হালাল-হারাম:ফাতওয়া  নং  ৩৫

হারাম টাকায় লাগানো গাছের ফল খাওয়া যাবে?

হারাম টাকায় লাগানো গাছের ফল খাওয়া যাবে?

হারাম টাকায় লাগানো গাছের ফল খাওয়া যাবে?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন:

এমন ফলগাছের হুকুম কী, যার চারা হারাম টাকা দিয়ে কেনা হয়েছিল? এর ফল কি খাওয়া যাবে? না খাওয়া গেলে কী করণীয়?

নাইম

উত্তর:

بسم الله الرحمن الرحيم

যে পরিমাণ হারাম টাকা দিয়ে গাছের চারা খরিদ করা হয়েছিল, সে পরিমাণ টাকা (ওই টাকার) মূল মালিককে ফিরিয়ে দিতে হবে। মালিক জীবিত না থাকলে তার ওয়ারিশদেরকে ফিরিয়ে দিতে হবে। তাদের কাউকে না পাওয়া গেলে হারাম থেকে দায় মুক্তির উদ্দেশ্যে তাদের পক্ষ থেকে গরিব মিসকিনকে সদকা করে দিতে হবে। তারপর উক্ত গাছের ফল খাওয়া জায়েয হবে। তা না করে সেই গাছের ফল খাওয়া জায়েয হবে না।

মালিক বা তার ওয়ারিশকে টাকা ফিরিয়ে দেয়ার পর কিংবা গরিবকে সদকা করার পর, এতদিন যে ফল খাওয়া হয়েছে, তা হালাল হবে কি না, এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, মূল টাকা পরিশোধের পর ভক্ষণকৃত ফল হালাল হবে, কেউ বলেছেন, হালাল হবে না; বরং তাও সদকা করে দিতে হবে। অর্থাৎ পূর্বের বছরগুলোতে খাওয়া ফলের একটা আনুমানিক হিসাব ধরে সেগুলোর মূল্য গরিবদের মাঝে সদকা করে দিবে। বলা বাহুল্য, মুমিনের জীবনে হারামের বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। সুতরাং সতর্কতার দাবি হল, দুনিয়ার এই তুচ্ছ সম্পদের মোহ ত্যাগ করে, মূল হারাম টাকার সঙ্গে পূর্বের বছরগুলোতে খাওয়া ফলের মূল্যও সদকা করে দেওয়া। এটাই একজন সচেতন ও খাঁটি মুমিনের বৈশিষ্ট্য। এতে কারো দ্বিমত নেই।

عن النعمان بن بشير يقول سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول الحلال بين والحرام بين وبينهما مشبهات لا يعلمها كثير من الناس فمن اتقى المشبهات استبرأ لدينه وعرضه ومن وقع في الشبهات كراع يرعى حول الحمى يوشك أن يواقعه -صحيح البخاري، رقم: 52؛ ط. دار طوق النجاة

নো’মান ইবনে বাশির রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, হালাল সুস্পষ্ট এবং হারাম সুস্পষ্ট। এদুয়ের মাঝে সংশয়পূর্ণ কিছু বিষয় আছে, যা সম্পর্কে অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি এই সংশয়পূর্ণ বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকল, সে তার দ্বীন ও সম্মান নিয়ে নিরাপদ থাকল। আর যে ব্যক্তি সংশয়পূর্ণ বিষয়গুলোতে নিপতিত হল, তার অবস্থা ওই রাখালের মতো, যে বাদশাহর সংরক্ষিত ও নিষিদ্ধ চারণভূমির পাশেই পশু চরায়। সমূহ সম্ভাবনা আছে যে, তার এ আচরণ তাকে অচিরেই নিষিদ্ধ অংশে নিপতিত করে ছাড়বে। -সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫২

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم (من كانت له مظلمة لأحد من عرضه أو شيء فليتحلله منه اليوم قبل أن لا يكون دينار ولا درهم إن كان له عمل صالح أخذ منه بقدر مظلمته وإن لم تكن له حسنات أخذ من سيئات صاحبه فحمل عليه) -صحيح البخاري، رقم: 2317؛ ط. دار ابن كثير، اليمامة – بيروت؛ تحقيق: د. مصطفى ديب البغا

আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি কারো সম্মান নষ্ট করে থাকে বা অন্য কোনো বিষয়ে তার ওপর জুলুম করে থাকে, সে যেন সেই দিন আসার আগে আজই তার থেকে দায় মুক্ত হয়ে নেয়, যেদিন কোনও দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সেদিন যদি জালিমের কোনো নেক আমল থাকে, তাহলে জুলুম সমপরিমাণ নেক আমল নিয়ে নেয়া হবে। নেক আমল না থাকলে মাজলুমের গোনাহ জালিমের ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে। -সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২৩১৭

আরও দেখুন, আহকামুল কোরআন, জাসসাস: ২/২১৬; আলমাবসূত, সারাখসি, ১১/১০২-১০৩; বাদায়েউস সানায়ে, কাসানি: ৬/১৪৮

فقط. والله تعالى اعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২০ শে শাওয়াল, ১৪৪১ হি.

১৫ ই জুন, ২০২০ ইং

আরো পড়ূন
হারাম সম্পদ দিয়ে ক্রয়কৃত বস্তু ব্যবহারের বিধান

Related Articles

Back to top button