নির্দেশিকা

বাংলাদেশের জিহাদ সমর্থক ভাইদের জন্য অনলাইন দাওয়াতের কিছু নির্দেশনা

খোরাসানের মুজাহিদিনের নির্দেশনার আলোকে

বাংলাদেশের জিহাদ সমর্থক ভাইদের জন্য অনলাইন দাওয়াতের কিছু নির্দেশনা

দাওয়াত মহান আল্লাহ্‌ তা’আলার পক্ষ থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ বিধানের নাম। দাওয়াত ও জিহাদের মাধ্যমেই তাওহীদের বাণী ছড়িয়ে পড়ে, আল্লাহ্‌র জমিনে তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যান্য বিধানের মতো দাওয়াতেরও আছে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি, আদব ও শিষ্টাচার। বর্তমানে দাওয়াতের অন্যতম মাধ্যম অনলাইন মিডিয়া। আল্লাহ্‌র শত্রুরা যখন তাওহীদ ও জিহাদের আওয়াজ উম্মাহর কর্ণকুহরে পৌঁছে দিতে বাধা দিচ্ছে, গোটা পৃথিবীতে ঘোষিতভাবে তাওহীদ ও জিহাদের দাওয়াত নিষিদ্ধ করে রেখেছে, আল্লাহর পথের দাঈদেরকে টার্গেট করে তাদের জন্য পুরো জগত সংকীর্ণ করে ফেলেছে, তখন মহান আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় দাঈদের জন্য দাওয়াতের নতুন এক ময়দান খুলে গেছে। আর তা হল অনলাইন দাওয়াতি প্ল্যাটফর্ম এবং সোশ্যাল মিডিয়া।

কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, কিছু ভাই আছেন যাদের ভুলের কারণে দাওয়াতের এই সম্ভাবনাময় ময়দানের ফায়দা পরিপূর্ণভাবে অর্জন করা যাচ্ছে না। কিছু ভাই আছেন — যাদের ইখলাস প্রশংসনীয়, যাদের হৃদয়ে দ্বীনের গায়রত ও জযবা বিদ্যমান, তবে তারা দাওয়াতের ক্ষেত্রে যে পন্থা গ্রহণ করেছেন, যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন, তা না সুন্নাহ সমর্থন করে আর না এর দ্বারা দ্বীনের বা জিহাদের উল্লেখযোগ্য উপকার হয়। বরং এর দ্বারা অনেক ক্ষেত্রে লাভের তুলনায় ক্ষতি বেশি হচ্ছে। তাছাড়া এটা হকপন্থী মুজাহিদিনের মানহাজও নয়। খোরাসান থেকে উমারাগণ বারবার কঠিনভাবে এসব ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।

এসকল ভাইয়েরা সাধারণত কিছু বই বা লেখা পড়ে, কিংবা ডকুমেন্টারি বা লেকচারের মাধ্যমে তাওহীদ ও জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। জিহাদকে সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছেন। তারা জিহাদি কাফেলার সাথে যুক্ত নন। সরাসরি মুজাহিদগণের সংশ্রবে আসার সুযোগ তাদের হয়নি। বর্তমান সময়ে এটা খুব একটা সহজও নয়। অন্য দিকে দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হল তাওহিদ ও জিহাদ, ইসলাম ও জাহিলিয়্যাহ, শরীয়াহ ও গণতন্ত্র, তাগুত বর্জন এবং আল ওয়ালা ওয়াল বারা এর মতো মৌলিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে সঠিক নির্দেশনার জন্য কোন আলিমের কাছে যাবার সুযোগও তারা পাচ্ছেন না। ফলে তারা এক ধরনের বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন।

যে সমস্যা দেখা যাচ্ছে তার মূল কারণ এই বিচ্ছিন্নতা। এই বিচ্ছিন্নতার ফলে দুধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

প্রথমত, অনেক ভাই জিহাদ ও মুজাহিদিনের সমর্থনে কথা বলছেন, কিন্তু মুজাহিদিনের সংস্পর্শে না আসার কারণে, এবং মুজাহিদিন উমারা ও আলিমগণের লেখনী ও বিবৃতি মনোযোগের সাথে অধ্যায়ন না করার কারণে,  তারা মুজাহিদিনের প্রকৃত অবস্থান, আকীদা ও মানহাজ সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না। তারা কথা বলছেন ভাসা ভাসা কিছু ধারণা নিয়ে। সাথে যোগ করছেন নিজস্ব বিভিন্ন চিন্তাভাবনা। অনেক সময় এই অপূর্নাঙ্গ ধারণার সাথে যুক্ত হচ্ছে অনলাইন তর্কবিতর্কের ফলে সৃষ্টি হওয়া তিক্ততা, তর্কে জেতার জেদ, ব্যক্তিগত আবেগ এবং অনুরাগ-বিরাগের প্রভাব।

