জিহাদ-কিতাল:ফাতওয়া  নং  ৫১

যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জিহাদ পছন্দ করে না তারা কি অনুসরণযোগ্য?

যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জিহাদ পছন্দ করে না তারা কি অনুসরণযোগ্য?

যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জিহাদ পছন্দ করে না তারা কি অনুসরণযোগ্য?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন:

অনেক মাদরাসায় ছাত্রদের কাছে জিহাদ বিষয়ক কোনো বই পাওয়া গেলে তাদেরকে টেরোরিস্ট, জিহাদি, উগ্রপন্থী বলে মাদরাসা থেকে বের করে দেয়। ওই সব মাদরাসার শরয়ী হুকুম কী? পাশাপাশি যে সকল ওস্তাদরা এসব ট্যাগ লাগিয়ে ছাত্রদের বের করে দেন, তাঁদের হুকুম কী? এসকল ওস্তাদের কাছে কি ইলম শিক্ষা করা যাবে? দলিলসহ বিস্তারিত জানালে অনেক উপকৃত হতাম।

প্রশ্নকারী- আবু আম্মার

উত্তর:

দেখুন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর বিধান আরোপ হয় তার সামগ্রিক আমল ও কার্যক্রমের বিবেচনায়। দুই চারটি শাখাগত মাসআলা কিংবা আমলের ভুল দ্বারা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর ঢালাওভাবে হুকুম আরোপ করা যায় না। দুই চারটি ভুলের ভিত্তিতে কাউকে বর্জন বা গ্রহণের সিদ্ধান্তও নেয়া যায় না। এমন হলে আপনি পৃথিবীতে অনুসরণযোগ্য কোনো একটি প্রতিষ্ঠান কিংবা একজন ব্যক্তিও খুঁজে পাবেন না। কোনো ইলম চর্চার প্রতিষ্ঠান বা যোগ্য আলেমের মধ্যে যদি ঈমান ও শরীয়াহ, সালাহ ও কল্যাণ, তার গুনাহ ও অনিষ্ট এবং ভুল ভ্রান্তি অপেক্ষা বেশি ও প্রবল এবং প্রকাশ্য হয়, তাকেই আমরা গ্রহণীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করব এবং তার যাবতীয় খায়ের ও কল্যাণ থেকে আমরা উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করব। তবে তার ভুল ভ্রান্তিগুলোর অনুসরণ থেকে অবশ্যই বিরত থাকব; চাই তার ভুল যত কম ও ছোট হোক না কেন এবং অনুসৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যত বড়ই হোক না কেন। একই সঙ্গে ভুল ভ্রান্তির বিষয়ে তাঁর কল্যাণ কামনার্থে নসিহাহ, আমর বিলমারূফ ও নাহি আনিল মুনকার তথা শরীয়াহ’র উসূল ও আদব মেনে যেখানে যা প্রযোজ্য, সে অনুযায়ী তার ইসলাহ ও সংশোধনের চেষ্টাও করব।

আপনি যে অন্যায়টির কথা বলেছেন, ‘ছাত্রদের কাছে বিভিন্ন কিতাব পাওয়া গেলে তাদেরকে টেরোরিস্ট, জিহাদি, উগ্রপন্থী বলে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়।’ এই কাজটি অবশ্যই অনেক বড় অন্যায় ও গুনাহের কাজ। বরং ক্ষেত্রবিশেষে তা ঈমান নষ্ট হওয়ারও কারণ। জিহাদ শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। বিশেষ করে বর্তমানে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের ওপর তার সামর্থ্য অনুযায়ী জিহাদি কাজে অংশ গ্রহণ ফরযে আইন। সুতরাং জিহাদের ইলমি চর্চাকে; ইলম চর্চার কেন্দ্র মাদরাসার মতো জায়গায় অপরাধ গণ্য করা এবং একারণে কাউকে মাদরাসা থেকে বহিষ্কার করা মস্ত বড় অন্যায়।

তবে যেসব প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি এ কাজটি করেন, তাদের সকলের বিধান এক নয়। কারণ কাজটির ধরন ও কারণ এবং এ বিষয়ে তাদের আচরণ, উচ্চারণ ও আকিদা এক হয় না। তাতে পরস্পরে অনেক ব্যবধান থাকে। এমনকি কারো পদক্ষেপ সম্পর্কে যদিও আমরা বাইরে থেকে এমনই ‍শুনতে পাই যে, ‘জিহাদি বই পাওয়ার অপরাধে অমুক ছাত্রকে অমুক প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে’, কিন্তু বাস্তবে অনেক সময় দেখা যায় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাজটি হয়তো শরীয়তসম্মতই ছিল এবং সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনাগত বিষয় ছিল, যেখানে জিহাদের নামে উক্ত তালিবে ইলমের সীমালঙ্ঘনই প্রধানত দায়ী ছিল।

