উম্মাহর ঐক্যকিতাব-রিসালাহপ্রবন্ধ-নিবন্ধ

উলামায়ে কেরামের সঙ্গে মুজাহিদদের সম্পর্ক উন্নয়ন-১

উলামায়ে কেরামের সঙ্গে মুজাহিদদের সম্পর্ক উন্নয়ন-১

মুফতি আবু মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ আলমাহদি (হাফিযাহুল্লাহ)

ফাতওয়া

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

 

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله وحده والصلاة والسلام على من لا نبي بعده

ইসলামে আলেমদের শান ও মর্যাদা কত সুউচ্চ, এ সম্পর্কে মোটামুটি আমাদের সকলের ধারণা আছে। কুরআন ‍সুন্নাহতে তাঁদের অনেক অনেক মর্যাদার কথা আলোচিত হয়েছে।

ইরশাদ হচ্ছে,

{قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ} [الزمر: 9]

“বলো, যে ব্যক্তি জানে আর যে জানে না উভয়ে কি সমান?” সূরা যুমার ৩৯:০৯

আরও ইরশাদ হচ্ছে,

{يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ} [المجادلة: 11]

“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম দেয়া হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় অনেক উচ্চ করবেন।” সূরা মুজাদালাহ ৫৮:১১

হাদীসে এসেছে,

“مَنْ سلَكَ طريقاً يَطلُبُ فيه علماً سَلَكَ الله عزّ وجلّ به طريقاً من طُرُقِ الجنة، وإنَّ الملائكةَ لتَضَعُ أجنحتَها رضاً لطالبِ العلم، وإنَّ العالم ليستغفِرُ لهُ مَن في السَّماواتِ ومَن في الأرضِ والحيتانُ في جوف الماء، وإن فضلَ العالمِ على العابِدِ كفضل القَمَرِ ليلةَ البدرِ على سائر الكواكِبِ، وإنَّ العلماءَ ورثةُ الأنبياء، وإن الأنبياءَ لم يُورِّثُوا ديناراً ولا دِرْهماً، ورَّثُوا العِلْمَ، فمن أخَذَه أخَذَ بحظٍّ وافِرٍ” – سنن أبي داود ت الأرنؤوط (5/ 485)، قال المحقق شعيب الأرنؤوط رحمه الله: حسن بشواهده.

“যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের পথে পরিচালিত করেন। ফেরেশতারা তালিবুল ইলমের সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। আলেমের জন্য আসমান ও জমিনের সবকিছু আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। এমনকি পানির মাছও তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। একজন আবেদের উপর একজন আলেমের মর্যাদা তারকারাজির মাঝে পূর্ণিমার চাঁদের মতো। আলেমরা হলেন নবীদের ওয়ারিস। আর নবীগণ মীরাসরূপে দিনার দিরহাম রেখে যান না। তাঁরা মীরাসরূপে ইলমই রেখে যান। অতএব, যে এই ইলম প্রাপ্ত হলো, সে (নবীদের রেখে যাওয়া মীরাস থেকে) বিপুল অংশই যেন প্রাপ্ত হলো।” –সুনানে আবু দাউদ, ৩৬৪১

সালফে সালেহীনের যাঁরাই এই দীনের ধারক বাহক ছিলেন এবং দীনের কাজ করেছেন, তাঁরা সকলেই উলামায়ে কেরামের এই মর্যাদার যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন।

হাসান বসরি রহিমাহুল্লাহ বলেন,

عَنِ الْحَسَنِ قَالَ: كَانُوا يَقُولُونَ: «مَوْتُ الْعَالِمِ ثُلْمَةٌ فِي الْإِسْلَامِ لَا يَسُدُّهَا شَيْءٌ مَا اخْتَلَفَ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ. –سنن الدارمي: 333

“সালাফে সালেহীন বলতেন, একজন আলেমের মৃত্যুতে ইসলামে এমন শূন্যতা তৈরি হয়, যা কোনও কিছুই পূরণ করতে পারে না; দিন রাত যতই অতিক্রম হোক না কেন।” –সুনানে দারেমি: ৩৩৩

ইমাম আওযাই রহিমাহুল্লাহ বলেন,

الناس عندنا أهل العلم، ومن سواهم فلا شيء. -سورة الحجرات دراشة تحليليه وموضوعيه: 127

“আমাদের কাছে প্রকৃত মানুষ তো আলেমরাই। অন্যরা কিছুই না।”

সুফিয়ান সাওরি রহিমাহুল্লাহ বলেন,

لو أن فقيها على رأس جبل لكان هو الجماعة. -سورة الحجرات دراشة تحليليه وموضوعيه: 127

“একজন ফকীহ একাকী কোনো পাহাড়ের চূড়ায় থাকলেও বাস্তবে তিনি একটি কাফেলার সমতুল্য।”

মূলত শরীয়তের রক্ষণাবেক্ষণ এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে শরীয়তের প্রতিনিধিত্ব করার মতো গুরু দায়িত্বের কারণেই তাঁদের এই মর্যাদা।

হাদীসের ভাষায় আহলে হক উলামায়ে কেরামের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে,

يحمل هذا العلم من كل خلف عدوله ينفون عنه تحريف الغالين وانتحال المبطلين وتأويل الجاهلين –شرح مشكل الآثار للطحاوى، رقم: 3884، تحقيق: شعيب الأرنؤوط، الناشر: مؤسسة الرسالة“

“প্রত্যেক পরবর্তী প্রজন্মের আদেল ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিবর্গ এই ইলমের ধারক-বাহক হবেন; যারা সীমালঙ্ঘনকারীদের বিকৃতি, বাতিল লোকদের মিথ্যারোপ এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে এই ইলমকে রক্ষা করবেন।” -শরহু মুশকিলিল আসার লিত-তহাবি : ৩২৬৯

হাফেয ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ (৮৫২ হি.) বলেন,

الوارث قائم مقام الموروث فله حكمه فيما قام مقامه فيه -فتح الباري ج: 1، ص: 160؛ ط. دار المعرفة – بيروت

“যিনি মীরাস রেখে গেছেন উত্তরাধিকারী ব্যক্তি তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে থাকেন। তিনি যে বিষয়ে তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন, সে বিষয়ে তার হুকুম ও বিধান তা-ই যে হুকুম ও বিধান মূল ব্যক্তির ছিল।” –ফাতহুল বারী: ১/১৬০

একারণেই হকপন্থী উলামায়ে কেরামের অবমূল্যায়ন ও অসম্মান, শরীয়তের অবমূল্যায়ন হিসেবে গণ্য। ফলে অনেক ক্ষেত্রে উলামায়ে কেরামের অমর্যাদা ও অপমানকে ফুকাহায়ে কেরাম কুফর আখ্যায়িত করেছেন, যার অনেক উদাহরণ ফিকহের কিতাবে বিদ্যমান।

ইমামুল মুজাহিদীন শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ বলেন,

ومن هنا تأتي خطورة النيل منهم والتنقيص من قدرهم؛ لما في ذلك من الطعن في العلم الذي يحملونه، والحق الذي يدعون إليه هو ميراث النبوة، والطعن فيه طعن في الإسلام ذاته، كما أن الطعن في العلماء مقدمة لتحطيم مصداقيتهم، وإفراغ الأمة من القيادات الشرعية والموجهة، وما سيترتب على ذلك من تصدر الجهال وسيادتهم في الأمة وإفتائهم للناس بغير علم وضلالهم وإضلالهم بذلك. ولهذا حذر أهل العلم من الطعن في العلماء شديد التحذير، قال ابن عساكر: “واعلم أن لحوم العلماء مسمومة، وأن أحوال الله في هتك منتقصيهم معلومة، وأن من تكلم فيهم بالثلب أصابه الله قبل موته بموت القلب”.-مجموع رسائل وتوجيهات الشيخ أسامة بن لادن 163

“এখান থেকে উলামায়ে কেরামের অমর্যাদা ও সম্মানহানি করার ভয়াবহতা বুঝে আসে। কারণ এর মাধ্যমে মূলত তাঁদের সিনায় ধারণকৃত ইলমেরই মর্যাদাহানি ঘটে। যে শাশ্বত সত্যের আহ্বান তাঁরা করেন, তা মূলত নববী মীরাস। আর এর উপর আক্রমণ সরাসরি ইসলামের উপরই আক্রমণ। ঠিক তেমনি উলামায়ে কেরামের মর্যাদায় আঘাত মূলত তাদের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করা এবং পুরো উম্মাহকে শরয়ী নেতৃত্ব শূন্য করার ভূমিকাস্বরূপ। যার ফলে জাহেলরা উম্মাহর নেতৃত্বের আসনে বসে পড়বে এবং শরয়ী ইলম ছাড়া ফতোয়া দিয়ে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে, উম্মাহকেও গোমরাহ করে ছাড়বে। এ কারণে আহলে ইলমগণ উলামায়ে কেরামকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানানোর বিষয়ে কঠিনভাবে সতর্ক করেছেন। আল্লামা ইবনে আসাকির রহিমাহুল্লাহ বলেন, জেনে রেখো! উলামায়ে কেরামের গোশত কিন্তু বিষ মিশ্রিত, যারা তাদের মর্যাদাহানি ঘটাবে তাদের লাঞ্ছিত করার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার অবস্থান সুস্পষ্ট। যারা তাদের নিন্দা করে, আল্লাহ তাআলা মৃত্যুর পূর্বেই তাদেরকে অন্তরের মৃত্যু দিয়ে শাস্তি দেন (নাউযুবিল্লাহ)।” -মাজমুউ রাসায়িল ওয়া তাওজীহাতিশ শায়খ উসামা বিন লাদিন, ১৬৩

বলা বাহুল্য, উম্মাহর হেদায়াত ও গোমরাহি অনেকটাই উলামায়ে উম্মতের হেদায়াত ও গোমরাহির সঙ্গে সম্পৃক্ত। উলামায়ে কেরাম গোমরাহির শিকার হলে উম্মতের গোমরাহি অবধারিত, যেমন উলামায়ে কেরাম সঠিক পথে থাকলে, উম্মাহর সঠিক পথে থাকা অনিবার্য।

আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহিমাহুল্লাহ বলেন

وهل بدل الدين إلا الملوك وأحبار سوء ورهبانها -جامع بيان العلم وفضله 1\515، دار ابن الجوزي

“শাসক, উলামায়ে সূ এবং মূর্খ আবেদরাই দীনের মধ্যে পরিবর্তন ঘটায়।” -জামিউ বায়ানিল ইলমি ও ফাযলিহী, ১/৫১৫

ইমাম গাযালী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

وأما الآن فقد قيدت الأطماع ألسن العلماء فسكتوا، وإن تكلموا لم تساعد أقوالهم أحوالهم فلم ينجحوا، ولو صدقوا وقصدوا حق العلم لأفلحوا، ففساد الرعايا بفساد الملوك، وفساد الملوك بفساد العلماء، وفساد العلماء باستيلاء حب المال والجاه، ومن استولى‌ عليه حب الدنيا فلم يقدر على الحسبة على الأراذل، فكيف على الملوك والأكابر، والله المستعان على كل حال.” [إحياء علوم الدين:2/357]

“এখন তো পার্থিব লোভ লালসা উলামায়ে কেরামের মুখে লাগাম পরিয়ে দিয়েছে। তাই তারা নিশ্চুপ হয়ে আছে। মুখ কখনো খুললেও তাদের কথায় কাজে কোনো মিল থাকে না, যার কারণে তারা সফল হয় না। তারা যদি সত্যের উপর অবিচল থাকত এবং ইলমের যথাযথ হক আদায় করত, তাহলে অবশ্যই তারা সফল হত। জনসাধারণ নষ্ট হয় শাসকদের নষ্ট হওয়ার কারণে, শাসকরা নষ্ট হয়, আলেমদের নষ্ট হওয়ার কারণে, আর আলেমরা নষ্ট হয় ধন-সম্পদ ও পদ লিপ্সা প্রবল হওয়ার কারণে। দুনিয়ার লোভ ও ভালোবাসা যাকে পেয়ে বসে, সে তো সাধারণ লোকদেরই অন্যায় কাজে বাধা দিতে পারে না, নেতা ও শাসকদের কী করে বাধা দিবে। আল্লাহই সহায়।” -ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন ২/৩৫৭