দ্বিতীয়ত, এমন অনেক ভাই আছেন যারা পূর্বে অন্য কোন ইসলামী দল কিংবা কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। তাওহীদ, আল ওয়ালা ওয়াল বারা এবং জিহাদ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন অনুসরণীয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব কিংবা দলের কাছ থেকে তারা এমন আচরণ ও অবস্থান দেখেছেন যা তাদেরকে হতাশ করেছে। অনেককে যেতে হয়েছে নানান তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। এর ফলে অনেক ভাইয়ের মধ্যে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ ও অভিমান কাজ করে, যার প্রভাবে অনেক সময় তাদের পক্ষে ভারসাম্য ঠিক রাখা সম্ভব হয় না; যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বিভিন্ন আচরণে ও উচ্চারণে।

সংযুক্তিহীনতার সাথে আরো একটি বিষয় যুক্ত হয়ে পরিস্থিতিকে আরো জটিল করেছে। যেহেতু এই ভাইদের অধিকাংশেরই জিহাদ সম্পর্কে জানার মাধ্যম অনলাইন, তাই তাদের অনেকেই খারেজি গোষ্ঠীর প্রচারণা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। জ্ঞাত কিংবা অজ্ঞাতসারে এমন অনেক বৈশিষ্ট্য, চিন্তা এবং মনোভাব তাদের মধ্যে এসেছে যা কুরআন ও সুন্নাহ সমর্থিত না, শরীয়তের খেলাফ এবং যেগুলো কখনোই হক্বপন্থী মুজাহিদিনের মধ্যে দেখা যায় না। বিশেষ করে নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো সংশোধনের বদলে অনেকে রুক্ষতা ও রূঢ়তার মতো বৈশিষ্ট্যগুলোকে ‘হকপন্থা’র চিহ্ন ধরে নিয়েছেন।

এই সমস্যাগুলো এবং দাওয়াতের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব দূর করার লক্ষ্যে খোরাসানের উমারাদের বিশেষ দিকনির্দেশনা এবং দাওয়াত ও জিহাদের পথের সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা কিছু দিকনির্দেশনা তুলে ধরছি। জিহাদের পথে আহ্বানকারী প্রতিটি ভাইয়ের কর্তব্য হবে, দিকনির্দেশনাগুলো হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করা এবং বাস্তবজীবনে তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা।  ইনশাআল্লাহ্‌ এর ফলে সমর্থক ভাইয়েরা মুজাহিদিনের মানহাজ অনুযায়ী অনলাইনে দাওয়াত চালিয়ে যেতে সক্ষম হবেন, এবং তাদের দাওয়াতের মাধ্যমে জিহাদ ও মুজাহিদিন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হবেন। অন্যথায় দ্বীনের গায়রত ও জযবা সত্ত্বেও এই ভাইদের অবস্থা হবে সেই নাদান দোস্তের মতো, যে বন্ধুর সাহায্যার্থে মাছি তাড়াতে গিয়ে পাথরের আঘাতে বন্ধুর মস্তকই চূর্ণ করে দেয়। মহান আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদেরকে সর্বপ্রকার বিভ্রান্তি থেকে হেফাজত করুন। আ-মীন।

 

