অসহায় নিকট আত্মীয়কে দান করার দ্বারা কি জিহাদের খাতে দানের হক আদায় হবে?
অসহায় নিকট আত্মীয়কে দান করার দ্বারা কি জিহাদের খাতে দানের হক আদায় হবে?
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্নঃ
আমার একজন বিধবা নিকট আত্মীয় আছেন, যার আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন। বর্তমানে আমি জিহাদের পথে দান না করে সেই অর্থ আমার সেই বিধবা আত্মীয়কে দিতে পারবো কিনা? তাকে দিলে আমার জিহাদের খাতে দানের ফরয আদায় হবে কিনা? অথবা এ অবস্থায় আমার কী করণীয়?
বর্তমানে এদেশে চলমান দাওয়াহ ও ইদাদ পর্যায়ের জিহাদে প্রত্যেক সামর্থ্যবানের সামর্থ্য অনুযায়ী দান সাদাকার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কুরআন হাদীসের আলোকে সামগ্রিকভাবে একটা ধারণা দিলে খুব উপকৃত হতাম।
প্রশ্নকারী- বাশির
উত্তরঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله، أما بعد:
জিহাদে সম্পদ ব্যয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু কথা
জিহাদী কার্যক্রমের মূল উপাদান দুটি। জান ও মাল। সুষ্ঠুভাবে জিহাদ করার জন্য অর্থ সম্পদের অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। বর্তমান যুগে জিহাদের জন্য সম্পদের প্রয়োজন আরও তীব্র। সমর বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে বর্তমানে জিহাদের জন্য অর্থের প্রয়োজন ঠিক ততটা, যতটা প্রয়োজন একজন মানুষের সচল থাকার জন্য রক্তের।
তাই জিহাদে দান করার ফযীলত কুরআন হাদীসের অসংখ্য জায়গায় বিবৃত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে যত জায়গায় জিহাদের কথা এসেছে, অধিকাংশ জায়গাতেই জানের পাশাপাশি মাল দ্বারা জিহাদের কথা বলা হয়েছে। বরং অধিকাংশ জায়গায় মালের কথা আগে এসেছে। ইরশাদ হচ্ছে,
وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (سورة التوبة: 41)
“তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো নিজেদের মাল ও জান দিয়ে। এ-ই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানো।” -সূরা তাওবা ০৯: ৪১
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু বকর জাসসাস রহিমাহুল্লাহ বলেন,
وقوله وجاهدوا بأموالكم وأنفسكم في سبيل الله فأوجب فرض الجهاد بالمال والنفس جميعا فمن كان له مال وهو مريض أو مقعد أو ضعيف لا يصلح للقتال فعليه الجهاد بماله بأن يعطيه غيره فيغزو به. اهـ (احكام القران للجصاص: 3/151 ط. دار الكتب العلمية)
“(উক্ত আয়াতে) আল্লাহ তাআলা জান ও মাল উভয়টি দ্বারা জিহাদ করাকে ফরয করেছেন। যার মাল আছে, কিন্তু সে অসুস্থ কিংবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত অথবা এমন দুর্বল যে জিহাদ করার শক্তি নেই, তাহলে তার জন্য মাল দ্বারা জিহাদ করা জরুরি। এর পদ্ধতি হলো, সে তার মাল কাউকে দিবে, সে ব্যক্তি উক্ত মাল নিয়ে জিহাদ যাবে।”-আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস: ৩/১৫১
হাদীসে এসেছে,
عن خريم بن فاتك قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من أنفق نفقة في سبيل الله كتبت له بسبع مائة ضعف. رواه الإمام الترمذي: 1625، ط. بشار عواد معروف. قال الإمام الترمذي رحمه الله تعالى: وهذا حديث حسن. و حسن اسناده الشيخ شعيب الأرنؤوط في تعليقه على مسند احمد و صححه الشيخ الألباني في صحيح وضعيف سنن الترمذي (رحمهما الله تعالى.)
