হালাল-হারাম:ফাতওয়া  নং  ২৯২

ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন করার হুকুম?

ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন করার হুকুম কী?

Fatwaa 292ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন করার হুকুম কী?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ

আমরা গুগল অ্যাডসেন্স থেকে ইসলামিক ওয়াজ মাহফিল ইত্যাদি প্রচার করার মাধ্যমে প্রতি মাসে একটা এমাউন্ট পেয়ে থাকি। এর দ্বারা আমাদের মূলত উদ্দেশ্য হলো, দ্বীন ইসলামের খেদমত করা। কিন্তু ইউটিউব কোম্পানি এবং ফেসবুক কোম্পানি ইউটিউব ও ফেসবুকের monetization(মনিটাইজেশন) ছাড়া; ভিউয়ার, দর্শক, সাবস্ক্রাইবার, ফলোয়ার ও লাইকার ইত্যাদি বৃদ্ধি করে না।

এজন্য ইসলামিক ভিডিওগুলো অধিক পরিমাণে মানুষের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে মনিটাইজেশন। কিন্তু কিছু কিছু এ্যাড আছে, যেগুলো আপত্তিকর। যেমন একটা পণ্যের বিজ্ঞাপন দিলো, যার মধ্যে একটা মেয়ের ছবি আছে অথবা মিউজিকসহ কোনো বিজ্ঞাপন আসে।

ওলামায়ে কেরামের কারো কারো কাছ থেকে শুনছি, দ্বীনের দাওয়াত যেহেতু একটা ফরজ বিধান, আর ফরজ বিধানের দিকে মানুষকে আহ্বান করাও তো একটা অপরিহার্য বিষয়। সে জন্য দ্বীনের অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মানুষকে জানানো ও বুঝানোর প্রয়োজনে শুধু ইসলামিক চ্যানেল সাজেস্টে এ্যাডের মাধ্যমে অ্যাডসেন্স চালু করা এবং তা থেকে ইনকাম করা বৈধ। বিষয়টি একটু বিস্তারিত দলীল প্রমাণের ভিত্তিতে জানালে উপকৃত হতাম।

প্রশ্নকারী- আব্দুল্লাহ

উত্তরঃ

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এ পর্যন্ত আমাদের কাছে অনেক প্রশ্ন জমা হয়েছে। এটি সাইটের এ বিষয়ক প্রথম ফতোয়া। তাই সাধারণ পাঠকদের সহজবোধ্য করার জন্য প্রথমে আমরা প্রশ্নটির কিছু বিষয় স্পষ্ট করছি। অবশ্য বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে প্রশ্নে কিছু তথ্যের অসঙ্গতিও আছে, আমরা সেগুলোর আলোচনায় যাচ্ছি না, উত্তর বুঝার জন্য যতোটুকু দরকার শুধু ততোটুকু আলোচনা করে উত্তর প্রদান করছি ইনশাআল্লাহ।

ইউটিউব যেহেতু গুগলেরই একটি অংশ, তাই ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন করতে হলে প্রথমে গুগল অ্যাডসেন্স (Google AdSense) -এ একটি একাউন্ট খুলতে হয়। এরপর ইউটিউবে নিজস্ব চ্যানেল খুলে ভিডিও আপলোড করতে হয়।

এরপর চ্যানেলটিকে মনিটাইজ করে ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে এ্যাড প্রদশর্নের অনুমতি প্রদান করতে হয়। যখন চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার ও ভিউয়ার একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় পৌঁছে, তখন ইউটিউব কর্তৃপক্ষ ভিডিওর সাথে বিভিন্ন এ্যাড দিতে থাকে, যে এ্যাড দেয়ার জন্য মূলত ইউটিউব কর্তৃপক্ষ অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন এডভারটাইজার (Advertizer) বা বিজ্ঞাপনদাতা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে থাকে। সেই এ্যাডের একটি শতকরা অংশ ইউটিউব কর্তৃপক্ষ নিজেরা রাখে, আরেকটি অংশ চ্যানেল মালিককে দেয়, যা তার গুগুল অ্যাডসেন্স একাউন্টে জমা হয়।

উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের দেয়া তথ্য মতে নিজের ভিডিও প্রচার কিংবা বহুল প্রচারের ক্ষেত্রে মনিটাইজেশনের যৎসামান্য ভূমিকা থাকলেও থাকতে পারে, তবে তা এখানে মুখ্য নয়; বরং মনিটাইজেশনের মূল প্রয়োজন হচ্ছে অর্থ উপার্জনের জন্য। আপনি যদি অর্থ উপার্জন করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনার চ্যানেল মনিটাইজেশনের মাধ্যমে ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে তাতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের সুযোগ করে দিতে হবে।

