জিহাদ-কিতাল:ফাতওয়াফাতওয়া  নং  ৩৩৪

কোনো জামাআত হক হওয়া আর সেই জামাআতের প্রত্যেক সদস্যের প্রতিটি কাজ হক হওয়া এক কথা নয়

কোনো জামাআত হক হওয়া আর সেই জামাআতের প্রত্যেক সদস্যের প্রতিটি কাজ হক হওয়া এক কথা নয়

কোনো জামাআত হক হওয়া আর সেই জামাআতের প্রত্যেক সদস্যের প্রতিটি কাজ হক হওয়া এক কথা নয়

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ

কয়েকটি বিষয়ে আমার কাছে কিছুটা খটকা লাগছে। অন্য কোনও শাইখকে জিজ্ঞাসা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আপনার কাছেই আবেদন করছি, অনুগ্রহপূর্বক নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর সমাধান দিলে খুবই উপকৃত হবো।

১. যদি ধরে নিই, কোনও জামাআত হকের উপর আছে তাহলে ওই জামাআতের প্রত্যেক সদস্যই হকের উপর আছে, এমনটা ধরে নেওয়া কি ঠিক হবে? শেষ যামানা সংক্রান্ত একটি হাদীসে, বিশেষ একটি দলকে ‘হকপন্থী দল’ বলা হয়েছে। এখন কেউ যদি বলে, এখানে জামাআতের কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ হলো, সমষ্টিগতভাবে ওই জামাআত হকের উপর থাকবে। কিন্তু ওই জামাআতের সাথে যুক্ত কোনও ব্যক্তি যখন বলবে, আমি হকের উপর আছি, তখন তাকে অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে যে, তিনি আসলেই পুরোপুরি হকের উপর আছেন কি না? হকপন্থী জামাআতের সাথে আছেন বলেই তিনি নিজেও পুরোপুরি হকের উপর আছেন, এমন ভাবা যাবে না। হতে পারে, তিনি হকের পুরোপুরি অনুসরণ করছেন না।

হাদীসে জামাআতের ব্যাপারে কথা বলা হয়েছে যে, ওই জামাআতটি হকের উপর থাকবে। ব্যক্তি বিশেষের কথা বলা হয়নি। ব্যক্তি হিসেবে শুধু ‘মাহদী’র কথা এসেছে। কিছু আলামত বলে দেওয়া হয়েছে, যা দ্বারা আমরা তাঁকে চিনতে পারি। তাই তিনি ছাড়া অন্য কোনও ব্যক্তি বিশেষকে অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বের মর্যাদা দেওয়ার আগে চিন্তা করতে হবে, -এই কথাগুলো কি সঠিক? কেউ হাদীসের সাথে সংযুক্ত করে এই কথাগুলো বললে কি তিনি গুনাহগার হবেন?

২. গাযওয়ায়ে হিন্দের একটি হাদীসে এসেছে, ‘বাইরে থেকে আগমনকারীদের পায়ের গোড়ালি মুসলিমদের রক্তে ডুবে যাবে’। এটি কি আক্ষরিক অর্থেই বলা হয়েছে, না যুদ্ধের ভয়াবহতা বোঝানোর জন্য বলা হয়েছে? যদি বলি, এর অর্থ হচ্ছে, এই যুদ্ধ এমন সবাইকে ছুঁয়ে যাবে যারা নিরাপত্তার অবকাশ চেয়েছিল। আকাশ থেকে কী পরিমাণ বৃষ্টি বর্ষিত হলে পায়ের গোড়ালি ডুবে যায়, এটি চিন্তা করলেই তো এই যুদ্ধের ভয়াবহতা টের পাওয়া যায়, এই ব্যাখ্যাটি কি সঠিক হবে?

৩. কিছুদিন আগে আমার পরিচিত একজনকে বলতে শুনলাম, রিবাত ও হিজরতের ভূমি একটাই। তা হলো আফগান। অথচ আমি জানি, মুজাহিদরা বিজয় করার পর যেটুকু অঞ্চল শরীয়াহ অনুযায়ী পরিচালনা করেন, তার পুরাটাই ইসলামের ভূমি। ইসলামের ভূমি তো আরও থাকার কথা। ওই ভূমিগুলোর কি রিবাত নেই? সেখানে কি হিজরত করা যায় না? রিবাত ও হিজরত কি শুধু আফগানের মাঝেই সীমাবদ্ধ? কেউ আফগান ছাড়া অন্য কোনো দেশে হিজরত করলে তা কি হিজরত হবে না? তাছাড়া আফগানে ইসলামী ইমারাহ ঘোষণা দেওয়ার আগে সেটা কি হিজরত ও রিবাতের ভূমি ছিলো না? অনুগ্রহ করে বিষয়টি একটু পরিষ্কার করে দিলে অনেক উপকৃত হবো।

