প্রশ্ন: কারো প্রতি ব্যক্তিগত রাগের কারণে- সে মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম- প্রশাসনকে টাকা দিয়ে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া কি বৈধ হবে?
উত্তর:
না, ব্যক্তিগত রাগ মেটানোর জন্য এভাবে কারো বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবহার করা যাবে না। হ্যাঁ, কেউ যদি জুলুমের শিকার হয় কিংবা অধিকার বঞ্চিত হয় এবং জুলুম থেকে বাঁচার জন্য কিংবা অধিকার আদায়ের জন্য তাগুত প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়া ব্যতীত অন্য কোনো উপায় না থাকে, সে ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা নেওয়া যাবে কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে। শর্তগুলো হলো:
১. শরীয়াহ বিচারই যে উত্তম, পূর্ণাঙ্গরূপে এই বিশ্বাস লালন করা।
২. প্রতিপক্ষের উপর জুলুম না করা।
৩. আমার জন্য যদি এমন কোনো হকের ফায়সালা হয়, যা আমার নয়, তাহলে তা প্রকৃত হকদারকে ফিরিয়ে দেয়া।
এ ক্ষেত্রে অধিকার আদায় ও জুলুম থেকে বাঁচার জন্য যদি ঘুষ দেওয়া ব্যতীত উপায় না থাকে, তাহলে ঘুষ দেওয়াও বৈধ; যদিও গ্রহণকারীর জন্য তা কোনো অবস্থায়ই বৈধ নয়।
উল্লেখ্য, ব্যক্তিগত রাগ মেটানোর পরিবর্তে ক্ষমা প্রদর্শন করা যে উত্তম, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কুরআন সুন্নাহতে এর অনেক মর্যাদার কথা বিবৃত হয়েছে।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
“خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ ” -الأعراف: 199
“তুমি ক্ষমার নীতি অবলম্বন করো, নেক কাজের আদেশ দাও এবং মূর্খ লোকদের এড়িয়ে চলো।” -সূরা আরাফ, ০৭: ১৯৯
অন্যত্র এসেছে,
” وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ (34) وَمَا يُلَقَّاهَا إِلَّا الَّذِينَ صَبَرُوا وَمَا يُلَقَّاهَا إِلَّا ذُو حَظٍّ عَظِيمٍ “. -فصلت: 34-35
“ভালো ও মন্দ সমান হয় না। তুমি মন্দকে প্রতিহত কর এমন পন্থায়, যা উৎকৃষ্টতর। এর ফলে, যার সঙ্গে তোমার শত্রুতা ছিল, সে সহসাই হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। আর এ গুণ কেবল তাদেরকেই দান করা হয়, যারা সবরের পরিচয় দেয় এবং এ গুণ কেবল তাদেরকেই দান করা হয়, যারা মহাভাগ্যবান।” -সূরা হা-মীম সাজদাহ, ৪১: ৩৪-৩৫
আরও ইরশাদ হয়েছে,
“وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ (133) الَّذِينَ يُنْفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ (134)” -آل عمران: 133، 134
“এবং নিজ প্রতিপালকের পক্ষ হতে মাগফিরাত ও সেই জান্নাত লাভের জন্য একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হও, যার প্রশস্ততা এ পরিমাণ যে, তার মধ্যে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী ধরে যাবে। যা সেই মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সর্বাবস্থায় (আল্লাহর জন্য) অর্থ ব্যয় করে এবং যারা নিজের ক্রোধ হজম করতে ও মানুষকে ক্ষমা করতে অভ্যস্ত। আল্লাহ এরূপ পুণ্যবানদেরকে ভালোবাসেন।” -সূরা আলে ইমরান, ০৩: ১৩৩-১৩৪
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
“وَجَزَاءُ سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِثْلُهَا فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ (40)… وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ “. -الشورى: 40 و 43
“মন্দের বদলা অনুরূপ মন্দ। তবে যে ক্ষমা করে দেয় ও সংশোধনের চেষ্টা করে, তার প্রতিদান আল্লাহর যিম্মায়। নিশ্চয়ই তিনি জালেমদেরকে পছন্দ করেন না। …বস্তুত যে সবর অবলম্বন করে ও ক্ষমা প্রদর্শন করে, তো এটা বড়ই হিম্মতের কাজ।” – সূরা শূরা, ৪২: ৩৬-৪৩
সহীহ বুখারীর একটি বর্ণনায় এসেছে,
“وما انتقم رسول الله صلى الله عليه وسلم لنفسه إلا أن تنتهك حرمة الله، فينتقم لله بها”. -صحيح البخاري (4/ 189)، الرقم: 3560، كتاب المناقب، باب صفة النبي صلى الله عليه وسلم، ط. دار طوق النجاة
“আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কখনো) নিজের জন্য প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি, তবে আল্লাহ তাআলার সম্মান ক্ষুণ্ন হলে সে কারণে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন।” -সহীহ বুখারী, ৪/১৮৯, হাদীস ৩৫৬০, দারু তাওকিন নাজাত
সহীহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
” ما نقصت صدقة من مال، وما زاد الله عبدا بعفو، إلا عزا، وما تواضع أحد لله إلا رفعه الله.” -صحيح مسلم (4/ 2001)، الرقم: 2588، كتاب البر والصلة والآداب، باب استحباب العفو والتواضع، ط. دار إحياء التراث العربي – بيروت
“সাদাকা সম্পদ কমায় না, ক্ষমা প্রদর্শনের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা কেবল বান্দার সম্মানই বৃদ্ধি করেন এবং আল্লাহর জন্য কেউ বিনয় অবলম্বন করলে, আল্লাহ তাকে উচ্চ মাকামে উন্নীত করেন” –সহীহ মুসলিম, ৪/২০০১, হাদীস ২৫৮৮, দারু ইহইয়ায়িত তুরাসীল আরাবী, বৈরুত
মুস্তাদরকে হাকেমের এক বর্ণনায় এসেছে, উবাই ইবনে কাব রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“من سره أن يشرف له البنيان، وترفع له الدرجات، فليعف عمن ظلمه، وليعط من حرمه ويصل من قطعه، هذا حديث صحيح الإسناد ولم يخرجاه “. -المستدرك على الصحيحين للحاكم (2/ 323)، الرقم: 3161، ط. دار الكتب العلمية – بيروت
“যাকে এ বিষয়টি আনন্দিত করে যে, (জান্নাতে) তার জন্য প্রাসাদ উঁচু করা হোক এবং মর্যাদা সমুন্নত করা হোক, সে যেন তার প্রতি জুলুমকারীকে ক্ষমা করে, যে তাকে বঞ্চিত করেছে, তাকে প্রদান করে এবং যে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, তার সাথে সম্পর্ক জোড়ে।” -মুস্তাদরকে হাকেম ২/৩২৩, হাদীস ৩১৬১, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বৈরুত
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
২৩-০৩-১৪৪৬ হি.
২৭-০৯-২০২৪ ঈ.
আরো পড়ুন- লিংক:
সাধারণ মাসআলা-মাসায়েল জানার জন্য কি যেকোনো আলেমের ওপরই আস্থা রাখা যাবে?