ফাতওয়াসিয়াম:

রোযা ও ঈদ, আঞ্চলিকভাবে করবো, না আন্তর্জাতিকভাবে?

     রোযা ও ঈদ, আঞ্চলিকভাবে করবো, না আন্তর্জাতিকভাবে?

     রোযা ও ঈদ, আঞ্চলিকভাবে করবো, না আন্তর্জাতিকভাবে?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন-০১ ইসলামে চাঁদ দেখে রোযা রাখা এবং রোযা ভাঙ্গার কথা বলা হয়েছে। এখন এটা কি বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে দেখা গেলেই পুরো বিশ্বের সবার জন্য প্রযোজ্য হবে? নাকি অঞ্চল ভিত্তিক আলাদা আলাদা ভাবে চাঁদ দেখতে হবে? যদি সারা বিশ্বে একই সাথে হিসাব করা হয়, তবে কোন দেশকে ভিত্তি ধরা হবে? সময় সংক্রান্ত জটিলতাগুলো কীভাবে নিরসন করা হবে? আর যদি অঞ্চল ভেদে আলাদা আলাদা হয়, তবে অঞ্চলের সীমারেখা কীভাবে নির্ধারিত হবে?
-আবু রুবাইয়া

প্রশ্ন-০২ সারাবিশ্বে কি একই দিনে রোযা রাখা সম্ভব না? কারণ, শবে কদর তো একটাই। আমরা যদি রোযা ভিন্ন ভিন্ন দিনে শুরু করি তাহলে শবে কদর দুইটি হয়ে যায় না, এটা কি সম্ভব?
-মাসুদুর রহমান
জিয়ানগর, পিরোজপুর

প্রশ্ন-০৩ রোযা কি গ্লোবাল থটের ভিত্তিতে রাখবো? নাকি লোকাল থটের ভিত্তিতে?
-মুহাম্মাদ জহির

প্রশ্ন:-০৪ শরীয়তের দৃষ্টিতে সমগ্র পৃথিবীর যে কোনো এক জায়গায় চাঁদ দেখা গেলে, বাকী সকল রাষ্ট্রের লোকেরা ওই রাষ্ট্রের অনুসরণে রোযা রাখতে পারবে কিনা?
-আবদুল্লাহ

প্রশ্ন:-০৫ আমি গত কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবের সাথে মিলিয়ে রোযা ও ঈদ পালন করে আসছি। কিন্তু বিশেষ কারণে সবার কাছ থেকে তা গোপন রেখেছি। এতদিন চাকরির সুবাদে বাইরে থাকতাম তাই প্রথম সমস্যা হত না। কিন্তু এবার বাসায় থাকতে হচ্ছে, ফলে বিষয়টি গোপন রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
তাই আমি চাচ্ছি, সৌদি আরবের সাথেই রোযা রাখার নিয়ত করবো, তবে প্রথম রোযাটি বাংলাদেশের সাথে মিলিয়ে রাখবো। ছুটে যাওয়া প্রথম রোযাটি পরবর্তীতে কাজা করে নেবো। এখান আমার জানার বিষয় হলো, আমি এভাবে করতে পারি কি না? এই বিষয়ে শরীয়তের বিধান কী?
-আব্দুল্লাহ

প্রশ্ন:-০৬ সারাবিশ্বে একই দিনে রোযা রাখা হবে? না আঞ্চলিক ভাবে রাখা হবে? এক্ষেত্রে বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।
-মুহাম্মাদ ফজল

উত্তর:

بسم الله الرحمن الرحيم
প্রিয় ভাইয়েরা, মৌলিকভাবে যে বিষয়টি আপনারা সকলেই জানতে চেয়েছেন তা হলো, আমরা ঈদ ও রোযা, বিশ্বের অন্য কোনো রাষ্ট্রে চাঁদ দেখা গেলে আন্তার্জাতিকভাবে একসঙ্গে করবো, না আমাদের দেশে চাঁদ দেখা গেলে সে হিসেবে করবো?
এই বিষয়ে আলহামদুলিল্লাহ বিভিন্ন ভাষায় প্রচুর লেখা হয়েছে। বাংলা ভাষায় যে অভাব ছিলো, তা পূরণ করে দিয়েছেন, মুহতারাম মাওলানা আব্দুল মালেক হাফিযাহুল্লাহ। আল্লাহ তাআলা তাঁকে উত্তম বিনিময় দান করুন। তিনি এই বিষয়ে অত্যন্ত চমৎকার ও প্রামাণ্য একটি রচনা তৈরি করেছেন আলহামদুলিল্লাহ। লেখাটি ‘মুসলমানদের মাঝে ঈমান ও ইসলামী ভ্রাতৃত্বের ঐক্য সৃষ্টির চেষ্টা করুন একই দিনে ঈদের বিষয় দায়িত্বশীলদের উপর ছাড়ুন’ শিরোনামে, মাসিক আলকাউসার শাওয়াল ১৪৩৫ হি. আগস্ট ২০১৩ ইং সংখ্যা থেকে শুরু করে কয়েক কিস্তিতে প্রকাশিত হয়েছে। যার পর নতুন করে আরও কিছু লেখার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা আপাতত আমরা অনুভব করছি না। সুতরাং আমরা এখানে বিস্তারিত কোনো আলোচনা করতে চাই না। সংক্ষেপে কয়েকটি কথা বলছি। যারা বিস্তারিত পড়তে চান, তারা আলকাউসার থেকে তাঁর অনবদ্য রচনাটি পড়ে নিতে পারেন।
সংক্ষিপ্ত কথাগুলো এই;

এক. এবিষয়ে উলামায়ে কেরামের মাঝে দুটি মতই আছে। আন্তর্জাতিকভাবে একসঙ্গে করার মত যেমন আছে, তেমনি আঞ্চলিকভাবে করার মতও আছে; যদিও বাস্তবতা হচ্ছে, সাহাবা যুগ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত; দীর্ঘ দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে, অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতই আঞ্চলিকভাবে করার পক্ষে এবং বাস্তবেও মুসলিম উম্মাহ এভাবেই আমল করে আসছে।

দুই. আন্তর্জাতিকভাবে হবে, না আঞ্চলিকভাবে হবে, তা নিয়ে যদিও উলামায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ রয়েছে, কিন্তু এবিষয়ে তারা সকলেই একমত যে, ঈদ, রোযা, হজ ইত্যাদির মতো আমলগুলো ব্যক্তিগত নয়, বরং জামাআতবদ্ধ ও সমষ্টিগত। এজন্য এসব বিষয়ে কারও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়। এবিষয়ক সিদ্ধান্তের অধিকার সংরক্ষণ করেন, মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান বা তার নিয়োগকৃত কর্তৃপক্ষ। মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান যদি না থাকে, তাহলে এই দায়িত্ব পালন করবেন, মুসলিমদের কর্ণধার উলামায়ে কেরাম। সাধারণ মানুষের দায়িত্ব, তাঁদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকল মুসলিমের সঙ্গে মিলে একই সময়ে ঈদ ও রোযা পালন করা। ব্যক্তিগতভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার, সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমল করার এবং সেই সিদ্ধান্তের প্রতি অন্যদের আহ্বান করার অধিকার কোনও ব্যক্তির নেই।

তিন. একারণে যেসব উলামায়ে কেরাম আন্তর্জাতিকভাবে একই দিনে রোযা ও ঈদ করার মত পোষণ করেন, এমনকি একই দিনে করা উত্তম মনে করেন, তাঁরাও তাঁদের ফতোয়ায় একথা পরিষ্কার করে বলেছেন যে, যতক্ষণ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত না হবে, ততক্ষণ কোনো ব্যক্তি বা দল বিশেষের জন্য; নিজ দেশের কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এবং সর্বসাধারণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে; অন্য দেশের অনুকরণে ঈদ বা রোযা পালন করা কিছুতেই জায়েয নয়। সুতরাং যারা এমনটি করবেন, তারা গুনাহগার হবেন।

চার. হ্যাঁ, কোনো দেশের মুসলিম শাসক বা তার প্রতিনিধি কিংবা এমন শাসকের অনুপস্থিতিতে সে দেশের কর্ণধার উলামায়ে কেরাম যদি ফুকাহায়ে কেরামের দ্বিতীয় মতের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিকভাবে রোযা ও ঈদ পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তখন সে দেশের জনগণের দায়িত্ব হবে, তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিকভাবে রোযা ও ঈদ পালন করা। তার আগ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আঞ্চলিকভাবে সকল জনগণের সঙ্গে মিলে রোযা ও ঈদ পালন করা জরুরি।

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২২ রমজান ১৪৪১ হি

১৬ মে ২০২০ ঈ.

আরও পড়ুনঃ একজনের রোযা কি আরেকজন রাখতে পারে?

Related Articles

Back to top button