কোনো অমুসলিমের সাথে শরিকানা ব্যবসা করার হুকুম কী?
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্ন:
আমরা পাঁচ জন মিলে একসঙ্গে একটি ব্যবসা করতে চাচ্ছি। আমাদের মধ্যে চার জন মুসলিম এবং একজন অমুসলিম। এখন আমাদের জানার বিষয় হল, অমুসলিমের সঙ্গে মিলে ব্যবসা করা জায়িয হবে কি?
প্রশ্নকারী-রফিক
উত্তর:
الجواب باسم ملهم الصواب
অমুসলিমের সঙ্গে শরিকানা ব্যবসা মূলত নাজায়িয নয়, তবে উত্তম হল শরিকানা ব্যবসায় তাদেরকে না জড়ানো। কারণ, অমুসলিমরা হালাল-হারাম বুঝে না, মানাও জরুরি মনে করে না। তার মাধ্যমে আপনাদের ব্যবসায় হারাম ঢুকে যাওয়া অসম্ভবপর কিছু নয়।
তছাড়া অমুসলিমদের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে কুরআনে কারীমে কঠিনভাবে বারণ করা হয়। ইরশাদ হচ্ছে-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ (51) فَتَرَى الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ يُسَارِعُونَ فِيهِمْ يَقُولُونَ نَخْشَى أَنْ تُصِيبَنَا دَائِرَةٌ فَعَسَى اللَّهُ أَنْ يَأْتِيَ بِالْفَتْحِ أَوْ أَمْرٍ مِنْ عِنْدِهِ فَيُصْبِحُوا عَلَى مَا أَسَرُّوا فِي أَنْفُسِهِمْ نَادِمِينَ (52) -المائدة
“হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদি ও নাসারাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, আপনি তাদেরকে দেখবেন, খুব দ্রুত তারা এই বলে তাদের সঙ্গে মিলিত হয় যে,(তাদের সঙ্গে মিলিত না হলে) আমরা আমাদের ভাগ্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছি। অচিরেই হয়তো আল্লাহ (মুসলিমদের) বিজয় কিংবা এমন কিছু দান করবেন, যাতে তারা তাদের অন্তরে যা লুকায়িত রেখেছিল, তার জন্য লজ্জিত হবে।” (সূরা মায়িদা: ৫১-৫২)
জানা কথা, তাদের সঙ্গে অংশীদারি ব্যবসা করতে গেলে কিছুটা হৃদ্যতার সম্পর্ক হয়ে যাওয়া এবং তাদের কৃষ্টিকালচারের প্রভাব পড়াই স্বাভাবিক, যা এক পর্যায়ে কুফর পর্যন্তও গড়াতে পারে।
ইবনুল কায়্যিম (র) (৭৫১ হি.) বলেন-
الَّذِينَ كَرِهُوا مُشَارَكَتَهُمْ لَهُمْ مَأْخَذَانِ: أَحَدُهُمَا: اسْتِحْلَالُهُمْ مَا لَا يَسْتَحِلُّهُ الْمُسْلِمُ مِنَ الرِّبَا وَالْعُقُودِ الْفَاسِدَةِوَغَيْرِهَا وَعَلَى هَذَا تَزُولُ الْكَرَاهَةُ بِتَوَلِّي الْمُسْلِمِ الْبَيْعَ وَالشِّرَاءَ. وَالثَّانِي: أَنَّ مُشَارَكَتَهُمْ سَبَبٌ لِمُخَالَطَتِهِمْ، وَذَلِكَ يَجُرُّ إِلَى مُوَادَّتِهِمْ وَكَرِهَ الشَّافِعِيُّ مُشَارَكَتَهُمْ مُطْلَقًا. -أحكام أهل الذمة:1/561، رمادى للنشر – الدمام
“যারা অমুসলিমদের শরীক করা অপছন্দ করেন, তাদের কথার ভিত্তি দুটি। এক. সুদ, ফাসিদ ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদির মত যে বিষয়গুলো মুসলিমদের নিকট হারাম, সেগুলোকে তারা হালাল মনে করে। সুতরাং লেনদেনের দায়িত্ব যদি মুসলিম আঞ্জাম দেন, তাহলে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভবপর। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, তাদেরকে ব্যবসায় শরীক করা; তাদের সঙ্গে অধিক মেলামেশার কারণ, যা তাদের বন্ধুত্বের দিকে নিয়ে যায়। আর ইমাম শাফিঈ (র) তো সর্বাবস্থায়ই তাদেরকে অংশীদার বানানো অপছন্দ করেন।” (আহকামু আহলিজ জিম্মাহ: ১/৫৬১)
তারপরও যদি কোন অমুসলিমকে আপনাদের ব্যবসায় শরীক করতে চান, তাহলে এসব বিষয়ে আপনাদেরকে সম্পূর্ণ সচেতন থাকতে হবে এবং বেচা-কেনা ইত্যাদির সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব আপনাদের হাতে রাখতে হবে, যাতে কোনক্রমেই তাতে হারামের অনুপ্রবেশ ঘটতে না পারে। ইবন আবি শাইবা (র) বর্ণনা করেন-
كان عطاء وطاوس ومجاهد «يكرهون شركة اليهودي، والنصراني، إلا إذا كان المسلم هو الذي يرى الشراء، والبيع».( المصنف لابن أبي شيبة:كتاب البيوع و الأقضية، رقم الحديث:19986، 4/269،ط: مكتبة الرشد – الرياض ،)
“আতা, তাউস, মুজাহিদ প্রমুখ তাবিঈ (র) ইয়াহুদ-নাসারার সঙ্গে শরীকানা ব্যবসা অপছন্দ করতেন। তবে বেচা-কেনার কর্তৃত্বটি মুসলিমের হাতে থাকলে ভিন্ন কথা।” (মুসান্নাফ ইবন আবি শাইবা: ৪/২৬৯, আসার নং: ১৯৯৮৪; আরও দেখুন বায়িউস সানায়ে: ৬/৬২, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ।)
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
১০-০৪-১৪৪৩ হি.
১৬-১১-২০২১ ঈ.
আরও পড়ুনঃ তওবার পর ঘুষের টাকার ব্যাপারে করণীয় কী?