জিহাদ-কিতাল:ফাতওয়া  নং  ২৩২

শত্রুকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হত্যা করার হুকুম কী?

শত্রুকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হত্যা করার হুকুম কী?

শত্রুকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হত্যা করার হুকুম কী?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ

সহীহ বুখারীর ২৮৫৩ নং হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের আগুনে পুড়িয়ে কাউকে হত্যা করতে নিষেধ করেন। তিনি বলেন, আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহর। এখন প্রশ্ন হল, বর্তমানে কাফিরদের সঙ্গে সশস্ত্র জিহাদে যে সকল অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, তার অধিকাংশই বিস্ফোরক আগ্নেয়াস্ত্র। এসকল অস্ত্র ব্যবহার করার শরয়ী হুকুম কী? কুরআন সুন্নাহর আলোকে জানাবেন।

প্রশ্নকারী- মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ

প্রশ্নঃ

আমরা জানি, কাউকে আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেয়া একমাত্র আল্লাহ তা`আলার অধিকার। অন্য কেউ পারে না। এখন জানার বিষয় হল, বর্তমানে যে জিহাদে বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়, তার বিধান কী?

প্রশ্নকারী- আহমাদ

উত্তরঃ

بسم الله الرحمن الرحيم

সহীহ বুখারীসহ হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিতএকটি হাদীস, যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফিরদেরকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে নিষেধ করেন।

সহীহ বুখারীর কিতাবুল জিহাদে ইমাম বুখারী (র)একটি অধ্যায়ের শিরোনাম দেন-

باب: لا يعذب بعذاب الله (অনুচ্ছেদ: আল্লাহর শাস্তি দ্বারা শাস্তি প্রদান করা যাবে না।)

এ শিরোনামের অধীনে তিনি নিম্নোক্ত দু’টি হাদীস বর্ণনা করেন-

عن أبي هريرة رضي الله عنه أنه قال : بعثنا رسول الله صلى الله عليه و سلم في بعث فقال (إن وجدتم فلانا وفلانا فأحرقوهما بالنار). ثم قال رسول الله صلى الله عليه و سلم حين أردنا الخروج: ( إني أمرتكم أن تحرقوا فلانا وفلانا وإن النار لا يعذب بها إلا الله فإن وجدتموهما فاقتلوهما ). -صحيح البخاري (3/ 1098)، رقم الحديث: 2853، ط. دار ابن كثير ، اليمامة – بيروت

“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এক অভিযানে প্রেরণের সময় (নির্দেশনা দিয়ে) বলেন, তোমরা অমুক অমুককে পেলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেবে। এরপর আমরা বের হতে গেলে তিনি বলেন, আমি অমুক অমুককে আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে নির্দেশ দেই। কিন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও জন্য আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়া সমীচীন নয়। অতএব, তোমরা তাদেরকে পেলে হত্যা করবে (পোড়াবে না)।” (সহীহ বুখারী: ২৮৫৩)

দ্বিতীয় হাদীসটি হচ্ছে-

أن عليا رضي الله عنه حرق قوما فبلغ ابن عباس فقال لو كنت أنا لم أحرقهم لأن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( لا تعذبوا بعذاب الله ) . ولقتلتهم كما قال النبي صلى الله عليه و سلم (من بدل دينه فاقتلوه) – صحيح البخاري (3/ 1098) ، رقم الحديث: 2854، ط. دار ابن كثير ، اليمامة – بيروت

“আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কিছু লোককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেন। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বলেন, আমি হলে আগুনে পোড়াতাম না। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা আল্লাহর শাস্তির অনুরূপ শাস্তি দিও না। তবে আমি তাদের (না পুড়িয়ে) হত্যা করতাম। কারণ, রাসূল বলেন, যে ব্যক্তি নিজের দ্বীন (ইসলাম) পরিবর্তন করে, তোমরা তাকে হত্যা কর।” -সহিহ বুখারি: ২৮৫৪

