ভারত উপমহাদেশের শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই কেন ওয়াজিব? (২য় পর্ব)
ভারত উপমহাদেশের শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই কেন ওয়াজিব?
(দ্বিতীয় পর্ব)
শায়খ ফজলুর রহমান কাসিমি হাফিযাহুল্লাহ
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
এ পর্যায়ে তিনটি বিষয় আমরা একটু বিস্তারিত তুলে ধরতে চাই। প্রথম বিষয়টি হচ্ছে, এ ভূখণ্ড দুইশত বছর আগে কেন দারুল হারব হয়েছিল? এবং আজ পর্যন্ত কেন তা দারুল হারব হিসাবে বহাল আছে? দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, ঐ সকল ঘটনাপ্রবাহের সংক্ষিপ্ত চিত্রায়ণ যা বিগত দুই শত বছর যাবত আমাদের উপর দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। তৃতীয় বিষয় হচ্ছে, একটি দারুল ইসলাম দারুল হারব হয়ে যাওয়ার পর তাকে পুনরায় দারুল ইসলাম বানানোর যে ফরয যিম্মাদারী আমাদের উপর অর্পিত হয়েছিল এবং যা এখনো পর্যন্ত আদায় হয়নি, সে যিম্মাদারী আদায় করার জন্য আজ দুইশত বছর পর আমরা কি করতে পারি? এ বিষয়ে শরীয়তের পক্ষ থেকে আমাদের উপর কি কি যিম্মাদারী রয়েছে?
ভারত উপমহাদেশ কেন দারুল হারব হয়েছিল? এবং এখনো পর্যন্ত তা কেন দারুল হারব?
ভারত উপমহাদেশ কেন এবং কীভাবে দারুল হারব হয়েছে? এ বিষয়টি এক যামানা পর্যন্ত মুসলমানদের জানা ছিল। দীর্ঘকাল পর্যন্ত তারা এটা জানত যে, তাদের এ ইসলামী রাজ্য কীভাবে এবং কেন দারুল হারব হয়ে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে যামানা অতিবাহিত হতে থাকল আর মুসলমান তাদের অতীতকে ভুলতে থাকল। মুসলমানদের দৃষ্টি থেকে এবং তাদের দিল ও দেমাগ থেকে দারুল ইসলাম ও দারুল হারবের পার্থক্য হারিয়ে যেতে লাগল। দারুল ইসলামের হাকীকত বোঝা মুসলমানদের জন্য কঠিন হয়ে গেল। যার ফলে সে বিষয়টিকে এবং সেই উপাখ্যানকে নতুন করে জাগিয়ে তোলা সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমরা সে বিষয়ে কিছু বলতে যাচ্ছি।
এখানে দু’টি কথা পেশ করতে চাই। একটি কথা হচ্ছে, এ বিষয়ে কিতাবের ফায়সালা। অপর কথা হচ্ছে, হিন্দুস্তানের হালাত যা এ মাসআলার মিসদাক বা প্রয়োগক্ষত্রে।
কিতাবের মাসআলা
কিতাব ও সুন্নাহর দৃষ্টিতে আমাদের মুজতাহিদ ইমামগণ দারুল হারব-এর যে সংজ্ঞা দিয়েছেন এবং একটি দারুল ইসলাম দারুল হারবে রূপান্তরিত হওয়ার যেসব কারণ উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে বিশেষভাবে দু’টি বিষয়কে ধর্তব্য করা হয়েছে। একটি হচ্ছে, কুফরের হর্তাকর্তাদের শক্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়া। অপরটি হচ্ছে, কাফিরদের আইন কানুন বাস্তবায়িত হওয়া। এ দু’টি বিষয় এমন যা মুসলমানদের পক্ষে হলে একটি দারুল হারব দারুল ইসলাম হয়ে যাবে। অর্থাৎ, যদি কোন দেশে মুসলমানদের শক্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইসলামী আইন প্রয়োগ হয় তাহলে দারুল হারব দারুল ইসলাম হয়ে যাবে।
ইমাম জাসসাস (রহ) (মৃত: ৩৭০হি:) লিখেন:
ووجه هذا القول: أنَّ حكم الدار إنما يتعلق بالظهور والغلبة، وإجراء حكم الدين بها، والدليل على صحة ذلك: أنا متى غلبنا على دار الحرب، وأجرينا أحكامنا فيها: صارت دار إسلام، سواء كانت متاخمة لدار الإسلام أو لم تكن، فكذلك البلد من دار الإسلام، إذا غلب عليه أهل الكفر، وجرى فيه حكمهم: وجب أن يكون من دار الحرب. شرح مختصر الطحاوي للجصاص (المتوفي 370ه)، كتاب السير والجهاد 7/216-217، دار البشائر الإسلامية بيروت، لبنان، الطبعة الأولى 1431ه
“এই মতের যৌক্তিকতা হচ্ছে, দারের বিধান বিজয় ও শক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এমনিভাবে সেখানে শরীয়তের বিধান বাস্তবায়ন করার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ কথা ঠিক হওয়ার পক্ষে দলীল হচ্ছে, আমরা যখন দারুল হারবের উপর বিজয় লাভ করি এবং সেখানে আমাদের বিধান জারী করি, তখন সেটি দারুল ইসলাম হয়ে যায়। চাই তা দারুল ইসলামের সঙ্গে মিলে থাকুক বা মিলে না থাকুক। ঠিক তেমনিভাবে দারুল ইসলামের কোন শহরের উপর যদি কাফিরদের বিজয় প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং সেখানে তাদের বিধান জারী হয়ে যায়, তাহলে তা অবশ্যই দারুল হারবের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (শরহু মুখতাসারিত তাহাবি: ৭/২১৬-২১৭)
ইমাম সারাখসী (রহ) লিখেন:
وعن أبي يوسف ومحمد رحمهما الله تعالى: إذا أظهروا أحكام الشرك فيها فقد صارت دارهم دار حرب؛ لأن البقعة إنما تنسب إلينا أو إليهم باعتبار القوة والغلبة، فكل موضع ظهر فيه حكم الشرك فالقوة في ذلك الموضع للمشركين، فكانت دار حرب، وكل موضع كان الظاهر فيه حكم الإسلام فالقوة فيه للمسلمين. المبسوط للسرخسي (المتوفي 483ه)، كتاب السير، باب المرتدين، 10/114، دار المعرفة، بيروت، لبنان
“আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ রাহিমাহুমাল্লাহ বলেছেন, তারা যখন শিরকের বিধানগুলো চালু করবে তখন তাদের দার দারুল হারব হয়ে যাবে। কেননা, ভূখণ্ডের কোন একটি অংশ আমাদের সঙ্গে বা তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় বিজয় ও শক্তি প্রয়োগের ভিত্তিতে। অতএব প্রত্যেক ঐ এলাকা যেখানে শিরকের বিধানের প্রাবল্য ও প্রচলন রয়েছে সেখানে শক্তি মুশরিকদের জন্য প্রতিষ্ঠিত। তাই তা দারুল হারব হয়ে যাবে। আর প্রত্যেক ঐ এলাকা যেখানে ইসলামের বিধানের প্রাবল্য ও প্রচলন রয়েছে, সেখানে শক্তি মুসলমানদের জন্য প্রতিষ্ঠিত।” (আলমাবসূত: ১০/১১৪)
আল্লামা কাসানী (রহ) (মৃত: ৫৮৭হি) লিখেন:
فصل: في اختلاف الأحكام باختلاف الدارين
وأما بيان الأحكام التي تختلف باختلاف الدارين؛ فنقول: لا بد أولا من معرفة معنى الدارين؛ دار الإسلام ودار الكفر؛ لتعرف الأحكام التي تختلف باختلافهما، ومعرفة ذلك مبنية على معرفة ما به تصير الدار دار إسلام أو دار كفر؛ فنقول: لا خلاف بين أصحابنا في أن دار الكفر تصير دار إسلام بظهور أحكام الإسلام فيها.