অবশ্য তার বিপরীত চিত্রই বেশি। কারণ এক্ষেত্রে অনেকের আচরণ উচ্চারণই এত জঘন্য হয় যে, তারপর তাদের ঈমান আছে বলার সুযোগ থাকে না। শরীয়তের একটি ফরয বিধানের উচ্চারণকেও তারা অপরাধ গণ্য করে। শরীয়াহ’র সকল উসূল ও আদব রক্ষা করে এবং মাদরাসার সকল বৈধ নেজাম মেনেও যদি কেউ জিহাদের মতো ফরয বিধানটির ইলমি ও আমলি চর্চা করতে চায়, হেকমত ও প্রজ্ঞার নামে সেটাকেও তারা অপরাধ গণ্য করে। ইসলামের দুশমন তাগুতের বন্ধুত্ব দৃঢ় করার জন্য, তাদের আস্থা কুড়ানোর জন্য মুজাহিদদের বিরুদ্ধে তাদের সহযোগিতা করে এবং আল্লাহর প্রিয় একজন তালিবে ইলম ও আলেমের সঙ্গে শত্রুর আচরণ করে। এরা মূলত মানুষকে ভয় করে, যেমন ভয় করা প্রয়োজন ছিল আল্লাহকে। ইরশাদ হচ্ছে,

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ قِيلَ لَهُمْ كُفُّوا أَيْدِيَكُمْ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ إِذَا فَرِيقٌ مِنْهُمْ يَخْشَوْنَ النَّاسَ كَخَشْيَةِ اللَّهِ أَوْ أَشَدَّ خَشْيَةً وَقَالُوا رَبَّنَا لِمَ كَتَبْتَ عَلَيْنَا الْقِتَالَ لَوْلَا أَخَّرْتَنَا إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ لِمَنِ اتَّقَى وَلَا تُظْلَمُونَ فَتِيلًا (77). النساء

“তোমরা কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে বলা হত, তোমরা নিজেদের হাত সংযত রাখ, সালাত কায়েম কর ও যাকাত প্রদান কর। অতঃপর যখন তাদের ওপর যুদ্ধ ফরয করা হল, তখন তাদের মধ্য হতে একটি দল মানুষকে (শত্রুদেরকে) এমন ভয় করতে লাগল, যেমন আল্লাহকে ভয় করা হয়, কিংবা তার চেয়েও বেশি। তারা বলতে লাগল, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের ওপর যুদ্ধ কেন ফরয করলেন? অল্প কালের জন্য আমাদেরকে অবকাশ দিলেন না কেন? বলে দাও, পার্থিব ভোগবিলাস সামান্য। যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে, তার জন্য আখিরাত উৎকৃষ্টতর। তোমাদের প্রতি সুতা পরিমাণও জুলুম করা হবে না।” -সূরা নিসা (৪): ৭৭

আরো ইরশাদ হচ্ছে,

وَلِيَعْلَمَ الَّذِينَ نَافَقُوا وَقِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا قَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوِ ادْفَعُوا قَالُوا لَوْ نَعْلَمُ قِتَالًا لَاتَّبَعْنَاكُمْ هُمْ لِلْكُفْرِ يَوْمَئِذٍ أَقْرَبُ مِنْهُمْ لِلْإِيمَانِ يَقُولُونَ بِأَفْوَاهِهِمْ مَا لَيْسَ فِي قُلُوبِهِمْ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا يَكْتُمُونَ (167) الَّذِينَ قَالُوا لِإِخْوَانِهِمْ وَقَعَدُوا لَوْ أَطَاعُونَا مَا قُتِلُوا قُلْ فَادْرَءُوا عَنْ أَنْفُسِكُمُ الْمَوْتَ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ (168) وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ (169) فَرِحِينَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَيَسْتَبْشِرُونَ بِالَّذِينَ لَمْ يَلْحَقُوا بِهِمْ مِنْ خَلْفِهِمْ أَلَّا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ (170) يَسْتَبْشِرُونَ بِنِعْمَةٍ مِنَ اللَّهِ وَفَضْلٍ وَأَنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُؤْمِنِينَ (171) الَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِلَّهِ وَالرَّسُولِ مِنْ بَعْدِ مَا أَصَابَهُمُ الْقَرْحُ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا مِنْهُمْ وَاتَّقَوْا أَجْرٌ عَظِيمٌ (172) الَّذِينَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا وَقَالُوا حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ (173).آل عمران