শায়খ আতিয়্যাতুল্লাহ আললিবি রহিমাহুল্লাহ বলেন,

فشأن العلماء في الأمة شأن عظيم، وهم في الحقيقة قادتها؛ لأنهم ورثة الأنبياء ومعلمو الخلق الخير، وبهم صلاح الأمة، وإذا فسدوا أيضا فبفسادهم تفسد الأمة.! نسأل الله تعالى أن يمن على أمة محمد صلى الله عليه وسلم بالصلاح والتوفيق والنصر والرفعة. -الأعمال الكامله للشيخ عطية الله الليبي: 351

“উম্মাহর মাঝে উলামায়ে কেরামের মর্যাদা অনেক উঁচু। উম্মাহর প্রকৃত রাহবার তো তাঁরাই। কারণ তাঁরাই নবীগণের ওয়ারিস এবং সৃষ্টিজীবের কল্যাণের শিক্ষক। উম্মাহর কল্যাণ তাঁদের উপরই নির্ভর করে। তাঁরা বিপথগামী হলে উম্মাহও বিপথগামী হয়। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন সার্বিক কল্যাণ, ভালো কাজের তাওফীক, নুসরত ও সম্মান দিয়ে উম্মতে মুহাম্মদীর উপর দয়া করেন।” –আল-আমালুল কামিলা: ৩৫১

একারণে কোনো দীনি জামাআতের জন্য উলামায়ে কেরামকে উপেক্ষা করে উম্মাহকে সঠিক পথে তুলে আনার ন্যূনতম সম্ভাবনা তো নেই-ই; বরং তাদের নিজেদেরই সঠিক পথে থাকা অসম্ভব ও দুঃসাধ্য। সুতরাং আমরা যদি সত্যিকার অর্থেই দীনের খেদমত করতে চাই, সঠিকভাবে দীনের উপর থাকতে চাই এবং উম্মাহকে দীনের উপর উঠাতে চাই, অবশ্যই উলামায়ে কেরামকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে, জামাআতকে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং জামাআতকে তাঁদের নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় পরিচালিত করতে হবে। এর দ্বিতীয় কোনও বিকল্প নেই, নেই, নেই।

পৃথিবীর ইতিহাসে সকল হকপন্থী জামাতের অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল এটি। আল-কায়েদাও এর ব্যতিক্রম নয়। আল-কায়েদার মানহাজ, উসূল ও নীতি এবং নীতি নির্ধারক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য ও নির্দেশনা এক্ষেত্রে খুবই স্পষ্ট এবং এক ও অভিন্ন।

আল-কায়েদা উপমহাদেশ শাখার আমীর শায়খ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ বলেন,

أود أن أضع أمامكم هنا بعض الأمور الأساسية قبل الإجابة على السؤال. أولا: العلماء هم تيجان رؤوسنا. فنحن ننجز كل أمورنا الجهادية برعاية أهل العلم، فهم قادتنا وهم أمراؤنا. ثم من أهم أهداف جهادنا إنزال العلماء الكرام في مكانتهم الحقيقة، أي قيادة المجتمع وتسلم زمامه. من مقاصد جهادنا أن نهيئ لهم الأجواء التي يستطيعون فيها توجيه الناس وفق تقواهم وعلمهم وضميرهم بكل حرية وبدون أي ضغط واضطهاد من قبل الحكام. والأمر الثاني: أنه بما أن ظلم الباطل ودجله وخداعه على أشده في هذه الأيام، لذا نرى أنهم يضغطون على بعض الشخصيات التي نأمل فيهم خيرا للتكلم ضد الجهاد جنبا إلى جنب المنتسبين للعلم الذين يتلقون رواتبهم من الحكومة. فإننا نفوض أمر من نحسن الظن بهم منهم في هذه الظروف إلى الله. وننصح مجاهدينا كذلك بعدم إطلاق ألسنتهم بسوء تجاه تلك الشخصيات. ونطلب منهم بالإضافة إلى ذلك أن يتقيدوا في الرد على مثل تلك الشائعات –إن كان ضروريا- بأجوبة علماء الجهاد المنشورة فحسب، فسيكون هذا خيرا إن شاء الله.-حركة جهاد شبه القارة الهنديه، حقيقتها وأحقيتها:31.

 

“প্রশ্নের মূল উত্তরের পূর্বে আমি আপনাদের সামনে কিছু মৌলিক বিষয় তুলে ধরার প্রয়াস পাব। প্রথমত, উলামায়ে কেরাম আমাদের মাথার মুকুট। আমরা আমাদের সকল জিহাদী কার্যক্রম উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করি। তাঁরা আমাদের রাহবার এবং তাঁরাই আমাদের আমীর। আমাদের জিহাদের অন্যতম লক্ষ্য হলো, উলামায়ে কেরামকে তাঁদের প্রকৃত অবস্থান তথা সমাজের নেতৃত্বভার ও বাগডোর গ্রহণ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। আমাদের জিহাদের আরেকটি মাকসাদ হলো, উলামায়ে কেরামের জন্য এমন নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা, যে পরিবেশে তাঁরা নির্বিঘ্নে শাসকদের যাবতীয় চাপ থেকে মুক্ত থেকে নিজেদের ইলম, তাকওয়া ও আন্তরিক কামনা অনুসারে মানুষদের সার্বিক দিক-নির্দেশনা দিতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, বর্তমানে বাতিলদের জুলুম, ধোঁকা, ও প্রতারণা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ কারণেই আমরা দেখতে পাই, আহলে বাতিল তাদের বেতনভোগী নামধারি আলেমদের সাথে মিলে জিহাদের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য সে সকল আলেমকেও চাপ দিচ্ছে, যাদের ব্যাপারে আমরা ভালো কিছুর আশা রাখি। ফলে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যেসব আলেমের বিষয়ে আমরা সুধারণা রাখি, তাদের যাবতীয় বিষয় আমরা আল্লাহ তাআলার উপর ন্যস্ত করছি। আমাদের মুজাহিদ ভাইদের কাছেও আমাদের এই নসীহত থাকবে যে, তারা যেন এসকল ব্যক্তি সম্পর্কে আক্রমণাত্মক কোনো কথা না বলেন। আমরা ভাইদের কাছে আরও আশা রাখি, কখনো যদি তাঁদের সম্পর্কে প্রচলিত বিষয়ের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন দেখা ‍দেয়, তখন তারা যেন কেবল মুজাহিদ উলামায়ে কেরাম কর্তৃক প্রদত্ত জবাবেই ক্ষান্ত থাকেন। আশা করি এতেই ইনশাআল্লাহ কল্যাণ হবে।” -ভারত উপমহাদেশে জিহাদী আন্দোলন: বাস্তবতা ও অগ্রগণ্যতা: ৩১

উস্তাদ আহমাদ ফারুক রহিমাহুল্লাহর জীবনীকার লিখেন,

قيادت تو حقيقت ميں علمائے کرام ہی کا کام ہے

شہادت سے چندماہ قبل آخری ملاقات ميں مجھ سے کچھ يوں کہنے لگے کہ:”عصری کالجوں کی تعليم کی وجہ سے بہت سے ساتھيں کو يہ شعور نہيں کہ قيادت اصل ميں علمائے کرام کا کام ہے، اور ہر کوئی اپنے آپ کو قابل قيادت وراہنمائی سمجھتا ہے۔ يہ جو فی الحال ہمارے ذمہ بہت سے کام لگے ہوئے ہيں، يہ تو حالات کی سختی، کفر کا قہر وجبر اور ديگر رکاوٹوں کی وجہ سے ايک عارضی صورت حال ہے۔ ورنہ يہ مسئلہ ہر ساتھی کو سمجھنا چاہيے کہ قيادت اصل ميں علمائے کرام کا کام ہے۔ اور يہی ہمارے معاشرےکی تبديلی کاعملی طريقہ کار بھی ہے کہ ہم قيادت بے دين ولادين طبقے سے چھين کر علمائے کرام کے ہاتھ ميں تھمانا چاہتے ہيں۔ بھلا جو خود مسائل شريعت سے واقف نہ ہو وہ کيسے لوگوں کو چلا سکتا ہے؟ اس ليے ہم ظلم وجبر ميں پسے ہوئے علمائے کرام کے ہاتھ ميں قيادت تھمانا چاہتے ہيں تاکہ وہ شريعت کے مطابق نظام چلا سکيں “۔ ايسے هوتے هيں اسلام كے رهنماں: 352

“উলামায়ে কেরামই নেতৃত্বের প্রকৃত হকদার

(উস্তাদ আহমাদ ফারুক রহিমাহুল্লাহ) শাহাদাতের মাস কয়েক পূর্বে শেষ মুলাকাতে আমাকে এমনটা বলছিলেন যে, ‘‘সমকালীন জেনারেল শিক্ষাব্যবস্থার কারণে অনেক সাথি ভাইয়ের এই অনুভূতি নেই যে, নেতৃত্ব মূলত উলামায়ে কেরামের কাজ। প্রত্যেকেই নিজেকে নেতৃত্ব ও রাহনুমায়ী প্রদান করার মতো যোগ্য মনে করে। আমাদের উপর এখন বিভিন্ন কাজের যে দায়িত্ব অর্পিত হয়ে আছে, এটা তো হালাতের নাযুকতা, কুফরি ব্যবস্থার আধিপত্য, জুলুম-শোষণ ও অন্য নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে একটা সাময়িক অবস্থা মাত্র। অন্যথায় এ বিষয়টি প্রত্যেক সাথিরই বুঝা উচিত যে, নেতৃত্ব মূলত উলামায়ে কেরামের কাজ। সমাজব্যবস্থা পরিবর্তনে আমাদের একটি কর্মপন্থা এটাও যে, আমরা নেতৃত্বকে বেদীন ও ধর্মহীন শ্রেণি থেকে ছিনিয়ে এনে উলামায়ে কেরামের হাতে অর্পণ করতে চাই। শরয়ী ইলমে যে নিজেই অজ্ঞতার শিকার, সে কীভাবে অন্যদেরকে শরীয়তের আলোকে পরিচালিত করবে? এ জন্যই আমরা (দীনের পথে) জুলুম ও নিগ্রহের শিকার উলামায়ে কেরামের হাতে নেতৃত্বভার অর্পণ করতে চাই; যাতে তাঁরা সমাজব্যবস্থাকে শরীয়ত মোতাবেক পরিচালনা করতে পারেন।’’ –এ্যয়সে হোতে হেঁ ইসলাম কে রাহনুমা: ৩৫২

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বাস্তবতা হল, আজ বিশ্বের অন্য অনেক অঞ্চলের মতো আমাদের এ অঞ্চলেও মুজাহিদ ও উলামায়ে কেরামের মাঝে যে যোগসূত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়া জরুরি ছিল, তা হয়ে ওঠেনি বা আমরা তা করতে পারিনি। আর জিহাদী আন্দোলনের সফলতার পথে যে কারণগুলো অন্তরায়, এটি তার অন্যতম। বিষয়টি যথাযথ অনুধাবন করার জন্য সমকালীন জিহাদ ও দাওয়াহ বিশেষজ্ঞ ফকীহ শায়খ আতিয়্যাতুল্লাহ আললিবি রহিমাহুল্লাহর কিছু মূল্যায়ন তুলে ধরছি।

قال الشيخ عطية الله الليبي رحمه على سوال منتدى الحسبة – ما هو تقييمكم العام للمسيرة الجهادية المعاصرة؟ مع ذكر الإيجابيات والسلبيات..