بدائع الصنائع لعلاء الدين الكاساني (المتوفي 587ه)، كتاب السير، فصل في اختلاف الأحكام باختلاف الدارين، 9/518-519، دار الكتب العلمية، بيروت، لبنان، الطبعة الثانية 1424ه
“অনুচ্ছেদ: দুই দারের ব্যবধানে বিধি-বিধানের ব্যবধান সম্পর্কে
সেসব বিধি-বিধানের বিবরণ যা দারের ব্যবধানের কারণে ভিন্ন হয়ে থাকে। এ বিষয়ে আমরা বলব, সর্বপ্রথম দারুল ইসলাম ও দারুল কুফরের অর্থ জানা প্রয়োজন। যাতে এ দু’টি দারের ভিন্নতার কারণে বিধি-বিধানের মাঝে সেসব ব্যবধান হয় তা জানা যায়। আর এ বিষয়টি এ কথা জানার উপর নির্ভরশীল যে, দারুল ইসলাম ও দারুল কুফর কেন সৃষ্টি হয়? সে বিষয়ে আমরা বলছি, এ বিষয়ে আমাদের ইমামগণের মাঝে কোন দ্বিমত নেই যে, দারুল কুফরের মাঝে ইসলামী বিধান জারী হওয়ার দ্বারা তা দারুল ইসলাম হয়ে যায়।” (বাদায়েউস সানায়ে’: ৯/৫১৮-৫১৯)
এ তিনটি উদ্ধৃতি থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, কোন দেশের উপর মুসলমানদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং ইসলামী আইন প্রয়োগ হওয়া ব্যতীত সে দেশ দারুল ইসলাম হতে পারে না। যতক্ষণ পর্যন্ত কাফিরদের আধিপত্য থাকবে এবং গায়রে শরয়ী কানুন জারী থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তা দারুল হারবই থাকবে। এর সঙ্গে সঙ্গে ইমাম সারাখসীর বক্তব্য থেকে এ কথাও প্রমাণিত হয়েছে যে, আধিপত্য ও শক্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়াও বিধি-বিধানের প্রয়োগ দ্বারাই প্রমাণিত হয়। তাঁর এ বক্তব্যটি আবার দেখুন-
فكل موضع ظهر فيه حكم الشرك فالقوة في ذلك الموضع للمشركين، فكانت دار حرب، وكل موضع كان الظاهر فيه حكم الإسلام فالقوة فيه للمسلمين.
“অতএব প্রত্যেক ঐ এলাকা যেখানে শিরকের বিধানের প্রাবল্য ও প্রচলন রয়েছে সেখানে শক্তি মুশরিকদের জন্য প্রতিষ্ঠিত। তাই তা দারুল হারব হয়ে যাবে। আর প্রত্যেক ঐ এলাকা যেখানে ইসলামের বিধানের প্রাবল্য ও প্রচলন রয়েছে, সেখানে শক্তি মুসলমানদের জন্য প্রতিষ্ঠিত।” (আলমাবসূত: ১০/১১৪)
এ কারণে হিন্দুস্তানে যখন কাফিরদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল, গায়রে শারয়ী আইন প্রয়োগ হতে শুরু করেছে, কুরআন সুন্নাহে বাতলানো হালাল হারাম হতে শুরু করেছে এবং হারাম হালাল হতে শুরু করেছে, এমনিভাবে ফরয দায়িত্বগুলো নিষিদ্ধ কাজে রূপান্তরিত হতে শুরু করেছে এবং নিষিদ্ধ কাজগুলো ওয়াজিব আমলের স্থলাভিষিক্ত হতে শুরু করেছে, তখন সময়ের যিম্মাদারগণ এবং হক্কানী রব্বানী উলামায়ে কিরাম এ দেশকে দারুল হারব সাব্যস্ত করে ফাতওয়া দিয়েছেন। অথচ এদেশকে যখন দারুল হারব বলে ফতোয়া দেয়া হচ্ছিল তখন এ দেশের বাদশাহ ও শাসক মুসলমান ছিলেন। শাসনের আসনে মুসলিম বাদশাহর মুকুট শোভা পাচ্ছিল। সালাতও পড়া হত, সিয়ামও রাখা হত, হজ্জের সফরও চালু ছিল, মুসলমানরা যাকাতও আদায় করত, আযান হত, মাহফিল চলত, দাওয়াত ও তাবলীগের কাজও চালু ছিল, মাদরাসাগুলোতে পড়া-পড়ানোও জারী ছিল। মোটকথা এমন অসংখ্য ইসলামী বিষয়াদি বহাল তবিয়তে চালু ছিল। কিন্তু এরপরও এ দেশ দারুল ইসলামের অবস্থান হারিয়ে দারুল হারবে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। এর কারণ এটাই যে, আধিপত্য আহলে কুফরের এবং আইন কানুন গায়রে শারয়ী, শক্তি ও প্রভাব কুফর ও শিরকের।
আর এ দু’টি মৌলিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই হিন্দুস্তানকে দারুল হারব সাব্যস্ত করা হয়েছে। আর এ ফাতওয়ার ভিত্তিতে কুফরী আধিপত্য ও কুফরী আইনের বিরুদ্ধে উলামায়ে ইসলামের নেতৃত্বে হিন্দুস্তানের মুসলমানরা জিহাদের ময়দানে লড়াই করতে থেকেছেন।
ইমাম আবু হানীফা (রহ)-এর দু’টি শর্ত
তবে একটি দারুল ইসলাম দারুল হারবে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য ইমাম আবু হানীফা (রহ) অতিরিক্ত আরও দু’টি কথা বলেছেন। একটি হচ্ছে, দারুল ইসলাম হওয়ার কারণে এবং দারুল ইসলাম হিসাবে একটি দেশে যে নিরাপত্তা ছিল তা বহাল না থাকা। অপরটি হচ্ছে, সে দেশ কোন দারুল কুফরের সঙ্গে মিলে না থাকা।
উল্লেখ্য, হিন্দুস্তান যখন দারুল হারব হয়ে গিয়েছিল তখন যারা কাফিরদের কুফরী আইন মেনে নিয়েছিল, কাফিরদের আধিপত্যকে নিজেদের জন্য কোন মুসীবত মনে করেনি; বরং ক্ষেত্রে বিশেষে কাফিরদের অধীনস্থতাকে নিজেদের জন্য গৌরব ও গর্বের বিষয় মনে করতে শুরু করেছে, তাদের নিরাপত্তা ও শান্তির মাঝে কোন প্রকার ছন্দপতন ঘটেনি। কিন্তু এরপরও হিন্দুস্তান দারুল হারব হয়ে গিয়েছিল। অতএব ইমাম আবু হানীফা (রহ) যে নিরাপত্তার কথা বলছেন তা এ ধরনের লোকদের নিরাপত্তা নয়; কারণ যদি এ ধরনের লোকদের নিরাপত্তা উদ্দেশ্য হত তাহলে তখনও হিন্দুস্তান দারুল হারব হত না। বরং আপনি বলতে পারেন, পৃথিবীতে কোন দারুল হারবই কখনো দারুল হারব হতে পারবে না। কেননা প্রত্যেক দারুল হারবেই আপনি এমন মুসলমান পাবেন, যারা কাফিরদের আধিপত্য ও কুফরী আইনকে মাথা পেতে মেনে নেয় এবং কাফিরদের দেশ পরিচালনা পদ্ধতিকে মনপ্রাণ দিয়ে গ্রহণ করে। তাদের নিরাপত্তা ও আরামের মাঝে কখনও বিঘ্নতা সৃষ্টি হয় না। সুতরাং এই আমান ও রাহাত ইমাম আবু হানীফা (রহ)-এর উদ্দেশ্য নয়।