(উহুদের যুদ্ধে যে বিপদ এসেছিল তা এজন্য) যেন আল্লাহ তায়ালা জেনে নেন মুনাফিকদেরকে। আর তাদেরকে (মুনাফিকদেরকে) বলা হয়েছিল, এসো, আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর কিংবা প্রতিরোধ কর। তখন তারা বলেছিল, আমরা যদি দেখতাম (যুদ্ধের মতো) যুদ্ধ হবে, তবে অবশ্যই তোমাদের পেছনে চলতাম। বস্তুত সেদিন তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরেরই বেশি নিকটবর্তী ছিল। তারা তাদের মুখে এমন কথা বলে, যা তাদের অন্তরে থাকে না। তারা যা কিছু লুকায়, আল্লাহ তা ভালো করেই জানেন। তারা সেই লোক, যারা নিজেদের (শহীদ) ভাইদের সম্পর্কে বসে বসে মন্তব্য করে, তারা যদি আমাদের কথা শুনত, তবে নিহত হত না। বলে দাও, তোমরা সত্যবাদী হলে, খোদ নিজেদের থেকেই মৃত্যুকে হটিয়ে দাও দেখি! (হে নবী) যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে কখনোই মৃত মনে করো না; বরং তারা জীবিত। তাদেরকে তাদের রবের পক্ষ থেকে রিযিক দেয়া হয়। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন, তারা তাতে প্রফুল্ল। আর তাদের পরে এখনো যারা (শাহাদাতে) তাদের সঙ্গে মিলিত হয়নি, তাদের ব্যাপারে এ কারণে তারা আনন্দ বোধ করে যে, (তারা যখন তাদের সঙ্গে এসে মিলিত হবে, তখন) তাদের কোনও ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত ও অনুগ্রহের কারণেও আনন্দ উদযাপন করে এবং এ কারণেও যে, আল্লাহ মুমিনদের কর্মফল নষ্ট করেন না। যারা যখম হওয়ার পরও আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে আনুগত্যের সাথে সাড়া দিয়েছে, এরূপ সৎকর্মশীল ও মুত্তাকীদের জন্য আছে মহা প্রতিদান। যাদেরকে লোকে বলেছিল, (মক্কার কাফির) লোকেরা তোমাদের (সাথে পুনরায় যুদ্ধ করার) জন্য (বাহিনী) জড়ো করেছে, সুতরাং তাদেরকে ভয় কর। তখন এটা তাদের ঈমানের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয় এবং তারা বলে ওঠে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম কর্মবিধায়ক। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৬৭-১৭৩

একটু খেয়াল করলে দেখবেন, জিহাদ ও মুজাহিদদের সম্পর্কে তাদের আচরণ ও উচ্চারণ, উপরোক্ত আয়াতগুলোতে বর্ণিত মুমিনদের আচরণের চেয়ে মুনাফিকদের আচরণের সঙ্গে বেশি মিলে যায়। বস্তুত তারা জিহাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, ঈমানের চেয়ে কুফুরের প্রতি এবং মুমিনদের চেয়ে কাফের মুরতাদদের প্রতি বেশি ভালোবাসা ও হৃদ্যতা পোষণ করে এবং প্রকাশ করে। বিভিন্ন কাজকর্ম ও আচার আচরণের মাধ্যমে তারা সত্যের পথিক মুজাহিদ ও জিহাদের বিরোধিতা করে, কোনো তথ্য উপাত্ত ছাড়াই জিহাদ ও মুজাহিদদের ব্যাপরে বিভিন্ন অপবাদ আরোপ করে।

সুতরাং বাস্তবেই যদি কেউ এই জঘন্য কাজগুলো করে, যা কুফুর কিংবা নেফাকের স্তরে পড়ে বা শরীয়তের তাহরিফের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং তা ঘটনাচক্রে ঘটে যাওয়া বিচ্ছিন্ন কোনো ভুল না হয়; বরং এটাই তাদের স্বাভাবিক নীতি ও আদর্শ হয়, তাহলে অবশ্যই এমন বিভ্রান্ত লোকদের সংশ্রব থেকে দূরে থাকতে হবে। ইলম অর্জন করার জন্যও তাদের সাহচর্য গ্রহণ করা যাবে না। কারণ তাতে নিজের ঈমান আমল ঝুঁকিতে পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। কম বেশ আমাদের সবারই জানা আছে, একারণে কোরআন সুন্নাহর অসংখ্য জায়গায় অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করে সৎ সঙ্গ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে সেগুলোর আলোচনায় যেতে চাচ্ছি না। সময়ের বিজ্ঞ দু’জন মুফতির ফতোয়া থেকে সংশ্লিষ্ট দুটি উদ্ধৃতি পেশ করছি।

শায়খ আবু মুহাম্মাদ শামি তাঁর একটি ফতোয়ায়, শায়খ আবু মুহাম্মাদ মাকদিসীর একটি সাক্ষাতকার থেকে কিছু বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। সেখানে শায়খ বিষয়টি খুব সংক্ষেপে অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। শায়খ শামি বলেন,