দাওয়াতের ভাষা ও পদ্ধতি

  • হৃদয়ে উম্মতের প্রতি দরদ ও ব্যথা থাকা প্রয়োজন। সকল মুসলিমের কল্যাণকামী ও হেদায়াত প্রত্যাশী হওয়া জরুরী। কোনো মুসলমান ভাই যদি আপনার বিরুদ্ধে বলে এবং সত্যকে না চেনে, তবুও তার প্রতি অন্তরে ঈমানী সম্প্রীতি ও হিতকামনা জাগ্রত রাখা। এক্ষেত্রে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-সহ অন্যান্য নবীগণ আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।
  • দাওয়াতের ভাষা হবে অত্যন্ত নম্র, স্থান-কাল-পাত্র উপযোগী। আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে কথা বলা যাবে না। দাওয়াত উপস্থাপনের ক্ষেত্রে রুক্ষতা বা বিদ্রূপমূলক সমালোচনার পন্থা গ্রহণ করা যাবে না। কারও আস্থা ও ভালোবাসার জায়গায় অনর্থক আঘাত করে তার অন্তর আকৃষ্ট করা যায় না। দাওয়াতের শব্দচয়ন ও উপস্থাপনা হবে হৃদয়স্পর্শী; যা অন্তর ছুঁয়ে যায়, যা পাষাণ হৃদয় বিগলিত করারও সক্ষমতা রাখে। মনে রাখতে হবে, আল্লাহ্‌ তা’আলা জানতেন, ফেরআউন ঈমান আনবে না; তবুও তিনি মুসা ও হারুন আলাইহিমুস সালাম-কে তার সঙ্গে নম্র ভাষায় কথা বলতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আপনি মুসা-হারুন আলাইহিমুস সালামের সমপর্যায়ের নন, আর আপনি যাকে দাওয়াত দিচ্ছেন, সে-ও ফেরাউনের মতো পাপিষ্ঠ নয়; বরং সে তো একজন মুসলিম, আপনার ভাই।
  • দাওয়াতের ভাষা হবে হেকমতপূর্ণ; তবে তাতে চাটুকারিতা থাকবে না। সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যাই বলা হবে। অসত্যকে মেনে নেওয়া যাবে না, সত্যকেও চেপে যাওয়া যাবে না।
  • আপনার সম্বোধন যেন তাকে আপন করে নেয়। আপনার ব্যাপারে তাকে ভাবতে বাধ্য করে। ‘প্রিয় ভাই!’, ‘সম্মানিত ভাই!’, ‘জনাব’, ‘মুহতারাম!’, ‘আমি আপনার কল্যাণকামী, বিরোধী বা শত্রু নই’—এভাবে সম্বোধন করে, বিনীতভাবে কথা বলুন। আপনি তাকে সম্মান দিন; যদিও তার কোনো আচরণ আপনাকে কষ্ট দেয়। দাওয়াতের ক্ষেত্রে কাফিরদের উদ্দেশে নবীগণ (আলাইহিমুস সালাম)-এর সম্বোধনগুলো লক্ষ করতে পারেন, কুরআন-সুন্নাহর পাতায় পাতায় যা বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যেই রয়েছে একজন দাঈর জন্য উত্তম পাথেয়। আপনার সম্বোধিত ব্যক্তি তো একজন মুসলিম ভাই, যিনি অন্য অনেক দিক থেকে আপনার-আমার চেয়েও উত্তম হতে পারেন। তার পরিণাম আমার-আপনার চেয়েও অনেক ভালো হতে পারে।
  • ‘তুমি এমন করো, তারা কেন এমন করে’—এভাবে তুমি/তারা বলে সম্বোধন না করে নিজের দিকে নিসবত করে সম্বোধন করার চেষ্টা করুন। ‘আমি এমন করি, আমরা কেন এমন করছি’। দাওয়াতের এই পন্থাও কোরআনে বর্ণিত আছে।
  • দাওয়াতের সূচনা হোক এমন বিষয় থেকে, যে ব্যাপারে তিনি সহজেই আপনার সাথে একমত হবেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি দ্বীন প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি নিয়ে কথা বলতে চাইলে শুরুতে দ্বীন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করুন। যদি জিহাদ নিয়ে কথা বলতে চান, তাহলে শুরুতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কুফফারগোষ্ঠীর অবর্ণনীয় জুলুম-নির্যাতন নিয়ে এবং আমাদের ওপর জুলুম প্রতিরোধ করার আবশ্যকীয়তা তথা প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করুন। জিহাদের ময়দান নিয়ে কথা বলতে চাইলে শুরু করুন আফগানের রণাঙ্গন নিয়ে। জিহাদের সঙ্গে নামধারী মুসলিমদের নীতিবর্জিত আচরণ নিয়ে কথা বলতে চাইলে শুরু করুন তালিবানের ইমারাত প্রতিষ্ঠার ইতিহাস নিয়ে, যে ব্যাপারে উলামাগণ একমত ছিলেন।
  • দাওয়াতের কেন্দ্র হবে মৌলিক বিষয়গুলো। আল্লাহ্‌ তা’আলার বিধান প্রতিষ্ঠা, মুসলিম ভূমিগুলোর পুনরুদ্ধার, পবিত্র স্থানসমূহের সুরক্ষা, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের হিংস্র ছোবল থেকে মুক্তি ইত্যাদি। প্রাসঙ্গিক ও দূরবর্তী ইস্যুতে যাব না। এটাই শুরু থেকে ইমারাতে ইসলামিয়্যার মূলনীতি। যার ফলাফল আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমাদের চোখের সামনে।
  • দলিলের ক্ষেত্রে কোরআন-সুন্নাহ ও ইমামদের মত উল্লেখ করার পর সাধ্যমতো আঞ্চলিক হকপন্থী উলামাদের উদ্ধৃতি অধিক পরিমাণে বর্ণনা করার চেষ্টা করুন।
  • দাওয়াতের ভাষা হবে সহজ, সাবলীল, সকলের বোধগম্য। মানুষকে তাদের ভাষা দিয়ে বোঝাতে হবে। এমন পরিভাষা ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন, যা তাদের কাছে দুর্বোধ্য বা যা শুনতে তারা অভ্যস্ত না।
  • অনেক সময় সত্যকে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিতর্ক, সমালোচনা ও পর্যালোচনার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রেও কথা বলতে গিয়ে শরয়ী সীমারেখা ঠিক রাখতে হবে। দলিলভিত্তিক শালীন পর্যালোচনা করতে হবে।
  • অন্যদের ভালো গুণগুলো অস্বীকার করা বা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। সেগুলো স্বীকার করতে হবে। প্রশংসা করতে হবে। ঐকমত্যের জায়গা ও মতবিরোধের জায়গা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
  • শুধু ‘দুঃখ-কষ্ট, পরাজয়-নির্যাতন, বিধান-নির্দেশ’—এগুলোই যেন দাওয়াতের মূল প্রতিপাদ্য না হয়; বরং ‘বিজয়, সাহসিকতা, আল্লাহ্‌র নুসরাত, শাহাদতের মর্যাদা, জান্নাতের পুরস্কার’, এগুলোই হোক দাওয়াতের প্রথম ধাপ। সুসংবাদ শুনিয়ে মানুষকে কাছে আনার চেষ্টা করুন। হাদীসে এসেছে, ‘সহজ করো; কঠিন করো না। সুসংবাদ দাও; আতঙ্কিত করো না।’
  • আলোচনা শুধু আকীদা ও জিহাদ-কিতালের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখবেন না। পাশাপাশি আমল, আখলাক, তাযকিয়াতুন নফস, তিলাওয়াত ইত্যাদির প্রতি গুরুত্বারোপ করুন।
  • এমন ব্যাপারে আলোচনা করুন যে ব্যাপারে আপনার ভিত শক্ত, যে ব্যাপারে আপনার পর্যাপ্ত ইলম ও অধ্যয়ন আছে। আপনার দাওয়াত স্পষ্ট ও শক্তিশালী হওয়া উচিৎ। তবে আপনার আলোচনায় অহংকার যেন না থাকে। যে বিষয়ে জানা নেই, সে ব্যাপারে চুপ থাকা ও অজ্ঞতা স্বীকার করা প্রকৃত মুসলিমের বৈশিষ্ট্য।
  • সত্যপথ চিনেছেন এ জন্য অহংকার না করে আল্লাহ্‌র উদ্দেশে বিনয়ী হন। যাদের উদ্দেশ্যে লিখছেন, তাদের জন্য হাত তুলে আল্লাহ্‌র কাছে দুয়া করুন। হয়তো আপনিও একদিন ওই ভাইয়ের চেয়ে কম বুঝতেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা আপনার প্রতি রহম করেছেন। এমনও তো হতে পারে, অন্য কোনো বিশেষ আমলের কারণে আল্লাহর দৃষ্টিতে আপনার তুলনায় তার মর্যাদা বেশি বা ভবিষ্যতে আল্লাহ্‌ তা’আলা তার মর্যাদা আপনার চেয়েও অনেক বেশি বৃদ্ধি করে দেবেন।

