জুয়া না ধরে তাস খেলা
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
প্রশ্ন:
জুয়া না ধরে তাস খেলা কি জায়েয?
বায়েজিদ
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রিয় ভাই! অহেতুক কাজ পরিহার করা প্রকৃত মুমিনের নিদর্শন। প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য হল, যেসব কাজে দুনিয়া ও আখেরাতের কোনো ফায়দা নেই এবং যেসব কাজ জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করে, সেসব কাজ থেকে বিরত থাকা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা সফলকাম মুমিনদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে ইরশাদ করেন,
وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ. -سورة الحج: 3
‘এবং যারা অহেতুক বিষয় থেকে বিরত থাকে।’ –সূরা হজ (২২): ৩
আরো ইরশাদ করেন,
وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا. -سورة الفرقان: 72
“এবং (রহমানের বান্দা তারা) যারা অন্যায় কাজে শামিল হয় না এবং যখন কোনো অনর্থ কার্যকলাপের নিকট দিয়ে অতিক্রম করে, তখন আত্মসম্মান বাঁচিয়ে চলে যায়।” –সূরা ফুরকান (২৫): ৭২
হাদিস শরিফে এসেছে,
إن من حسن إسلام المرء تركه ما لا يعنيه -سنن الترمذي: 2318
“একজন মানুষের ইসলামী সৌন্দর্য হল, অনর্থক বিষয় পরিত্যাগ করা।” –সুনানে তিরমিযি : ২৩১৮
খেলাধুলার বিষয়ে হাদিস শরিফে এসেছে,
كل ما يلهو به الرجل المسلم باطل، إلا رميه بقوسه، وتأديبه فرسه، وملاعبته أهله، فإنهن من الحق. -سنن الترمذي: 1637
“মুসলিম ব্যক্তি যে খেলাধুলা করে, সবই বাতিল। তবে ধনুক দিয়ে তীরন্দাজি করা, ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং স্ত্রীর সাথে ক্রীড়া-কৌতুক করা, এগুলো ন্যায়সঙ্গত।” –সুনানে তিরমিযি : ১৬৩৭
উল্লিখিত হাদিসে বর্ণিত তিন প্রকার খেলাধুলা ছাড়াও আরো কিছু খেলাধুলার কথা বিভিন্ন হাদিসে এসেছে। যেমন দৌড় প্রতিযোগিতা, কুস্তি, ঘোড়দৌড়, সাঁতার ইত্যাদি। সবগুলোই শরীরচর্চা ও জিহাদের কাজে সহায়ক বা জিহাদের প্রশিক্ষণ বলা যায়। এছাড়াও বর্তমানে অনেক খেলাধুলা রয়েছে, যেগুলোতে শরীরিক ব্যায়াম হয়, শরীর মজবুত হয় যেমন ফুটবল, হাডুডু ইত্যাদি। কেউ যদি জিহাদ ও শরীর চর্চার উদ্দেশ্যে বাজি ধরা ও সময়ের অপচয় ছাড়া ফুটবল, হাডুডু ইত্যাদি খেলে এবং খেলার জন্য সতর খোলা বা নামায ত্যাগ করার মতো নাজায়েয কোনো কাজ না করে, তবে তাও জায়েয হবে। কিন্তু তাস, লুডু, পাশা, দাবা, ক্যারাম ইত্যাদি খেলাতে এধরনের কোনো ফায়দা নেই। হাদিস শরিফে এসেছে,
من لعب بالنردشير، فكأنما صبغ يده في لحم خنزير ودمه -صحيح مسلم: 2260
“যে ব্যক্তি পাশা বা দাবা খেলল, সে যেন তার হাত শুকরের রক্ত-মাংসে রঞ্জিত করল।” –সহিহ মুসলিম : ২২৬০
আবু মূসা আশআরী রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে,
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: من لعب بالنرد فقد عصى الله ورسوله. -سنن ابي داود: 4938
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি পাশা বা দাবা খেলল, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করল’।” –সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৩৮; মুআত্তা মুহাম্মাদ : ৯০৫
ইমাম মুহাম্মাদ রাহিমাহুল্লাহ (১৮৯ হি.) হাদিসটি বর্ণনা করার পর বলেন,
لا خير باللعب كلها من النرد، والشطرنج، وغير ذلك.
“পাশা, শাতরাঞ্জ (দাবা) ইত্যাদির মতো কোনো খেলাতেই কোনো কল্যাণ নেই।” -মুআত্তা মুহাম্মাদ : ৯০৫
এসব হাদিস সামনে রেখে চারো মাযহাবের উলামাগণ পাশা খেলা হারাম বলেছেন। -দেখুন: আততা’লিকুল মুমাজ্জাদ: ৩/৪২৩, দারুল কলম, দিমাশক।
তাস, দাবা-পাশার মতোই একটি খেলা। অনর্থক ও সময় বিনষ্টকারী এবং আল্লাহ থেকে গাফেলকারী খেলা। এতে দুনিয়া ও আখেরাতের কোনো ফায়দা নেই। অতএব দাবা পাশার মতো তাস খেলাও না জায়েয; যদিও তাতে বাজি না ধরা হয়। আরো দেখুন: ফতোয়া দারুল উলুম দেওবন্দ: ১৬/২৭৫, মাকতাবা দারুল উলুম দেওবন্দ; বাদায়েউস সানায়ে, কাসানি: ৫/৩০৫-৩০৬; আত-তালীকুল মুমাজ্জাদ, আব্দুল হাই লাখনৌভি: ৩/৪২২-৪২৩
فقط، والله سبحانه وتعالى أعلم
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলামহদি (উফিয়া আনহু)
২০ শে শাওয়াল, ১৪৪১ হি.
১৫ ই জুন, ২০২০ ইং
আরো পড়ূন
লুডু খেলার হুকুম কী?