وأما الشيوخ المعاصرين، فيكفيك ما قاله شيخنا الفاضل أبو محمد المقدسي حفظه الله في إجابته على سؤال في اللقاء المفتوح: (أنصح بأخذ الدين عن كل عالم مخلص وداعية صادق بعيد عن أبواب السلاطين غير مشارك في مخططاتهم في الحرب على الجهاد وأهله وهؤلاء معظمهم ما بين مسجون أو مطارد أو مقتول؛ وبعضهم ينتظر إحدى هذه الثلاث في أي لحظة كما هي طريق الرسل؛ قال تعالى: (وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللَّهُ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ) [الأنفال:30] … فعلى طالب الحق الحريص على طلب العلم اغتنام أي فرصة تسنح له للتواصل مع أمثال هؤلاء ولو لم ترق له بعض اجتهاداتهم، فلا ينبغي له أن يشترط أن يكون الشيخ مفصلاً على مقاسه بالتمام وحسب هواه حتى يطلب العلم عليه؛ وعلى كل حال فالشبكة العنكبوتية وفّرت كتاباتهم وسهلت الوصول إليها). … ولما سئل عن طلب العلم عند الحلبي وأشباهه من دعاة الإرجاء قال: (لا، لا أنصح بالدراسة عند هؤلاء ولا نعمة ولا كرامة لأمثالهم حتى يطلب العلم عندهم، وأي علم هذا الذي ستجده عندهم إلا الطعن في المجاهدين والكذب عليهم، والجدال عن الطواغيت بمقالات جهم والمريسي وأضرابهم بلباس سلفي مزيف …. فكيف تؤتمن الدراسة على من كان هذا حاله؟ … وكما قلت سابقا فقد أصبح اليوم في التيار السلفي الجهادي بفضل الله تعالى مشايخ وطلبة علم يستغني طالب العلم بطلب العلم عليهم وعلى كتاباتهم عن مجالسة لصوص النصوص ومشايخ التجهم والإرجاء) – تعريف خطاب الوضع وكيفية طلب العلم، رقم السؤال: 1484 شاملة المنبر

“আর সমকালীন শায়েখদের ব্যাপারে আমাদের সম্মানিত শায়েখ আবু মুহাম্মদ মাকদিসী তাঁর একটি উন্মুক্ত সাক্ষাতকারে যা বলেছেন, তাই আপনার জন্য যথেষ্ট। তিনি বলেন, ‘আমি প্রত্যেক এমন মুখলিস আলেম ও হকের দায়ী থেকে দ্বীন গ্রহণ করার উপদেশ দেই, যারা শাসকদের দরবার হতে দূরে থাকে, জিহাদ ও মুজাহিদদের বিপক্ষে তাদের যুদ্ধ-পরিকল্পনায় অংশ নেয় না। যদিও তাদের অধিকাংশই হয়তো কারাবন্দী, না হয় দেশান্তরিত কিংবা নিহত অথবা কোনো একটির অপেক্ষায় অপেক্ষারত। যেমনটি ছিল নবী-রাসূলদের অবস্থা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(হে নবী!) সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন কাফেররা ষড়যন্ত্র করছিল তোমাকে বন্দী করবে অথবা তোমাকে হত্যা করবে কিংবা তোমাকে দেশান্তরিত করবে। তারা তো নিজেদের ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছিল, আর আল্লাহও নিজ কৌশল প্রয়োগ করছিলেন। বস্তুত আল্লাহ সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কৌশলকারী।’ –সূরা আনফাল (৮): ৩০

সুতরাং ইলম অর্জনে আগ্রহী সত্যান্বেষী তালিবে ইলমের জন্য এমন ব্যক্তিদের সাক্ষাৎ ও তাদের সংশ্রব গ্রহণের যে কোনো সুযোগকে গনিমত মনে করা চাই; যদিও তাদের কিছু কিছু মত তার পছন্দ না হয়। এ শর্ত আরোপ করা সঙ্গত নয় যে, শায়েখ তার মাপকাঠিতে পরিপূর্ণরূপে উত্তীর্ণ হলে এবং সবকিছু তার মনমতো হলেই শুধু সে তাঁর নিকট হতে ইলম অর্জন করবে। আর ইন্টারনেট এমন শায়েখদের কিতাবাদী সহজলভ্য করে দিয়েছে, তালেবে ইলমদের হাতের নাগালে এনে দিয়েছে।’

