ফিতনাহ বিষয়ক একটি হাদীসের ব্যাখ্যা
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্নঃ
সহীহ বুখারীর একটি হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, তিনি যত হাদীস জানতেন, তার একটি অংশ প্রকাশ করেছেন, অপর অংশ জীবনের আশঙ্কায় প্রকাশ করতে পারেননি। আমার প্রশ্ন হলো, সেই অপ্রকাশিত হাদীসগুলো কি পরে কেউ জানতে পেরেছিলেন? ইদানিং একজন বাং
লাভাষী শায়খ, যিনি ফিতান বিষয়ে গবেষণা করেন, তিনি দাবি করছেন, উক্ত হাদীসগুলো নাকি তাঁর জানা আছে। এই বিষয়টিকে ঘিরে চারদিকে অনেক সুযোগ সন্ধানী আলোচনা চলছে, যা পরিবেশকে বেশ ঘোলাটে করে তুলছে। এ বিষয়ে আপনার সংশয় নিরসনমূলক বক্তব্য চাচ্ছি। অনুগ্রহ করে জানাবেন।
-ওসামা বিন কাসিম
উত্তরঃ
আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহুর উক্ত বক্তব্যটি সহীহ বুখারীতে নিম্নোক্ত শব্দে বর্ণিত হয়েছে,
عن أبي هريرة قال حفظت من رسول الله ﷺ وعاءين: فأما أحدهما فبثثته، وأما الآخر فلو بثثته قطع هذا البلعوم.
‘আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে দুই থলি (হাদীস) সংরক্ষণ করেছি; তা থেকে একটি আমি প্রচার করেছি, অপরটি প্রকাশ করলে আমার খাদ্যনালী কেটে দেওয়া হবে’। -সহীহ বুখারী, পৃ: ২২০, হাদীস নং: ১২০, মুআসসাসাতুর রিসালাহ নাশেরুন।
আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু যে হাদীসগুলো প্রকাশ করেননি, সেগুলো শরীয়তের আহকাম সম্বলিত কোনও হাদীস ছিলো না, যা সংরক্ষিত না হলে দীনের কোনও অংশ ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে; বরং সেগুলো ছিলো বিভিন্ন সময়ের অত্যাচারী শাসকদের নাম ও যুগ ইত্যাদি সম্পর্কীয়। যেমনটি উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহিমাহুল্লাহ (৮৫২ হি.) বলছেন,
وحمل العلماء الوعاء الذي لم يبثه على الأحاديث التي فيها تبيين أسامي أمراء السوء وأحوالهم وزمنهم، وقد كان أبو هريرة يكني عن بعضه ولا يصرح به خوفاً على نفسه منهم، كقوله: أعوذ بالله من رأس الستين وإمارة الصبيان، يشير إلى خلافة يزيد بن معاوية لأنها كانت سنة ستين من الهجرة.
‘যে থলে প্রকাশ করা হয়নি; উলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে এখানে ওই সকল হাদীস উদ্দেশ্য, যাতে মন্দ আমীর-উমারাদের নাম, তাদের বিবরণ ও তাদের যুগের বর্ণনা রয়েছে। আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু সে সকল আমীর-উমারার পক্ষ থেকে নিজের অনিষ্টের আশঙ্কায় সেগুলো স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত না করলেও ইশারা-ইঙ্গিতে বলতেন। যেমন তিনি বলতেন, ৬০ হিজরীর প্রারম্ভ ও ছেলে-ছোকরাদের ইমারত থেকে আল্লাহর পানাহ চাই। এটি বলে তিনি ইয়াযিদ ইবনে মুআবিয়ার খিলাফতের দিকে ইঙ্গিত করতেন। কেননা তা ৬০ হিজরীতেই ছিলো’। -ফাতহুল বারী, ১/৪৫৪, আররিসালাতুল আলামিইয়া।
বুঝা গেল, দ্বিতীয় প্রকার হাদীসগুলো আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু যদিও স্পষ্ট ভাষায় বলতেন না, কিন্তু ইশারা-ইঙ্গিতে কিছু প্রকাশ করতেন। এছাড়া অন্যান্য সাহাবী থেকেও ফিতনা বিষয়ক বিভিন্ন হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর আলোকে কেউ কেউ হয়তো আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহুর দ্বিতীয় প্রকারের হাদীসগুলোর ব্যাপারে কিছুটা অনুমান করতে পারেন। কিন্তু নিশ্চিতভাবে এ দাবি করা যে, আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহুর অপ্রকাশিত হাদীসগুলো আমার জানা আছে; আমাদের জানা মতে এমন দাবি পূর্বের কোনও নির্ভরযোগ্য আলেম করেননি এবং এমনটি দাবি করার সুযোগ আছে বলেও মনে হয় না।
والله أعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
২৪-১২-১৪৪৪ হি.
১৩-০৭-২০২৩ ঈ.