সময়মতো হজ করিনি, এখন করণীয় কী?
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্নঃ
আমার উপর যখন ফরয হয় তখন হজের খরচ ছিলো ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। যা এখন ৬ লাখ ৮৩ হাজারে পৌঁছেছে। বর্তমানে আমার কাছে নগদ অর্থ আছে ৭ লাখ ৫০ হাজারের মতো। আমি একজন সাধারণ ব্যবসায়ী। এ মুহূর্তে হজে গেলে অবশিষ্ট সম্পদ পরিবার ও ব্যবসার জন্য যথেষ্ট হবে না। সম্পদের পরিমাণ শুধু বাড়ির জায়গাটুকু। এদিকে ব্যবসার অবস্থাও মন্দা যাচ্ছে। খরচের তুলনায় আয় কম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, যা দিন দিন সামর্থ্যের বাহিরে চলে যাচ্ছে। দীনের বিভিন্ন তাগাদা তো আছেই।
সারকথা হলো, আমার উপর হজ ফরয হওয়ার পর এখন আর্থিক অবস্থা অনেকাংশেই আমার অনুকূলে নেই। এমতাবস্থায় আমি কী করতে পারি? হজে যাবো, নাকি সার্বিক হালাত বিবেচনা করে অবস্থা উন্নতির জন্য আরও বিলম্ব করবো?
উল্লেখ্য, যখন আমার উপর হজ ফরয হয়েছিলো, তখন আমি চাইলে স্বাভাবিকভাবেই হজ করতে পারতাম। কিন্তু অবহেলা করে দেরি করেছি, যার ফলে বর্তমানে এই অবস্থার মুখোমুখি হয়েছি।
-আবদুল মুমিন
উত্তরঃ
হাদীস শরীফে এসেছে,
عن أبي أمامة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من لم يمنعه عن الحج حاجة ظاهرة، أو سلطان جائر، أو مرض حابس فمات ولم يحج، فليمت إن شاء يهوديا، وإن شاء نصرانيا» -(أخرجه الدارمي في سننه (1826)، الناشر: دار المغني للنشر والتوزيع، المملكة العربية السعودية). وقال الإمام البيهقي رحمه الله: وهذا وإن كان إسناده غير قوي فله شاهد من قول عمر بن الخطاب رضي الله عنه اهـ. –السنن الكبرى (4/546)، دار الكتب العلمية.
“আবু উমামা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তিকে স্পষ্ট অভাব বা জালিম শাসক অথবা সফরে বাধাপ্রদানকারী অসুস্থতা; হজ পালনে বাধা দেয়নি, অথচ সে হজ না করে মৃত্যুবরণ করল, সে চাইলে ইহুদী হয়ে মৃত্যুবরণ করুক, না হয় খ্রিস্টান হয়ে মৃত্যু বরণ করুক (তাতে আমার কিছু যায় আসে না) ।” –সুনানে দারেমী, হাদীস নং: ১৮২৬
হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
من مات وهو موسر لم يحج، فليمت على أي حال شاء، يهوديا، أو نصرانيا. –(أخرجه ابن أبي شيبة في المصنف (14670)، شركة دار القبلة) وقال الشيخ عوامة: إسناده صحيح.
وقال ابن الملقن رحمه الله (804هـ): ورواه سعيد بن منصور بلفظ: «لقد هممت أن أبعث رجالا إلى هذه الأمصار فينظروا كل من كان له جدة ولم يحج؛ فيضربوا عليهم الجزية (ما هم بمسلمين) » . وقال الحافظ أبو محمد المنذري: إسناده حسن، شاهد لحديث أبي أمامة اهـ. – البدر المنير (6/ 38) الناشر: دار الهجرة للنشر والتوزيع – الرياض-السعودية
“যে ব্যক্তি ধনী হয়ে মৃত্যুবরণ করলো, অথচ সে হজ করলো না, সে যে অবস্থায় ইচ্ছা মৃত্যুবরণ করুক; ইহুদী হয়ে বা খ্রিস্টান হয়ে।” –মুসান্নাফ, ইবনু আবী শাইবাহ, হাদীস নং: ১৪৬৭০; হাদীসটি সহীহ।
…অপর বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন: “আমার ইচ্ছে হয়েছিলো, এসব শহরে কিছু লোক প্রেরণ করি, যারা সম্পদ আছে তারপরও হজ করেনি এমন প্রত্যেকটি লোককে খুঁজে বের করে তাদের উপর জিযিয়া আরোপ করবে…।” –সুনানে সায়ীদ বিন মানসূর, দেখুন- আলবাদরুল মুনির: ৬/৩৮
উল্লিখিত হাদীসসমূহ থেকে পরিষ্কার বুঝা যায়, হজ ফরয হওয়ার পর তা আদায় না করা কতটা ভয়াবহ। বস্তুত হজ ফরয হওয়ার পর বিলম্ব না করে যত দ্রুত সম্ভব আদায় করে নেওয়া জরুরি। বিলম্ব করা নাজায়েয।
হাদীসে এসেছে,
عن ابن عباس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ” تعجلوا إلى الحج – يعني: الفريضة – فإن أحدكم لا يدري ما يعرض له “. –أخرجه أحمد في مسنده (2867)، (الناشر: مؤسسة الرسالة) وقال الأرنؤوط: حديث حسن.
“ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা দ্রুত হজ কর, -অর্থাৎ ফরয হজ-। কারণ তোমাদের কেউই জানে না, সামনে সে কোন পরিস্থিতির শিকার হবে।” –মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং: ২৮৬৭
অপর বর্ণনায় এসেছে,
قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم -: “من أراد الحج فليتعجل، فإنه قد يمرض المريض، وتضل الضالة، وتعرض الحاجة”. أخرجه ابن ماجه في سننه (2883)، (الناشر: دار الرسالة العالمية)، وقال الارنؤوط: حديث حسن.
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হজের সংকল্প করে, সে যেন অবিলম্বে তা আদায় করে। কারণ মানুষ কখনও অসুস্থ হয়ে যায়, কখনও প্রয়োজনীয় জিনিস বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং কখনও অপরিহার্য প্রয়োজন সামনে এসে পড়ে।” –সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং: ২৮৮৩
সুতরাং এখন আপনার কর্তব্য, আর কোনো বিলম্ব না করে হজ আদায় করে নেওয়া। অবহেলাবশত বিলম্বের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। ইনশাআল্লাহ তিনি ক্ষমা করবেন।
আপনি যদি আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে বর্তমান অভাব অনটনের মধ্যেও হজ আদায় করেন, আল্লাহ আপনার রিযিকের অভাব অনটনসহ সকল সঙ্কট দূর করে দিবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
}وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا (2) وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا} [الطلاق: 2، 3[
“যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার উত্তরণের পথ করে দেন এবং তাকে এমনভাবে রিযিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করে না। যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, তিনি তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর কর্ম সম্পাদন করেই ছাড়েন। আর তিনি সব কিছুর জন্য একটি পরিমাপ নির্ধারিত করেছেন।” (সূরা তালাক: ৬৫:০২-০৩)
আরও ইরশাদ করেন,
}وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا (4) ذَلِكَ أَمْرُ اللَّهِ أَنْزَلَهُ إِلَيْكُمْ وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ وَيُعْظِمْ لَهُ أَجْرًا (5)} [الطلاق: 4، 5[
“যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার বিষয় সহজ করে দেন। এ আল্লাহর নির্দেশ, যা তিনি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন। আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন এবং তাকে বড় প্রতিদান দেন।” (সূরা তালাক: ৬৫:০৪-০৫)
হাদীসে এসেছে,
عن عبد الله بن مسعود قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: تابعوا بين الحج والعمرة، فإنهما ينفيان الفقر والذنوب كما ينفي الكير خبث الحديد، والذهب، والفضة، وليس للحجة المبرورة ثواب إلا الجنة. –أخرجه الترمذي في سننه (410) (تحقيق بشار)، وقال الترمذي: حسن صحيح غريب.
“আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা ধারাবাহিক হজ ও উমরা আদায় করতে থাকো। এ দুটো আমল দারিদ্র্য ও গুনাহ বিদূরিত করে। যেমন ভাটার আগুন লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা-জং দূরীভূত করে। একটি কবুল হজের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।” –সুনানে তিরমিযী হাদীস নং: ৪১০; হাদীসটি সহীহ।
আরও দেখুন:- আলমাবসূত: ৪/১৬৩, দারুল মারিফাহ; হিদায়া: ১/১৩২, দারু ইহয়ায়িত তুরাস; ফাতহুল কাদীর: ২/৪১৪, দারুল ফিকর; রদ্দুল মুহতার: ২/৪৬৬, দারুল ফিকর; জাওয়াহিরুল ফিকহ: ৪/৯৭
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
০৫-০৭-১৪৪৪ হি.
২৮-০১-২০২৩ ঈ.
আরও পড়ুনঃ মৃত পিতার জন্য কি নফল হজ করা যাবে?