উপরের বিবরণ থেকে আশা করি এতোটুকু পরিষ্কার যে, যে বিজ্ঞাপনটি আপনার চ্যানেল বা ভিডিওতে প্রদর্শিত হয়, আপনি হচ্ছেন সেই বিজ্ঞাপন প্রচারের একজন অংশীদার এবং আপনার ভিডিও হচ্ছে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যম। আপনার শ্রোতা-দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তারা বিজ্ঞাপনটি আপনার ভিডিওতে যুক্ত করে দেয় এবং এই প্রচারের বিনিময়েই মূলত আপনাকে অর্থ প্রদান করা হয়।

জানা কথা, একটি বৈধ বস্তু বা বিষয়ের বিজ্ঞাপন যদি বৈধ পদ্ধতিতে নির্মিত হয়, তাহলে তা প্রচারের বিনিময়ে অর্থ উপার্জনে কোনো অসুবিধা ছিলো না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ কার ভিডিওতে কখন কোন্ ধরনের এবং কোন্ কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেবে, তাতে ভিডিওদাতার এখতিয়ার থাকে না; বরং ইউটিউব কর্তৃপক্ষই তা পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে।

যদিও ভিডিওদাতার জন্য এ্যাড ফিল্টারিং-এর মাধ্যমে কিছু এ্যাড ক্যাটাগরী ব্লক করার সুযোগ থাকে, কিন্তু সেটাও সীমিত আকারে হওয়ায় সব অনাকাঙ্ক্ষিত এ্যাড ব্লক করা সম্ভবপর হয় না। এজন্য ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জনের বিষয়টি নিরাপদ নয়। কেননা বিজ্ঞাপন প্রচার করে অর্থ-উপার্জন বৈধ হওয়ার জন্য বিভিন্ন শর্ত রয়েছে:

১. যে বস্তু বা বিষয়ের বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে, সেটি বৈধ হওয়া। মদ কিংবা সুদি লেনদেন ইত্যাদির মতো হারাম কোনো বিষয়ের বিজ্ঞাপন না হওয়া।

২. বিজ্ঞাপনের চিত্রে শরীয়ত পরিপন্থি কোনো বিষয়, যেমন বেপর্দা নারী, মিউজিক ইত্যাদি না থাকা।

৩. বিজ্ঞাপনের ভাষা ও উপস্থাপনার মধ্যে কোনো ধরনের মিথ্যা ও প্রতারণা না থাকা।

স্বভাবতই এসব শর্তাবলী রক্ষা করা ভিডিওদাতার পক্ষে সম্ভবপর হয় না। তাই একজন মুসলিমের জন্য এ ধরনের উপার্জনের পরিবর্তে অন্য কোনো হালালপন্থা অবলম্বন করা জরুরী।

-সহীহ বুখারী: ৫৫৯০; মাজমুউল ফাতওয়া: ১১/৫৩৫; আদদুররুল মুখতার, পৃ: ৬৫২; সূরা নূর: ১৯; সহীহ মুসলিম: ১০২; সূরা মায়িদা: ২; ফতোয়া সাইট, বানুরি টাউন: ১৪৪০০৭২০০৪৩৯, ১৪৪১০৪২০০৬৫৩, ১৪৪১০৪২০০১২৭, ১৪৪১০৮২০১৩৩৭, ১৪৪২০৭২০১২৬৮; ফতোয়া সাইট, দারুল উলুম দেওবন্দ: ১৫৯৫৪৯, ইসলাম সুয়াল জওয়াব, সাইট: ২৬৭১৭৩; ইসলাম ওয়েব, সাইট: ২৬৫১০২

হাঁ, ইউটিউবে ইসলামী ভিডিও প্রচার করে দ্বীনের খেদমত করতে চাইলে উপার্জনের উদ্দেশ্য ব্যতীত শুধু আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য করবে। এতে যতোটুকু করা সম্ভবপর ততোটুকুতেই ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হবেন। নাজায়েয পন্থায় দ্বীনের খেদমত করার দায়িত্ব না তিনি আমাদেরকে দিয়েছেন, না তিনি এতে সন্তুষ্ট হবেন।

আরও জানতে সাইটে প্রকাশিত নিম্নোক্ত ফাতওয়াগুলো দেখতে পারেন:

ফাতওয়া নং ৬৭, (মিউজিকযুক্ত ভিডিও তৈরি করে উপার্জিত অর্থ কি হালাল?) লিংক: মিউজিকযুক্ত ভিডিও তৈরি করে উপার্জিত অর্থ কি হালাল?

ফাতওয়া নং ১৫৮,‘সাদাকা করার নিয়তে কি ঘুষের টাকা নেওয়া যাবে?’ লিংক: সাদাকা করার নিয়তে কি ঘুষের টাকা নেওয়া যাবে?

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২৫-০৩-১৪৪৪ হি.

২২-১০-২০২২ ঈ.

Related Articles

Back to top button