[السائل: طالب الدعاء]

…ومنها: ما نعانيه من سوء العلاقة مع طائفة العلماء.. وسيأتي الكلام عليه، وهذا عند التحقيق لا يرجع اللوم فيه إلى المجاهدين وحدهم، بل حظهم منه هو الأقل، وإنما هو من أهل العلم بدرجة أكبر، ولله الأمر..! ولكنها مشكلة على كل حال، نسأل الله أن يحلها.

وبالجملة، نرى أن الخير غالب بحمد الله، وأن السلبيات كثير منها ليس بذاتي في الحركة الجهادية، بل موضوعي خارجي.. ولذلك فإنه يعتبر من المشكلات التي هي بصدد الحل والإصلاح، وليست فشلا أو فسادا معوقا أو مهلكا.

وهنا قاعدة مهمة، وهي أنه: إذا كانت المشكلة من خارجك فلا تقلق منها كثيرا، فلن تضرك {لَنْ يَضُرُّوكُمْ إِلَّا أَذًى} [آل عمران: 111]، أما المشكلة التي تضرك فهي المشكلة التي هي من نفسك، سواء كانت نفسك هذه فردا أو جماعة {وَمَا أَصَابَكَ مِنْ سَيِّئَةٍ فَمِنْ نَفْسِكَ} [النساء: 79]، والله أعلم.

وشيء آخر أحب أن أقوله لإخواني هنا ولو باختصار: وهو أن الحركة الجهادية كأي جهد بشري واجتماعي مبذول ستظل فيها أخطاء ونقص، تقل أو تكثر، حتى تصل إلى مرحلة أن تمثل الأمة تمثيلا كاملا أو شبه كامل.! لأن هؤلاء الإخوة المجاهدون هم رجال وشباب من الأمة، أحيا الله قلوبهم، وزادهم هدى وآتاهم تقواهم، ونهضوا للقيام بهذه الفريضة، وتحملوا هذه الأمانة، فهم بالأصل رجال حرب وسياسة، لكن بالدين ولأجل الدين.

وهذا الفضل لا يعني الكمال من كل وجه، ولا يعني الخلو من النقص والأخطاء، فهم محتاجون للتكميل والمواساة، فأكثرهم ليسوا متخصصين في علوم الشريعة، وإن كان عامة قيادتهم وأفاضلهم قد نهلوا منها قسطا جيدا، وهم يتفاوتون في ذلك، وأيضا فيهم مشايخ وعلماء، ولكن لا يزال هناك قلة، والموجود لا يغطي كل الساحات ولا يستوعب كل القواعد.

ولكن هذا لا ينفي أن الحركة الجهادية هي في الجملة حركة صالحة وخيرة، وهي بركة على الأمة، وهي المرجو لها أن تكون الطائفة المنصورة في هذه الأزمان، وأفرادها من خيار المؤمنين، وهم أفضل من طائفة العلماء، تفضيل الجملة على الجملة، وهذا ليس فيه عندنا إشكال، ففضائلهم في الكتاب والسنة لا يعدلها شيء، ولا يماري في هذا عالم.! وهم بحمد الله تعالى محتوون على تلك الفضائل في الواقع قائمون بها جلها أو كلها.

فستظل الحركة الجهادية نافذة على رسلها، تمضي في طريقها على مهل، تخط[ لعله: تخطئ] وتصيب في اجتهاداتها واختياراتها، لكنها ماضية نافذة ثابتة لا تلتفت، حتى يحصل لها بالتدريج التكامل والنضج والاستواء، ويلتحق بها أصناف طبقات الأمة من العلماء وطلاب العلم وعموم أهل الخير من المسلمين، وتجتمع طاقات الأمة في مسيرها، وحينها ستكون أقدر على النصر وأقرب للفتح إن شاء الله، ويومئذ يفرح المؤمنون بنصر الله.-الأعمال الكاملة للشيخ عطية الله الليبي، 116-117

“প্রশ্ন: সমকালীন জিহাদের ব্যাপারে আপনার সার্বিক মূল্যায়ন কী? ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকসহ জানতে চাই?

[প্রশ্নকারী: দোয়ার মোহতাজ]

উত্তর: …আরেকটি নেতিবাচক দিক হলো, আলেম সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের অবনতি… এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা সামনে আসবে। সম্পর্কের এই অবনতির দায় এককভাবে শুধু মুজাহিদদের উপর দেয়া যায় না। এক্ষেত্রে বরং মুজাহিদদের চেয়ে আলেমদের দায়টাই বেশি। যাই হোক, আল্লাহর ফায়সালা যা ছিল তাই হয়েছে! কিন্তু (আমাদের মানতেই হবে) এটা একটা বড় সমস্যা। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন এই সমস্যার আশু সমাধান করে দেন। আমীন।

আমরা মনে করি, (জিহাদী আন্দোলনে) এখন পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ কল্যাণের দিকটিই প্রবল। নেতিবাচক দিকও কম নয়। কিছু সমস্যা জিহাদী আন্দোলনের মৌলিক ও ভেতরগত সমস্যা নয়; বরং বহিরাগত ও পার্শ্ব সমস্যা। এ কারণে এগুলোকে ধ্বংসাত্মক ব্যর্থতা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী গোমরাহি না ধরে এমন সমস্যার কাতারে ফেলা যায়, যেগুলো সমাধান ও ইসলাহ যোগ্য।

এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হলো, সমস্যা বহিরাগত হলে তা নিয়ে বেশি অস্থির হবেন না; তা আপনার ক্ষতি করতে পারবে না।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

{لَنْ يَضُرُّوكُمْ إِلَّا أَذًى} [آل عمران: 111]

“যৎসামান্য কষ্ট দেয়া ছাড়া তারা তোমাদের কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না।” –সূরা আলে ইমরান ০৩:১১১

আপনার ভেতরের সমস্যাই আপনাকে ক্ষতির মুখে ফেলবে। এ কথা ব্যক্তির ক্ষেত্রে যেমন সত্য, সমষ্টির ক্ষেত্রেও সত্য।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

{وَمَا أَصَابَكَ مِنْ سَيِّئَةٍ فَمِنْ نَفْسِكَ} [النساء: 79٧٧٩]

“আর তোমার উপর যা কিছু অকল্যাণ এসে পড়ে, তা তোমার নিজের পক্ষ থেকে।” –সূরা নিসা ০৪: ৭৯। আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।

এখানে আরেকটি বিষয় ভাইদের উদ্দেশ্যে সংক্ষেপে হলেও বলতে চাই। অন্যান্য মানবিক ও সামাজিক চেষ্টা প্রচেষ্টার মতো জিহাদী আন্দোলনেও কম বেশি কিছু ভুল ত্রুটি থাকবেই। যতদিন না এ আন্দোলন পুরো উম্মাহর পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব বা উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিত্ব করার মতো একটি নির্ভরযোগ্য অবস্থানে পৌঁছতে পারছে। কারণ এই মুজাহিদ ভাইয়েরা উম্মাহরই একটি অংশ, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা অন্তর্দৃষ্টি দান করেছেন, তাকওয়া ও হিদায়াতের দৌলতে ধন্য করেছেন। যারা (জিহাদের) এই ফরিযা আদায়ের জন্য জেগে উঠেছেন এবং এই আমানতের ভার কাঁধে তুলে নিয়েছেন। বস্তুত তারা রাজনীতি ও যুদ্ধের সিংহ পুরুষ, তবে তা অবশ্যই দীনের আলোকে এবং দীনের জন্য।

তাদের এই যে এত মর্যাদা, তার অর্থ এই নয় যে, তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং ভুল-ত্রুটি মুক্ত। বরং তারা পূর্ণতা ও সহমর্মিতার মুখাপেক্ষী। কারণ তাদের অধিকাংশই শরয়ী ইলমে বিশেষজ্ঞ নয়, যদিও তাদের প্রায় সকল নেতা ও রাহবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইলম অর্জন করেছেন। অবশ্য এক্ষেত্রে তারা সবাই সমস্তরের নন। এমনিভাবে মুজাহিদদের মাঝে অনেক মাশায়েখ এবং উলামায়ে কেরামও রয়েছেন। তবে (প্রয়োজনানুপাতে) তাদের সংখ্যা নিতান্তই কম। যারা রয়েছেন তাদের মাধ্যমে জিহাদী কাজের সকল অঙ্গনের প্রয়োজন পূরণ হচ্ছে না।

এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এ বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, জিহাদী আন্দোলন সার্বিকভাবে কল্যাণকর ও উত্তম একটি আন্দোলন। এ আন্দোলন উম্মাহর জন্য বরকত স্বরূপ। আশা করা যায়, এটিই এ যামানার তায়িফায়ে মানসূরাহ। মুজাহিদগণ হলেন উম্মাহর শ্রেষ্ঠতম মুমিন। সমষ্টিগতভাবে মুজাহিদ সম্প্রদায় আলেম সম্প্রদায়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এ ব্যাপারে আমাদের কোনও সংশয় নেই। কুরআন-সুন্নাহতে তাদের যত ফযীলতের বর্ণনা এসেছে, তা অন্য কোনো ক্ষেত্রে আসেনি। এ বিষয়ে কোনো আলেমের সংশয় থাকতে পারে না। আর বাস্তবেও তারা আলহামদুলিল্লাহ (নিজেদের মধ্যে) এসব ফযীলতের সব বা অধিকাংশই ধারণ করেন।

জিহাদী আন্দোলন এভাবেই ধীরলয়ে সতর্ক পদক্ষেপে এগিয়ে চলছে। এর পদক্ষেপগুলো কখনো সঠিক আবার কখনও ভুল হয়। তা সত্ত্বেও এ মহান আন্দোলন পেছন ফিরে না তাকিয়ে আপন গতিতে এগিয়ে চলছে ও চলবে; যতক্ষণ না তা ক্রমান্বয়ে পূর্ণতায় রূপ নেয় এবং উম্মাহর উলামা, তালাবা ও কল্যাণকামী মুসলিম জনগণের সব শ্রেণি পেশার মানুষ এতে যুক্ত হয়ে উম্মাহর সকল শক্তি একীভূত হয়। সেদিন এ আন্দোলন আল্লাহর সাহায্যে কাঙ্ক্ষিত বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ এবং সেদিনই আল্লাহর সাহায্যে মুমিনরা খুশি হবে।” –আল-আমালুল কামিলা, ১১৬-১১৭

আলজেরিয়ার জিহাদ কেন ব্যর্থ হয়েছিল সে প্রসঙ্গে শায়খ লিবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

فأهم أسباب الفشل ما يلي:

ضعف وخلخلة المنظومة الفكرية والمنهجية الجهادية في تلك الفترة في الجزائر، وهذا الضعف يظهر في عدة صور، مثل: الفوضى الفكرية والعلمية، ونقص في “المرجعية” أو القيادة العلمية، وقلة الكادر العلمي الجهادي المؤهل، وتباين واختلاف شديد في تصورات وأفهام النافرين للجهاد؛ فقد جمع الصف الجهادي أنواعا من المتشددين والمتنطعين وبعض الغلاة أيضا في التكفير وغيره، مع المتساهلين إلى درجات مذمومة أحيانا، في حين كانت الغالبية طبعا هم من عوام الناس.

