নিকাহ-তালাকফাতওয়া  নং  ৩৭৩

বিয়ের পূর্বে কৃত পাপের কথা কি পাত্রীকে জানানো জরুরি?

বিয়ের পূর্বে কৃত পাপের কথা কি পাত্রীকে জানানো জরুরি?

বিয়ের পূর্বে কৃত পাপের কথা কি পাত্রীকে জানানো জরুরি?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ

আমি একসময় জাহিলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলাম। আল্লাহর অসীম দয়া যে, তিনি আমাকে দীনের বুঝ দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ। দীনের বুঝ আসার আগে শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে চরম অশ্লীল পাপ কাজও আমার দ্বারা হয়ে গেছে। শুনেছি, তাওবা করলে সকল গুনাহ মাফ হলেও বান্দার হক রয়ে যায়। এও শুনেছি, বিয়ের আগে এমন কাজে লিপ্ত হলে নাকি হবু স্বামী বা স্ত্রীর হক নষ্ট করা হয়। তাই এটি নাকি বিয়ের সময় জানাতে হয়। আমার জানার বিষয় হলো, বিষয়টি কি আসলেই এমন, বিয়ের আগে এমন কিছু হয়ে গেলে বিয়ের সময় তা জানানো জরুরি আর তা না পারলে বিয়ে থেকে বিরত থাকা উচিত? একটু খুলে বললে খুবই উপকৃত হবো।

-আবদুল্লাহ

উত্তরঃ 

শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে কেউ কোনো অশ্লীল তথা ফাহেশা কাজ করে ফেললে উচিত হলো গোপনে তাওবা করে আল্লাহ তাআলার কাছে মাফ চাওয়া এবং সামনে এই কাজ করা থেকে বিরত থাকার সংকল্প করা। নিজের কৃত গুনাহের কথা অন্যকে জানানোও একটি গুনাহ এবং এতে অপরাধের শাস্তি বেড়ে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

عن سالم بن عبد الله قال سمعت أبا هريرة يقول  : سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول (كل أمتي معافى إلا المجاهرين وإن من المجاهرة أن يعمل الرجل بالليل عملا ثم يصبح وقد ستره الله فيقول يا فلان عملت البارحة كذا وكذا وقد بات يستره ربه ويصبح يكشف ستر الله عنه ). – صحيح البخاري (5/ 2254)، الرقم: 5721، كتاب الأدب، باب ستر المؤمن على نفسه؛ صحيح مسلم للنيسابوري (8/ 224)، الرقم: 7676؛ كتاب الزهد الرقاق، باب: النَّهْىِ عَنْ هَتْكِ الإِنْسَانِ سِتْرَ نَفْسِهِ

“আমার উম্মতের সবারই ক্ষমার আশা করা যায়, তবে যারা প্রকাশ্যে গুনাহ করে, তারা ব্যতীত। আর এটিও প্রকাশ্য গুনাহের অন্তর্ভুক্ত যে, কোনো ব্যক্তি রাতে কোনো গুনাহ করে ফেললো, আল্লাহ তাআলা সকাল পর্যন্ত তা গোপন রাখলেন। কিন্তু (সকালে) সে বলে দিলো, ‘হে অমুক, গত রাতে আমি এই এই কাজ করেছি’। রাতে আল্লাহ তা গোপন রেখেছিলেন, কিন্তু সকালে সে নিজেই আল্লাহর পর্দা সরিয়ে তা প্রকাশ করে দিলো।” –সহীহ বুখারী: ৫৭২১, সহীহ মুসলিম: ৭৬৭৬

অন্য হাদীসে এসেছে,

عن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قام بعد أن رجم الأسلمي فقال : اجتنبوا هذه القاذورة التي نهى الله عنها فمن ألم فليستتر بستر الله و ليتب إلى الله فإنه من يبدلنا صفحته نقم عليه كتاب الله عز و جل. هذا حديث صحيح على شرط الشيخين ولم يخرجاه. تعليق الذهبي قي التلخيص : على شرط البخاري ومسلم. – المستدرك على الصحيحين للحاكم مع تعليقات الذهبي في التلخيص (6/ 248، بترقيم الشاملة آليا): 7615، كتاب التوبة والإنابة

“আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, ‘আসলামী’কে ‘রজম’ তথা প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। ইরশাদ করলেন, “তোমরা এই গান্ধা কাজটি (অর্থাৎ যিনা) থেকে বিরত থাকো, যা থেকে আল্লাহ তাআলা বারণ করেছেন। যদি কারও থেকে হয়েই যায়, সে যেন আল্লাহর পর্দার আড়ালে তা গোপন রাখে এবং যেন (গোপনে) আল্লাহর কাছে তাওবা করে নেয়। যে ব্যক্তি তার গুনাহ আমাদের সামনে প্রকাশ করবে, আমরা আল্লাহ আযযা ওয়াজাল্লার কিতাবে বর্ণিত শাস্তি তার উপর কায়েম করবো।” –মুসতাদরাকে হাকেম: ৬/২৪৮, হাদীস নং: ৭৬১৫

কাজেই আপনি আপনার গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়ে সত্য দিলে আল্লাহর কাছে তাওবা করুন। হবু স্ত্রী কিংবা অন্য কারও কাছে গুনাহের কথা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন। আর ‘বিয়ের আগে শয়তানের প্ররোচনায় জঘন্য অশ্লীল কাজে লিপ্ত হলে হবু স্বামী বা স্ত্রীর হক নষ্ট হয়, কাজেই তাকে তা অবগত করানো উচিত’ – এই ধারণা সহীহ নয় এবং এই ধারণার ভিত্তিতে বিয়ে থেকে বিরত থাকাও সঠিক নয়। ওয়াল্লাহু আলাম।

-মাজমুউল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ- ৩৪/১৮০; ফাতহুল কাদীর: ৫/২১৫

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

১৮-১০-১৪৪৪ হি.

০৯-০৫-২০২৩ ঈ.

আরও পড়ুনঃ প্রথম স্বামীর তালাক দেওয়া ছাড়া অন্যত্র বিয়ে করলে সেই বিয়ে কি সহীহ হয়?

Related Articles

Back to top button