এ মাসআলটির আরও বিশ্লেষণের জন্য ‘বাদায়ে’-এর এ এবারতটি দেখা যেতে পারে-
واختلفوا في دار الإسلام أنها بماذا تصير دار الكفر؟ قال أبو حنيفة: إنها لا تصير دار الكفر إلا بثلاث شرائط:
أحدها: ظهور أحكام الكفر فيها، والثاني: أن تكون متاخمة لدار الكفر، والثالث: أن لا يبقى فيها مسلم ولا ذمي آمنا بالأمان الأول، وهو أمان المسلمين.
وقال أبو يوسف، ومحمد – رحمهما الله: إنها تصير دار الكفر بظهور أحكام الكفر فيها.
وجه قولهما أن قولنا دار الإسلام، ودار الكفر إضافة دار إلى الإسلام وإلى الكفر، وإنما تضاف الدار إلى الإسلام أو إلى الكفر لظهور الإسلام أو الكفر فيها، كما تسمى الجنة دار السلام، والنار دار البوار؛ لوجود السلامة في الجنة، والبوار في النار. وظهور الإسلام والكفر بظهور أحكامهما، فإذا ظهرت أحكام الكفر في دار، فقد صارت دار كفر فصحت الإضافة، ولهذا صارت الدار دار الإسلام بظهور أحكام الإسلام فيها من غير شريطة أخرى، فكذا تصير دار الكفر بظهور أحكام الكفر فيها، والله أعلم.
وجه قول أبي حنيفة – رحمه الله – أن المقصود من إضافة الدار إلى الإسلام والكفر ليس هو عين الإسلام والكفر، وإنما المقصود هو الأمن والخوف، ومعناه أن الأمان إن كان للمسلمين فيها على الإطلاق، والخوف للكفرة على الإطلاق، فهي دار الإسلام، وإن كان الأمان فيها للكفرة على الإطلاق، والخوف للمسلمين على الإطلاق، فهي دار الكفر.
بدائع الصنائع لعلاء الدين الكاساني (المتوفي 587ه)، كتاب السير، فصل في اختلاف الأحكام باختلاف الدارين، 9/519، دار الكتب العلمية، بيروت، لبنان، الطبعة الثانية 1424ه
“তবে দারুল ইসলাম কী কারণে দারুল কুফরে রূপান্তরিত হবে? এ বিষয়ে তাঁরা মতভেদ করেছেন। ইমাম আবু হানীফা বলেছেন, তিনটি শর্ত পাওয়া ব্যতীত দারুল ইসলাম দারুল হারব হবে না।
প্রথমটা হচ্ছে, সেখানে কুফরী বিধান জারী হওয়া। দ্বিতীয় হচ্ছে, দারুল হারবের পাশে হওয়া। তৃতীয় হচ্ছে, কোন মুসলিম অথবা যিম্মী সাবেক নিরাপত্তার ভিত্তিতে নিরাপদ না থাকা। অর্থাৎ, মুসলমানদের পক্ষ থেকে দেয়া নিরাপত্তা।
আর ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রাহিমাহুমাল্লাহ বলেন, দারুল ইসলামে কুফরী বিধান চালু হওয়ার দ্বারা তা দারুল কুফর হয়ে যাবে।
ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রাহিমাহুমাল্লাহর মতের দলীল হচ্ছে, আমাদের কোন দার বা দেশকে দারুল ইসলাম বা দারুল কুফর বলা তাকে ইসলাম ও কুফরের দিকে নিসবত তথা সম্পৃক্ত করা হিসাবে নামকরণ করা হয়। দারকে ইসলামের দিকে বা কুফরের দিকে নিসবত করা হয় সেই দারে ইসলাম অথবা কুফরের আধিপত্যের ভিত্তিতে। যেমনিভাবে জান্নাতকে দারুস সালাম (নিরাপত্তার জায়গা) এবং জাহান্নামকে দারুল বাওয়ার (ধ্বংসের জায়গা) বলা হয়; জান্নাতে নিরাপত্তা এবং জাহান্নামে ধ্বংস পাওয়ার কারণে। আর ইসলাম অথবা কুফরের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় উভয়ের বিধি-বিধানের প্রাবল্য ও প্রয়োগের দ্বারা। অতএব যদি কোন দারের মধ্যে কুফরের বিধান শক্তিশালী হয় এবং কুফরের বিধান জারী হয় তাহলে সে দার দারুল কুফর হয়ে যাবে এবং কুফরের দিকে দারের নিসবত সহীহ হবে। এমনিভাবে কোন দারের মধ্যে ইসলামের বিধি-বিধান শক্তিশালী ও জারী হওয়ার দ্বারা সে দার দারুল ইসলাম হয়ে যাবে। আর কোন শর্তের প্রয়োজন হবে না। এমনিভাবে কুফরের বিধান শক্তিশালী ও জারী হওয়ার দ্বারা দারুল কুফর হয়ে যাবে। ওয়াল্লাহু আলাম।
ইমাম আবু হানীফা (রাহি)-এর মতের দলীল হচ্ছে, দারকে ইসলাম বা কুফরের দিকে নিসবত করার দ্বারা মূল ইসলাম ও মূল কুফর উদ্দেশ্য নয়; বরং উদ্দেশ্য হচ্ছে নিরাপত্তা ও ভয়। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, যদি কোন প্রকার বাধা-বিপত্তি ছাড়া এবং শর্তহীনভাবে নিরাপত্তা মুসলমানদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ভয় কাফিরদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে তা দারুল ইসলাম। আর যদি শর্তহীনভাবে নিরাপত্তা কাফিরদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ভয় ও শংকা মুসলমানদের জন্য হয়, তাহলে তা দারুল কুফর।” (বাদায়েউস সানায়ে’: ৯/৫১৯)
হিন্দুস্তানের অবস্থা
