নিকাহ-তালাকফাতওয়া  নং  ৫৭

স্ত্রী তার স্বামীকে ছেড়ে চলে গেলে স্বামীর করণীয় কী?

স্ত্রী তার স্বামীকে ছেড়ে চলে গেলে স্বামীর করণীয় কী?

স্ত্রী তার স্বামীকে ছেড়ে চলে গেলে স্বামীর করণীয় কী?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন:

কোনো স্ত্রী যদি তার দুটি বাচ্চা নিয়ে স্বামীকে ছেড়ে চলে যায়, তার কাছে আর আসতে না চায়, তখন স্বামীর করণীয় কী?

প্রশ্নকারী- সাহেদ মিয়া

উত্তর:

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله وحده والصلاة والسلام على من لا نبي بعده أما بعد

একজন নেককার স্ত্রী আল্লাহর বড় নেয়ামত। স্বামীর কর্তব্য, এ নেয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন করা। তার সুখ-দুঃখের প্রতি খেয়াল রাখা। তাকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করা। স্বামীর ওপর আরোপিত স্ত্রীর হকগুলো জেনে যথাযথভাবে তা আদায়ের চেষ্টা করা। ভালোবাসা দিয়ে তাকে আপন করে নেয়া।

বিদায় হজ্বের ভাষণের এক পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,

فَاتَّقُوا اللَّهَ فِى النِّسَاءِ فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللَّهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللَّهِ وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لاَ يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ. فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ. (صحيح مسلم: 147)

‘তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা তাদের আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালিমার মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান নিজেদের জন্য হালাল করেছ। তাদের ওপর তোমাদের অধিকার হল, তারা যেন তোমাদের শয্যায় অন্য কাউকে স্থান না দেয়। যদি তারা এরূপ করে, তবে হালকা প্রহার কর। আর তাদের ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণ ও পোশাক-পরিচ্ছেদের দায়িত্ব তোমাদের।’ -সহীহ মুসলিম: ১৪৭

আবু হুরাইরা রা. থেকে একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَإِذَا شَهِدَ أَمْرًا فَلْيَتَكَلَّمْ بِخَيْرٍ أَوْ لِيَسْكُتْ وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ وَإِنَّ أَعْوَجَ شَىْءٍ فِى الضِّلَعِ أَعْلاَهُ إِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا. (صحيح مسلم: 3720)

“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যদি কোনো ক্ষেত্রে উপস্থিত হয়, তখন যেন সে ভালো কথা বলে, না হয় চুপ থাকে। নারীদের সম্পর্কে আমার নসিহত গ্রহণ কর। নারীদের পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। পাঁজরের সর্বাধিক বক্র হাড় হল সর্বাপেক্ষা ওপরের হাড়টি। তুমি যদি তা পূর্ণ সোজা করতে যাও, ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি আপন অবস্থায় ছেড়ে দাও, বক্রই থেকে যাবে। নারীদের সঙ্গে সদাচারের উপদেশ গ্রহণ কর।” -সহীহ মুসলিম: ৩৭২০

আরেক হাদীসে এসেছে,

لاَ يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِىَ مِنْهَا آخَرَ. (صحيح مسلم: 3721)

“কোনো মুমিন পুরুষ যেন কোনো মুমিন নারীর প্রতি অসন্তুষ্ট না হয়। কারণ, তার একটি চরিত্র যদিও তার অপছন্দ, আরেকটি চরিত্র ঠিকই তার পছন্দসই।” -সহীহ মুসলিম: ৩৭২১

সুতরাং স্বাভাবিক ও সুখময় দাম্পত্য জীবনের জন্য স্ত্রীকে যেমন ভালোবাসা দিতে হবে, তার অন্যায় ও দোষ ত্রুটিগুলো উপেক্ষা করতে হবে, তেমনি প্রয়োজনে শরীয়তের সীমা রেখায় থেকে সুন্দরভাবে কিছু শাসনও করতে হবে। সবকিছুর পরও যদি স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য হয়, তাহলে স্ত্রীকে সংশোধনের জন্য কোরআন স্বামীকে তিন স্তরের নির্দেশনা দিয়েছে;

এক. বুঝানো-সমঝানো, ওয়াজ নসিহত করা। স্বামীর অধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরা ইত্যাদি।

দুই. যদি নসিহতে কাজ না হয়, তাহলে স্ত্রীর বিছানা আলাদা করে দেয়া।

তিন. বিছানা আলাদা করার পরও যদি কাজ না হয়, তাহলে সামান্য প্রহার করা। তবে এমন প্রহার করা যাবে না, যাতে দাগ পড়ে যায়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا. (سورة النساء: 34)

“আর যাদের প্রতি অবাধ্যতার আশঙ্কা কর, তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ্ সবার ওপর শ্রেষ্ঠ।” -সুরা নিসা (৪): ৩৪

আর স্বামী স্ত্রীর বিবাদ ও মনোমালিন্যতা যদি উপরোক্ত পন্থায় সমাধান না হয়, তাহলে শরিয়তের নির্দেশনা হল, স্বামীর পক্ষ থেকে একজন এবং স্ত্রীর পক্ষ থেকে একজন অভিজ্ঞ দ্বীনদার বুঝমান ও বিচক্ষণ সালিস নিয়োগ করা। তারা উভয়ে ন্যায়সঙ্গত উপায়ে স্বামী স্ত্রীকে মিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَمًا مِنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِنْ أَهْلِهَا إِنْ يُرِيدَا إِصْلَاحًا يُوَفِّقِ اللَّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا. (سورة النساء :35)

“তাদের উভয়ের মাঝে বিরোধের আশঙ্কা করলে, স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ে নিস্পত্তি চাইলে, আল্লাহ উভয়ের মধ্যে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করে দিবেন। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।” -সুরা নিসা (৪): ৩৫

সুতরাং এভাবে চেষ্টা করলে আল্লাহ সমাধান করে দিবেন ইনশাআল্লাহ। আরো দেখুন, তাফসীরে ইবনে কাছির, দারু ত্বাইবা: ২/২৯৪-২৯৬

 فقط. والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২০-১১-৪১ হি.

১২-০৭-২০ ইং

আরো পড়ূন
প্রথম স্বামীর তালাক দেওয়া ছাড়া অন্যত্র বিয়ে করলে সেই বিয়ে কি সহীহ হয়?

কোন মেয়ে যদি রাষ্ট্রীয় বিধান মতে তার স্বামীকে তালাক দেয়, তাহলে কি তালাক পতিত হবে?

Related Articles

Back to top button