ فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ يُنْجِيهِ (14) كَلَّا إِنَّهَا لَظَى (15) نَزَّاعَةً لِلشَّوَى (16) -المعارج

“যেদিন আকাশ তেলের গাদের মতো হয়ে যাবে এবং পাহাড় হয়ে যাবে রঙ্গিন তুলার মতো। কোনো অন্তরঙ্গ বন্ধু তার বন্ধুর খোঁজ নেবে না। অথচ তাদের পরস্পরকে দৃষ্টিগোচর করে দেওয়া হবে। অপরাধী সেদিন শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য তার পুত্রকে মুক্তিপণ হিসাবে দিতে চাবে। এবং তার স্ত্রী ও ভাইকে। এবং তার সেই খান্দানকে যারা তাকে আশ্রয় দিতো। এবং পৃথিবীর সমস্ত অধিবাসীকে, যাতে সে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। কখনই এটা সম্ভব হবে না। তা তো এক লেলিহান আগুন। যা চামড়া খসিয়ে দেবে।” –সূরা মাআরিজ ৭০: ৮-১৬

لِلَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِرَبِّهِمُ الْحُسْنَى وَالَّذِينَ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُ لَوْ أَنَّ لَهُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُ مَعَهُ لَافْتَدَوْا بِهِ أُولَئِكَ لَهُمْ سُوءُ الْحِسَابِ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمِهَادُ (18) –الرعد

“মঙ্গল তাদেরই জন্য, যারা তাদের প্রতিপালকের ডাকে সাড়া দিয়েছে। আর যারা তার ডাকে সাড়া দেয়নি, তাদের কাছে যদি দুনিয়ার সমস্ত জিনিসও থাকে এবং তার সমপরিমাণ আরও, তবে তারা (কিযামতের দিন) নিজেদের প্রাণ রক্ষার্থে তা সবই দিতে প্রস্তুত হয়ে যাবে। তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট রকমের হিসাব এবং তাদের ঠিকানা জাহান্নাম; তা বড় মন্দ ঠিকানা।” –সূরা রাদ ১৩ : ১৮

সুতরাং আপনি এখনই সতর্ক হোন এবং সেই কঠিন বিপদের দিন আসার আগেই সামান্য লজ্জার কথা ঝেড়ে ফেলে শরীয়তের বিধান যথাযথ পালন করুন, যেদিন কোটি কোটি মানুষের সামনে আপনাকে লজ্জিত হতে হবে, কিন্তু সেদিন পরিণতি ভোগ করা ছাড়া কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণের বিন্দু মাত্র সুযোগ থাকবে না। আল্লাহ আমাদের সকলকে এমন কঠিন পরিস্থিতি থেকে হেফাযত করুন। মৃত্যুর আগে তার পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফীক দান করুন।

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

১৮-০৬-১৪৪৪ হি.

১২-০১-২০২৩ ঈ.

আরও পড়ুনঃ স্বপ্নদোষ হলে গোসল না করে কি তায়াম্মুম করা যাবে?

Related Articles

Back to top button