শায়েখকে যখন হালাবী ও তার মতো ইরজার আকিদার দিকে আহ্ববানকারী শায়েখদের নিকট থেকে ইলম অর্জনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়, তখন তিনি বলেন, ‘না, আমি তাদের নিকট অধ্যয়নের উপদেশ দেই না। এ ধরণের ব্যক্তির এমন কোনো সম্মান নেই যে তাদের থেকে ইলম অর্জন করা হবে। তাদের নিকট ইলমের নামে যা পাওয়া যায়, তা হল, মুজাহিদদের সমালোচনা, তাদের প্রতি অপবাদ এবং জাহম, মাররিসি ও তাদের মতো (জাহমিয়া ও মুরজিয়া) ব্যক্তিদের কথা সালাফী পোশাকে পেশ করে তাগুতদের পক্ষে বিতর্ক করা। এগুলো আর যাই হোক ইলম হতে পারে না! এঅবস্থায় তাদের নিকট ইলম অর্জন কিভাবে নিরাপদ হতে পরে!? আর যেমনটা আমি পূর্বেও বলেছি, আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহে বর্তমানে জিহাদী কাফেলায় অনেক মাশায়েখ এবং তালেবে ইলম যুক্ত হয়েছেন, যাদের নিকট ইলম অর্জন এবং তাদের কিতাবাদী অধ্যয়নের মাধ্যমে তালেবে ইলম নুসূসের অপব্যাখ্যাকারী এবং জাহমিয়াত ও ইরজার প্রতি আহ্ববানকারী শায়েখদের কাছ থেকে ইলম অর্জন হতে অমুখাপেক্ষী হতে পারে’।” -প্রশ্ন নং, ১৪৮৪

শায়খ আবু মুসলিম আলজাযায়েরি তাঁর এক ফতোয়ায় বলেন,

إنّ علماءنا الأبرار كانوا يفرّقون دائما بين مبتدع يدعو إلى بدعته، و مبتدع لا يدعو إلى بدعته، فكانوا يحذّرون من الأوّل ما لا يحذّرون من الثاني، و من أمثال هؤلاء الإمام مالك رحمه الله تعالى فقد روى القاضي عياض في كتابه الإلماع، و الدّارميّ في سننه أنّه كان يقول: لا تأخذوا العلم من أربعة و خذوه ممّن سواهم: من سفيه مُعلن للسّفه، و من كذّاب يكذب في أحاديث النّاس و إن لم يكذب في حديث رسول الله عليه الصّلاة و السّلام، و لا من صاحب هوى يدعو إلى هواه، و لا من عابد جاهل. فمن كانت مجالسه و دعوته نشر للبدعة و الضلالة، و تزييف للحقائق، و الكذب في الوقائع، و اتّباع لأهواء الطغاة، و تجريح المجاهدين فهذا لا يُجالس و ليس بأهل أن يُؤخذ منه العلم. و إنّ من محاذير مجالسة أهل الأهواء ما أخبر به رسول الله عليه الصّلاة و السّلام: ” إنّ القلوب بين إصبعين من أصابع الرحمن يُقلّبها كيف يشاء “، ولذلك فعلى المرء أن يتّخذ أسباب الثبات على الحقّ فلا يأمن على نفسه الزيغ إن هو صاحب أهل الأهواء و أخذ منهم دينه. ثمّ في تكثير سواد أهل الأهواء محاذير أخرى غير ما ذكرتُ أهمّها غشّ النّاس. ثمّ أنصح العلماء و أحذرهم بما قاله ربّنا سبحانه و تعالى: ” إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَى مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ أُولَئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ ” فهؤلاء إستحقّوا اللّعن لمجرّد كتمانهم الحقّ، فكيف إذا أضافوا إلى ذلك الكلام بالباطل؟ قال الله تعالى: ” إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَناً قَلِيلاً أُولَئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ (174) أُولَئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الضَّلالَةَ بِالْهُدَى وَالْعَذَابَ بِالْمَغْفِرَةِ فَمَا أَصْبَرَهُمْ عَلَى النَّارِ (175) ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ نَزَّلَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُوا فِي الْكِتَابِ لَفِي شِقَاقٍ بَعِيدٍ “. إنّ الله أخذ الميثاق من أهل العلم أن يبيّنوا ما أوجب الله بيانه من الحقّ، و إنّ من الحقّ هو مطالبة تحكيم شرع الله تعالى، و تنحية القوانين الكافرة الظالمة، و إنّ من الحقّ نصرة أهل الحقّ الّذين يُقاتلون لتكون كلمة الله هي العليا و كلمة الّذين كفروا السّفلى، إنّ من الحقّ نُصرة المجاهدين في سبيل الله لا نُصرة الّذين يُحاربون الله و رسوله و الّذين ءامنوا، سواء كانوا من المحتلّين و من الحكام الظّالمين المرتدّين. من خلال هذه الآيات و غيرها تبيّن أنّه لا عبرة لكثرة المحفوظات و كثرة التصانيف ما لم يُصاحب ذلك أن يكون صاحبها من أهل الحقّ، صادعا بالحقّ، ناصرا لأهل الحق و محاربا لأهل الباطل. و في الختام أنصح أخانا الحبيب أن يلتزم بشرع الله تعالى، و أن يبحث عن أهل الحقّ فيصاحبهم، و مشايخ أهل الحق فيُجالسهم، فإن صعُب عليه إيجادهم فليُجالس الأمثل فالأمثل، و لا تنشغل بمن سمّيتهم بالسّلفيين، و السلف ممّا يفعل هؤلاء السّفهاء براء-حكم أخذ العلم عن أهل الأهواء، شاملة المنبر. رقم السؤال: 1003