তবে এ হাদীসগুলোর প্রয়োগক্ষেত্র ভিন্ন। মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেন, হাদীসটি সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বরং এই নিষেধাজ্ঞা শুধু ‘মাকদূর আলাইহি’ তথা বন্দি কাফিরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যে আমার নিয়ন্ত্রণে আছে এবং তাকে যে কোন উপায়ে হত্যা করার সুযোগ ও সক্ষমতা আছে। এমন ব্যক্তিকে শুধু আগুনই নয়; বরং হত্যার প্রত্যেক এমন উপায় অবলম্বন করতেই বারণ করা হয়, যাতে অপ্রয়োজনে তাকে অতিরিক্ত কষ্ট দিতে হয়। (সহীহ মুসলিম: ৬/৭২, হাদীস নং ৫১৬৭; সুনানু আবি দাউদ: ৪/৩০০, হাদীস নং ২৬৬৬)[1]

ইমাম বায়হাকী (র) (৪৫৮ হি.) উপর্যুক্ত দুটি হাদীসের শিরোনাম দেন-

باب المنع من إحراق المشركين بالنار بعد الإسار. -سنن البيهقي لأبو بكر البيهقي (2/ 176)، ط. مجلس دائرة المعارف النظامية الكائنة في الهند ببلدة حيدر آباد

“বন্দি করার পর মুশরিকদেরকে আগুনে পুড়িয়ে মারার নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক অনুচ্ছেদ।” -সুনানে কুবরা, বায়হাকী: ২/১৭৬

এরপর এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করে বলেন-

وأما حديث أسامة بن زيد حيث أمره رسول الله -صلى الله عليه وسلم- أن يحرق على أبنى، وما روى فى نصب المنجنيق على الطائف: فغير مخالف لما قلنا؛ إنما هو فى قتال المشركين ما كانوا ممتنعين، وما روى من النهى فى المشركين إذا كانوا مأسورين. -سنن البيهقي لأبو بكر البيهقي (2/ 180)، ط. مجلس دائرة المعارف النظامية الكائنة في الهند ببلدة حيدر آباد

“উসামা ইবন জায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস, যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (ফিলিস্তিনের) উবনা এলাকায় অগ্নিসংযোগের নির্দেশ দেন, আর তায়িফবাসীর বিরুদ্ধে মানজানিক স্থাপন সংক্রান্ত হাদীসগুলো আমাদের বক্তব্যের বিপরীত নয়। ‘মুমতানি’ তথা প্রতিরক্ষা শক্তির অধিকারী মুশরিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত লড়াই হচ্ছে (অগ্নিকাণ্ড চালানোর) এই হাদীসগুলোর প্রয়োগক্ষেত্র। পক্ষান্তরে যেসকল হাদীসে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আসে, সেগুলোর প্রয়োগক্ষেত্র হচ্ছে, যখন মুশরিকরা বন্দি হয়ে আমাদের হাতে ধরা পড়ে।” -সুনানে বায়হাকী ২/১৮০

উল্লেখ্য, ‘মানজানিক’ হচ্ছে তখনকার জমানার ক্ষেপণাস্ত্র জাতীয় একটি যুদ্ধাস্ত্র, যেটি দিয়ে বড় বড় পাথর ও অগ্নি নিক্ষেপ করে দুর্গ ও নগরপ্রাচীর ধ্বংস করা হত।[2]  (তাজুল আরুস ২৫/১৩২; আননাহরুল ফায়িক ৩/২০৩, কিতাবুল জিহাদ; রদ্দুল মুহতার ৪/১২৯, কিতাবুল জিহাদ)