কুরআন ও হাদীসের বিচারে দারুল হারব ও দারুল ইসলামের যে মিসদাক ও বাস্তবক্ষেত্র বের হয়ে আসে তার আলোকেই সমকালীন উলামায়ে কিরাম নিজেদের দেশের বিষয়ে ফাতওয়া দিয়ে থাকেন এবং দেশের অধিবাসীদেরকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন। হিন্দুস্তানে মুসলমানদের বিশাল রাজত্বের উপর যখন কাফিরদের আধিপত্য ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল, তখন তা এ পর্যায়ে পৌঁছে গেল যে, শাসনের সিংহাসনে মুসলিম বাদশাহ অধিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও দেশের আসল অবস্থান হারিয়ে গেছে। আযান, জুমা, ঈদ ইত্যাদি চালু থাকা সত্ত্বেও এ দেশের শরয়ী পরিচয় ও সংজ্ঞা বদলে গেছে।
শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ) লিখেন-
“جب كافر كسي اسلامي ملك پر قابض هو جائيں اور اس ملك اور ملحقه اضلاع كے لئے يه نا ممكن هو كه وه ان كو اس سے باهر نكال سكيں يا ان كو باهر نكالنے كي كوئي اميد باقي نه رهے، اور كافروں كي طاقت ميں يهاں تك اضافه هو جائے كه وه اپني مرضي سے اسلامي قوانين كو جائز يا نا جائز قرار ديں، اور كوئي انسان اتنا طاقتور نه هو جو كافروں كي مرضي كے بغير ملك كي مال گزاري پر قبضه كر سكے، اور مسلمان باشندے اس امن امان سے زندگي بسر نه كر سكيں جيسا كه وه پهلے كرتے تھے، تو يه ملك سياسي اعتبار سے دار الحرب هو جائے گا”۔
نقش حيات: خود نوشته سوانح، حسين أحمد مدني رحمة الله عليه، مطبوعة دار الاشاعت، كراچي پاكستان 2/410-411، حاشيه نمبر-1
“যখন কাফির কোন ইসলামী দেশের উপর আধিপত্য বিস্তার করে ফেলে, আর ঐ দেশ এবং সংযুক্ত জেলাগুলোর জন্য এটা অসম্ভবপর হয়ে যায় যে, তারা তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দেবে অথবা তাদেরকে বের করার কোন আশা অবশিষ্ট না থাকে এবং কাফিরদের শক্তি এতটা বৃদ্ধি পায় যে, তারা নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী ইসলামী আইনগুলোকে বৈধ বা অবৈধ সাব্যস্ত করবে। আর কোন মানুষের এতটা শক্তি নেই যে, সে কাফিরদের ইচ্ছার বিপরীতে দেশের অর্থব্যবস্থার কিংবা রাজস্ব ব্যবস্থাপনার উপর হাত দেবে। মুসলমান এমন নিরাপত্তার সঙ্গে জীবন যাপন করতে সক্ষম নয় যেভাবে তারা আগে জীবন যাপন করত। তাহলে এ দেশ রাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী দারুল হারব হয়ে যাবে।” (নকশে হায়াত; শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানি রহ : ২/৪১০-৪১১)
শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ) অপর এক ফাতওয়ায় লিখেন-
“اور دار الحرب اسي وقت دار الاسلام هو جاتا هے كه اهل اسلام كے احكام اس ميں جاري هو جائيں، اور كافي ميں هے:
إن المراد بدار الإسلام بلاد يجري فيها حكم إمام المسلمين ويكون تحت قهره، وبدار الحرب بلاد يجري فيها أمر عظيمها وتكون تحت قهره.اھ
اس شهر ميں مسلمانوں كے امام كا حكم هرگز جاري نهيں، نصارى كے حكام كا حكم بے دغدغه جاري هے، اور احكام كفر كے جاري هونے سے يه مراد هے كه، مقدمات انتظام سلطنت اور بندوبست رعايا وتحصيل خراج اور باج وعشر اموال تجارت ميں حكام بطور خود حاكم هوں، اور ڈاكوؤں اور چوروں كي سزا ، اور رعايا كے باهمي معاملات اور جرموں كي سزا كے مقدمات ميں كفار كا حكم جاري هو، اگر چه بعض احكام اسلام مثلا جمعه عيدين اور اذان اور گاؤكشي ميں كفار تعرض نه كيں”۔
فتاوي عزيزي، ايچ ايم سعيد كمپني، پاكستان، طبع جديد سنه1404ھ، ص: 445-455
“আর দারুল হারব তখনই দারুল ইসলাম হয়ে যায় যখন আহলে ইসলামের বিধি-বিধান সেখানে জারী হয়ে যায়। আর ‘কাফী’ গ্রন্থে এসেছে-
إن المراد بدار الإسلام بلاد يجري فيها حكم إمام المسلمين ويكون تحت قهره، وبدار الحرب بلاد يجري فيها أمر عظيمها وتكون تحت قهره
‘দারুল ইসলাম দ্বারা ঐ এলাকা উদ্দেশ্য যেখানে মুসলমানদের ইমামের বিধান জারী হয় এবং সে শহর তার শাসনের অধীনে হয়। আর দারুল হারব দ্বারা ঐ এলাকা উদ্দেশ্য যে শহরগুলোতে তাদের অধিপতির বিধান চলে এবং তাদের শাসনের অধীনে থাকে।’
এ শহরে মুসলমানদের ইমামের বিধান একদম জারী নেই। নাসারা তথা খ্রিস্টান শাসকদের বিধান ও আধিপত্য জারী। আর কুফরী বিধান জারী হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, মামলা-মুকাদ্দামা, রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়মনীতি, জনগণের সামগ্রিক বন্দোবস্ত, কর আদায়, উশর ও ব্যবসার পণ্যের মাঝে শাসকবর্গ নিজেরাই কর্তা হয়। চোর-ডাকাতদের শাস্তি, জনগণের পারস্পরিক সকল লেনদেন ও অপরাধের শাস্তির মামলাগুলোর ক্ষেত্রে কাফিরদের বিধান জারী হয়। যদিও ইসলামের কিছু বিধান যেমন, জুমা, দুই ঈদ, আযান ও গরু জবাইতে কাফিররা বাধা না দেয়।” (ফাতোয়া আযীযী : ৪৪৫)
শাহ আব্দুল আযীয (রহ)-এর এ এবারতগুলোর উপর একটু দৃষ্টিপাত করুন-
۱۔ اس شهر ميں مسلمانوں كے امام كا حكم هرگز جاري نهيں، نصارى كے حكام كا حكم بے دغدغه جاري هے