هذا الجمع في حد ذاته وبمجرده ليس عيبا ولا خطرا؛ فإننا لا نشترط النقاء الكامل في جيوش الإسلام وصفوف المجاهدين، ولا يمكن هذا عمليا أيضا، وغالب جيوش الإسلام بعد عهد الصحابة والتابعين كانت هكذا كما ذكره العلماء! إنما الخطر جاء من جهة عدم وجود قيادة علمية محورية قوية يجتمع عليها الناس، ولذلك كان هناك تناقضات كبيرة في الصف فكريا ومنهجيا من البداية كانت تنذر بشر، ومع قلة القيادة العلمية كما قلنا تحقق الضرر.!

وكانت السمة العامة الغالبة على القوى المؤثرة في الحركة الجهادية (القيادات العليا والوسطى وما قاربهم) هي: السلفية التي تربت في جو دعوي ينحو مناحي غير متزنة في مفاهيمه وأفكاره؛ فكانت هناك مفاهيم مغلوطة كثيرة، عن الفقه والشريعة والسنة والبدعة والكفر والإيمان ومسائلها، وعن العلماء والجماعات وغير ذلك.

وبالجملة.. كان هناك مسحة من التشدد، بل والتنطع والغلو في الدين في كثير من الكتائب والمناطق. هذا عشناه وعانيناه كثيرا، والأمثلة لا تعوزني، والمقام لا يسع للتطويل هنا. –الأعمال الكاملة للشيخ عطية الله الليبي، 285.

“ব্যর্থতার গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো হচ্ছে:

সে সময় আলজেরিয়ার জিহাদে বুদ্ধিবৃত্তিক ও কর্মপন্থাগত দুর্বলতা ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছিল। দুর্বলতার এ দিকটি বিভিন্ন রূপে দৃশ্যমান হয়। যেমন জ্ঞানতাত্ত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অস্থিরতা, দীনি ও ইলমী নেতৃত্বের সংকট এবং যোগ্য ও অভিজ্ঞ সামরিক নেতৃত্বের অভাব। জিহাদে আগত লোকদের চিন্তার বৈপরীত্য ও ব্যাপক মতভেদ। আলজেরিয়ার জিহাদে একদিকে গোঁড়া, উগ্র ও তাকফীর ইত্যাদিতে বাড়াবাড়িকারী কিছু লোক যেমন জড়ো হয়েছিল, ঠিক তেমনি ক্ষেত্র বিশেষে নিন্দাযোগ্য ছাড়াছাড়ির শিকার কিছু লোকও যুক্ত হয়েছিল। সর্বোপরি অংশগ্রহণকারী অধিকাংশই ছিল সমাজের সাধারণ মানুষ।

সাধারণ জনগণ এবং জাহেল শ্রেণির এমন সমাগম মৌলিকভাবে সমস্যা ও আশঙ্কার প্রধান কারণ ছিল না। কারণ জিহাদী কাফেলায় যুক্ত হওয়ার জন্য সকলকে পূর্ণরূপে উত্তীর্ণ হতে হবে এমন শর্ত আমরা করি না। কার্যত এটা সম্ভবও না। আলেমদের ভাষ্য মতে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবিয়ীন পরবর্তী অধিকাংশ ইসলামী সেনাদলের হালও ঠিক এমনই ছিল। আলোচ্য জিহাদে মূল সমস্যা ছিল, কেন্দ্রীয় পর্যায়ের এমন শক্তিশালী ইলমী নেতৃত্বের অভাব, যাদের কেন্দ্র করে একতা গড়ে উঠতে পারত। এজন্যই মূলত শুরু থেকেই মুজাহিদদের মাঝে ফিকরী ও মানহাজগত ব্যাপক অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়, যা অকল্যাণের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। সেই সাথে ইলমী নেতৃত্বের স্বল্পতা- যেমনটা আমরা আগেই বলেছি, ক্ষতির বিষয়টিকে অনিবার্য করে তোলে।

জিহাদী আন্দোলনের প্রভাবক শক্তির (হাই কমান্ড, সেকেন্ড কমান্ড এবং তাদের নিকটজনের) উপর যে পক্ষটি প্রবল ছিল, তা মূলত সেসব সালাফী ধারা থেকে আগত, যা ভারসাম্যহীন চিন্তা চেতনা সমৃদ্ধ দাওয়াতী পরিবেশে বেড়ে উঠেছিল। তাদের মধ্যে ফিকহ, শরীয়ত, সুন্নাহ, বিদআত, কুফর, ঈমান, কুফর ও ঈমানের মাসায়েল, উলামায়ে কেরাম এবং জামাআহ ইত্যাদির ক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ণ চিন্তা-চেতনা বিদ্যমান ছিল।

মোটকথা… সেখানকার অনেক অঞ্চল এবং জিহাদী সংগঠনে দীনের বিষয়ে গোঁড়ামি এবং বাড়াবাড়ি ছড়িয়ে পড়েছিল। এসব বিষয় আমি স্বচক্ষে বহুবার দেখেছি আর সেগুলোর বহু উদাহরণও আমার সামনে আছে। এটা সেসবের বিস্তারিত বিবরণের স্থান নয়।” –আল-আমালুল কামিলা, ২৮৫–

সামনে গিয়ে তিনি আরও বলেন,

والحاصل أن هذا الخلل والفقر الفكري والمنهجي والعلمي من أسباب الفساد والفشل، وهو سبب ذاتي.ورافقه سبب خارجي، وهو خذلان العلماء لهم في الداخل والخارج، ومصيبة عدم نفير العلماء للجهاد وتقاعسهم وقعودهم حتى سبقهم من ليس مؤهلا للقيادة.. وحسبنا الله ونعم الوكيل. -الأعمال الكاملة للشيخ عطية الله الليبي، 288

“মোটকথা.. ইলমী, ফিকরী এবং মানহাজ কেন্দ্রিক এ দৈন্যই বিশৃঙ্খলা ও ব্যর্থতার ভেতরগত কারণ। তার সাথে (ব্যর্থতার) বাহ্যিক আরেকটি কারণও ছিল। তা হলো, বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা প্রত্যাখ্যান করা এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে জিহাদে অংশগ্রহণ না করে পেছনে রয়ে যাওয়া। এর ফলেই আলেমদের পরিবর্তে অযোগ্য লোকেরা নেতৃত্বের আসনে চলে আসে। আল্লাহ তাআলাই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক।” –আল-আমালুল কামিলা, ২৮৮

শায়খ অপর একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেন,

لو نلاحظ يا شيخنا الفاضل في الفترة السابقة -وأخص فترة الثمانينات- كانت العلاقة بين علماء الأمة وشباب الصحوة علاقة وثيقة جدا، وكانت ثمارها على العمل الجهادي واضحة ونافعة ومباركة بفضل الله تعالى.. واليوم نرى الطواغيت وأعوانهم قد نجحوا في التفريق بين هذين القطبين، وأنا اعتقد بأن هذا السبب هو من أقوى الأسباب التي قد تعرقل مسيرة العمل الجهادي..

الأمر الأول: نريد من فضيلتكم النصح في هذا الموضوع وتوجيه الشباب للالتفات حول أهل العلم ومناصرتهم.

والأمر الثاني: نريد من فضيلتكم توضيح حقيقة علماء السلطان وكشف شبههم وغشهم.

[السائل: ولد الحسيبة 11]

الجواب.. ومن الله الكريم نستمد التوفيق إلى الصواب:

الحمد لله.. قبل الإجابة على “الأمرين” الذين ذكرتهما في سؤالك أخي الكريم، أعلق على مقدمتك؛ فأقول:

نعم لقد كانت العلاقة بين العلماء بصفة عامة وشباب الصحوة بصفة عامة أيضا علاقة وثيقة وجيدة في العقود السابقة عموما والثمانينات على الخصوص كما أشرتم، وبالفعل كان أثر ذلك على العمل الجهادي جيدا، والحمد لله على ما يظهر.!

هذا الكلام في الجملة صحيح مسلم، وكانت تلك مرحلة طبيعية؛ لكن عند التحقيق لا بد أن نلاحظ شيئا، وهو أن كل ذلك كان في حال العافية؛ فتلك المرحلة المشار إليها كانت في عمومها مرحلة “عافية” أي مرحلة ما قبل التمييز بالمحكات والامتحانات الكبرى.! وسنزيد هذا توضيحا إن شاء الله، وقد قال الله عز وجل: {مَا كَانَ اللَّهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى مَا أَنْتُمْ عَلَيْهِ حَتَّى يَمِيزَ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَجْتَبِي مِنْ رُسُلِهِ مَنْ يَشَاءُ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَإِنْ تُؤْمِنُوا وَتَتَّقُوا فَلَكُمْ أَجْرٌ عَظِيمٌ} [آل عمران: 179]، فالحاصل أن تلك “العلاقة الوثيقة” بين الناس، وذلك الوئام، وتلك العافية، كانت تخفي وراءها الكثير من الخلافات والتناقضات الكبيرة والصغيرة، وهذه التناقضات لا تظهر إلا بالامتحانات والابتلاءات.

وعليه.. فليست تلك الحالة هي الحالة المثالية عندنا نحن المسلمين وفي مفهومنا، مع أننا نحب العافية، وأمرنا ربنا -عز وجل- بسؤال العافية، لكن العافية معنى أعم من عدم الامتحان للأمة، فقد اقتضت حكمة الله تعالى وجرت سنته في خلقه بأن لا يترك الناس بدون امتحان وتمييز، وهو معنى آية آل عمران، وقال تعالى:(الم (1) أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ (2) وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ (3) [العنكبوت].

والحاصل أن تلك ليست هي الحالة المرضية بالضرورة، مع أنها حالة عافية، وإن شئت فقل: تجاذبها أمران متغايران: الأول محبوب وهو العافية والراحة وما في ضمن ذلك من انعدام المشاكل أو قلتها وقلة العداواة والخصومة، والثاني غير محبوب لله تعالى ولا لعباده المؤمنين وهو اختلاط الصفوف وانطواؤها على الدخن.!

أضف إلى ذلك ما في ضمن المحنة والامتحان والابتلاء من الحكمة البالغة والمقاصد المحبوبة لله تعالى من تميز المؤمنين وتمحيصهم ورفع شأنهم وتبويئهم الدرجات العلا، وغير ذلك.. فجرت سنته -عز وجل- بأن لا تبقى هذه الحالة مستمرة، بل لا بد من أن تأتي الامتحانات والمحكات والفتن والابتلاءات فتمحص الصفوف وتميز بين الناس؛ وتميز الخبيث من الطيب.. هذا لا بد من فهمه وتدبره..

فإذا اتضح هذا، فأقول: إن الاختلاف والتفرق والتمايز الذي حصل بين الناس وطوائفهم، ولا سيما في طوائف العلماء والدعاة والمجاهدين، وبين الكثير من العلماء وبين المجاهدين، هو تمايز جار على هذه السنة في الأعم الأغلب، فهو إذن محمود من هذا الوجه، مع أنه غير محمود بل مؤسف ومحزن من جهة كونه مظهرا لفساد البعض وضلالهم من هذه الطائفة أو تلك.!

لكننا بالجملة نوقن أن ذلك من الابتلاء والامتحان، فنعتصم بالله -عز وجل- وما آتانا من العلم والفقه والنور والهدى لكي نبصر الطريق في هذه الفتنة، هذا هو الواجب.

وبناء عليه نقول توضيحا:

إن الخلاف والانفصام بين طائفتي العلماء والمجاهدين واقع على نحوين:

النحو الأول: بحق؛ فهو تفرق على الدين، الناجح فيه ناجح مفلح، والخاسر فيه خاسر.

والنحو الثاني: بباطل، وهو التفرق لا على الدين الحق، بل على حظوظ النفوس وعلى وجه الخصومات البشرية المذمومة التي سببها هوى أو طلب علو ونحو ذلك، وهذه إثمها على أصحابها أيضا.. والله المستعان.

ولذلك فقولك أخي الكريم: (( واليوم نرى الطواغيت وأعوانهم قد نجحوا في التفريق بين هذين القطبين)) ليس دقيقا..