পক্ষান্তরে যে কাফিররা আমার হাতে বন্দি নয় এবং আমার নিয়ন্ত্রণে নেই, যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের হত্যা করার জন্য বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার; এমনকি অগ্নিসংযোগ এবং এ জাতীয় যেকোনে ব্যাপক বিধ্বংসী কার্যক্রম সবই জায়িয এবং কাম্য। খোদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের `আমাল ও নির্দেশনায় সাহাবায়ে কিরামের জামানা থেকে আজ পর্যন্ত জিহাদ এভাবেই চলেছে।

সহীহ বুখারীর একটি হাদীসে আসে-

عن ابن عمر رضي الله عنهما قال : حرق رسول الله صلى الله عليه و سلم نخل بني النضير وقطع ؛ [3]وهي البويرة، فنزلت { ما قطعتم من لينة أو تركتموها قائمة على أصولها فبإذن الله }. -صحيح البخاري (4/ 1479)، الرقم: 3807، ط. دار ابن كثير ، اليمامة – بيروت

“আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুওয়াইরা নামক স্থানে (ইয়াহুদি গোত্র) বনু নাজিরের (উপর অবরোধ আরোপ করার পর তাদের শক্তি খর্ব করার উদ্দেশ্যে তাদের) খেজুর বাগানে অগ্নি সংযোগ করার এবং বৃক্ষগুলো কেটে ফেলার নির্দেশ দেন। তখন (এর সমর্থনে) এই আয়াত নাজিল হয়-

ما قطعتم من لينة أو تركتموها قائمة على أصولها فبإذن الله

“তোমরা যে খেজুর গাছ কেটেছো কিংবা যেগুলো (না কেটে, না জ্বালিয়ে) মূলের উপর খাড়া রেখে দিলে, তা তো আল্লাহরই হুকুমে ছিল।” [সূরাতুল হাশর: ৫; –সহীহ বুখারী ৩৮০৭]

অন্য একটি হাদীসে এসেছে-

عن سليمان بن يسار قال: أمّر رسول الله -صلَّى الله عليه وسلم- أسامة بن زيد على جيشٍ، وأمره أن يُحرق في يُبنا. -سنن سعيد بن منصور :2641، ط. ؛ قال المحقق شعيب الارنووط في تحقيق سنن أبي داوود (4\259، ط. دار الرسالة العالمية): وأخرجه مرسلاً كذلك سعيد بن منصور … ورجاله ثقات رجال الشيخين. ويشهد للتحريق حديث ابن عمر السالف قبله. اهـ

“সুলাইমান ইবন ইয়াসার (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামা ইবন জায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে এক বাহিনীর আমীর নিযুক্ত করে পাঠান এবং (ফিলিস্তিনের) উবনা এলাকায় অগ্নিসংযোগের নির্দেশ দেন।” (সুনানে সাইদ বিন মানসুর: ২৬৪১)

আরেক হাদীসে এসেছে-

عن مكحول، أن النبي صلى الله عليه وسلم «نصب المجانيق على أهل الطائف». -المراسيل لأبي داود (ص: 392)، ط. ، قال المحقق د. عبد الله بن مساعد الزهراني: إسناده إلى مرسله صحيح. اهـ

“মাকহুল (র) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়িফ যুদ্ধে মানজানিক স্থাপন করেন।” (আল-মারাসিল লিআবি দাউদ, ‍পৃষ্ঠা: ৩৯২)

.. أن عمرو بن العاص نصب المنجنيق على أهل الإسكندرية. -سنن البيهقي الكبرى (9/ 84)، الرقم: 17900، ط. مكتبة دار الباز – مكة المكرم

“আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু (মিশরের) ইস্কান্দারিয়া যুদ্ধে মানজানিক ব্যবহার করেন।” (আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী: ১৭৯০০)

أن جنادة بن أبي أمية الأزدي، وعبد الله بن قيس الفزاري، وغيرهما من ولاة البحر من بعدهم كانوا يرمون العدو من الروم وغيرهم بالنار، ويحرقونهم هؤلاء لهؤلاء، وهؤلاء لهؤلاء “. -سنن سعيد بن منصور (2/ 287)، الرقم: 2647، ط. الدار السلفية – الهند

