বিবিধফাতওয়া  নং  ২৯৯

কুরআন শরীফ পদদলিত করতে বাধ্য করলে কী করণীয়?

কুরআন শরীফ পদদলিত করতে বাধ্য করলে কী করণীয়?

কুরআন শরীফ পদদলিত করতে বাধ্য করলে কী করণীয়?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ

কাউকে যদি মৃত্যু বা অঙ্গহানির ভয় দেখিয়ে কুরআন শরীফ পদদলিত করতে বাধ্য করা হয় এবং সে মৃত্যু বা অঙ্গহানির ভয়ে তা করে, কিন্তু অন্তরে তার ঈমান পরিপূর্ণ থাকে, এমতাবস্থায় উক্ত ব্যক্তির জন্য জীবন দিয়ে দেয়াই উত্তম? না অন্তরে ঈমান রেখে কুরআন শরীফ পদদলিত করা উত্তম?

প্রশ্নকারী- মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম

উত্তরঃ

بسم الله الرحمن الرحبم

কুরআনে কারীম পদদলিত করা এমন একটি জঘন্য কাজ, যা মানুষকে ঈমানের সীমানা থেকে বের করে দেয়।

ইমাম নববী (রহ) (৬৭৬ হি.) বলেন,

وأجمعت الأمة على وجوب تعظيم القرآن على الاطلاق وتنزيهه وصيانته. واجمعو على أن من جحد منه حرفا مجمعا عليه أو زاد حرفا لم يقرأ به أحد وهو عالم بذلك فهو كافر. وأجمعوا على ان من استخف بالقرآن أو بشئ منه أو بالمصحف أو ألقاه في قاذورة أو كذب بشئ مما جاء به من حكم أو خبر أو نفى ما أثبته أو أثبت ما نفاه أو شك في شئ من ذلك وهو عالم به كفر. -المجموع شرح المهذب (2/ 170)، ط. دار الفكر

“উম্মাহর সকলে একমত যে,কুরআনে কারীমকে তাজিম করা আবশ্যক।… উম্মাহর সকলে এতেও একমত যে,যে ব্যক্তি কুরআন,কুরআনের কিছু অংশ বা মুসহাফকে হেয় প্রতিপন্ন করবে অথবা মুসহাফকে ময়লার ভাগাড়ে নিক্ষেপ করবে, … সে কাফের হয়ে যাবে।” –আলমাজমু শারহুল মুহাযযাব: ২/১৭০

ইবনে নুজাইম (রহ) (৯৭০ হি.) বলেন,

وَيَكْفُرُ بِوَضْعِ رِجْلِهِ عَلَى الْمُصْحَفِ مُسْتَخِفًّا بِهِ. – الأشباه والنظائر لابن نجيم (ص: 160)، ط. دار الكتب العلمية، بيروت – لبنان

“অবমাননা করে কুরআনে কারীমের উপর পা রাখলে কাফের হয়ে যাবে।” –আলবাশবাহ ওয়াননাজায়ির: ১৬০

তবে কেউ যদি মৃত্যু বা অঙ্গহানির ভয় দেখিয়ে কাউকে এমন কাজ করতে বাধ্য করে, তাহলে দুটি শর্ত সাপেক্ষে অন্তরে ঈমান ও কুরআনে কারীমের সম্মান বজায় রেখে বাহ্যিক কুফরি আচরণটি করার অনুমতি আছে। শর্ত দুটি হচ্ছে:

১. বাধ্যকারী তা বাস্তবায়নে সক্ষম হওয়া। সুতরাং বাধ্যকারী যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অঙ্গহানি বা তাকে হত্যা করায় সক্ষম না হয়, তাহলে তার হুমকিতে অন্তরে ঈমান রেখেও কুরআনে কারীমের সঙ্গে কুফরি আচরণটি করা যাবে না।

২. তা থেকে বাঁচার অন্য কোনো উপায় না থাকতে হবে। সুতরাং এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের যদি অন্য কোনো উপায় থাকে, তাহলেও কুরআনে কারীমের অবমাননা করা যাবে না।

তবে সর্বাবস্থায় উত্তম হল,নিজের জীবনের চেয়ে কুরআনে কারীমের সম্মানকে প্রাধান্য দেয়া এবং জীবন দিয়ে হলেও কুরআনে কারীমের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখা।

ইমাম যাইলায়ি (রহ) (৭৪৩ হি.) বলেন,

ثم جنس هذه المسائل على ثلاثة أوجه … وفي وجه يرخص الإقدام عليه مع أن العزيمة هو الامتناع وهو إجراء كلمة الكفر وسب النبي – عليه الصلاة والسلام – وما هو كفر أو استخفاف بالدين حتى لو أقدم عليه وهو مكره لا يؤاخذ به ولو صبر حتى قتل يكون مأجورا. -تبيين الحقائق شرح كنز الدقائق وحاشية الشلبي (5/ 185)، ط. المطبعة الكبرى الأميرية – بولاق، القاهرة