“সেখানে মুসলমানদের ইমামের বিধান একদম জারী নেই। নাসারা তথা খ্রিস্টান শাসকদের বিধান ও আধিপত্য বাধাহীনভাবে জারী।”
শাহ সাহেব (রহ) বলছেন, বিধান চলছে নাসারাদের তথা খ্রিস্টানদের। আর ইতিহাস বলছে, তখন দিল্লীর শাহী মসনদে মোগল সম্রাট বাদশাহ শাহ আলম অধিষ্ঠিত ছিলেন, যার শাসন আমল ১৮০৬ সন পর্যন্ত ছিল। অথবা আকবার শাহ সানী শাহী মসনদে শোভা পাচ্ছিলেন, যার হুকুমত ১৮০৬ সন থেকে শুরু হয়। এ থেকে বোঝা যায়, মূর্তির মতো প্রাণহীন জড়পদার্থ সদৃশ মুসলিম বাদশাহ থাকার দ্বারা কোন দেশ দারুল ইসলাম হতে পারে না। আর যদি সেই মূর্তি সদৃশ শাসক নাসারাদের অর্থাৎ খ্রিস্টানদের ও কাফিরদের পক্ষপাতিত্ব করতে শুরু করে, নিজের বাদশাহীর গলায় জড়িয়ে রাখার জন্য মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফিরদের কার্যক্রমে শরীকও হয়ে যায়, তাহলে সে দেশ অমুসলিমদের হাতে তো আছেই; বরং আরো চিন্তার বিষয় হচ্ছে, সে বাদশাহর ঈমান এখনো আছে কিনা? ঘটনাপ্রবাহ যদি এতদূর পর্যন্ত গড়ায়, তাহলে বাদশাহ বাহ্যিকভাবে যে মুসলামন ছিল তাও আর থাকবে না।
মোটকথা, এমন মুসলমান বাদশাহের দ্বারা কোন দার দারুল ইসলাম থাকবে না। এ দার দারুল হারব হয়ে যাবে। মুহাদ্দিসে দেহলভীর বক্তব্য এটাই।
۲۔ اور جرموں كي سزا كے مقدمات ميں كفار كا حكم جاري هو، اگر چه بعض احكام اسلام مثلا جمعه عيدين اور اذان اور گاؤكشي ميں كفار تعرض نه كيں
“চোর ডাকাতদের শাস্তি, জনগণের পারস্পরিক সকল লেনদেন ও অপরাধের শাস্তির মামলাগুলোর ক্ষেত্রে কাফিরদের বিধান জারী হয়। যদিও ইসলামের কিছু বিধান যেমন, জুমা, দুই ঈদ, আযান ও গরু জবাইতে কাফিররা বাধা না দেয়।”
তাঁর এ দ্বিতীয় কথাটি নিয়েও একটু চিন্তা করে দেখুন, যদি কোন দেশে অপরাধের শাস্তির বিষয়গুলো গায়রে শরয়ী আইন অনুযায়ী চলে, অর্থাৎ দেশের আইনের বিভাগগুলো যদি কাফিরদের আইনের অধীনে হয় এবং শরয়ী আইনের অধীনে না হয়, তাহলে তা দারুল হারব। যদিও সেখানে সালাত আদায় করতে কোন বাধা না থাকে। জুমা ও ঈদ আদায় করতে কোন পেরেশানি না হয়। যদি আযানের মতো প্রকাশ্য ইসলামী নিদর্শনাবলীও বহাল তবিয়তে থাকে, এরপরও তা দারুল হারব; কেননা আধিপত্য কুফরের। কুফরী আইনের অধীনস্থতা রয়েছে। কুফর ও আহলে কুফরের অনুমতি নিয়ে ইসলামের কিছু বিধান আদায় হয়ে যাবে, কিন্তু এর দ্বারা কোন দেশ দারুল ইসলাম হবে না। দলীলের সিদ্ধান্ত এটাই।
এ বিষয়ে হিন্দুস্তানের আরেকজন আলোকিত আলিমের ফাতওয়াও দেখে নিন, যিনি নিজের চোখে সে দৃশ্য দেখেছেন যখন হিন্দুস্তান ধীরে ধীরে দারুল ইসলামের মর্যাদা হারিয়ে দারুল হারবে রূপান্তরিত হচ্ছিল। তিনি হচ্ছেন শায়খ আব্দুল হাই বুড়হানবী (রহ)।
শায়খ আব্দুল হাই বুড়হানবী (রহ) লিখেন-
“عيسائيوں كي پوري سلطنت كلكته سے لے كر دهلي اور هندوستان خاص سے ملحقه ممالك (يعني شمالي مغربي سرحدي صوبے)تك سب كے سب دار الحرب هے؛ كيوں كه كفر اور شرك هر جگه رواج پا چكا هے، اور همارے شرعي قوانين كي كوئي پرواه نهيں كي جاتي۔ اور جس ملك ميں ايسے حالات پيدا هو جائے وه دار الحرب هے۔ يهاں ان تمام شرائط كا بيان كرنا طوالت كا باعث هو گا جن كے ماتحت جمله فقها اس بات پر متفق هيں كه كلكته اور اس كے ملحقات دار الحرب هيں”۔
نقش حيات: خود نوشته سوانح، حسين أحمد مدني رحمة الله عليه، مطبوعه دار الاشاعت، كراچي پاكستان 2/410-411، حاشيه نمبر-1
“ নাসারাদের তথা খ্রিস্টানদের পুরো রাজ্য, কলিকাতা থেকে শুরু করে দিল্লি পর্যন্ত এবং হিন্দুস্তান বিশেষ করে যুক্তরাজ্যগুলো (অর্থৎ উত্তর-পশ্চিমের সীমান্ত প্রদেশগুলো) পর্যন্ত সবগুলোই দারুল হারব; কেননা কুফর ও শিরক সব জায়গায় চালু হয়ে গেছে এবং আমাদের শরয়ী আইনের কোন প্রকার তোয়াক্কা করা হয় না। আর যে দেশে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়ে যায়, তা দারুল হারব। যেসকল শর্তের আলোকে সকল ফুকাহায়ে কিরাম এ বিষয়ে একমত যে, কলিকাতা ও তার আশপাশের এলাকাগুলো দারুল হারব -এখানে সেসব শর্ত বিস্তারিত তুলে ধরতে গেলে দীর্ঘ সময় ও বিরক্তি সৃষ্টি করবে । ” (নকশে হায়াত; শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানি রহ : ২/৪১০-৪১১)
শায়খ বুড়হানবী (রহ)-এর এ কথার উপর আবার একটু চিন্তা করুন, উক্ত কথার ব্যাপারে বলা যায়, এর মাঝে যেন শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ)-এর কথাই পুনরায় উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, اور همارے شرعي قوانين كي كوئي پرواه نهيں كي جاتي۔ اور جس ملك ميں ايسے حالات پيدا هو جائے وه دار الحرب هے ‘এবং আমাদের শরয়ী আইনের কোন প্রকার তোয়াক্কা করা হয় না। আর যে দেশে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়ে যায় তা দারুল হারব।’ এখানেও কথা সেটাই যা এর আগে বলা হচ্ছিল। শায়খ আব্দুল হাই বুড়হানবী (রহ) হিন্দুস্তানকে দারুল হারব সাব্যস্ত করার জন্য যে ইল্লত ও কারণের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তা হচ্ছে, আমাদের শরয়ী কানুনের কোন প্রকার তোয়াক্কা করা হয় না।