“জুনাদা ইবন আবু উমাইয়া আল-আযদি (র) এবং আব্দুল্লাহ ইবন কায়িস আল-ফাযারী (র)সহ তাদের পরবর্তী অন্যান্য নৌঅধিপতিগণ রোম ও অন্যান্য শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে অগ্নি নিক্ষেপ করতেন এবং অগ্নি সংযোগ করতেন- মুসলমানরা কাফিরদের বিরুদ্ধে করত, কাফিররা মুসলমানদের বিরুদ্ধে করত।” (সুনানে সাইদ বিন মানসুর: ২৬৪৭)

عن عبد الله بن قيس الفزاري، ” أنه كان يغزو على الناس في البحر على عهد معاوية، وكان يرمي العدو بالنار ويرمونه ويحرقهم ويحرقونه، وقال: لم يزل أمر المسلمين على ذلك “. -سنن سعيد بن منصور (2/ 287)، الرقم: 2648، ط. الدار السلفية – الهند

আব্দুল্লাহ ইবন কায়িস আল-ফাযারী (র) থেকে বর্ণিত, মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাসনকালে তিনি শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে নৌ-যুদ্ধের নেতৃত্ব দিতেন। তিনি শত্রুদের উপর অগ্নি নিক্ষেপ করতেন, শত্রুরাও করত। তিনি তাদের ওখানে অগ্নিসংযোগ করতেন, তারাও করত। তিনি বলেন, মুসলমানদের যুদ্ধ সবসময় এভাবেই চলে আসছে।” (সুনানে সাইদ বিন মানসুর: ২৬৪৮)

ইমাম সারাখসি (র) (৪৯০ হি.) বলেন-

ولا بأس للمسلمين أن يحرقوا حصون المشركين بالنار أو يغرقوها بالماء وأن ينصبوا عليها المجانيق، وأن يقطعوا عنهم الماء، وأن يجعلوا في مائهم الدم والعذرة والسم حتى يفسدوه عليهم. لأنا أمرنا بقهرهم وكسر شوكتهم؛ وجميع ما ذكرنا من تدبير الحروب مما يحصل به كسر شوكتهم، فكان راجعا إلى الامتثال، لا إلى خلاف المأمور. -شرح السير الكبير (ص: 1467)

“মুশরিকদের দুর্গ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতে কিংবা পানি দিয়ে ডুবিয়ে দিতে কোন সমস্যা নেই। (দুর্গ ধ্বংস করার জন্য) মানজানিক স্থাপন করতেও সমস্যা নেই। পানি সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া, পানি দূষিত করার লক্ষ্যে পানিতে রক্ত, আবর্জনা এবং বিষ মিশিয়ে দেয়াতেও কোন সমস্যা নেই। আমরা কাফিরদের পরাভূত করতে এবং তাদের শক্তি চূর্ণ করতে আদিষ্ট। উপর্যুক্ত যুদ্ধ-কৌশলের সবগুলো এমন যে, এগুলোর মাধ্যমে বাস্তবেই তাদের শক্তি চূর্ণ হয়। তাই এ কাজগুলো শরয়ী নির্দেশের আনুগত্যের মধ্যেই পড়বে, নির্দেশ পরিপন্থি কিছু নয়।” (শারহুস সিয়ারিল কাবীর: ১৪৬৭)

এর দলীল উল্লেখ কালে তিনি বলেন-

وأصل هذا فيما روي: أن النبي – صلى الله تعالى عليه وآله وسلم -، سئل عن أهل الدار من المشركين، يبيتون فيقتل فيهم النساء والصبيان، فقال: هم منهم

وعهد رسول الله – صلى الله تعالى عليه وآله وسلم – إلى أسامة بن زيد – رضي الله عنه – أن يغير على أبنى صباحا ثم يحرق.