نعم؛ الطواغيت يعملون ليل نهار على تفريق صفوف المؤمنين والتفريق بينهم وبث الفتنة في وسطها، هذا من صميم عمل الطواغيت والشياطين.

لكنهم ما كان لهم أن ينجحوا في ذلك إلا أن يعينهم الإنسان على نفسه، ويوجد منه المحل القابل لحصول أثر كيدهم ومكرهم، كما قال الله -عز وجل-: (فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ (98) إِنَّهُ لَيْسَ لَهُ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ (99) إِنَّمَا سُلْطَانُهُ عَلَى الَّذِينَ يَتَوَلَّوْنَهُ وَالَّذِينَ هُمْ بِهِ مُشْرِكُونَ (100) (النحل)، وقال تعالى: (قَالَ هَذَا صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيمٌ (41) إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ إِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِينَ (42) (الحجر)، وقال تعالى: (وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئاً إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ (120) (آل عمران).

بل نقول: إن التفرق بين الطائفتين أغلبه واقع بسبب افتراق الناس بسبب الامتحانات والابتلاءات، فتفرق الناس بين مؤمن صابر ثابت على الدين الحق، وبين منافق يتخذ من الدين ستارا لفساد باطنه وعبادة شهواته، أو فاجر قد اتضح فجوره وظهر للناس فساده الذي كان مستورا، أو ضعيف الإيمان قليل الصبر لم يثبت بل سقط وانحدر في مهاوي الذلة..!! نسأل الله الستر والعافية..وهذا واقع في الطائفتين معا، لا يظنن أحد أنه في طائفة دون الأخرى؛ فكم قد رأينا ممن تسمى بالعلم وتزيا بزي أهل الفضل زمانا ثم لما جاءت الابتلاءات سقط..! وكم قد رأينا ورأى الناس من كان يدعى مجاهدا ويعد من جملة الأبطال زمانا ثم لما جاءت الابتلاءات والامتحانات سقط..! والأمثلة لا تعوزكم في كلا الجانبين.

ونسأل الله -عز وجل- لنا ولكم التثبيت والتوفيق والإعانة، والسلامة من كل إثم.. آمين.

ثم قولك: (( وأنا أعتقد بأن هذا السبب هو من أقوى الأسباب التي قد تعرقل مسيرة العمل الجهادي)).. أقول: ينبغي أن نعتقد الحق دائما، ونبحث عن الحق بدلائله التي نصبها الله -عز وجل- عليه في شرعه وقدره؛ فإذا ظهر لنا اعتقدناه وتمسكنا به.

وكون هذا التفرق والانفصام الواقع بين الكثير من (( العلماء)) وبين ((المجاهدين)) هو من الأسباب التي تعرقل مسيرة العمل الجهادي، نظن أن هذا صحيح فعلا..! والله المستعان.

ولكن لا بد أن يفهم على ضوء الكلام السابق في أسباب تفرق الناس.

ثم لا بد من التوجه بعد ذلك إلى العمل، والعمل هنا هو: السعي لإصلاح أنفسنا أولا، ثم دعوة الآخرين وإصلاحهم، ثم السعي للتأليف بين طوائف المؤمنين وجمع كلمتهم وتوحيد صفهم، ثم التعامل مع من نازعنا وخالفنا على وفق ما أمرنا ربنا -عز وجل-.

فإذا عملنا في كل ذلك بما يرضي الله تعالى، وجاهدنا في هذا حق الجهاد، وعلم الله منا الصدق والإخلاص؛ فإن الله يفتح علينا وينصرنا، ولا يضرنا بعد ذلك خلاف مخالف ولا نزاع منازع.! -الكتاب المذكور 345-348

“প্রশ্ন: সম্মানিত শায়খ! আমরা যদি বিগত সময়ের দিকে লক্ষ করি, বিশেষ করে আশির দশকের সময়টা, তখন দেখি উম্মতের আলেম সমাজ এবং যুব সমাজের মধ্যে অত্যন্ত মজবুত সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। আল্লাহর অনুগ্রহে জিহাদী কার্যক্রমের উপর যার অনেক উপকারী ও বরকতময় প্রভাব পড়েছিল। পক্ষান্তরে বর্তমান সময়ে দেখতে পাচ্ছি, তাগুত বাহিনী ও তার দোসররা এই দুই দলের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে সফল হয়েছে। আমার বিশ্বাস, জিহাদী কার্যক্রম গতিহীন হয়ে পড়ার পেছনে সবচে বড় কারণ এটাই।

প্রথমত, আমি আপনাদের কাছে আবেদন করছি, আপনারা এই বিষয়ে কথা বলুন এবং যুবকদেরকে উদ্বুদ্ধ করুন, তারা যেন আলেমদের পাশে জড়ো হয়ে তাদের সহযোগিতা করে।

দ্বিতীয়ত, আমরা চাই, আপনারা দরবারি আলেমদের মুখোশ উন্মোচন করুন এবং তাদের সংশয় ও প্রতারণাগুলো উম্মতের সামনে স্পষ্ট করুন।

[প্রশ্নকারী: ওলাদুল হাসিবা ১১]

উত্তর: মহান আল্লাহর কাছেই বিশুদ্ধতার তাওফীক কামনা করি।

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। সম্মানিত ভাই! আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয় দুটির উত্তর দেয়ার আগে আপনার ভূমিকার উপর কিছু কথা বলি।

হ্যাঁ, আপনি যেমন বলেছেন, গত শতকে বিশেষ করে আশির দশকে উলামায়ে কেরাম এবং যুব সমাজের মধ্যে অনেক মজবুত ও উন্নত সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। এর কারণে বাস্তবেই জিহাদী কার্যক্রমের উপর অনেক ভালো প্রভাব পড়েছিল। আলহামদুলিল্লাহ। বাহ্যত বিষয়টা এমনই ছিল।

সাধারণ দৃষ্টিতে একথা সঠিক ও স্বীকৃত। তখন সবকিছুই ছিল স্থিতিশীল। কিন্তু গভীরভাবে লক্ষ করলে আমরা দেখতে পাব, এসব কিছু হয়েছিল নিরাপদ ও ঝুঁকিহীন পরিস্থিতিতে। আলোচ্য সময়ে সবকিছুতে সার্বিক বিচারে পূর্ণ মাত্রায় নিরাপত্তা বিদ্যমান ছিল। অর্থাৎ বড় বড় বিপদাপদ ও কষ্ট-ক্লেশ দিয়ে যাচাই বাছাই হওয়ার আগের সময় ছিল এটি। আমি এই বিষয়টি একটু বিস্তারিত বলব ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তাআলা বলেন-

{مَا كَانَ اللَّهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى مَا أَنْتُمْ عَلَيْهِ حَتَّى يَمِيزَ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَجْتَبِي مِنْ رُسُلِهِ مَنْ يَشَاءُ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَإِنْ تُؤْمِنُوا وَتَتَّقُوا فَلَكُمْ أَجْرٌ عَظِيمٌ} [آل عمران: 179]

“আল্লাহ এরূপ করতে পারেন না যে, তোমরা এখন যে অবস্থায় আছো মুমিনদেরকে সে অবস্থায়ই রেখে দেবেন; যতক্ষণ না তিনি পবিত্র হতে অপবিত্রকে পৃথক করে দেন। (অপরদিকে) তিনি এও করতে পারেন না যে, তোমাদেরকে (সরাসরি) গায়বের বিষয় জানিয়ে দেবেন। হ্যাঁ, তিনি (যতটুকু জানানো মনে করেন তার জন্য) নিজ নবীগণের মধ্য হতে যাকে চান তাঁকে বেছে নেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস রাখ। যদি তোমরা বিশ্বাস রাখ ও তাকওয়া অবলম্বন করো তবে মহা প্রতিদানের উপযুক্ত হবে।” -সূরা আলে ইমরান ০৩:১৭৯

মোটকথা, (উলামায়ে কেরাম এবং যুবকদের) মধ্যে সে সময় যে মযবুত সম্পর্ক, যে একতা এবং স্থিতিশীল অবস্থা বিদ্যমান ছিল, এর পেছনে অনেক বিরোধ, ছোট বড় অনেক বাদানুবাদ লুকায়িত ছিল। যেগুলো বিপদাপদ ও পরীক্ষার সম্মুখীন না হলে প্রকাশ পায় না।

(স্বভাবগতভাবে) আমরা নিরাপত্তা পছন্দ করি। আমাদের রবও আমাদেরকে নিরাপত্তা চাওয়ার আদেশ করেছেন। তা সত্ত্বেও নিরাপত্তার সময়কাল কিন্তু মুসলমানদের জন্য আদর্শিক কোনো সময় নয়। আফিয়াত তথা স্থিতিশীল পরিস্থিতি বলতে আমরা বিপদ মুসীবতে না পড়ার যে অর্থ বুঝে থাকি, এর বাইরেও আফিয়াতের আরও ব্যাপক অর্থ আছে। এ কারণে আল্লাহ তাআলার প্রজ্ঞার দাবি এবং সৃষ্টির ক্ষেত্রে তাঁর শাশ্বত নীতি হলো, তিনি মানুষকে পরীক্ষা ও যাচাই বাছাই ছাড়া ছেড়ে দিবেন না। উপর্যুক্ত সূরা আলে ইমরানের আয়াতের মর্ম এটাই।

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-

(الم (1) أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ (2) وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ (3) [العنكبوت].

“আলিফ লাম মীম। মানুষ কি মনে করে ‌‌‍আমরা ঈমান এনেছি এ কথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে ছেড়ে দেওয়া হবে? অথচ তাদের পূর্বেও যারা গত হয়েছে, তাদেরকেও আমি পরীক্ষা করেছি। সুতরাং আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্যনিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছে এবং তিনি অবশ্যই জেনে নেবেন কারা মিথ্যাবাদী।” [সূরা আনকাবুত ২৯:০১-০৩]

মোটকথা, (গত শতকের) সে সময়টা নিরাপদ ও স্থিতিশীল হওয়া সত্ত্বেও প্রশংসনীয় কোনো সময় ছিল না। বিষয়টাকে আপনি এভাবে ব্যক্ত করতে পারেন, সে সময় বিপরীতমুখী দুটি বিষয় বিদ্যমান ছিল। একটি ছিল প্রশংসনীয়। তা হলো নিরাপত্তা ও শান্তি। সেখানে কোনো বিপদাপদ ছিল না, অথবা কম ছিল। শত্রুতা ও দ্বন্দ্ব সংঘাতও অনেক কম ছিল। আর দ্বিতীয় দিকটি আল্লাহ তাআলার নিকট অপছন্দনীয় ছিল। মুমিন বান্দাদের কাছেও তা কাঙ্ক্ষিত ছিল না। সেটা হলো ভালো খারাপের মিশ্রণ।

তাছাড়া বালা মুসীবত ও পরীক্ষার মধ্যে আল্লাহ তাআলার মহান হেকমত ও কাঙ্ক্ষিত বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে। তা হলো, মুমিনদেরকে যাচাই-বাছাইয়ের পর পৃথক করা, তাদেরকে সম্মানিত করা এবং সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী করা। এ কারণে আল্লাহ তাআলার অবধারিত নীতি হলো, সব সময় স্বাভাবিক অবস্থা বহাল থাকে না। বরং দুঃখ-কষ্ট অবশ্যই আসে, বিপদাপদ আসে, সকলের পরিচয় স্পষ্ট হয়ে যায়, একে অপর থেকে পৃথক হয়ে যায় এবং ভালো-মন্দ আলাদা হয়ে যায়। এই বিষয়টি অবশ্যই বুঝতে হবে এবং গভীর থেকে অনুধাবন করতে হবে।