নাম- তাহসিন

উত্তরঃ

১.জি, আপনি ঠিক বলেছেন আলহামদুলিল্লাহ। এই কথাগুলোর কারণে কেউ গুনাহগার হবে না ইনশাআল্লাহ; বরং এরকমই বলা জরুরি। কারণ একজন ব্যক্তি কোনও হক জামাআতের সঙ্গে থাকার অর্থ এটা নয় যে, ওই ব্যক্তির সবকিছু সঠিক এবং অন্ধের মতো তার সবকিছু গ্রহণ করতে হবে বা করা যাবে; বরং একজন অনুসরণীয় আলেম হক জামাআতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগে যেমন ভুল করতে পারেন, তেমনি যুক্ত হওয়ার পরও তার ভুল ভ্রান্তি হতে পারে।

সুতরাং সাধারণ মানুষের জন্য সর্বাবস্থায় একজন আলেম অনুসরণীয় প্রমাণিত হওয়ার পর তাঁকে অনুসরণ করার এবং তার থেকে দীন গ্রহণের নীতি হচ্ছে যথাক্রমে;

ক. যে তাকওয়া, ইলম ও প্রজ্ঞার ভিত্তিতে তিনি নির্ভরযোগ্যতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বের মর্যাদা লাভ করেছেন, যতক্ষণ সেই নির্ভরযোগ্যতা বিনষ্ট হওয়ার কোনও কারণ না ঘটবে, ততক্ষণ তিনি অনুসরণীয়ের মর্যাদায় বহাল থাকবেন। পক্ষান্তরে তিনি যদি তাঁর কাজ-কর্মের দ্বারা উক্ত নির্ভরযোগ্যতা বিনষ্ট করেন, তখন তাঁকে অনুসরণীয় হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। -জামিউ বয়ানিল ইলম, ইমাম ইবনে আব্দুল বার (৪৬৩ হি.) : ২/৯৮৭ দারু ইবনিল জাওযী; মিশকাতুল মাসাবীহ: ১/৬৭ আল-মাকতাবুল ইসলামী বৈরুত; মিরকাতুল মাফাতীহ: ১/২৭৪ দারুল ফিকর, বৈরুত

খ. একইভাবে তিনি যখন নির্ভরযোগ্য হিসেবে উত্তীর্ণ থাকবেন, তখনও তাঁর ভুল-ত্রুটি হতে পারে। অতএব তখন যদি ঘটনাক্রমে তাঁর কোনও ভুল-ত্রুটি প্রকাশিত হয়ে যায়, তাহলে সুনির্দিষ্ট সেই বিষয়ের অনুসরণ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে; যদিও এমন বিচ্ছিন্ন ও ঘটনাক্রমের ভুল-ভ্রান্তির কারণে তাঁকে অনুসরণীয় ব্যক্তির মর্যাদা থেকে ফেলে দেয়া যাবে না। -সুনানে আবু দাউদ: ৭/২০; হাদীস নং: ৪৬১১ দারুর রিসালাতিল আলামিয়্যাহ; বাযলুল মাজহুদ: ১৩/১৭ মারকাযুশ শায়েখ আবুল হাসান আলী আন-নদভী; আল-মুওয়াফাকাত, ইমাম শাতেবী: ৫/১৩৬ দারু ইবনি আফফান; সিয়ারু আলামীন নুবালা: ১৪/৩৭৬ ও ২০/৮৭-৮৮ মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ; মাজমুউল ফাতাওয়া: ৩২/২৩৯ ও ২৭/৩১১ মাজমাউল মালিক ফাহদ, মদীনা

২. আমাদের ত্রুটিপূর্ণ অনুসন্ধানে আমরা এমন কোনও হাদীস খুঁজে পাইনি।

৩. জি, আপনি যেমনটা বলছেন, সেটাই বাস্তব। রিবাত ও হিজরত শুধু আফগানে সীমাবদ্ধ নয়। বরং ইয়ামান, সিরিয়া, মালি, সোমালিয়া, মৌরিতানিয়া, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, নাইজার, পাকিস্তান, কাশ্মীরসহ পৃথিবীর এক ডজনেরও অধিক জায়গার উল্লেখযোগ্য অঞ্চল মুজাহিদদের দখলে আছে এবং সেখানে তারা  যথাসাধ্য শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন আলহামদুলিল্লাহ। এসব অঞ্চলেও হিজরত যেমন হতে পারে তেমনি এগুলোর সীমান্ত প্রহরার জন্য রিবাতও হতে পারে। -ফাতহুল বারী: ৬/৩৯ দারুল ফিকর, বৈরুত; মিরকাতুল মাফাতিহ: ৬/২৪৭৩ দারুল ফিকর; আল-বাহরুর রায়েক: ৫/৭৭ দারুল কিতাবিল ইসলামী; ফাতাওয়া শামী: ৪/১২১ দারুল ফিকর; বাযলুল মাজহুদ: ৯/১৪ মারকাযুশ শায়েখ আবুল হাসান আলী আন-নদভী

والله تعالى اعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

১৬-০৬-১৪৪৪ হি.

১০-০১-২০২৩ ঈ.

আরও পড়ুনঃ বাবা জিহাদ নিয়ে কটাক্ষ করলে ছেলের করণীয় কী?

Related Articles

Back to top button