 

নিন্দনীয় ও বর্জনীয়

  • আহলে কেবলাকে তাকফীর করা কিংবা কাফেরদের ব্যাপারে ব্যবহার করা হয় এমন শব্দ ও বাক্য ইসলামের গণ্ডির ভেতরে থাকা মুসলিমদের প্রয়োগ করা। মনে রাখতে হবে, তাকফীরে মুআইয়ান (ব্যক্তিবিশেষকে কাফের ফতওয়া দেওয়া) হচ্ছে অত্যন্ত জটিল বিষয়। গভীর ইলম ও ফিকহের অধিকারী ছাড়া এই দায়িত্ব অন্য কেউ পালন করতে সমর্থ নয়। সঠিক মানহাজের অনুসারী, জিহাদের দাঈ প্রতিটি ভাই অবশ্যই যাকে তাকে তাকফীর করা এবং তাকফীরের ক্ষেত্রে যেকোনো সীমালঙ্ঘন থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
  • সম্মানিত ও অনুসৃত উলামাগণের ব্যাপারে এমনভাবে ব্যক্তি সমালোচনা করা যা শরীয়াহ সমর্থিত নয়, এবং দাওয়াহর উসুলের বাইরে। তাদের নামে অনর্থক কুৎসা রটানো। তাদের শানে নানা মন্দ শব্দ প্রয়োগ করা। যেমন : দরবারি, দালাল, মুরজিয়া, তাগুতের গোলাম ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে, ইখতিলাফ (দালিলিক মতভিন্নতা) আলাদা জিনিস আর কাউকে অপমান করা এবং মানহানি করা আলাদা জিনিস। যেখানে সাধারণ মুসলমানকে গালি দেওয়াই পাপ, সেখানে সম্মানিত কোনো আলেমকে গালি দেওয়া তো চরম অন্যায় ও জঘন্যতম কাজ। এই বেয়াদবিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে মুজাহিদীন সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা করছে। দেশে দেশে অবুঝ তরুণদের এমন দায়িত্বহীন পদক্ষেপের কারণে জিহাদ ও মুজাহিদিন সম্পর্কে অনেক সাধারণ মানুষের অন্তরে বীতশ্রদ্ধা ও বিরক্তিকর মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে। যারা এগুলো করে, তারা না মুজাহিদিনের মানহাজের অনুসারী আর না কোনো জিহাদি কাফেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

তাগুতি শাসনব্যবস্থার অধীনে থাকার ফলে অনিচ্ছাসত্ত্বেও অনেককে অনেক কাজ করতে হয়; কিছু ক্ষেত্রে হয়তো তাদের ওজর গ্রহণযোগ্য, আবার কিছু ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। যেসব ক্ষেত্রে তাদের ওজর গ্রহণযোগ্য নয়, সেসব ক্ষেত্রে দালিলিকভাবে মতভিন্নতা হতে পারে। কিন্তু তাদের নামোল্লেখ করে জনসমক্ষে আক্রমণাত্মক সমালোচনা করা বা মন্দ ভাষায় গালমন্দ করা না উম্মতের জন্য কল্যাণকর আর না জিহাদের জন্য। এসব কাজের মাধ্যমে আমাদের থেকে সম্মানিত উলামাদের দূরে সরে যাবেন। তাঁদেরকে যারা ভালোবাসে, তারাও জিহাদি মানহাজের বিরুদ্ধে চলে যাবেন। উম্মাহর এই ক্রান্তিলগ্নে কুফফারগোষ্ঠী এটাই চায়।