উপর্যুক্ত বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পর আমি বলব, বর্তমানে যে অনৈক্য, বিরোধ ও মানুষে মানুষে দূরত্ব দেখা যাচ্ছে, বিশেষত উলামায়ে কেরাম, দাঈ ও মুজাহিদদের পরস্পরের মাঝে যে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং অনেক আলেম ও মুজাহিদের মধ্যে যে ইখতিলাফ হচ্ছে, এর অধিকাংশই আল্লাহর শাশ্বত বিধান অনুসারেই হচ্ছে। অতএব, এদিক থেকে এটা প্রশংসনীয় বিষয়। অপরদিকে তা কিছু মানুষের কপটতা ও ভ্রষ্টতা উন্মোচন করে দেওয়ায় অপছন্দনীয়, বরং দুঃখজনকও বটে।

স্বাভাবিকভাবে আমরা এটাকে পরীক্ষা ও ইমতিহানই মনে করি। এজন্য আমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করব এবং তিনি আমাদেরকে যে ইলম, প্রজ্ঞা, নূর এবং হেদায়াত দান করেছেন, তা আঁকড়ে ধরে থাকব। যেন এই ফিতনায় আমরা সঠিক পথের দিশা পেয়ে যাই। এটা আমাদের জন্য অবশ্য করণীয়।

বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করে বললে বলা যায়, উলামায়ে কেরাম এবং মুজাহিদদের মধ্যে মতবিরোধ ও দূরত্ব সৃষ্টি হয় দুটি কারণে:

এক. সত্য অন্বেষণ করতে গিয়ে। এখানে বিরোধ হয় ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। এখানে যে সফল সে মহা ভাগ্যবান। আর যে বিফল সে নিশ্চিত হতভাগা।

দুই. অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য। এই বিরোধ সত্য দীনের ভিত্তিতে নয়; বরং মনের কামনা-বাসনা পূরণ করা এবং মানবীয় দুষ্ট চরিত্র বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে; যার উৎস হলো, প্রবৃত্তি, অহংকারসহ অনুরূপ অন্যান্য নেতিবাচক গুণ। অতএব এক্ষেত্রেও প্রত্যেকে নিজ নিজ পাপের বোঝা বহন করবে। আল্লাহর কাছেই আমরা সাহায্য প্রার্থনা করি।

সুতরাং হে ভাই! আপনার বক্তব্য: তাগুতী বাহিনী তার দোসররা এই দুই দলের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে সফল হয়েছে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে একথা ঠিক মনে হয় না।

হ্যাঁ, মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট করা এবং তাদের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তাগুতরা দিন-রাত খেটে যাচ্ছে। তাগুত ও শয়তানী বাহিনী একাজ খুব নিষ্ঠার সাথে করে থাকে।

কিন্তু ব্যক্তি নিজের বিরুদ্ধে তাদেরকে সহযোগিতা না করলে, তাদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা নিজেদের প্রস্তুত করে না দিলে, তারা কিছুতেই সফল হতে পারত না।

আল্লাহ তাআলা বলেন-

(فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ (98) إِنَّهُ لَيْسَ لَهُ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ (99) إِنَّمَا سُلْطَانُهُ عَلَى الَّذِينَ يَتَوَلَّوْنَهُ وَالَّذِينَ هُمْ بِهِ مُشْرِكُونَ (100)) (النحل)

“সুতরাং আপনি যখন কুরআন পড়বেন, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং নিজ রবের উপর ভরসা রাখে, তাদের উপর তার কোনও আধিপত্য চলে না। তার আধিপত্য চলে কেবল এমন সব লোকের উপর, যারা তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে এবং যারা আল্লাহর শরীক সাব্যস্তকারী।” (সূরা আন নাহল ১৬:৯৮-১০০)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-

(قَالَ هَذَا صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيمٌ (41) إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ إِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِينَ (42)) (الحجر)

 “আল্লাহ বললেন, এটাই সেই সরল পথ, যা আমার পর্যন্ত পৌঁছে । জেনে রেখ, যারা আমার বান্দা, তাদের উপর তোর কোনও ক্ষমতা চলবে না। তবে যারা তোর অনুগামী হবে, সেই বিভ্রান্তদের কথা ভিন্ন।” (সূরা আল-হিজর ১৫:৪১-৪২)

তিনি আরও বলেন-

(وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئاً إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ (120)) (آل عمران).

 “তোমরা সবর ও তাকওয়া অবলম্বন করলে, তাদের চক্রান্ত তোমাদের কোনও ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। তারা যা কিছু করছে, তা সবই আল্লাহর (জ্ঞান ও শক্তির) আওতাভুক্ত।” (সূরা আলে ইমরান ০৩:১২০)

আমরা বলব, উভয় দলের মাঝে যেসব বিরোধ হয়, তার অধিকাংশই হয় বিভিন্ন ইবতেলা ও পরীক্ষার শিকার হয়ে মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার কারণে। তখন মানুষ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে; কেউ সত্য দীনের উপর অটল-অবিচল সাচ্চা মুমিন হয়, আর কেউ হয় মুনাফিক, যে নিজ অন্তরের গোমরাহি এবং কুপ্রবৃত্তির দাসত্ব ঢাকার জন্য দীনকে ঢাল হিসেবে গ্রহণ করে। আবার কেউ হয় পাপাচারী, যার পাপাচারগুলো স্পষ্ট হয়ে যায় এবং তার ভেতরের পাপ ও পঙ্কিলতাগুলো সবার সামনে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। আবার কেউ হয়ে পড়ে দুর্বল ঈমানদার, ধৈর্যহীন, যে অবিচল থাকতে পারে না বরং অধঃপতিত হয় এবং লাঞ্ছনার আবর্তে নিপতিত হয়। আল্লাহ তাআলার কাছে আমরা প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের বিচ্যুতিগুলোকে আচ্ছাদিত রাখেন, আমাদেরকে আফিয়াত, নিরাপত্তা ও অবিচলতা দান করেন।

এ অবস্থা উভয় দলেই ঘটে থাকে। কারো এই ধারণা করার সুযোগ নেই যে, এটা তো সেই দলে হয়, এই দলে হয় না। এমন অনেককেই দেখেছি যারা এক সময় জ্ঞানে-গুণে প্রসিদ্ধ ছিল, নেককারদের লিবাস ধারণ করেছিল। তারপর যখনই পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে, পদস্খলিত হয়েছে। আবার এমন অনেককেই পেয়েছি, যাদেরকে মানুষ মুজাহিদ ও বীর-বাহাদুর মনে করত। তারপর যখনই ইবতেলা ও পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছে, বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। উভয় পক্ষেই এমন দৃষ্টান্ত অনেক।

আল্লাহর কাছে আমরা আমাদের ও আপনাদের জন্য অবিচলতা, আনুকূল্য, সাহায্য ও সব ধরনের বিচ্যুতি ও পদস্খলন থেকে নিরাপত্তা প্রার্থনা করি । আমীন।

তারপর আপনার এই বক্তব্য- জিহাদী কার্যক্রম গতিহীন হয়ে পড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ এটাই। এ ক্ষেত্রে আমি বলব, আমাদের কর্তব্য হলো, সবসময় হক ও সত্যের উপর আস্থা রাখা এবং আল্লাহ তাআলা হকের যে মানদণ্ড কায়েম করেছেন, সে আলোকে হক তালাশ করা। আমাদের সামনে হক স্পষ্ট হয়ে গেলে তা বিশ্বাস করা এবং আঁকড়ে ধরা।

অবশ্য উলামায়ে কেরাম এবং মুজাহিদীনের মধ্যকার এই বিরোধ ও বিভক্তি যে জিহাদের পথে বিঘ্নতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ এ কথাটি আমরা সঠিক মনে করি…। আল্লাহ সহায় হোন।

তবে এটাকে মানুষের বিভিন্ন দলে বিভক্ত হওয়া সংক্রান্ত যে আলোচনা ইতিপূর্বে অতিবাহিত হয়েছে, সে আলোকেই বুঝতে হবে।

এরপর আমাদেরকে মূল কাজের প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের কাজ হলো, প্রথমত নিজের ইসলাহ ও সংশোধনের মেহনত করা, তারপর অপরকে দাওয়াত দেয়া এবং তাদের ইসলাহের ফিকির করা। এরপর মুমিনদের সকল জামাতের মাঝে একতা ও সংহতি স্থাপনের চেষ্টা করা। তারপর যারা বিরোধী ও ভিন্নমত পোষণকারী, তাদের সঙ্গে আল্লাহ তাআলার নির্দেশনা অনুযায়ী আচরণ করা।

এ সকল ক্ষেত্রে আমরা যখন আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে কাজ করব এবং সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখব এবং যখন আল্লাহ তাআলা আমাদের মধ্যে সততা ও ইখলাস দেখতে পাবেন, তখন আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নুসরত করবেন এবং বিজয় দান করবেন। তখন বিরোধীর বিরোধিতা ও ভিন্ন মতাবলম্বীর ভিন্নমত আমাদের কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। -আল-আমালুল কামিলা, ৩৪৫-৩৪৮

বর্তমান জিহাদী আন্দোলনের সমস্যা চিহ্নিত করণে শায়খের এই বিশ্লেষণ অত্যন্ত দূরদর্শী, সূক্ষ্ম ও বাস্তব সম্মত। প্রতিটি কথা তানজিমের শীর্ষ থেকে মাঠকর্মী; সকলের বারবার পড়া দরকার এবং যথাযথ অনুধাবন করা দরকার। সমস্যা নিখুঁতভাবে চিহ্নিত না হলে সমাধান সহজ হয় না। শায়খ যে কথাগুলো বলেছেন, তার কোনোটিই হয়তো আমরা হিন্দুস্তান তথা এই উপমহাদেশের জিহাদের ক্ষেত্রে উপেক্ষা করতে পারব না। তাই উলামায়ে কেরামের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়া, সম্পর্ক মধুর ও মসৃণ করা সময়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমাদের আলোচনা, পর্যালোচনা, বয়ান, বিবৃতি, লেখা; সকল ক্ষেত্রে এমন আচরণ ও উচ্চারণ থেকে বিরত থাকা, যার কারণে উলামা ও মুজাহিদদের মাঝে ‍দূরত্ব কিংবা ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শায়খ আবু মুসআব যারকাবী রহিমাহুল্লাহর কাছে প্রেরিত এক চিঠিতে তাঁকে উদ্দেশ্য করে শায়খ আতিয়্যাতুল্লাহ আললিবী রহিমাহুল্লাহ লিখেন,

