সালাতফাতওয়া  নং  ৪১৩

মুজাহিদের জন্য কি নামাযে উদাসীনতা দেখানোর সুযোগ আছে?

মুজাহিদের জন্য কি নামাযে উদাসীনতা দেখানোর সুযোগ আছে?

মুজাহিদের জন্য কি নামাযে উদাসীনতা দেখানোর সুযোগ আছে?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ

আমার পরিচিত এক লোক জিহাদের কাজে খুব শ্রম দেন। কিন্তু তিনি নামাযের ব্যাপারে খুব বেশি উদাসীন। ইচ্ছে হলে পড়েন, না হলে পড়েন না। তবে তিনি একজন কাজের মানুষ। আমরা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করি, কিন্তু বেশি বল প্রয়োগ করলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কাজ থেকেই দূরে সরে যেতে পারে। এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, তিনি তো একটি ফরয আমলের মধ্যে আছেন, তাই তাঁর জন্য কি এ ব্যাপারে কোনো ছাড় আছে?

-আবু সুফিয়ান

উত্তরঃ

ঈমানের পর নামায ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিধান। যে ব্যক্তি নামাযে গাফলতি করে, সে এখন জিহাদের কাজ করলেও জিহাদের কঠিন পথে টিকে থাকতে পারবে বলে আশা করা যায় না। নামায না পড়া অন্তরে তাকওয়া ও আল্লাহভীরুতা না থাকার দলীল। নিফাকের লক্ষণ। অসংখ্য হাদীসে নামায ত্যাগকারী সম্পর্কে অনেক কঠিন ধমকি এসেছে। যেমন এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

عن جابر رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم “: إن بين الرجل وبين الشرك والكفر ترك الصلاة.”. – صحيح مسلم ، كتاب الإيمان، باب بيان إطلاق اسم الكفر على من ترك الصلاة، الرقم: 133، وابن ماجه، كتاب إقامة الصلاة والسنة فيها، باب ما جاء فيمن ترك الصلاة، الرقم: 1078،

“নিশ্চয় (মুমিন) ব্যক্তি এবং কুফর-শিরকের মাঝে সংযোগ স্থাপনকারী হলো নামায ছেড়ে দেওয়া।” –সহীহ মুসলিম: ১৩৩

অন্য হাদীসে ইরশাদ করেন,

من ترك الصلاة متعمداً برئت منه ذمة الله ورسوله”اهـ. – مسند أحمد (6/ 421)، الرقم: 27404، قال المحقق شعيب الأرنؤوط:  إسناده ضعيف لانقطاعه. اهـ

“যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ছেড়ে দেয়, তার উপর থেকে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের যিম্মা (ও তত্ত্বাবধান) উঠে যায়।” -মুসনাদে আহমাদ: ২৭৪০৪

অন্য হাদীসে ইরশাদ করেন,

العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة فمن تركها فقد كفر”. –الجامع الصحيح للإمام الترمذي، وقال :هذا حديث حسن صحيح غريب، كتاب الإيمان، باب ما جاء في ترك الصلاة، الرقم: 2621 والسنن الكبرى للنسائي ،كتاب الصلاة، باب الحكم في تارك الصلاة وذكر الاختلاف في ذلك، الرقم: 326 ، قال شعيب الأرنؤوط في تعليق صحيح ابن حبان (4/ 91): إسناده جيد. اهـ

“আমাদের ও তাদের (অর্থাৎ মুমিন ও কাফেরদের) মাঝে পার্থক্যকারী (আল্লাহ প্রদত্ত) অঙ্গীকারাবদ্ধ বিষয়টি হলো নামায। যে নামায ছেড়ে দিলো সে কুফরী করলো।” -জামে তিরমিযী: ২৬২১

উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু তাঁর খেলাফতকালে গভর্নরদের নিকট লিখে পাঠান,

إن أهم أمركم عندي الصلاة، من  حفظها وحافظ عليها، حفظ دينه، ومن ضيعها، فهو لما سواها أضيع. -مؤطا مالك: 1/6 ت فؤاد عبد الباقي، ط: دار إحياء التراث العربي: 1406

“আমার নিকট তোমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নামায। যে নামাযের ব্যাপারে যত্নবান হবে, সে দীনের অন্যান্য বিষয় ভালোভাবে পালন করবে। আর যে নামায নষ্ট করবে, সে দীনের অন্যান্য বিধান আরও বেশি নষ্ট করবে।” -মুয়াত্তা মালেক: ১/৬

এ ধরনের তাকওয়া শূন্য ব্যক্তি দ্বারা বাহ্যত কিছু কাজ হতে দেখলেও, পরিণতিতে উল্টো জিহাদের বড় কোনো ক্ষতিও হতে পারে। তাছাড়া জিহাদের উদ্দেশ্যই তো হলো দীন কায়েম করা। যে ব্যক্তি নিজেই দীন পালন করবে না, সে দীন কায়েম করবে কীভাবে? তাই যেভাবেই হোক তাকে নামাযে মনোযোগী করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। কাজ থেকে দূরে সরে যাওয়ার ভয়ে নামাযের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। ব্যক্তিগত জীবনে নামায জিহাদের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। একটি ফরয আমলের মধ্যে আছে বলে অন্য ফরযে গাফলতি করার সুযোগ নেই।

বিশেষ করে ভাই যদি জিহাদী জামাআতের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত হন কিংবা দায়িত্বশীল স্তরের হন, তাহলে এখানে মোটেই ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। বাহ্যিক দৃষ্টিতে তার দ্বারা জিহাদের কিছু কাজ হলেও, জিহাদ ও জিহাদী জামাআতের যে ক্ষতি হবে, তা হবে আরও বড় ও ভয়ঙ্কর। আল্লাহ হেফাযত করুন। অবিলম্বে পরামর্শ করে এমন ব্যক্তিকে জামাআত থেকে আলাদা করে দেওয়া জরুরি। এই স্তরে জিহাদ ও জামাআতের একজন সমর্থক যে কাজগুলো করতে পারেন, সেগুলো তিনিও করলেন। যখন তিনি নামাযের পাবন্দ হতে পারবেন, তখন আবার নিয়মিত কাজে যুক্ত হবেন।

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

১৯-০২-১৪৪৫ হি.

০৫-০৯-২০২৩ ঈ.

আরও পড়ুনঃ  ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ জামাআতের সাথে নামায পড়ার সুযোগ না দিলে করণীয় কী?

Related Articles

Back to top button