উল্লেখ্য RAND কর্পোরেশন তাদের বিভিন্ন প্রতিবেদনে জিহাদ ও মুজাহিদিনের সাথে উলামায়ে কেরামের বিভাজন সৃষ্টির কথা এনেছে। দুঃখজনক ব্যাপার হল, আমাদের অবুঝ ভাইয়েরা এমন কাজ করে ফেলছেন যার ফলে শত্রুর লক্ষ অর্জিত হচ্ছে। আল্লাহ্‌ তাআলা সকলকে হেফাজত করুন।

  • কোন মুসলিম ভাইকে নিয়ে ট্রোল করা অবশ্যই পরিত্যাগ করুন। ট্রোলবাজি দাওয়াতের কোনো পদ্ধতি নয়। এর দ্বারা কোন মুসলিমের সম্মানহানি ও বিকৃত স্বাদ লাভ ছাড়া অন্য কিছুই অর্জন হয় না। ভুল পথের পথিক কোন মুসলিমকে নিয়েও ট্রোল করবেন না। বরং আল্লাহর রঙে রঙিন হয়ে, নববী আখলাক ধারণ করে, হেকমত ও মহব্বতের সাথে দাওয়াত দিন। কিন্তু ট্রোল করবেন না। কোন মুসলিমকে নিয়ে কাউকে ট্রোল করতে দেখলে তাকেও সতর্ক করুন। কথা না শুনলে তার কাছ থেকে বেঁচে থাকুন। তার সঙ্গে জিহাদি মানহাজের সম্পর্কহীনতার কথা ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দিন। সর্বদা মনে রাখতে হবে, ব্যক্তির চাইতে দ্বীন আগে। আমরা কোনো ব্যক্তিবিশেষের জন্য দ্বীনের ক্ষতি হতে দেবো না।
  • জনসাধারণের কাছে অনুসরণীয় কোনো ব্যক্তি যদি প্রকাশ্যে এমন ভুল করে, যা উম্মতের জন্য ক্ষতিকর, সে ক্ষেত্রে দাঈ ভাইরা উক্ত কাজের ব্যাপারে গঠনমূলক দলীলভিত্তিক পর্যালোচনা করুন। উক্ত কাজের ব্যাপারে শরীয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে আদবের সঙ্গে প্রশ্ন তুলুন। কিন্তু ব্যক্তির নাম ধরে গালাগালি বা ভর্ত্‌সনা করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। তার নাম নিলে তার অনুসারী অনেক মুসলিম আছেন—যারা আন্তরিকভাবে সত্য পথ পেতে চায়; কিন্তু নিজেদের অনুসরণীয় শায়খের নাম ধরে সমালোচনা দেখলে তারা আহত হয়। সমালোচনাকারী থেকে সযত্নে নিজেকে সরিয়ে নেয়। তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। যা তাদের সত্য গ্রহণের পথে আসতে বাঁধার সৃষ্টি হয়।
  • ‘ইসলামী গণতন্ত্র’ নামের পরিভাষা আমরা স্বীকার করি না। আর এর কোন গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞাও নেই। এই শিরোনাম ব্যবহার করে সেকুলারদের কর্মপন্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টাকে আমরা জায়েজ মনে করি না। কিন্তু যে সকল মুসলমান এতে অংশ নেয়, আমরা তাদেরকে তাকফীর করি না। সুতরাং তাদেরকে তাকফীর করা থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে।
  • অনলাইনে কেউ জিহাদ নিয়ে কথা বললেই তাকে জিহাদি মানহাজের মুখপাত্র ভেবে অন্ধভাবে তার অনুসরণ করা যাবে না। কারও ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে সুনিশ্চিতিভাবে না জেনে তাকে প্রমোট করা যাবে না। এমন অনেকে আছে যারা বিভিন্ন বিভ্রান্ত গোষ্ঠীর—যেমন, আইএস (দায়েশের) অনুসারী ও তাদের চিন্তাধারার প্রচারক—তাদের সংশয় থেকে নিজেকে ও অন্য ভাইদেরকে অবশ্যই সুরক্ষিত রাখতে হবে।
  • এমন অনেক দাঈ আছে—যারা মৌখিকভাবে খারেজিদের বিরোধিতা করে এবং খোরাসানের মুজাহিদদের পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করে; কিন্তু দাওয়াত ও ফিকিরের ক্ষেত্রে অবচেতনে নিজেরাই খারেজি মনোভাবের চিন্তাধারা লালন করে। এ ধরনের ভাইদের থেকেও সতর্ক থাকতে হবে।
  • যথাসম্ভব বিতর্ক এড়িয়ে চলবেন। বিতর্ক দিয়ে মানুষের উপকার খুব কম হয়; বরং হেরে গেলে অন্তরে সুপ্ত ক্ষোভ কাজ করে, যা সত্য গ্রহণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