وأشار سلمان – رضي الله عنه – إلى رسول الله – صلى الله تعالى عليه وآله وسلم -، أن ينصب المنجنيق على حصن الطائف فنصبه رسول الله – صلى الله تعالى عليه وآله وسلم –

وأمر عمر أبا موسى الأشعري – رضي الله عنهما – وهو محاصر أهل تستر أن ينصب المنجنيق عليها، فنصبها أبو موسى.

ونصب عمرو بن العاص المنجنيق على إسكندرية حين حاصرها

وعن سلمة بن الأكوع – رضي الله عنه – قال: ركبنا البحر زمن معاوية – رضي الله تعالى عنه – ولقينا العدو فرميناهم بالمحرقات.

فعرفنا أنه لا بأس بذلك كله ما داموا ممتنعين، وإنما يكره الإحراق بالنار بعد الأخذ للأسير، على ما روي عن ابن عباس – رضي الله عنهما -، أن النبي – صلى الله عليه وآله وسلم -، بعث السرية وقال لهم: إن قدرتم على فلان فأحرقوه بالنار وكان نخس بزينب – رضي الله عنها – ابنة رسول الله – صلى الله عليه وآله وسلم – حتى أزلقت، ثم قال: إن قدرتم عليه فاقتلوه ولا تحرقوه فإنما يعذب الله تعالى بالنار .

ولما بعث رسول الله – صلى الله عليه وآله وسلم -، معاذ بن جبل – رضي الله عنه – إلى اليمن قال له: انظر فلانا، فإن أمكنك الله منه فأحرقه بالنار، فلما ولى دعاه فقال: إني قلت لك ذلك وأنا غضبان. فإنه ليس لأحد أن يعذب بعذاب الله تعالى، ولكن إن أمكنك الله منه فاقتله .

فعرفنا أنه يكره إحراق المشركين بالنار بعد ما يقدر عليهم، فأما مع كونه ممتنعا فلا بأس به. -شرح السير الكبير (ص: 1468-1469(

“এর দলীল হল:

বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দারুল হারবের সে সকল মুশরিক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, যাদের উপর রাতের অন্ধকারে অতর্কিত আক্রমণ করা হয়, ফলে তাদের সঙ্গে তাদের নারী-শিশুরাও মারা পড়ে? তিনি উত্তর দেন, তারা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। (অর্থাৎ, এমন অতর্কিত আক্রমণে মুশরিক পুরুষরা মারা পড়লে যেমন গুনাহ নেই, তেমনি তাদের নারী-শিশু মারা পড়লেও গুনাহ নেই)।

এমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামা ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে, (ফিলিস্তিনের) উবনায় অতর্কিত আক্রমণ করার এবং অগ্নিসংযোগ করার নির্দেশ দেন।

সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তায়িফের কেল্লায় মানজানিক স্থাপনের পরামর্শ দেন। তিনি সে মুতাবেক মানজানিক স্থাপন করেন।

আবু মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন তুসতুর অবরোধ করেন, তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে মানজানিক স্থাপনের নির্দেশ দেন। নির্দেশ মত তিনি মানজানিক স্থাপন করেন।

আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুও ইস্কান্দারিয়া অবরোধকালে মানজানিক স্থাপন করেন।

সালামা ইবন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে আমরা নৌ-যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আমরা যখন শত্রুর মুখোমুখি হই, তাদের উপর অগ্নি নিক্ষেপ করি।

বুঝা গেল, তারা যতক্ষণ ‘মুমতানি’ তথা প্রতিরক্ষা শক্তির অধিকারী থাকবে, এই কাজগুলো করতে কোন সমস্যা নেই। মাকরুহ হবে গ্রেফতার করার পর বন্দিকে পুড়িয়ে মারলে।