ومن أعمالك المهمة: التقريب بين أهل العلم وأهل الجهاد في سائر أقطار المسلمين وأعني بذلك أهل العلم الصالحين أهل الخير والبذل في الله تعالى، وإن خالفونا وخالفناهم في بعض أو في كثير من المسائل والآراء والمواقف و الموقف من حكومة معينة أو أخرى ونحو ذلك، تماما كما أعني بأهل الجهاد أهل الجهاد الصالحين الصادقين المنضبطين بشريعة رب العالمين، ومن أعمالك المهمة تربية صفنا الجهادي على محاسن الأخلاق بإعطائهم القدرة الطيبة في الأدب والاحترام والتواضع والنصح وقبول النصح والاعتراف بالخطأ واحترام الآخرين، وحسن المحاورة والأدب مع المخالفين، والرحمة والعدل والإحسان.. الخ الصفات الفاضلة المطلوبة والتي يعاني صفنا الجهادي من نقص فيها كما يقر بذلك كل إخواننا من مشايخ المجاهدين وقناداتهم، كما تقدمت الإشارة، نحن نحتاج إلى بذل كثير للتربية وتوجيه صفنا ففي صفنا (المجاهدين) كثير من الصفات السيئة التي تحتاج إلى معالجة، ورجل مثلك وفي مقامك لا بد أن يكون هذا من مهماته وأولوياتهم، طبعا كل ذلك يأتي مترافقا مع مهماتك الآكد في العمل العسكري القتالي والعمل السياسي والعمل الاجتماعي في احتواء الناس وتألفهم وحسن العلاقة بهم، وتحييد من لم يمكن احتواؤه على الأقل…الخ وأنت إن شاء الله أهل لكل ذلك الخير، فقط ضعه نصب عينيك واجعله من أوليات أولوياتك، وشاور وتريث وتوكل على الله.فالشاهد أيها الحبيب أن أعمالك ومهماتك كثيرة وكبيرة، نسأل الله لنا ولك الإعانة والتشديد. ونجاحك في محيطك ينعكس نجاحا على مشروعنا نحن الطائفة المجاهدة بصفة عامة، ولو حصل لك انكسار ووقعت أخطاء فنتحمل تبعتها جميعا أيضا.أخي الحبيب، لا بد من الاهتمام بتربية المجاهدين عبر التقويم المستمر وعدم السكوت عن أخطائنا، ولا سيما الأخطاء الفاحشة منها، بل لا بد من السعي الحثيث في معالجتها وتقويمها، لا بد للقائد من ممارسة قوامة كاملة وقوية على أتباعه عبر الأمر بالمعروف والنهي عن المنكر والأخذ على أيدي المفرطين والمفسدين والمتهاونين، إنه جد وليس باللعب. وليس بالفوضى، وإذا لم يكن باستطاعتنا أن نقوم أنفسنا ونصلحها ونحملها على الخير والبر والمعروف فكيف نطمع أن نصلح الأمة.؟!فأي شخص يرتكب الظلم والتعدي على الناس ويفسد في الأرض وينفر الناس منا ومن دعوتنا وجهادنا ومن الدين والرسالة التي نحملها فهذا يجب أن يأخذ عليه ونأطره على الحق والعدل الإحسان وإلا نحيناه وأبعدناه عن محل التأثير، واستبدلناه، وهكذا، فهذا أمر مهم. -الكتاب المذكور: 1789

“আপনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে মুজাহিদীন ও উলামায়ে কেরামের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটানো। উলামায়ে কেরাম বলতে আমি সেই সকল আহলে ইলমকে বুঝাতে চাচ্ছি যারা সালেহ, নেককার এবং আল্লাহর রাহে নিবেদিত ও আত্মত্যাগী। যদিও নির্দিষ্ট শাসকের হুকুম এবং এ ধরনের অন্যান্য মাসায়েল ও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আমাদের মতভিন্নতা থাকে। একইভাবে মুজাহিদ বলতেও আমি সেই মুজাহিদদের বুঝাতে চাচ্ছি যারা নেককার, সত্যবাদী ও আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শরীয়তের প্রতি অনুগত।

আপনার গুরুত্বপূর্ণ আরও একটি কাজ হলো, উত্তম আদর্শ স্থাপনের মধ্য দিয়ে আমাদের মুজাহিদীনের এই কাফেলাকে আখলাকে হাসানার তারবিয়াহ প্রদান করা। আদব-ইহতেরাম, বিনয়-তাওয়াযু, নসীহাহ প্রদান ও নসীহাহ গ্রহণ, নিজের ভুলের স্বীকারোক্তি এবং অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, বিরোধীদের সঙ্গে কথাবার্তায় আদব রক্ষা, উত্তম আচরণ ও উন্নত আন্দায গ্রহণ এবং দয়া, ন্যায়পরায়ণতা, মহানুভবতা, কার্যসম্পাদনে নিপুণতা ও বিশ্বস্ততা ইত্যাদি সকল উত্তম ও কাংঙ্ক্ষিত সিফাত ও গুণের ক্ষেত্রে এবং সেই গুণাবলির ক্ষেত্রেও যাতে কমতি ও ভুলক্রটি থাকার কারণে আমাদের জিহাদী কাফেলা বিভিন্ন সমস্যা ও কষ্টের সম্মুখীন হচ্ছে- আমাদের সকল মুজাহিদ শায়খ ও নেতৃবর্গ যেমন স্বীকার করেছেন এবং পূর্বেও যেমন এ বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে- এ সকল ক্ষেত্রে নিজে উত্তম আদর্শ স্থাপন করে তাদেরকে তারবিয়াহ প্রদান করবেন।

আমাদের জিহাদী কাফেলাকে তারবিয়াহ ও সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য প্রচুর মেহনত করতে হবে। আমাদের মুজাহিদ ভাইদের মধ্যে অনেক মন্দ স্বভাব রয়েছে, যার ইসলাহ ও চিকিৎসা প্রয়োজন। আর আপনার মতো এবং আপনার মাকামের ব্যক্তির জন্য তো এটা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য বিষয়। স্বভাবতই এ সকল কাজ এবং আপনার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ একসাথে চলমান রাখতে হবে।

আপনার সামরিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব এবং আপনার সামাজিক কাজ, যেমন জনগণের সমর্থন লাভ করা, তাদের ঘনিষ্ঠ হওয়া, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক সুন্দর করা, আর যাদের সমর্থন পাওয়া সম্ভব নয়; তাদেরকে অন্তত নিরপেক্ষ করে রাখার কাজও একইসঙ্গে চলমান রাখতে হবে। আপনি ইনশাআল্লাহ সব কাজই নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পন্ন করতে যোগ্য। শুধু এগুলোকে লক্ষ্য হিসেবে এবং প্রধান ও মৌলিক কাজরূপে গ্রহণ করুন। মশওয়ারা করুন, ধৈর্যের সঙ্গে অবিচল থাকুন এবং আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখুন।

প্রিয় বন্ধু! লক্ষ রাখতে হবে, আপনার কাজ ও দায়িত্ব কিন্তু অনেক এবং অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণও বটে। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন আপনাকে এবং আমাদেরকে নুসরত করেন এবং সঠিক পথে পরিচালিত করেন। কার্যক্ষেত্রে আপনার সফলতা আমাদের পুরো জিহাদী কাফেলার কর্মপরিকল্পনার সফলতা বয়ে আনবে। আপনি যদি ব্যর্থ হন, ভুলে নিপতিত হন, তাহলে এর দায়ভারও আমাদের সকলকেই বহন করতে হবে।

প্রিয় ভাই! মুজাহিদ ভাইদের তারবিয়াহর প্রতি অবশ্যই যত্নবান হতে হবে, বিরামহীন ইসলাহ ও মুহাসাবার মধ্যে রাখতে হবে। আমাদের ভুলক্রটি সম্পর্কে নীরব থাকা যাবে না, বিশেষত যেগুলো অমার্জনীয় ভুল। সেগুলোর ইসলাহ ও চিকিৎসার জন্য দ্রুত, আন্তরিক ও কঠোর মেহনত করতে হবে। মাসউল ও দায়িত্বশীলকে অবশ্যই আমর বিল মারূফ ও নাহী আনিল মুনকারের মাধ্যমে অধীনদের উপর মজবুত ও পরিপূর্ণ তত্ত্বাবধান অব্যাহত রাখতে হবে। যারা উদাসীন, সীমালঙ্ঘনকারী এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী, তাদেরকে বাধা প্রদান করে বিরত রাখতে হবে। এটা গুরুতর বিষয়; ছাড় দেয়ার মতো বিষয় নয়। আমরা যদি নিজেদেরকেই ঠিক করতে না পারি, ইসলাহ করতে না পারি এবং নিজেদেরকেই সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও কল্যাণের উপর গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে কীভাবে উম্মাহর ইসলাহ ও সংশোধনের আশা করতে পারি?

সুতরাং যে ব্যক্তি মানুষের উপর জুলুম-নিপীড়ন ও সীমালঙ্ঘন করবে, যমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করতে চাইবে, জনগণকে আমাদের থেকে, আমাদের দাওয়াত, জিহাদ এবং যে দীন ও রিসালাত আমরা বহন করি, তা থেকে বিমুখ করতে চাইবে, অবশ্যই তাদেরকে বাধা প্রদান করতে হবে, বিরত রাখতে হবে। আমরা তাকে হক, ন্যায় ও কল্যাণের উপর তুলে আনার চেষ্টা করব। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে তাকে কর্তৃত্ব ও প্রভাব বিস্তারের জায়গা থেকে সরিয়ে দিব এবং উপযুক্ত কাউকে তার স্থলাভিষিক্ত করব। এমনই হতে হবে। এটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।” –আল-আমালুল কামিলা, ১৭৮৯

শায়খ মুসান্না হাসসান হাফিযাহুল্লাহ আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে একটি পত্রে লিখেন,

علما ء تک رسائی اور انہیں شامل تحریک کرنے کا معاملہ ہر جگہ ذرا مشکل رہاہے،مگر اس کاحل کرنا ضروری بھی ہے اور یہ مشکل آسان ہو بھی سکتی ہے ۔ اس متعلق آپ اور ہم ایک دوسرے کے ساتھ اپنے تجارب شریک کیاکریں اور اللہ سے امید ہے کہ اس متعلق عزم و تدبیر اور دعا و اخلاص سے اگر کام لیں تو اللہ اس مشکل کو آسان کردیں گے۔

“উলামায়ে কেরাম পর্যন্ত পৌঁছা এবং জিহাদী আন্দোলনে তাদেরকে শামিল করা সব জায়গায়ই কিছুটা জটিল। কিন্তু এ সমস্যার সমাধান করা জরুরি এবং এ জটিলতা কেটেও যেতে পারে। এ বিষয়ে আমরা পরস্পরে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে থাকব। আমরা এক্ষেত্রে দৃঢ়তা, কর্মকুশলতা, দোয়া ও ইখলাসের সঙ্গে অগ্রসর হলে আশা করি আল্লাহ তাআলা মুশকিল আসান করে দেবেন।”

আলেমদের সঙ্গে আচরণ বিষয়ক তাঁর অনবদ্য গ্রন্থ ‘উলামা সে মুতাআল্লেক তারযে তায়ামুল: ইতেদাল কি রাহ’ –এ লিখেন,

فصل پنجم: موجودہ دور میں غلبۂ اسلام کے لیے تحریک جھاد اور مخالف علماء کے مراتب

اوپر کی پوری بحث کے بعد اب ہم دیکھتے ہیں کہ ہمارے موجودہ حالات میں ان احکامات کی تطبیق کیسے ہوگی اور موجودہ دور میں کون سے علماء حق ہیں اور کون ایسے ہیں جو علماء سوء کے درجے میں آئیں گے۔ موجودہ دور میں وہ کیا اعمال ہیں جو اس کی کسوٹی کہلاتے ہیں اور آج کے مسلمان کہاں افراط یا تفریط کا شکار ہیں۔

…3۔ مسلم ممالک میں بہت سے علماء ایسے ہیں جن کا علم بھی معروف ہے، ان کی دین سے وابستگی اور دینی خدمات بھی مسلم اور ان کی زندگیاں صالحیت سے مزین ہیں۔ ان کی زندگیاں علم دین کے حاصل کرنے اور نشر کرنے میں گزری ہیں اور ان کا کردار شک سے بالاتر ہے۔ اس کے باوجود وہ مسلم ملکوں میں نفاذ شریعت کے لیے مسلح جد وجہد کے مخالف ہیں۔ طاغوتی حکومتیں اپنی حمایت میں ان حضرات کے دستخط سے ‘متفقہ’ فتاوی نشر کرتے ہیں يا بیانیے قلم بند کرواتی ہیں۔