  • কারো সাথে বিতর্ক হলে তার সম্মান ও মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে; তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা বা লজ্জিত করা কখনো উদ্দেশ্য হবে না। এমনভাবে কথা বলতে হবে, যেন তার সামনে সত্য দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট হয়ে যায় এবং তিনিও স্বস্তির সঙ্গে তা মেনে নিতে পারেন। আপনাকে তার ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে, আপনার পক্ষ হয়ে আপনার কোনো অনুসারীও যদি তার ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করে, তাহলে তাকেও বারণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সাধারণত কাউকে লাঞ্ছিত করে হক গ্রহণ করানো যায় না। ব্যক্তির আত্মমর্যাদাবোধ তখন হক গ্রহণের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
  • আকীদা ও ফিকহের সূক্ষ্ম ও শাখাগত মতানৈক্যের ব্যাপারে জনসমক্ষে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। মনে রাখবেন, যেসকল বিষয়ে সালাফদের মধ্যে একাধিক মতামত পাওয়া যায়, সেসব ক্ষেত্রে উম্মাহর ক্রান্তিকালে খেলাফতশূন্য এই অস্থির পৃথিবীতে কখনোই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। উপরন্তু এসব বিষয় মুসলিমদের মাঝে বিরোধ ও বিভেদ সৃষ্টি করে। তাই সতর্কতার সঙ্গে এসব বিতর্ক এড়িয়ে চলুন। কখনো আত্মপক্ষ সমর্থন করতে হলে বা নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে হলে সকলের মতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ইনসাফের সঙ্গে মার্জিত ভাষায় আপনার কথা উপস্থাপন করুন।
  • তাড়াহুড়ার প্রবণতা ও অস্থির চঞ্চলতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অগ্রাধিকারনীতি, উপযোগিতা ও কার্যকারিতার ভিত্তিতে কর্ম ও পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে হবে।
  • প্রতিটি পোস্ট, লেখা, শেয়ার এমনকি লাইকের আগে নিজের নিয়ত যাচাই করুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন, কেন আপনি এই কাজটি করছেন। এটি কি শুধুই আল্লাহ্‌র জন্য? নাকি এতে নিজের কোন স্বার্থ, জেদ, অনুরাগ-বিরাগ মিশে আছে? শতভাগ আল্লাহ্‌র জন্য নয়, এমন সকল লেখা, পোস্ট, কমেন্ট থেকে বিরত থাকুন। ইনশাআল্লাহ্‌ এ নীতি অনুসরণ করলে অধিকাংশ অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর তর্ক ও আলোচনা এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে।
  • দাওয়াতের কেন্দ্র বানান ইসলামী আদর্শকে। তাওহিদ ও জিহাদের আহ্বানকে। নিজের ব্যক্তিপরিচয়, ব্যক্তিগত আবেগ, পছন্দ-অপছন্দ, অনুরাগ-বিরাগ দ্বারা আপনার কলম যেন নিয়ন্ত্রিত না হয়। নিজের ব্যক্তিসত্ত্বার উপরে দাওয়াতকে অগ্রাধিকার দিতে শিখুন।
  • দাওয়াতের মাধ্যম হিসাবে নিষিদ্ধ ও দৃষ্টিকটু জিনিসের ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। যেমন, কোনো বেপর্দা নারীর ছবি, ভিডিও, বাদ্যযন্ত্রযুক্ত ভিডিও বা বক্তব্য ইত্যাদি।
  • মুসলিম ভাইদের বিপদে পাশে থাকুন। তাদেরকে সান্ত্বনা দিন। সাধ্যমতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করুন। কখনো অন্যের বিপদে উল্লাস প্রকাশ করবেন না। যদিও সে আপনার বিরোধী হয়। কখনো উপকার করতে না পারলেও নিদেনপক্ষে অপকার করবেন না বা কারও ক্ষতির কারণ হবে না।
  • যেসব লেখক বা সংস্থা দলান্ধতা ও আসাবিয়্যাতের দিকে আহ্বান করে, সেগুলো সযত্নে বর্জন করুন।
  • দাওয়াতে অধিক দরকারী এবং মৌলিক বিষয় বাদ দিয়ে তুলনামূলক কম দরকারী এবং শাখাগত বিষয়ে মনোযোগী হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • অনলাইনে জিহাদের দাওয়াত দেওয়া বা জিহাদের পক্ষে কিছু কথা বলাকেই মূল জিহাদ মনে করবেন না। কেবল এর ভিত্তিতেই নিজেকে এই ফরজ আদায়কারী ভাবার মতো ভুল করবেন না। সর্বদা বাস্তবিক জিহাদ ও শাহাদাতের তামান্না লালন করুন। প্রকৃত রণাঙ্গনে পৌঁছার জন্য দুয়া ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন।