যেমন ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাহিনী পাঠানোর সময় প্রথমে নির্দেশ দেন, তোমরা অমুককে পেলে আগুন দিয়ে জ্বালাবে। সে লোকটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা যায়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বহনকারী উটকে খোঁচা মেরে হাঁকিয়ে দেয়, ফলে তিনি পড়ে যান (এবং গর্ভপাত হয়ে যায়)। তবে পরে আবার বলেন, তোমরা তাকে পেলে হত্যা করবে, আগুন দিয়ে পোড়াবে না। আগুন দিয়ে শাস্তি দিবেন শুধু আল্লাহ।

রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়াজ ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যখন ইয়ামানে পাঠাচ্ছিলেন, নির্দেশ দিয়ে বলেন, অমুককে খোঁজ করবে। যদি আল্লাহ তাকে তোমার কব্জায় এনে দেন, আগুনে  জ্বালাবে। এরপর  তিনি রওয়ানা কালে বলেন, আমি আগের কথাটি যখন তোমাকে বলি, তখন আমি রাগান্বিত ছিলাম। আল্লাহর শাস্তি (আগুন) দিয়ে সাজা দেয়া তো অন্য কারও জন্য মানায় না। (আগুন দিয়ে তাকে পুড়িও না) তবে আল্লাহর ইচ্ছায় তাকে বাগে পেলে তুমি তাকে হত্যা করিও।

বুঝা গেল, বাগে পাওয়ার পর মুশরিকদের আগুনে পুড়িয়ে মারা মাকরুহ। পক্ষান্তরে যখন সে ‘মুমতানি’ বা প্রতিরক্ষার অধিকারী তখন আগুন দিয়ে পোড়াতে সমস্যা নেই। (শারহুস সিয়ারিল কাবীর: ১৪৬৮-১৪৬৯)

হিদায়া গ্রন্থকার আলী আল-মারগিনানি (র) (৫৯৩ হি.) জিহাদের নিয়ম উল্লেখ কালে বলেন-

ونصبوا عليهم المجانيق ” كما نصب رسول الله عليه الصلاة ولاسلام على الطائف، ” وحرقوهم ” لأنه عليه الصلاة والسلام أحرق اليوبرة قال ” وأرسلوا عليهم الماء وقطعوا أشجارهم وأفسدوا زروعهم ” لأن في جميع ذلك إلحاق الكبت والغيظ بهم وكسر شوكتهم وتفريق جمعهم فيكون مشروعا. –الهداية 2\ 379-380، دار احياء التراث العربي – بيروت – لبنان

“তাদের বিরুদ্ধে মানজানিক স্থাপন করবে, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়িফবাসীর বিরুদ্ধে করেন। এবং অগ্নি সংযোগ করবে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুয়াইরা এলাকায় অগ্নিসংযোগ করেন। (ডুবিয়ে দেয়ার জন্য বাঁধ ভেঙে) তাদের উপর পানি ছেড়ে দেবে, তাদের গাছপালা কেটে ফেলবে এবং তাদের ফসল ধ্বংস করে দেবে। কারণ, এ সবগুলোতে তারা লাঞ্ছিত হবে, তাদের অন্তর্জ্বালা বাড়বে, তাদের শক্তি চূর্ণ হবে এবং তাদের সংঘবদ্ধতা নষ্ট হবে। তাই এ সবই জায়িয।” (হিদায়া ২/৩৭৯-৩৮০)

সুতরাং ধৃত ও গ্রেফতারকৃত কাফিরকে আগুনে পুড়িয়ে মারা নিষেধ হলেও, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা শক্তির অধিকারী কাফিরকে আগুন, যে কোন প্রকারের আগ্নেয়াস্ত্র কিংবা যেকোন ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়ায় হত্যা করাই বৈধ এবং কাম্য। এতে শরীয়তের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।

(আরও দেখুন- আদ্দুররুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার: ৪/১২৯; শারহু মুখতাসারি খলিল, খারাশি: ৩/১১৩; তুহফাতুল মুহতাজ, ইবন হাজার হাইতামি: ৯/২৪২; আসনাল মাতালিব, যাকারিয়া আনসারি: ৪/১৯০; আল-মুগনি, ইবন কুদামা: ৯/২৮৭)

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আল-মাহদি (উফিয়া আনহু)

০৭-০৬-১৪৪৩ হি.