“যে বিদআতী তার বিদআতের দিকে আহ্বান করে, আর যে বিদআতের দিকে আহ্বান করে না, আমাদের নেককার আলেমগণ সর্বদা তাদের মাঝে পার্থক্য করতেন। তারা প্রথম প্রকার থেকে যতটা সতর্ক করেছেন, দ্বিতীয় প্রকার থেকে ততটা করেননি। তাঁদের অন্যতম একজন ইমাম মালেক রহ.। দারেমী রহ. ‘আসসুনানে’ এবং কাযী ইয়ায ‘আলইলমা’ কিতাবে বলেন, ইমাম মালেক রহ. বলতেন, ‘তোমরা চার ধরনের ব্যক্তি হতে ইলম অর্জন করো না, তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের থেকে কর। ১. এমন নির্বোধ ব্যক্তি থেকে, যার নির্বুদ্ধিতা সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য। ২. এমন মিথ্যাবাদী থেকে, যে মানুষের সাথে কথায় মিথ্যা বলে, যদিও রাসূলের হাদিসে মিথ্যা বলে না। ৩. এমন বিদআতীর কাছ থেকে, যে তার বিদআতের দিকে আহ্বান করে। ৪. মূর্খ ইবাদতগুজার ব্যক্তি থেকে।

সুতরাং যার মজলিস ও দাওয়াত হয় বিদআত ও গোমরাহীর প্রচার, বাস্তবতার বিকৃতি, তাগুতদের অনুসরণ এবং মুজাহিদদের সমালোচনা, তার সাথে উঠাবসা করা যাবে না। তার থেকে ইলম অর্জনের উপযুক্তও সে নয়। বিদআতীদের সান্নিধ্য গ্রহণে একটি আশংকার দিক হল, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সকল অন্তর আল্লাহ তায়ালার দু’আঙ্গুলের মাঝে, তিনি যেভাবে ইচ্ছা তা পরিবর্তন করেন’। অতএব মানুষের জন্য হকের ওপর অটল থাকার উপায় উপকরণগুলো অবলম্বন করা জরুরী। যদি সে বেদআতীদের সঙ্গ গ্রহণ করে, তাদের থেকে দ্বীন শিখে, তবে পথভ্রষ্ট হওয়ার শংকামুক্ত মনে করার সুযোগ নেই। তাছাড়া বেদআতীদের দল ভারী করার মধ্যে উল্লিখিত ক্ষতিগুলো ব্যতীত আরো অনেক ক্ষতি আছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল মানুষকে ধোঁকায় ফেলা। (কেননা মানুষ তাদের দল ভারী দেখে তাদেরকে সত্যপন্থী আলেম মনে করবে।) অতঃপর আমি আলেমদের কল্যাণকামনার্থে বলছি এবং তাঁদেরকে আল্লাহ তায়ালার এই বাণীর মাধ্যমে সতর্ক করছি, ‘নিশ্চয়ই যে সকল লোক আমার নাযিলকৃত উজ্জ্বল নিদর্শনাবলী ও হিদায়াতকে গোপন করে, কিতাবে তা মানুষের জন্য সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করার পরও, তাদের প্রতি আল্লাহ লানত বর্ষণ করেন এবং অন্যান্য লানতকারীরাও লানত বর্ষণ করে’। -সূরা বাকারা (২) : ১৫৯

তো তারা শুধু হককে গোপন করার দ্বারা লানতের উপযু্ক্ত হয়। তাহলে যারা এর সাথে বাতিল কথাও যুক্ত করে, তাদের কি অবস্থা হবে? আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে যারা আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাবকে গোপন করে এবং তার বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে, তারা তাদের পেটে আগুন ছাড়া কিছুই ভরে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। এরা সেই সব লোক, যারা হিদায়াতের পরিবর্তে গোমরাহী এবং মাগফিরাতের পরিবর্তে আযাব ক্রয় করে নিয়েছে। সুতরাং (ভেবে দেখ!) তারা জাহান্নামের আগুন সহ্য করার জন্য কতটা প্রস্তুত! এসব কিছু এ কারণে হবে যে, আল্লাহ সত্য সম্বলিত কিতাব নাযিল করেছেন। আর যারা এমন কিতাবের সঙ্গে বিরুদ্ধাচরণের নীতি অবলম্বন করেছে, তারা হঠকারিতায় বহু দূর পর্যন্ত চলে গেছে’। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৭৪-১৭৬