“খুরাইম ইবনে ফাতিক রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোনো কিছু ব্যয় করবে, এর বিনিময়ে তাকে সাতশ গুণ সাওয়াব দান করা হবে।” –সুনানে তিরমিযী: ১৬২৫
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” مَنْ أَنْفَقَ زَوْجَيْنِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، دَعَاهُ خَزَنَةُ الجَنَّةِ، كُلُّ خَزَنَةِ بَابٍ: أَيْ فُلُ هَلُمَّ “، قَالَ أَبُو بَكْرٍ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، ذَاكَ الَّذِي لاَ تَوَى عَلَيْهِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي لَأَرْجُو أَنْ تَكُونَ مِنْهُمْ». رواه البخاري: 2841و مسلم: 1027، ترقيم محمد فؤاد عبد الباقي)
قال الحافظ ابن حجر العسقلاني رحمه الله تعالى: وقوله: “زوجين” أي شيئين من أي نوع كان مما ينفق، والزوج يطلق على الواحد وعلى الاثنين وهو هنا على الواحد جزما. اهـــ (فتح الباري: 6/49 ط. دار الفكر) وقال في موضع اخر: فصل ز و” قوله: “من أنفق زوجين” أي شيئين من كل شيء ويطلق الزوج على الصنف والنوع وعلى كل مقترنين ونقيضين وشبيهين. اهــــ (فتح الباري: 1/128 ط. دار الفكر)
“আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় দুটি করে কোনো জিনিস ব্যয় করবে, জান্নাতের প্রত্যেক দরজার প্রহরী তাঁকে আহ্বান করবে। (তারা বলবে), হে অমুক! এদিকে আসো। আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহলে তো তার কোনও পেরেশানি নেই!’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি আশা করি, তুমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” –সহীহ বুখারী: ২৮৪১, সহীহ মুসলিম: ১০২৭
মুজাহিদের আসবাব সরবরাহ করা, তার অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের দেখাশোনা করাকেও জিহাদ বলা হয়েছে। হাদীসে এসেছে,
قَالَ بُسْرُ بْنُ سَعِيدٍ: حَدَّثَنِي زَيْدُ بْنُ خَالِدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ جَهَّزَ غَازِيًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَقَدْ غَزَا، وَمَنْ خَلَفَ غَازِيًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِخَيْرٍ فَقَدْ غَزَا. رواه البخاري: 2843 و مسلم: 1895، ترقيم محمد فؤاد عبد الباقي
“বুছর ইবনে সাঈদ বলেন, আমার নিকট যায়েদ ইবনে খালেদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর আসবাবপত্র সরবরাহ করলো, সে যেন নিজেই জিহাদ করলো। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কোন জিহাদকারীর পরিবার-পরিজনকে উত্তমরূপে দেখাশোনা করলো, সেও যেন নিজে জিহাদ করলো।” –সহীহ বুখারী: ২৮৪৩, সহীহ মুসলিম: ১৮৯৫
আপনার প্রশ্নের উত্তর:
বর্তমানে সামর্থ্য অনুযায়ী জিহাদে দান করা ফরয। আর গরীব আত্মীয়ের যদি জীবন ধারণের ব্যবস্থা থাকে, তাহলে তাকে দান করাও ফযীলতপূর্ণ, তবে তা নফল। যতক্ষণ পর্যন্ত নফল ও ফরয একসাথে চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়, ততক্ষণ উভয়টির উপরই আমল করবেন। আর যখন নফল পালন করতে গেলে ফরয ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হয়, তখন নফল ছেড়ে ফরয আদায়ের চেষ্টা করবেন।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে যেহেতু উভয়টা একসাথে চালিয়ে নেওয়া সম্ভব, তাই আপনি সামর্থ্য অনুযায়ী জিহাদেও দান করুন। গরীব আত্মীয়কেও দান করুন।
তবে প্রশ্নে যে নিকট আত্মীয়ের কথা বললেন, তিনি যদি আপনার অধীনস্থ হন এবং তার ভরণ পোষণ আপনার উপর শরয়ীভাবে ওয়াজিব হয়ে থাকে, তাহলে প্রথমে তার ভরণ পোষণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তারপর যতটুকু সামর্থ্য হয় জিহাদেও দান করার চেষ্টা করবেন।
والله تعالى أعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
২৮-১১-১৪৪৪ হি.
১৮-০৬-২০২৩ ঈ.
আরও পড়ুনঃ পিতা-মাতার টাকা তাঁদের অনুমতি ছাড়া জিহাদে দান করা যাবে কি?