১১-০১-২০২১

[1] عَنْ أَبِى الأَشْعَثِ عَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ قَالَ ثِنْتَانِ حَفِظْتُهُمَا عَنْ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ الإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الذَّبْحَ وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ فَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ ». -صحيح مسلم للنيسابوري (6/ 72)، الرقم: 5167

عن علقمةَ عن عبد الله، قال: قال رسولُ الله -صلَّى الله عليه وسلم-: “أعَفُّ الناسِ قِتْلَةً أهلُ الإيمانِ”. -سنن أبي داود ت الأرنؤوط (4/ 300)، الرقم: 2666 قال المحققون: إسناده حسن. اهـ

[2] المَنْجَنِيقُ بِالْفَتْح ويُكْسَرُ المِيمُ أَي مَعَ فتحِ الجِيم، قَالَ الجَوْهرِيُّ: آلَةٌ ترْمَى بِها الحِجارةُ أَي: على العدوِّ، وَذَلِكَ بأَنْ تشَدَّ سَوار مُرتَفِعَة جِداً من الخشَب، يوضَعُ عَلَيْهَا مَا يُرادُ رَمْيُه، ثمَّ يُضْرَبُ بسارِيَةٍ تُوصله لمَكانٍ بعيدِ جِدّاً، وَهِي آلةٌ قَديمةٌ قبلَ وَضْع النَّصارَى البارُودَ والمَدافِعَ، قَالَه شَيْخُنا. -تاج العروس (25/ 132)

(المنجنيق) آلَة قديمَة من آلَات الْحصار كَانَت ترمى بهَا حِجَارَة ثَقيلَة على الأسوار فتهدمها (مُؤَنّثَة) (مَعَ). -المعجم الوسيط (2/ 855)

وإنما ينصب المنجنيق لتخريب الأبنية. -المبسوط للسرخسي (26/ 123)

(ونحاربهم بنصب المجانيق) على حصونهم لأنه عليه الصلاة والسلام (نصبها على الطائف) رواه الترمذي (وحرقهم) أراد حرق دورهم وأمتعتهم قاله العيني، والظاهر أن المراد حرق ذاتهم بالمجانيق. وإذا جازت محاربتهم بحرقهم فمالهم أولى لأنه عليه الصلاة والسلام أحرق نخل بني النضير وقطعة وهي البويرة. -النهر الفائق شرح كنز الدقائق (3/ 203)

(قوله بنصب المجانيق) أي على حصونهم؛ لأنه – عليه الصلاة والسلام – نصبها على الطائف رواه الترمذي نهر، وهو جمع منجنيق بفتح الميم عند الأكثر وإسكان النون الأولى وكسر الثانية فارسية معربة تذكر وتأنيثها أحسن وهي آلة ترمى بها الحجارة الكبار قلت: وقد تركت اليوم للاستغناء عنها بالمدافع الحادثة (قوله وحرقهم) أراد حرق دورهم وأمتعتهم قاله العيني: والظاهر أن المراد حرق ذاتهم بالمجانيق وإذا جازت محاربتهم بحرقهم فمالهم أولى نهر، وقوله: بالمجانيق أي برمي النار بها عليهم. -الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (4/ 129)

[3] تحفة الأحوذي (5/ 132)

قوله (حرق) بتشديد الراء (نخل بني النضير وقطع) أي أمر بتحريق نخلهم وقطعها.

আরও পড়ুনঃ শহীদের দুনিয়াবি বিধান কাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

Related Articles

Back to top button