 

 দাওয়াতের বিষয়বস্তু

  • তাওহীদের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা। এ কথা পরিষ্কার করে দেয়া যে, আল্লাহই আইন প্রণয়নসহ সকল ক্ষমতার মালিক। এটি তাওহীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই এবং পারস্পরিক বিবাদমান সকল বিষয়ে তাঁর আইন ও বিধান গ্রহণ করা ঈমানের জন্য অনিবার্য শর্ত।
  • আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা’র হারিয়ে যাওয়া আকীদা ফিরিয়ে আনা। উম্মাহ’র অংশ হতে পারার গৌরব ও গর্ববোধ পুনর্জীবিত করা। ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ জাগিয়ে তোলা। বিশ্বের সকল মুসলিম যে একটি দেহের মতো, তা সকলকে হৃদয়ঙ্গম করানো, মন ও মননে দৃঢ়ভাবে গেঁথে দেওয়া।
  • গণতন্ত্রের নোংরা ও দুর্বিষহ পরিণতি এবং তার বিপরীতে শরীয়তের সৌন্দর্য ও সুফল তাদেরকে বুঝানো। গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং শরীয়াহ্-ভিত্তিক খিলাফাহ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার আকাশ-পাতাল পার্থক্য মানুষের সামনে তুলে ধরা।
  • ইসলামী গণতন্ত্র নামক অসংলগ্ন, ভিত্তিহীন পথ ও পদ্ধতির অসারতা তুলে ধরা।
  • জাতীয়তাবাদের ধোঁকা ও প্রতারণা, স্বরূপ ও অসারতা উন্মোচন করা। এই জাতীয়তাবাদ যে মুসলিমদেরকে ইসলাম থেকে কুফরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, মুসলিম উম্মাহকে শোচনীয় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তা পরিষ্কার করে দেয়া।
  • উম্মাহর বিরুদ্ধে জায়নবাদী, ক্রুসেডার ও উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের চক্রান্ত ও শত্রুতা সম্পর্কে সতর্ক করে তোলা। মুসলিমদের মাঝে ফুরূয়ী ইখতিলাফ বা শাখাগত বিষয়ের মতপার্থক্য বেশি আলোচনা না করে, কুরআন-সুন্নাহ এবং সাময়িক বিশ্বের বাস্তব পরিস্থিতি, তথ্য ও দৃষ্টান্তের আলোকে কাফেরদের শত্রুতা ও দুশমনির দিকগুলো তুলে ধরা।
  • আমেরিকা, ইসরাইল, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও ভারতসহ অন্য সকল কুফরী শক্তি বিশ্বব্যাপী মুসলিমদেরকে যে জুলুম ও নির্যাতন করেছে এবং করে চলেছে—সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাসের ভিত্তিতে তার ঘটনা-পরিক্রমা তাদের সামনে তুলে ধরা। আমাদের মুসলিম দেশসমূহের শাসকগোষ্ঠীও যে এক্ষেত্রে মুসলিমদের পরিবর্তে কাফেরদেরকে সাহায্য করছে; এরা যে মুসলিমদের জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রু রক্ষাকারী নয়, বরং তাদের রক্তপিয়াসি– তথ্য প্রমাণের আলোকে তা তাদের সামনে পরিষ্কার করে তোলা। তাদের রিদ্দাহ (মুরতাদ হওয়ার বিষয়টি) বাস্তবতা ও শরয়ী দলীল-প্রমাণের আলোকে স্পষ্ট করে তোলা।
  • আসলি কাফের, বিশেষ করে হিন্দের হিন্দুত্ববাদী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জিহাদের বিষয়টিকে দাওয়াতে অগ্রাধিকার দেয়া। ক্রুসেডার-যায়নবাদী ও হিন্দুত্ববাদীদের অনুগত মুরতাদ শাসকদের বিরুদ্ধেও উম্মাহ’র ঈমানী চেতনা জাগ্রত করা এবং তাদের সংঘবদ্ধ করা।
  • মজলুম মুসলিমদের সাহায্যে উদ্বুদ্ধ করা। মজলুম মুসলিমদের জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রু রক্ষার জন্য মুজাহিদগণ যে আল্লাহ’র রাহে নিজেদের জান-মাল উৎসর্গ করছেন, তা স্পষ্ট করা। যাতে মুসলিমরা বুঝতে পারে- কে তাদের প্রকৃত বন্ধু আর কে তাদের শত্রু।
  • উলামায়ে-সূ’ ও দরবারি আলেম হিসাবে চিহ্নিতদের ব্যাপারে উম্মাহকে সজাগ করা। তাদের থেকে উদ্ভূত এবং অসৎ মিডিয়া থেকে প্রচারিত বিভ্রান্তি ও সংশয় থেকে উম্মাহকে দূরে রাখার চেষ্টা করা। কাফিরদের বিরুদ্ধে আমরা অস্ত্রের যুদ্ধ করলেও উলামায়ে সু’য়ের বিভ্রান্তি খণ্ডনে জবান ও কলমের যুদ্ধ করব। এক্ষেত্রেও দাওয়াত ও সমালোচনার সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করব।
  • ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ এবং জিহাদ ও মুজাহিদিনের বিরুদ্ধে দাজ্জালী মিডিয়ার অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা ও চক্রান্তের স্বরূপ সর্বস্তরের মুসলিমদের সামনে উন্মোচন করা।
  • জিহাদ ও মুজাহিদিনের ব্যাপারে ভুল ধারণা, সংশয় এবং কাফির ও মুরতাদদের বহুল প্রচলিত মিথ্যাচারগুলো নিরসন করা। জিহাদের ব্যাপারে প্রচলিত ভুল ব্যাখ্যাগুলোর অসারতা তুলে ধরা।
  • বাংলাদেশের মুজাহিদিনের মিডিয়া রিলিজগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখা। মুজাহিদিনের মিডিয়াতে যে বিষয়গুলোতে জোর দেয়া হচ্ছে সেগুলোকে নিজেদের দাওয়াতে প্রাধান্য দেয়া।
  • মনস্তাত্ত্বিক ও মিডিয়া জিহাদের এ ময়দানে প্রচারের গুরুত্ব অনেক। মুজাহিদিন মিডিয়ার রিলিজগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারে কাজ করা। কিভাবে তাওহিদ ও জিহাদের বার্তাকে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায় তা নিয়ে চিন্তা করা।