মুহতারাম পাঠকবর্গের কাছে আমাদের নিবেদন, আপনারা এ বিষয়টি একটু ভালোভাবে বুঝে নিন, আমাদের আইন অর্থাৎ শরীয়তে ইসলামিয়ার আইন-কানুনের যেখানে কোন তোয়াক্কা নেই, ইসলামী আইনের যেখানে কোন মর্যাদা নেই, সে দেশ কখনো দারুল ইসলাম হতে পারে না। সে দেশ অবশ্যই দারুল হারব। মুজতাহিদ ইমামগণ একথাই বলেছেন। হিন্দুস্তানের অবস্থা যারা নিজ চোখে দেখেছেন সেসকল উলামায়ে কিরামও একথাই বলেছেন। আর সে ভিত্তিতেই ভারত উপমহাদেশকে দারুল হারব সাব্যস্ত করা হয়েছে।
মোটকথা, এ সর্বস্বীকৃত মূলনীতি ও ফাতওয়ার আলোকে এ দেশ দারুল হারব হয়েছে এবং দারুল হারব হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করেই উলামায়ে ইসলামের নেতৃত্বে কাফিরদের বিরুদ্ধে মুসলামানরা লড়াই করতে থাকেন। এর উপর ভিত্তি করেই উলামায়ে কিরাম ও সাধারণ মুসলমানরা আল্লাহর রাস্তায় শহীদ ও গাজী হওয়ার বরকতময় মর্যাদা লাভ করতে থাকেন। এর উপর ভিত্তি করেই হিজরতের আমল চলতে থাকে এবং এ সুন্নাত আবার যিন্দা হয়। এর উপর ভিত্তি করেই জিহাদের জন্য সকল প্রকারের প্রস্তুতি চলতে থাকে। এ কারণেই আমাদের মাশায়িখ ও আকাবিরের খানকাহগুলো একেকটি দুর্গে পরিণত হয়। এর উপর ভিত্তি করেই কাদিয়ানীদের মত যিন্দীক এবং অন্যান্য বিদা’আতী ফিরকাগুলোর সঙ্গে আমাদের মতভেদ চলতে থাকে। এর উপর ভিত্তি করেই আকাবির ও মাশায়িখগণ আমাদেরকে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর শিক্ষা ও দীক্ষা দিতে থাকেন।
ভারত উপমহাদেশ এখনো কেন দারুল হারব?
যে দু’টি মৌলিক কারণে ভারত উপমহাদেশ প্রায় দুইশত বছর আগে দারুল হারব ও দারুল কুফর হয়েছিল, এখনো সেই কারণেই ভারত উপমহাদেশ দারুল হারব ও দারুল কুফর। ভারত উপমহাদেশের উপর কাফিরদের আধিপত্য আজো শতভাগ প্রতিষ্ঠিত। আইনি প্রতিষ্ঠানগুলো ও আইনি বিভাগগুলো শতভাগ গায়রে শরয়ী ও কুফরী আইনের অধীনে পরিচালিত। শরয়ী আইনের কোথাও কোন প্রকার তোয়াক্কা করা হয় না। ভারত উপমহাদেশের ভূখণ্ডগুলোর নাম চাই ভারত হোক, বা বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তান।
ভারত
যদি এ দেশের নাম ভারত হয়, তাহলে কিতাবের প্রতিটি কথা এ দেশের ক্ষেত্রে খুবই স্পষ্ট। দারুল হারবের প্রতিটি শর্ত সেখানে খুব স্পষ্টভাবে প্রযোজ্য। তার শাসক প্রকাশ্য কাফির, যার ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। তার প্রতিটি আইনি প্রতিষ্ঠান ও আইনের প্রতিটি বিভাগ শতভাগ গায়রে শরয়ী ও কুফরী আইনের অধীনে পরিচালিত। সে দেশের কোথাও শরয়ী আইনের কোন তোয়াক্কা করা হয় না। অতএব সে দেশ কিতাব ও সুন্নাহের আলোকে দারুল হারব ও দারুল কুফর। যা কোন মুসলমানের কাছেই অস্পষ্ট নয় এবং অস্পষ্ট থাকার কোন সুযোগও নেই।
বাংলাদেশ
আর যদি সে ভূখণ্ডের নাম বাংলাদেশ হয়, তাহলে দারুল হারব হওয়ার দু’টি মৌলিক কারণ তার মাঝে খুব স্পষ্টভাবে বিদ্যমান রয়েছে। এ দেশের উপর কাফিরদের আধিপত্য শতভাগ প্রতিষ্ঠিত। এ দেশের আইনের প্রতিষ্ঠান ও বিভাগগুলো শতভাগ গায়রে শরয়ী ও কুফরী আইনের অধীনে পরিচালিত। এ দেশে শরয়ী আইনের কোথাও কোন তোয়াক্কা নেই। অতএব এ দেশ কিতাব ও সুন্নাহর আলোকে সুনিশ্চিতভাবে দারুল হারব ও দারুল কুফর।
এক দিক থেকে ভারত ও বাংলাদেশের মাঝে সামান্য ফারাক আছে। তা হচ্ছে, ভারতের শাসক নিজেকে অমুসলিম বলে, কিন্তু বাংলাদেশের শাসক নিজেকে মুসলমান হিসাবে প্রকাশ করে। বাংলাদেশের শাসকদের দাবি, তারা মুসলমান। তারা জনসাধারণকে এ কথা বোঝাতে চায় যে, তারা শুধু মুসলমানই নয়; বরং তারা ইসলামের কল্যাণকামী, একনিষ্ঠ খাদিম।
এ বিষয়ে আমি দু’টি কথা নিবেদন করতে চাই, প্রথম কথা হচ্ছে, যখন কোন শাসক নিজেকে মুসলমান হিসাবে প্রকাশ করে, কিন্তু সে দেশের মধ্যে কুফরী আইন ও গায়রে শরয়ী কানুন প্রয়োগ করে এবং তার প্রচলন ঘটায়, শরয়ী আইনের বিপরীতে গায়রে শরয়ী আইনকে প্রাধান্য দেয়, তাহলে এমন শাসক ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যায়। বাংলাদেশের শাসকের ক্ষেত্রেও এ বিধান প্রযোজ্য। কেননা বাংলাদেশের শাসক শরয়ী বিধানের পরিবর্তে গায়রে শরয়ী কানুনকে প্রাধান্য দেয়। সকল মুসলমানকে গায়রে শরয়ী আইনের উপর চলতে বাধ্য করে, শরয়ী আইনের উপর চলা এবং শরয়ী বিধান বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করাকে সংবিধান পরিপন্থি মনে করে এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করে।
দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, যদি ধরেও নেয়া হয় যে, বাংলাদেশের শাসক মুসলমান, এরপরও এ দেশ দারুল হারবই হবে। কেননা, এ শাসক হয়তো একান্ত বাধ্য। আর বাধ্য হওয়ার কারণে সে নিজেও গায়রে শরয়ী আইনের উপর চলে এবং কোটি কোটি মুসলমানকে গায়রে শরয়ী আইনের অধীনে চলতে বাধ্য করে। আর যে শাসকের এ অবস্থা সে একজন অস্তিত্বহীন শাসক। যার ফলাফল হচ্ছে, এ দেশের উপর কুফরের আধিপত্য শতভাগ। সুতরাং কুফরের আধিপত্য শতভাগ এবং আইন কানুন শতভাগ গায়রে শরয়ী হওয়ার পর একটি দেশ দারুল হারব না হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই এবং দারুল ইসলাম হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
অথবা এ শাসক একান্ত বাধ্য নয়। যদি একান্ত বাধ্য না হয়, তাহলে তারা স্বাধীন। আর স্বাধীন হওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে যে নিজেই গায়রে শরয়ী কানুনকে নিজের জন্য কানুন হিসাবে গ্রহণ করে এবং কোটি কোটি মুসলমানকে সে গায়রে শরয়ী আইনের অধীনে চলতে বাধ্য করে, সে ব্যক্তি সকল উলামায়ে কিরামের ঐক্যমতে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। আর যখন শাসক ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে এবং আইন কানুনও গায়রে শরয়ী হবে তখন এ দার ও এ দেশ দারুল হারব না হওয়ার কোন সুরত নেই।
দারুল হারব হওয়ার এ মৌলিক বিষয়গুলো উপস্থিত থাকা অবস্থায় আরো হাজারো সুরত বের হতে পারে, কিন্তু সে দেশ দারুল হারব হওয়া থেকে বের হতে পারবে না। অতএব বাংলাদেশ দারুল হারব হওয়ার বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
পাকিস্তান
আর যদি সে দেশের নাম হয় পাকিস্তান, তাহলে দারুল হারব হওয়ার মৌলিক দু’টি কারণ সে দেশেও স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। বাস্তবিকভাবে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা ও আইন প্রণয়নের মূলনীতির মাঝে কোন পার্থক্য নেই। যতটুকু পার্থক্য আছে তা আমরা একটু পর বলছি। পাকিস্তানের শাসকদের ঈমানের অবস্থা কি? তা বোঝার জন্য আপনি বাংলাদেশের শাসকদের অবস্থার উপর আবার নযর বুলিয়ে নিন। আপনি পাকিস্তানের শাসকদের হালাত অধ্যয়ন করলে আপনার সামনে এ বাস্তবতা খুব স্পষ্টভাবে উঠে আসবে যে, পাকিস্তানের সূচনাপর্ব থেকে আজকালের পারভেজ-নাওয়াজ-ইমরান-শাহবাজ পর্যন্ত কোন শাসক, কোন প্রেসিডেন্ট এবং কোন প্রধানমন্ত্রীই সে দেশের আইন প্রণয়নের জন্য শরীয়তের আইনকে জরুরি মনে করেনি এবং কোন শাসকই শরয়ী আইন-কানুনকে কুফরী আইন-কানুনের উপর প্রাধান্য দেয়নি।
আপনি যদি ইতিহাসের পাতাগুলো উল্টে দেখার জন্য সামান্য হিম্মত করেন, তাহলে দেখতে পাবেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রত্যেক শাসক কুরআন ও হাদীসের শরয়ী আইনের বিপরীতে মানবরচিত আইন ও বৃটিশদের আইনকেই প্রাধান্য দিয়েছে। শরয়ী আইনের বিপরীতে গায়রে শরয়ী আইন-কানুনকেই পাকিস্তানের কোটি কোটি মুসলমানের জন্য বেশি উপকারী মনে করেছে।
আজকের এ পাকিস্তান যখন প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সেখানে শরয়ী আইন বাস্তবায়ন হয়নি। বর্তমানেও মানবরচিত কুফরী আইনই তার পূর্ণ শক্তি ও জৌলুস নিয়ে প্রয়োগ হয়ে চলছে। পূর্ণ সামর্থ্য ও জোশের সঙ্গেই কার্যকর হচ্ছে। এটা কেন হয়েছে? এবং কীভাবে হয়েছে? হয়ত আপনি বলবেন, পাকিস্তানের শাসকরা একান্ত বাধ্য ছিল এবং এখনও একান্ত বাধ্য। অথবা বলবেন, তারা স্বাধীন। আপনি যা-ই বলবেন ফলাফল তাই বের হবে, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই মাত্র দেখে এসেছেন।
এ পর্যায়ে আমি আপনাদেরকে আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ভারত উপমহাদেশকে যখন দারুল হারব সাব্যস্ত করে এখানে জিহাদ ফরয হওয়ার ফাতওয়া দেয়া হচ্ছিল তখন এ দেশের শাসন ক্ষমতায় মুসলিম বাদশাহ শোভা পাচ্ছিল। এরপরও তা দারুল হারব হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল। কারণ এটাই ছিল যে, আধিপত্য কুফরের ছিল এবং আইন-কানুন কুফরী ও গায়রে শরয়ী ছিল।
অতএব যদি ধরে নেয়া হয় যে, পাকিস্তানের বর্তমান শাসকবর্গ একান্ত বাধ্য, তাহলে তারা অস্তিত্বহীন হওয়ার কারণে এবং সেখানে আধিপত্য শতভাগ কুফরের হওয়ার কারণে তা দারুল হারব। আর যদি তারা সেসব বিষয় (শরয়ী ও গায়রে শরয়ী আইন-কানুন প্রয়োগ) প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে স্বাধীন হয়, তাহলে তারা ইসলামের গণ্ডি থেকে বাইরে চলে গেছে। অতএব পাকিস্তানের শাসকবর্গও যখন ইসলামের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে গেছে এবং আইন-কানুনও গায়রে শরয়ী, তখন এই দার অবশ্যই দারুল হারব, এর মাঝে তৃতীয় কোন সুরত নেই।
দারুল হারব হওয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তান-বাংলাদেশের পার্থক্য