আল্লাহ তায়ালা আলেমদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন, তারা যেন সেই হক ও সত্য প্রকাশ করে, যা প্রকাশ করা আল্লাহ তাদের ওপর ফরজ করেছেন। আল্লাহ তায়ালার শরীয়ত প্রতিষ্ঠা এবং অত্যাচারপূর্ণ কুফরী আইন বিলুপ্তির প্রচেষ্টাও সেই হক ও সত্যের অংশ। আল্লাহ তায়ালার দ্বীনের বিজয় এবং কাফেরদের পরাজিত করার জন্য যে হকপন্থী ব্যক্তিগণ যুদ্ধ করছেন, তাদের সাহায্য করাও সেই হক ও সত্যের অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহর পথের মুজাহিদদের সাহায্য করা এবং যারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের সাথে যুদ্ধ করছে, চাই তারা দখলদার (কাফের) হোক বা জালেম-মুরতাদ শাসক হোক, তাদের সাহায্য না করাও সেই হকের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এই আয়াতসহ অন্যান্য আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণ হয়, কুরআন-হাদিস ও নুসূস বেশি মুখস্থ থাকা এবং সংকলনের সংখ্যাধিক্যের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, যতক্ষণ না সে আহলে হকের অন্তর্ভুক্ত হয়, সত্যপ্রকাশে নির্ভীক হয়, আহলে হকের সাহায্যকারী এবং আহলে বাতেলের সাথে যুদ্ধকারী হয়। পরিশেষে আমি আমার প্রিয় ভাইকে উপদেশ দিব, তিনি যেন পূর্ণরূপে শরিয়ত পালন করেন। আহলে হকের সন্ধান করে তাদের সঙ্গ গ্রহণ করেন। আহলে হক ওলামা-মাশায়েখদের খুঁজে বের করে তাদের সাথে উঠাবসা করেন। যদি তাদের খুঁজে পাওয়া তার জন্য কষ্টকর হয়, তবে তুলনামূলক হকপন্থী আলেমদের সাথে উঠাবসা করেন। এমন নামধারী সালাফীদের সঙ্গ গ্রহণ না করেন, যাদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সালাফের কোনো সম্পর্ক নেই।” -প্রশ্ন নং: ১০০৩

অবশ্য এসব কাজের কারণে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের শরঈ হুকুম জানতে হলে সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত তথ্যগুলো সামনে আসতে হবে। যে তালিবে ইলমকে বের করা হয়েছে, সে কী আচরণ করেছে বা কী বলেছে এবং তার মোকাবেলায় প্রতিষ্ঠান বা উস্তাদ কী বলেছে, কী আচরণ করেছে? এই তথ্যগুলো সুনির্দিষ্টভাবে সামনে আসলেই তার হুকুম বলা যাবে। শুধু অমুক মাদরাসা বা অমুক উস্তাদ অমুক ছাত্রকে জিহাদের অপরাধে মাদরাসা থেকে বহিষ্কার করেছে, অনির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন সংক্ষিপ্ত ও অস্পষ্ট কোনো কথা শুনেই কারো সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। এখানে আমরা অনেকেই ভুল করে ফেলি।

তাছাড়া অনেক সময় যারা প্রকৃত অর্থেই জিহাদকে ভালোবাসেন, তাদের থেকেও তাগুতের মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা, বৈশ্বিক ঘোলাটে পরিস্থিতি ও অজ্ঞতা ইত্যাদির কারণে জিহাদ সম্পর্কে এমন আচরণ ও উচ্চারণ প্রকাশিত হয়, যা বাহ্যত জিহাদের বিরুদ্ধে মনে হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণেই শরীয়তের দৃষ্টিতে তা এমন অপরাধ গণ্য হয় না, যার কারণে তাদেরকে বর্জন করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে কাজটি অপরাধ গণ্য হলেও, গ্রহণযোগ্য কোনো ওজরের কারণে ব্যক্তি মাজুর হিসেবে গণ্য হয়। আর এই ফিতনাপূর্ণ সময়ে জিহাদের দাওয়াত যেভাবে নির্ভরযোগ্য ও আস্থাবান সূত্রে পৌঁছানো প্রয়োজন ছিল, আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত আহলে হক আলেমদের সকলের কাছে সেভাবে পৌঁছায়নি বা পৌঁছানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। যথাযথভাবে দাওয়াত না পৌঁছানোর কারণেও অনেক আহলে হক আলেম এখনো জিহাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেননি এবং তাদের কাছে বর্তমান জিহাদের বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়নি। বিষয়গুলো যথাযথভাবে পরিষ্কার করা গেলে অবশ্যই তারা জিহাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশে চলমান দাওয়াতের স্তরে সেই লক্ষ্য আমাদেরকেই পূরণ করতে হবে বিইযনিল্লাহ। সুতরাং এই পরিস্থিতিতে সামান্য সামান্য কারণে আলেমদের বর্জন করা বা তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া, না শরীয়াহ সমর্থন করবে, না জিহাদের কৌশল ও মুজাহিদের দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতা সমর্থন করবে।