 

নিরাপত্তা

  • ভারত উপমহাদেশে বিদ্যমান খোরাসানকেন্দ্রিক জিহাদি কাফেলা স্বাভাবিকভাবে অনলাইনে সাথি রিক্রুট করে না। তাই অনলাইনে অপরিচিত কেউ নক করলে সাবধানে থাকুন। অধিকাংশ সময় এগুলো গোয়েন্দাদের ফাঁদ হয়। তারা সুকৌশলে ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে দেয়। নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করে দেখতে চায়, আপনি জিহাদি কাফেলায় যুক্ত হতে ইচ্ছুক কি না। যদি আপনি ইচ্ছুক হন, তাহলে কোনো একটা টোপ ফেলে আপনাকে গ্রেফতার করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি তারা দেখে, আপনার এ ব্যাপারে সবিশেষ আগ্রহ নেই; বরং মুসলিম হিসেবে আপনি আল্লাহর বিধান জিহাদ পছন্দ করেন এবং শাহাদাতের তামান্না লালন করেন, তাহলে তারা আপনার ব্যাপারে গুরুত্ব কম দেবে।
  • কোনো ফিমেইল আইডির সাথে যোগাযোগ বা চ্যাট করা সম্পূর্ণ পরিহার করুন। মেয়ে সেজে আপনাকে ধোঁকায় ফেলা অধিক সহজ। এক্ষেত্রে তারা প্রয়োজনে তাদের প্রশিক্ষিত মেয়েদেরকে ব্যবহার করে থাকে। এসকল মেয়ে এমনভাবে আপনাকে মায়াজালে আটকাবে, আপনি বুঝতেই পারবেন না, অবচেতনে কখন তাদের টোপ গিলে নিজেকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। বাংলাদেশেই এমন প্রচুর দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে রয়েছে। এছাড়া একজন আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন আল্লাহ্‌ভীরু মুসলিম ভাই কিংবা বোন অনলাইনে গাইরে মাহরাম কারো সাথে চ্যাট করবেন এটা কোনভাবেই আশা করা যায় না, গ্রহণযোগ্যও নয়।
  • অনলাইনে পরিচিত কাউকে জিহাদের উদ্দেশ্যে কোনো সম্পদ বা নগদ অর্থ দেবেন না। মুজাহিদিনরা এভাবে সদকা সংগ্রহ করেন না। তবে মুজাহিদিনের নাম ব্যবহার করে কিছু দুষ্টচক্র এই প্রতারণামূলক কাজটি করে থাকে।
  • মুজাহিদিন দ্বারা পরিচালিত চিহ্নিত ওয়েবসাইট ও পেইজগুলোতে লেখালেখি করা বা কমেন্ট করার ক্ষেত্রে অবশ্যই টর ব্রাউজার (tor browser) ও টর অ্যাপ ব্যবহার করবেন।
  • স্বাভাবিক ব্রাউজার ব্যবহার করলে শুধু ভিজিট করতে পারেন ও আর্টিক্যাল পড়তে পারেন, তবে নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে কোনো লাইক-কমেন্ট করবেন না।
  • মুজাহিদিনদের ওয়েবগুলো যত প্রচার করবেন ও পাবলিক করবেন, সবার জন্য সেগুলো ভিজিট তত নিরাপদ হবে ইনশাআল্লাহ্‌। তবে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কন্টেন্ট আসল পরিচয়ে প্রচার না করাই নিরাপদ হবে।
  • অপরিচিত কাউকে ব্যক্তিগত তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • কোনো সুনিশ্চিত প্রমাণ ছাড়া কেবলই ধারণার ভিত্তিতে কাউকে জিহাদি কাফেলার মুখপাত্র ভাবা যাবে না। সঠিক দিকনির্দেশনা ব্যতীত কেবলই কিছু আবেগকে পুঁজি করে বিচ্ছিন্ন কোনো দল বা ব্যক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে নিজেকে গ্লোবাল জিহাদের একজন মুজাহিদ ভাবা বোকামি ছাড়া কিছু হবে না।
  • প্রয়োজন ছাড়া অনলাইনে সময় কম দিন। কিয়ামতের দিন আমাদের প্রতিটা মুহূর্তের হিসাব আল্লাহর সামনে দিতে হবে। অনর্থক ব্যয়িত সময়ের জন্য মানুষ সেদিন বড়ই অনুতাপে ভুগবে।

 

(বিস্তারিত জানতে অবশ্যই পড়ুন:

আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশের সম্মানিত মুখপাত্র,

উস্তায উসামাহ মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহু রচিত-

دعوت کا اُسلوب اورمنہجِ جہاد کی حفاظت و فروغ

https://justpaste.it/dawateruslub)

 

প্রণয়নে

আল-লাজনাতুশ শারইয়্যাহ লিদ-দা‘ওয়াতি ওয়ান-নুসরাহ

fatwaa.org

 

পুরো নির্দেশনাটি পিডিএফ ডাউনলোড করুন

Back to top button