یہ علماء حق ہیں، جو اس موقف میں غلطی پر ہیں۔ یہ ان کی غلطی ہے اور زلۃ ہے۔ ان میں سے بعض تو جبر ودباؤ کی وجہ سے یہ موقف اختیار کرنے پر مجبور ہوتے ہیں اور کچھ ایسے ہیں جو اپنے اس موقف کے لیے شرعی دلیل بھی رکھتے ہیں۔ وہ سمجھتے ہیں کہ مسلح جد وجہد کی کامیابی کے امکانات کم ہیں، قدرت واستطاعت نہیں ہے یا ان کی نظر میں اس نتیجے میں زیادہ بڑا مفسدہ پیدا ہونے کا امکان ہوتا ہے یا وہ مجاہدین کی غلطیوں کے سبب خائف ہوتے ہیں یا موجودہ مغربی نظام کے اسلامیانے کی کوشش میں دلائل قائم کرتے ہیں۔

بلا شبہ ان ميں سے کوئی بھی دليل ٹھيک نہيں، اور يہ بڑی غلطی ہے جس ميں يہ حضرات مبتلا ہيں۔ کہاں لا دين حکمران ، ان کی دين دشمنی اور لادين نظام رياست اور کہاں نفاذ شريعت کا پاکيزہ نعرہ اور اس کے لگانے والوں کی قربانياں، ان ميں سے کس کی تائيد کی جاۓ، يہ مسئلہ بہت واضح اور دو ٹوک ہے۔

ليکن اس غلطی کے باوجود انھيں علمائےسوء کے درجے ميں داخل کرنا اس سے بھی بڑھ کر ناانصافی کی بات ہے اور ان کے ساتھ ويسا تعامل کرنا جيسا علماۓ سوء کے ساتھ کيا جاتا ہے، ہر گز دين کی تعليمات نہيں۔ ان کی نيتوں پر شک کرنا، انھيں لادين حکمرانوں کا آلہ کار سمجھنا، انھيں مجاھدين کا دشمن جاننا اور انھيں بے عزت کرنا، ان کی غيبت کرنا، يہ تمام افعال جائز نہيں۔ ان کی غلطی اپنی جگہ، اس غلطی پر علمائے حق کی طرف سے نکير ضرور ہونی چاہے، ليکن ان کا احترام واکرام مسلمانوں ميں بر قرار رہنا ضروری ہے،اور کوئی بھی ايسا رويہ اپنانا جس سے ان کا مقام معاشرے ميں گر جائے اور ان کی دينی حيثيت ختم کردی جائے، مناسب نہيں۔

ايسے حضرات سے متعلق يقين سے کہا جاسکتاہے کہ يہ اسلام اور اس کے غلبے سے مخلص ہيں اور مجاہدين سے بھی محبت کرتے ہيں۔ ليکن ان کے اجتہاد نے انھيں ايسا موقف اختيار کرنے پر مجبور کياہے۔

“পঞ্চম অনুচ্ছেদ: ইসলামের বিজয়ের জন্য সমকালীন জিহাদী আন্দোলন এবং উলামায়ে কেরামের শ্রেণি বিন্যাস

উপরের পুরো আলোচনার পর আমরা এখন দেখব, আমাদের বর্তমান অবস্থায় এই বিধানগুলোর প্রয়োগ কীভাবে হবে এবং এ যুগে কারা উলামায়ে হক আর কারা উলামায়ে ‍সূ-এর স্তরে অধঃপতিত এবং কোন সে আমল যা এ বিষয়টি পরখ করার কষ্টিপাথররূপে বিবেচ্য এবং আজকের মুসলমান কোন জায়গাটায় বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির শিকার!

…৩. মুসলিম জনপদগুলোতে অসংখ্য উলামায়ে কেরাম এমন আছেন, যাঁদের ইলম ও জ্ঞান সর্বসাধারণের কাছে সুবিদিত, সমাদৃত। দীনের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক, তাঁদের দীনি খিদমাত সবার কাছে স্বীকৃত এবং তাঁদের পুরো যিন্দেগি নেক আমল দ্বারা সুসজ্জিত। তাঁদের জীবন ইলমে দীন অর্জনে এবং তার প্রচার প্রসারে অতিবাহিত হয়েছে। তাঁদের অবদান, কর্ম ও কীর্তি সন্দেহাতীত। এত কিছু সত্ত্বেও মুসলিম ভূখণ্ডগুলোতে শরীয়াহ বাস্তবায়নের জন্য সশস্ত্র চেষ্টা-প্রচেষ্টার তাঁরা বিরোধী। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে ইসলামী রাষ্ট্র বলে তাঁরা বিশ্বাস করেন এবং মুজাহিদদের বিরুদ্ধে স্থানীয় শাসকদের পদক্ষেপগুলোতে সহযোগিতা করেন। তাগুতি শাসন নিজ স্বার্থে এই সকল উলামা হযরতের দস্তখত নিয়ে সম্মিলিত ফতোয়া প্রকাশ করে অথবা বয়ান লিখিয়ে নেয়।

এ সকল উলামায়ে কেরাম (সামগ্রিকভাবে) হকপন্থী, কেবল এই অবস্থানে এসে তাঁরা ভুল করে ফেলেন। এটা তাদের ভুল এবং পদস্খলন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ তো যবরদস্তি ও চাপের মুখে পড়ে এই অবস্থান গ্রহণ করতে বাধ্য হন। আর কেউ কেউ এমন আছেন, যাদের কাছে নিজেদের অবস্থানের পক্ষে দলীল রয়েছে। তারা মনে করেন, সশস্ত্র চেষ্টা-প্রচেষ্টায় সফলতার সম্ভাবনা কম, আমাদের যথাযোগ্য সামর্থ্য ও সক্ষমতা নেই। অথবা তাদের দৃষ্টিতে সশস্ত্র চেষ্টা-প্রচেষ্টার পরিণতিতে আরও বড় ক্ষতি ও বিপদের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অথবা তারা মুজাহিদীনের ভুল পদক্ষেপগুলোর কারণে শঙ্কিত কিংবা সমকালীন পশ্চিমা জীবনব্যবস্থার ইসলামাইজেশনের পক্ষে দলীল প্রমাণ দাঁড় করান।

কোনো সন্দেহ নেই, সে দলীলগুলোর একটাও সহীহ নয়; তাদের এই অবস্থান একটা বড় ভুল; যাতে তারা লিপ্ত হয়ে আছেন। কোথায় ধর্মহীন শাসক, তাদের দীন-দুশমনি আর ধর্মহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা, আর কোথায় নেফাযে শরীয়তের পবিত্র তাকবীর ধ্বনি ও সে তাকবীরের ঝাণ্ডাবাহী সিপাহিদের ত্যাগ ও কুরবানী! এদের মধ্যে কোন পক্ষের সমর্থন ও পক্ষাবলম্বন করা হবে তা তো খুবই স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন।

কিন্তু (মনে রাখতে হবে) এই ভুলগুলো সত্ত্বেও তাঁদেরকে উলামায়ে সূ’-এর কাতারে ফেলা তাঁদের কৃত ভুলের চেয়েও বড় না-ইনসাফি। আর তাঁদের সঙ্গে উলামায়ে সূ’-এর মতো আচরণ করাও কিছুতেই দীনের শিক্ষা নয়। তাঁদের নিয়তের উপর সন্দেহ করা, তাঁদেরকে ধর্মহীন শাসকদের ক্রীড়নক মনে করা, মুজাহিদীনের দুশমন মনে করা, তাঁদের অসম্মান করা, গীবত করা কোনোটিই জায়েয নয়। তাঁদের ভুল আপন জায়গায়। এ ভুলের উপর উলামায়ে হকের পক্ষ থেকে অস্বীকৃতি ও নিন্দা জ্ঞাপন অবশ্যই হওয়া উচিত। তবে তাঁদের সম্মান ও মর্যাদাও মুসলমানদের মধ্যে অক্ষুণ্ন রাখতে হবে এবং এমন কোনো আচরণ ও আন্দায গ্রহণ করা যাবে না, যার কারণে তাঁদের সম্মান ও মর্যাদা সমাজের সামনে ক্ষুণ্ন হয়ে যায় এবং তাঁদের দীনি অবস্থান নিঃশেষ হয়ে যায়।

এমন আলেমদের ব্যাপারে পূর্ণ আস্থার সঙ্গে বলা যায়, তাঁরা ইসলাম এবং ইসলামের বিজয়ের প্রতি আন্তরিক এবং মুজাহিদদের ‍তাঁরা মুহব্বত করেন। তবে তাঁদের ইজতেহাদ তাঁদেরকে এমন অবস্থান গ্রহণে বাধ্য করেছে।” -উলামা সে মুতাআল্লেক তারযে তাআমুল: ইতেদাল কি রাহ: ৭৪-৭৭

শায়খের এই কিতাবটি বিশেষ করে দাঈ ও দায়িত্বশীলদের সকলের পড়া দরকার। এখানে আহলে হক আলেম হিসেবে শায়খ যাঁদের চিহ্নিত করেছেন, তাঁদের বিষয়টা আমাদের স্বতন্ত্রভাবে ফিকির করা জরুরি। ভুল ইজাতিহাদের ভিত্তিতে দীনের জন্য মুখলিস ও ফিদা আলেমদের জিহাদ বিরোধিতাকে উলামায়ে সূ’দের থেকে আলাদা মূল্যায়ন করা জরুরি। তাঁদের সঙ্গে কল্যাণকামিতা, সহমর্মিতা ও নম্রতার আচরণ করা জরুরি। তাঁদের অন্তরের বিষয়ে আক্রমণ করা মারাত্মক বিভ্রান্তি।

চিন্তা করা দরকার, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ দয়া ও করুণায় আমাদের মতো যাদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ করে জিহাদের সমঝ দান করেছেন এবং মুজাহিদদের জামাতভুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন, আমাদেরও কারো কারো অবস্থা কিছুদিন আগে এমন ছিল। মুজাহিদদের আমরা ভুল বুঝতাম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই দয়া করে আমাদের বুঝ দান করেছেন। সুতরাং এখন যারা আমাদের বুঝতে ভুল করছেন, তাঁদের প্রতিও আমাদের কল্যাণকামী ও বিনয়ী হয়ে হেকমতের সঙ্গে কাজ করা জরুরি, যাতে ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়।

কোনো কোনো দাঈ; এমনকি কতিপয় আলেম দাঈ ভাইও এখানে বিভিন্ন ভুলভ্রান্তির শিকার হন এবং তাদের থেকে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ ও উচ্চারণ প্রকাশিত হয়, যা আলেমদের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব তৈরি করে। অবশ্য এটা অনেকটাই পরিষ্কার যে, যারা গ্রহণযোগ্য কোনো জিহাদি তানজীমের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন এবং তাদের তারবিয়াহ গ্রহণ করেন, তাদের তুলনায় এমন দাঈদের থেকেই এমন ভ্রান্তি বেশি প্রকাশ পায়, যারা ব্যক্তিগতভাবে কাজ করেন এবং গ্রহণযোগ্য কোনো জিহাদি তানজীমের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন না বা হন না। কখনো কখনো অবস্থা এতই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে, যেখানে বলা যায় الدين محجوب بأهله (দীনের অনুসারী দ্বারাই দীন বাধাগ্রস্ত) মাআযাল্লাহ।

আশা করি, জিহাদি আন্দোলনের সকল দাঈ ও কর্মী ভাই বিষয়টি আত্মস্থ করার চেষ্টা করবেন, যদি আপনি জিহাদকে ভালোবাসেন; চাই আপনি কোনো জিহাদি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হোন বা না হোন।

যে বিন্দুগুলোতে অসতর্কতার কারণে আলেমদের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব তৈরি হয়, আল্লাহ তাওফীক দিলে সামনে এমন কিছু বিন্দু ভাইদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

والله ولي التوفيق وعليه توكلت وإليه أنيب، وصلى الله تعالى عليه وسلم تسليما

 

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

১১ জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪৫ হি.

২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ঈ.

 

আরও পড়ুনঃ আমরা এক

Related Articles

Back to top button