“জবরদস্তি সংক্রান্ত মাসআলাগুলো তিন প্রকারে বিভক্ত: … (তন্মধ্যে) এক প্রকার হচ্ছে, যে জিনিসটি করতে বাধ্য করা হচ্ছে তা করার সুযোগ আছে, তবে আজীমত (উত্তমতর দিক) হলো বিরত থাকা। এগুলো হচ্ছে মুখে কুফরি কালিমা উচ্চারণ করা, রাসূল আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালামকে গালি দেয়া কিংবা অন্য কোনো কুফরি বা দ্বীনের অবমাননা। জবরদস্তির কারণে তাতে লিপ্ত হলে তাকে পাকড়াও করা হবে না। তবে যদি ধৈর্যধারণ করে তা থেকে বিরত থাকে, ফলে তাকে হত্যা করে দেয়া হয়, তাহলে সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে।” –তাবয়িনুল হাকায়েক: ৫/১৮৫

কাসানি (রহ) (৫৮৭ হি.) বলেন,

وَالِامْتِنَاعُ عَنْهُ أَفْضَلُ مِنْ الْإِقْدَامِ عَلَيْهِ حَتَّى لَوْ امْتَنَعَ فَقُتِلَ كَانَ مَأْجُورًا؛ لِأَنَّهُ جَادَ بِنَفْسِهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ تَعَالَى فَيَرْجُو أَنْ يَكُونَ لَهُ ثَوَابُ الْمُجَاهِدِينَ بِالنَّفْسِ هُنَا. -بدائع الصنائع في ترتيب الشرائع   (7/ 176(

“এ ধরনের ক্ষেত্রে কুফরি কাজটি করার চেয়ে বিরত থাকা উত্তম। এমনকি যদি সে বিরত থাকে এবং এ কারণে তাকে হত্যা করে দেয়া হয়, তাহলে সওয়াবপ্রাপ্ত হবে। কারণ, সে তার জীবন আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করেছে। তাই আশা করা যায় সে জীবন দিয়ে জিহাদকারী মুজাহিদদের মতো সওয়াব পাবে।” –বাদায়িউস সানায়ি: ৭/১৭৬

ইবনে আবিদিন শামী (রহ) (১২৫২ হি.) বলেন,

قَوْلُهُ: (وَيُؤْجَرُ لَوْ صَبَرَ) أَيْ يُؤْجَرُ أَجْرَ الشُّهَدَاءِ لِمَا رُوِيَ «أَنَّ خُبَيْبًا وَعَمَّارًا اُبْتُلِيَا بِذَلِكَ فَصَبَرَ خُبَيْبِ حَتَّى قُتِلَ فَسَمَّاهُ النَّبِيُّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – سَيِّدَ الشُّهَدَاءِ وَأَظْهَرَ عَمَّارٌ وَكَانَ قَلْبُهُ مُطْمَئِنًّا بِالْإِيمَانِ فَقَالَ النَّبِيُّ – صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – فَإِنْ عَادُوا فَعُدْ» أَيْ إنْ عَادَ الْكُفَّارُ إلَى الْإِكْرَاهِ فَعُدْ أَنْتَ إلَى مِثْلِ مَا أَتَيْت بِهِ أَوَّلًا مِنْ إجْرَاءِ كَلِمَةِ الْكُفْرِ عَلَى اللِّسَانِ، وَقَلْبُك مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ ابْنُ كَمَالٍ وَقِصَّتُهُمَا شَهِيرَةٌ. –(الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار)  (6/ 135)، ط. سعيد

“ধৈর্যধারণ করে নিহত হলে শহীদের সাওয়াব পাবে। বর্ণিত আছে, খুবাইব (রা) ও আম্মার (রা) এ ধরনের জবরদস্তির শিকার হয়েছিলেন। তখন খুবাইব (রা) বিরত থাকেন, ফলে তাঁকে হত্যা করা হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সায়্যিদুশ শুহাদা তথা শ্রেষ্ঠ শহীদ আখ্যা দেন।…” –রদ্দুল মুহতার: ৬/১৩৫

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب.

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২৫-০৩-১৪৪৪ হি.

২২-১০-২০২২ ঈ.

আরও পড়ুনঃ হক্কানি আলেম-ওলামাকে গালিগালাজ করলে কি স্ত্রী তালাক হয়ে যায়?

Related Articles

Back to top button