পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্ন:
আমার চাচা বিদেশে থাকেন। তাঁর পরিবারে কোনো পুরুষ নেই। তাই বাধ্য হয়েই আমাকে চাচি ও চাচাতো বোনদের সঙ্গে থাকতে হয়। চাচাতো বোনদের সঙ্গে একসাথে বসে পড়াশোনাও করতে হয়। জানার বিষয় হলো, আমার জন্য কি এটি বৈধ হচ্ছে?
উল্লেখ্য, তাদের সাথে চলাফেরার ক্ষেত্রে আমার কোনো ধরনের যৌন আকর্ষণ বোধ হয় না।
-আবদুল হাদী
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله، أما بعد!
চাচি ও চাচাতো বোন মাহরাম নয়। হাদীস শরীফে গায়রে মাহরাম নারীদের কাছে প্রবেশ করতে ও নির্জন অবস্থান নিতে নিষেধ করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لا يخلون رجل بامرأة إلا مع ذي محرم. -رواه البخاري (5233 ط. دار طوق النجاة)
“মাহরামের উপস্থিতি ব্যতীত কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে নির্জন অবস্থান নেবে না।” -সহীহ বুখারী: ৫২৩৩ (দারু তাওকিন নাজাহ)
উকবা বিন আমের রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إياكم والدخول على النساء. فقال رجل من الأنصار: يا رسول الله، أفرأيت الحمو؟ قال: الحمو الموت. رواه البخاري (5232)
“তোমরা বেগানা নারীর ঘরে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাক। এক আনসারি সাহাবী জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! স্বামীর নিকটাত্মীয় তথা দেবর-ভাসুর সম্পর্কে আপনি কী বলেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারা তো মৃত্যু সমতুল্য!” -সহীহ বুখারী: ৫২৩২
অতএব যৌনাকর্ষণ বোধ হোক বা না হোক; সর্বাবস্থায় আপনার জন্যে চাচি ও চাচাতো বোনদের সঙ্গে পর্দা করা ফরয। শরয়ী পর্দা না মেনে তাদের সাথে থাকা, কথাবার্তা বলা, দেখা সাক্ষাৎ করা জায়েয নেই। একসাথে বসে পড়াশোনা জায়েয হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। -মাবসুত: ১০/১৫৮ (দারুল মারিফাহ); আল-বাহরুর রায়েক: ৮/২২২ (আলামুল কুতুব); রদ্দুল মুহতার: ১/৪০৬, ৪০৭; ৬/৩৬৯ (দারুল ফিকর); আল-মুগনী: ৭/১০৪ (মাকতাবাতুল কাহেরা); আহকামুন নযর, ইবনুল কাত্তান আল-ফাসী, পৃ: ২৭৭ (দারুল কলম); ইমদাদুল ফাতাওয়া: ৯/২২৯ (যাকারিয়া বুক ডিপো)
উল্লেখ্য, আপনি যে মনে করছেন, তাদের সাথে চলাফেরার ক্ষেত্রে আপনার কোনো ধরনের যৌন আকর্ষণ বোধ হয় না, এটাও শয়তানের একটা ধোঁকা। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ألا لا يخلون رجل بامرأة إلا كان ثالثهما الشيطان.. –رواه الترمذي (2165) : وقال: “هذا حديث حسن صحيح.” زاد في رواية الحاكم (390) قالها ثلاثا
“সাবধান! যেকোনো পুরুষ কোনো বেগানা নারীর সঙ্গে নির্জন অবস্থান গ্রহণ করে, তাদের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে শয়তান উপস্থিত থাকে। কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন।” –জামে তিরমিযী: ২১৬৫; মুসতাদরাকে হাকীম: ৩৯০
অপর হাদীসে এসেছে,
لا تلجوا على المغيبات، فإن الشيطان يجري من أحدكم مجرى الدم. قلنا: ومنك يا رسول الله؟ قال: ومني، ولكن الله أعانني عليه، فأسلم. –رواه الترمذي (1172) وقال الحافظ ابن حجر في فتح الباري (9/331 ط. دار الفكر) “رجاله موثقون لكن مجالد بن سعيد مختلف فيه.” وقال الشيخ عوامة في تعليقه على المصنف (9/479 ط. دار القبلة) : “وعبارة الحافظ في الفتح تفيد أن حديثه حسن.” ثم قال بعد ذكر عبارة الحافظ المذكورة: “وهذا شأن الحديث الحسن كما هو معلوم.”
“তোমরা এমন নারীদের কাছে যেও না, যাদের স্বামী অনুপস্থিত। কারণ শয়তান তোমাদের মধ্যে রক্তের মতো চলাচল করে। আমরা বললাম, আপনারও একই অবস্থা ইয়া রাসূলাল্লাহ? বলেন হ্যাঁ, তবে আমাকে আল্লাহ শয়তানের মোকাবেলায় সাহায্য করেন, তাই আমি নিরাপদ থাকি।” –জামে তিরমিযী: ১১৭২
উপরের হাদীসগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, দুজন নারী পুরুষের নির্জন অবস্থান কত ভয়ঙ্কর বিষয় এবং বিষয়টিকে শরীয়ত কী পরিমাণ গুরুত্ব প্রদান করেছে। এই ভয়াবহতার বাস্তব চিত্র আজ আমরা অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে আমাদের সমাজের প্রতিটি অঙ্গনে নিত্যদিনই প্রত্যক্ষ করছি। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।
যেহেতু আপনার চাচার বাসায় শরয়ী পর্দার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয় না এবং আপনার কথা থেকে বুঝা যাচ্ছে, তারা দ্বীনদারও না, দ্বীনের বিধানের প্রতি তাদের গুরুত্ব কম, তাই এমন পরিবেশ ত্যাগ করা আপনার জন্য জরুরি। অন্যের দুনিয়াবি প্রয়োজন পূরণের জন্য নিজের আখিরাত বরবাদ করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মাইমুন বিন মেহরান রহিমাহুল্লাহু বলেন,
قال عمر بن عبد العزيز لجلسائه: أخبروني بأحمق الناس، قالوا: رجل باع آخرته بدنياه، فقال عمر: ألا أنبئكم بأحمق منه؟ قالوا: بلى، قال: رجل باع آخرته بدنيا غيره. –حلية الأولياء (5/325 ط. دار الفكر)
“উমর বিন আব্দুল আযীয রহিমাহুল্লাহ তার সভাসদদের জিজ্ঞাসা করলেন, বলো তো সবচেয়ে বোকা কে? তারা বললো, ঐ ব্যক্তি যে দুনিয়ার বিনিময়ে দ্বীনকে বিক্রি করে দেয়। উমর বললেন, আমি কি তোমাদের এরচেয়ে বড় আহমকের কথা বলবো? তারা বললো, হাঁ, বলুন। তিনি বললেন, এমন ব্যক্তি যে অন্যের দুনিয়াবি স্বার্থে নিজের আখিরাত বরবাদ করে।” -হিলয়াতুল আওলিয়া: ৫/৩২৫ (দারুল ফিকর)
আপনি যেটা মনে করছেন, চাচা বিদেশে থাকে, তার সংসার দেখার কেউ নেই। সুতরাং আপনি তাদের দেখা শোনা করতে বাধ্য, এটি একদমই ঠিক নয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি আপনার দায়িত্বই নয়। বড় জোর একটি নফল কাজ। পর্দা রক্ষা করে যদি কাজটি না করতে পারেন, আপনার জন্য তা জায়েয নয়।
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
১৩-০৮-১৪৪৬ হি.
১৩-০২-২০২৫ ঈ.