জিহাদ-কিতাল:ফাতওয়া  নং  ৮৫

বর্তমান পরিস্থিতিতে পিতা-মাতার খেদমত করব, না জিহাদ করব?

বর্তমান পরিস্থিতিতে পিতা-মাতার খেদমত করব, না জিহাদ করব?

বর্তমান পরিস্থিতিতে পিতা-মাতার খেদমত করব, না জিহাদ করব?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন:

বর্তমান সময়ে দ্বীনের বিজয়ের জন্য, আমাদের ওপর বিদ্যমান জিহাদের ফরযিয়্যাত আদায়ের জন্য জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজ আঞ্জাম দেয়া একান্ত কর্তব্য। কিন্তু পুরোদস্তুর দ্বীনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত না করে দ্বীনের জন্য অর্ধেক এবং দুনিয়ার জন্য অর্ধেক সময় দিলে কি বর্তমানে জিহাদের ফরযিয়্যাত আদায় হবে?

নিজেকে সম্পূর্ণরূপে দ্বীনের কাজে নিয়োজিত করার ফলে যা হয় তা হল, আমাদের সাংসারিক ব্যয়ভার সম্পূর্ণ বা (ভাই একাধিক থাকলে) কিয়দাংশ বহন করা সম্ভব হয় না। আরও স্পষ্ট করে বললে পিতা-মাতার হক আদায় করতে পারি না (না শারীরিকভাবে, না আর্থিকভাবে)। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এক্ষেত্রে আমি কোনটাকে প্রাধান্য দিবো? লোকবল শূন্য জিহাদের কাজ আঞ্জাম দিবো? না পিতা-মাতার সেবা করার নিমিত্তে রুজি রোজগারে লেগে যাবো?

আমি একথা জানি যে, জিহাদ ফরযে আইন হলে পিতা-মাতার অনুমতি নেয়া, তাদের সেবা করার জন্য আবশ্যিকভাবে বাড়িতে থেকে যাওয়া- এসবের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়; কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে যারা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজ করবে তাদের জন্য বিষয়টা কেমন? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হই।

বিঃদ্রঃ মাসয়ালাটির সবগুলো দিক জানতে চাই। অর্থাৎ পিতা-মাতার আর্থিক অবস্থাভেদে বিধান কেমন, পিতার শারীরিক অবস্থাভেদে বিধানটি কেমন? ইত্যাদি।

প্রশ্নকারী-কাজী মাজহারুল ইসলাম

উত্তর:

بسم الله، والحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله. أما بعد.

জিহাদ যেমন ফরজ, পিতা মাতার খেদমত করা এবং পিতা মাতা সামর্থ্যহীন হলে তাদের ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করাও ফরজ। যতক্ষণ উভয়টির সমন্বয় করা যায়, ততক্ষণ এ দুই ফরজের কোনোটিই বাদ দেয়া যাবে না। অতএব আপনাকে জিহাদের কাজ যেমন করতে হবে, পিতা মাতার খেদমতও করতে হবে। প্রয়োজন পড়লে ভরণ পোষণও দিতে হবে।

ফুকাহায়ে কেরাম যেখানে বলেছেন যে, জিহাদ ফরজে আইন হয়ে গেলে সব কিছু বাদ দিয়ে তাৎক্ষণিক জিহাদে বেরিয়ে পড়তে হবে; পিতা মাতার অনুমতিও লাগবে না- তা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, যখন শত্রুরা মুসলিমদের ওপর আক্রমণ করে বসে বা তাদের ভূমিতে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার আগের কোনো স্তরে থাকে, এখনো দখল ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমরা তৎপর হলেই তাদের প্রতিহত করা সম্ভব।

কিন্তু আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি এমন নয়। বরং এখানে শত্রুরা আমাদের ওপর বিজয় লাভ করে দখল ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছে এবং আমরা এত দুর্বল স্তরে পৌঁছেছি যে, তাদের বিরুদ্ধে ফিলহাল আমাদের জিহাদের সামর্থ্যই নেই। এই পরিস্থিতিতে জিহাদ ফরজে আইন ঠিক, কিন্তু জিহাদের জন্য তাৎক্ষণিক বের হয়ে পড়া ফরজ নয়; বরং এখন দায়িত্ব হল, প্রস্তুতি গ্রহণ ও সামর্থ্য অর্জনের চেষ্টা করা। সামর্থ্য অর্জিত হলে বেরিয়ে পড়া। এ প্রস্তুতির পর্বটি যেহেতু অন্যান্য ফরজের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, এজন্য প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য ফরজগুলোও আদায় করে যেতে হবে। অতএব, আপনি পিতা মাতার খেদমত করুন। প্রয়োজন পড়লে ভরণ পোষণের ব্যবস্থাও করুন। পাশাপাশি যতটুকু সম্ভব জিহাদের কাজ করে যান।

তবে হ্যাঁ, জিহাদের এমন কোনো প্রয়োজনে যদি আমীরের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি নির্দেশ আসে, যেখানে আপনারই প্রয়োজন, তাহলে আপনাকে সেই ডাকেও সাড়া দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে আপনার পক্ষে যদি পিতা মাতার ভরণ পোষণের দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়া সম্ভব না হয়, তাদের দায়িত্ব আপনার অন্যান্য আত্মীয়ের ওপর বর্তাবে। এমন কোনো আত্মীয় না থাকলে, অন্য মুসলিমদের ওপর বর্তাবে। তারাও আঞ্জাম না দিলে বিশেষভাবে যে জিহাদি কাফেলা আপনাকে অন্য কাজে নিয়োজিত করবে, আপনার পিতা মাতার দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে। তার আগ পর্যন্ত আপনি স্বাভাবিকভাবে উভয়টির সমন্বয় করে যেতে থাকুন ইনশাআল্লাহ।

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

০৪-১২-১৪৪১ হি.

২৬-০৭-২০২০ ইং

আরো পড়ূন

বৃদ্ধ মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তান রেখে অন্যত্র হিজরত করার কী হুকুম?

পিতা-মাতা জিহাদী সংগঠনে অংশগ্রহণে বাধা দিলে করণীয়

কিতালের জন্য কি পিতা-মাতার অনুমতি জরুরি?

Related Articles

Back to top button