আমরা যারা জিহাদের পথে দাওয়াতের কাজ করি, তাদের কাজ ও কথাবার্তা আরো হেকমত ও প্রজ্ঞাপূর্ণ এবং বিনয়ী ও বিনম্র হওয়া জরুরি। ‘মাদউ’র অবস্থান ও স্তর নির্ণয় করে, দাওয়াতি পদক্ষেপগুলো তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গ্রহণ করা জরুরি। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাস্তবে কেউ জিহাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও মুখলিস হওয়া সত্ত্বেও; দাঈর সীমালঙ্ঘন ও অসংলগ্ন আচরণের প্রতিক্রিয়ায়; তার থেকে নেতিবাচক আচরণ ও উচ্চারণ পরিলক্ষিত হয়। কারণ, এই ফিতনাপূর্ণ সময়ে নিজেদের অজ্ঞতা এবং শত্রুদের প্রোপাগান্ডা ও মিথ্যা অপপ্রচারের শিকার একজন ব্যক্তির সামনে যখন দাঈর অসংলগ্ন আচরণ প্রকাশ পায়, তখন তারা আরো অস্পষ্টতা ও ধাঁধায় পড়ে যায়। বিশেষ করে যেসব দাঈ ভাই বর্তমান বৈশ্বিক জিহাদ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ধারণা না নিয়ে এবং জিহাদের দাওয়াত সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ইলম ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ না করে, শুধু অনলাইনভিত্তিক সামান্য ও অপূর্ণ কিছু ইলম নিয়ে, আবেগ ও জযবার ভিত্তিতে দাওয়াতে নেমে পড়েন এবং বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা ব্যতীত নিজের বুঝ অনুযায়ী দাওয়াতি কার্যক্রম আঞ্জাম দিতে শুরু করেন, তাদের কারণে এই সমস্যাগুলো বেশি তৈরি হয়। এমনকি আমাদের জানামতে এমন কিছু যোগ্য আলেমও আছেন, যারা আপন জায়গায় যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও, বর্তমান বৈশ্বিক জিহাদ ও দাওয়াতের প্রয়োজনীয় নিয়ম নীতি সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা না থাকার কারণে তাদের কাজেও এমন কিছু সমস্যা তৈরি হয়।

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, এই জাহালাত ও অজ্ঞতার সময়ে, ভারত উপমহাদেশের কথা যদি বলি, তাহলে বলতে হবে অনেক ভুল ভ্রান্তি ও ত্রুটি বিচ্যুতি সত্ত্বেও, এখনো পর্যন্ত যতটুকু সহীহ দ্বীন ও ইলমে-দ্বীনের খেদমত হচ্ছে, তার বড় অংশই হচ্ছে কওমি মাদরাসাগুলো থেকে। তাগুতের মোকাবেলায় যেসব আলেম ও তালিবে ইলমকে আমরা সহীহ দ্বীনের বাহক ও ঝাণ্ডাবাহী হিসেবে দৃঢ়পদ দেখতে পাই, তাঁদেরও সিংহভাগ এই কওমি মাদরাসারই ফসল। সুতরাং ঢালাওভাবে এই মাদরাসাগুলোকে উপেক্ষা করা এবং তাঁদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করা হবে অন্যায় ও বেইনসাফি। হিকমাহ ও প্রজ্ঞা পরিপন্থী। দ্বীন ও শরীয়াহ প্রতিষ্ঠায় যথাসম্ভব তাঁদেরকে সঙ্গে নিয়েই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এখান থেকেই আমাদের কাজের সাথী সংগ্রহ করতে হবে। এতটুকু উপযুক্ত ও সম্ভাবনাময় অঙ্গন এখনো পর্যন্ত এই উপমহাদেশে দ্বিতীয় আরেকটি তৈরি হয়নি। যদিও সুনির্দিষ্ট কারো নির্দিষ্ট কোনো অন্যায় প্রমাণিত হলে, উক্ত অন্যায়ের ধরন ও মাত্রা হিসেবে শরীয়ত তার সঙ্গে যে আচরণের নির্দেশ দেয়, তার সঙ্গে তাই করতে হবে।

فقط، والله سبحانه وتعالى أعلم

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (গুফিরা লাহু)

১১ ই যুলকা’দাহ, ১৪৪১ হি.

৩ রা জুলাই, ২০২০ ইং

আরো পড়ূন
বাবা জিহাদ নিয়ে কটাক্ষ করলে ছেলের করণীয় কী?

Related Articles

Back to top button