মুজতাহিদ ফকীহগণ যেকোন দেশ দারুল হারব হওয়ার জন্য কুরআন সুন্নাহ থেকে যে মৌলিক দু’টি শর্ত উদ্ঘাটন করেছেন, সে দু’টি শর্ত বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সমানভাবে পাওয়া যায়। পার্থক্য শুধু এতটুকু, পাকিস্তানের সংবিধানের ভূমিকায় এমন কিছু কথা রয়েছে যা বাংলাদেশের সংবিধানের ভূমিকায় নেই। ভূমিকার সে কথাগুলোর বিশ্লেষণে যাওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তবে একান্ত প্রয়োজনীয় কিছু কথা উপস্থাপন করব ইনশাআল্লাহ। যাতে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, পাকিস্তানের সংবিধানের ভূমিকাতে বাংলাদেশের সংবিধানের ভূমিকার চাইতে অতিরিক্ত যে কথাগুলো আছে, সে অতিরিক্ত কথাগুলোর কারণে কোন দেশ দারুল ইসলাম হতে পারে না। এমনকি সে কথাগুলোর দ্বারা পাকিস্তানকে দারুল ইসলাম বানানো সে দেশের শাসকবর্গের উদ্দেশ্যও নয়।
এখানে উপরের বক্তব্যে আমরা ছোট্ট দু’টি দাবি করেছি।
প্রথম দাবি হচ্ছে, পাকিস্তানি সংবিধানের ভূমিকায় বাংলাদেশি সংবিধানের চাইতে ভিন্ন ও অতিরিক্ত যে কথাগুলো আছে, সে কথাগুলোর দ্বারা পাকিস্তান দারুল ইসলাম হওয়া সম্ভবপর নয়।
আর দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে, সে কথাগুলোর দ্বারা পাকিস্তানকে দারুল ইসলাম বানানো পাকিস্তানের শাসকবর্গের উদ্দেশ্যও নয়।
আমাদের এ দু’টি দাবি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা এ নিবন্ধে একটু কঠিন হবে। কথা অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে। তাই সংক্ষিপ্তভাবে দু’চারটি কথা তুলে ধরছি-
১. পাকিস্তানি সংবিধানের ভূমিকায় উল্লিখিত সে কথাগুলোর মাঝে এ বিষয়ের ঘোষণা নেই যে, পাকিস্তানের আইন প্রতিষ্ঠান ও আইন বিভাগগুলো কুরআন ও হাদীসের অধীনে চলবে।
২. সে কথাগুলোর মাঝে এ বিষয়ের ঘোষণা নেই যে, পাকিস্তানের আদালত শরয়ী আইনের অধীনে পরিচালিত হবে।
৩. পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত পাকিস্তানে এক দিনের জন্যও শরয়ী বিধান প্রয়োগ হয়নি।
৪. পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্তও মুসলমানদের পক্ষ থেকে শরয়ী বিধান চালু করার জন্য আন্দোলন ও দাবি চলমান রয়েছে। যার ফলে বারবারই এ বাস্তবতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, পাকিস্তানের আদালত এবং পাকিস্তানের আইন-কানুন শরয়ী আইন-কানুন নয়। সে দেশের আদালতে কুরআন হাদীসের অধীনস্থতা নেই।
৫. পাকিস্তানের সূচনা লগ্নের শাসকরা শরয়ী বিধানকে দেশের আইন হিসাবে গ্রহণ করেনি। পাকিস্তানের আকাবির উলামায়ে কিরামের মধ্য থেকে শায়খ শাব্বির আহমদ উসমানী (রহ) থেকে শুরু করে পাকিস্তানের সকল আকাবির উলামায়ে কিরাম পাকিস্তানে শরয়ী আইনকে দেশের আইনী মর্যাদা দেয়ার জন্য ধারাবাহিক দাবি করতে থাকেন। আর শাসকদের পক্ষ থেকে কথা ও কাজে তা অস্বীকার করাও ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে।
এ বিষয়গুলো এ কথার স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে যে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মাঝে শরয়ী অবস্থানের দিক থেকে কোন ব্যবধান নেই। কোন একটি দেশ দারুল হারব হওয়ার জন্য যেসব গুণাবলী থাকা জরুরি তার সবগুলোই পাকিস্তানে উপস্থিত আছে।
সুতরাং দলীলের আলোকে এ কথা একেবারেই স্পষ্ট যে, যেসব কারণে দুইশত বছর আগে ভারত উপমহাদেশ দারুল হারব হয়েছিল, সেসব কারণেই এ দেশ এখনো দারুল হারব। চাই তার নাম ভারত হোক, অথবা বাংলাদেশ বা পাকিস্তান। এ দেশ অর্থাৎ ভারত উপমহাদেশ (ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান) দারুল হারব হওয়ার পর তা দারুল ইসলাম হওয়ার কোন পর্ব তার উপর দিয়ে পার হয়নি। কোন একটি দারুল হারব দারুল ইসলামে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য যেসব কিছুর প্রয়োজন ছিল তা এ ভূখণ্ডের কিসমতে জোটেনি।
এখন আমরা সেসব পর্বের সংক্ষিপ্ত উপাখ্যান আপনাদের সামনে তুলে ধরতে যাচ্ছি, ভারত উপমহাদেশ বিগত দুইশত বছর যাবত যে পর্বগুলো অতিক্রম করে চলেছে, কিন্তু দারুল ইসলামে রূপান্তরিত হওয়ার মত কোন পর্ব কখনো আসেনি। হাজারো পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু দারুল ইসলাম হওয়ার জন্য যে পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল, তা এ ভূখণ্ডের কিসমতে জোটেনি। পরবর্তী পৃষ্ঠাগুলোতে সে কাহিনীই আমরা সংক্ষেপে তুলে ধরব। আল্লাহ তাওফীক দান করুন। (চলমান)
ভারত উপমহাদেশের শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই কেন ওয়াজিব? (তৃতীয় পর্ব-১ম ভাগ)
ভারত উপমহাদেশের শাসকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা কেন ওয়াজিব?[তৃতীয় পর্ব-২য় ভাগ]
ভারত উপমহাদেশের শাসকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা কেন ওয়াজিব? ৪র্থ পর্ব (শেষ পর্ব)